রম্যরচনাঃ বেলাল হোসেন
Posted in রম্যরচনা
রম্যরচনা
গরু রচনা
বেলাল হোসেন
ইংলিশ স্কুলের বাংলা শিক্ষক শামিমকে গরু রচনা লিখে আনতে বলেছেন। শামিম আহমেদ কোলকাতার আন্তর্জাতিক মানের স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। রাত্রে তার বাবা ঘরে ফিরলে, পুত্র বাবাকে বলে, ‘আব্বু, কাল ছুটি আছে, আমাকে একটু চিড়িয়া খানায় নিয়ে যাবে ?’
‘কেন রে ? এই তো সেদিন মায়ের সাথে ঘুরে এলি, আবার কেন ?’
‘সেদিন সবটা দেখা হয়নি ‘
‘কেন ?’
‘বললে এখুনি ...’
‘বল, বল, কিছু হবেনা, মুড ভালো আছে’
‘মা না, আসলে, তার বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতেই ব্যস্ত ছিল, তাই পুরোটা দেখা হয়নি। তুমিতো ছবিগুলো দেখেছো, মা তোমাকে ট্যাগ করেছিল আমি জানি।‘
‘ও, তা আবার কেন যাবি ?’
‘দেখনা, স্যার আমাকে গরু রচনা লিখতে বলেছেন। আমি তো গরুই দেখিনি। ঐ একদিন, তুমি হাই রোডে গাড়ি চালাচ্ছিলে, সামনে একটা বড় লরিতে হাত পা বাঁধা অনেকগুলো গরু মুখ গুঁজে শুয়ে বসেছিল, মনে নেই ?’
‘না, মনে নেই... ’
‘আরে,তুমি বলছিলে না যে গাড়িগুলো বর্ডারে যাচ্ছে; ব্যাটা পুলিশ গরুর গাড়ি হাতে পেয়ে রাস্তা জ্যাম করে দিল,’
‘তা গরুর রচনা লিখতে হয়, লিখবি, সবাই একবার হোক লিখেছে জীবনে’
‘সেই জন্যইতো বলছি, চিড়িয়া খানা নিয়ে চল’
‘যাব্বাবা, ওখানে গরু আছে নাকি ? গরু কোথাকার ! লিখে দিবি, গরুরও তোর মত একটা মাথা, দুটো কান আছে তোর মত দুটো হাত আর দুটো পা আছে, সামনের হাতদুটো পায়ের কাজ করে !‘
শামিম মনে মনে নোট নিয়ে নিল।
‘তুই এক কাজ কর, অ্যানিম্যাল প্লানেটটা দেখে নে’
‘ওরা তো কোনোদিন গরুর ছবি দেখায়নি; আব্বু, গরু কি জঙ্গলে থাকেনা ?’
‘ঠিক বলেছিস, গরু মানুষের মধ্যেই থাকে’
মা এর আগমন ঘটলো ঘরে।
‘কী হল, এত গরু গরু চেঁচাচ্ছ কেন ?’
‘তুমি সেদিন ওকে চিড়িয়া খানা নিয়ে গেলে, ওখানে ওকে গরু দেখিয়ে আনতে পারনি ?’
‘অ্যাঁ, ওখানে গরু পাওয়া যায় ?’
‘আলবাত পাওয়া যায়, খোঁজ নাও, তোমার ঐ ভাঁড়ে মা ভবানী ভবন যাওয়ার পথে টুক করে একটু নেমে গিয়ে একবার খোঁজ নাও তো !’
বেগতিক দেখে কথা আর না বাড়িয়ে মা হাওয়া ।
‘ও আব্বু, বলনা, তুমিতো বলেছিলে, ছোটোবেলায় তুমি বিহারে অনেক গরু দেখেছিলে, তোমার মামাবাড়িতেও দেখেছিলে, কী দেখেছিলে আরেকটু বল’
শৈশবের কথায় বাপ চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
‘ হ্যাঁ, ধানবাদের রাস্তায় প্রচুর গরু, গরু ঠিক নয়, ষাঁড়। দলে দলে ষাঁড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের কাজ করে, গাড়ির স্পীড কমিয়ে দেয়, টার্ণ নিতে সাহায্য করে। রাবড়ি দেবীর নাম শুনেছিস? বিহারের চীফ মিনিস্টার ছিল, সকালে উঠে আগে গরুর দুধ দুইয়ে লালুকে খাইয়ে তারপর মিনিস্টারগিরি করতে যেত। আর তোর মা ?’
শামিম প্রসঙ্গ ঘোরায়।
‘আর মামাবাড়িতে ?’
মামাদের অনেক গরু ছিল, সেজন্য মামাদের খড়ের গাদা ছিল। গাদাগুলো বাঁশের মাচা মত করে তাতে সাজানো থাকতো। গাদার পাশে ঐ মাচায় বসে ঝুলে ঝুলে আমরা বাচ্চারা দল বেঁধে পটি করতাম’
শামিম সব নোট নিচ্ছে। পটির কথায় তার হঠাৎ মনে পড়ে,
‘আব্বু, গরুর পটি নিয়ে কী একটা মজার কথা বলেছিলে না ?’
‘ও হ্যাঁ, ধানবাদের রাস্তায় প্রচুর পটি পড়ে থাকতো, আমরা ছেলেরা রাস্তার ধারে বসে থাকতাম। কোন লোক আসতে দেখলে তাকে আনমনা করবার জন্য সক্কলে একসঙ্গে চেঁচাতাম ‘হোঁসিয়ার ভইয়া, ইধর শিউজি’কা দোস্ত, মতলব সাপ নিকলা হ্যায়। সাবধানিসে আইয়ে। সে ব্যাটা হকচকিয়ে অবধারিত ভাবে ঐ পিচ্ছিল পটিতে পা দিয়েই হড়কে কুপোকাৎ; আমরা দে ছুট’
শামিম নোটে লিখল, গরুর পটি খুব পিচ্ছিল হয়, রাস্তায় পড়ে থাকলে সাবধানে যেতে হয়।
‘আচ্ছা আব্বু, গরুর বাচ্চা কি করে হয় ?’
‘ও, সে বড় হলে বুঝবি, গাই গরুকে ষাঁড়ের কাছে বিয়াতে নিয়ে যেতে হত, মামাবাড়িতে দেখেছি,’
‘তুমি এবার থেকে তোমার মামারবাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবে। ওখানে কত কী দেখেছো, আমার মামাবাড়িটায় কোন মজাই নেই’
বাপের ধৈর্য্য শেষ, সে এবার পালাল কোলটপ খুলতে ।
শামিম লিখতে বসে সব লিখল, মায় ট্র্যাফিক সার্জেণ্টের দায়িত্ব পর্যন্ত ।
এর পর সে ভাবল, সবই বাপের কথায় লিখলাম, নিজেও কিছু লিখি। তার হঠাৎ মনে পড়ল মাসির কথা, মাসি মুম্বাইয়ে থাকে। মাকে দিন কয়েক আগে স্কাইপে তে বলছিল, ‘আমাদের বীফ খাওয়া ঘুচে গেছে, গরমেণ্ট গো হত্যা নিষেধ করেছে; দেখিস, আস্তে আস্তে সারা দেশেই ঐ নিয়ম হবে’। মনে মনে খুশি হয়ে উপসংহারটা লিখল এইরকম।
‘আমাদের দেশে গোহত্যা বন্ধ হতে চলেছে। শিককাবাব আর পাওয়া যাবেনা। এর উপর গো চালানও বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে অনেক সমস্যা দেখা দেবে। পাশের দেশের লোকেদের মধ্যে প্রোটিনের অভাব দেখা দেবে, কারণ, তারা তো এতদিনে তাদের দেশের সব গরু খেয়ে ফেলেছে, এখান থেকে না গেলে খাবে কি? আবার আমাদের দেশে গরুর সংখ্যা উদ্বৃত্ত হয়ে যাবে। তখন এক কাজ করা যেতে পারে। উদ্বৃত্ত গরুগুলিকে আমরা সুন্দরবনে চালান করে দেবো, তাহলে, বাঘেরা আর মানুষের পাড়ায় এসে গরুর রুমে ঢুকে পড়বেনা। ব্যাঘ্র সংরক্ষণে আমরা সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়ে যেতে পারি। সুন্দরবনের চোরা চালানকারীরাও তখন জঙ্গলে অন্য কিছু না খুঁজে ঐ গরুগুলিকেই ধরে নিয়ে পাশের দেশে চালান করে দেবে। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবেনা ।’
গো-দুগ্ধের মতই সরল ও তরল !!
ReplyDeleteDhushor er opor halka golapi lekha. Ki sundor.
ReplyDeleteদুর্দান্ত লেখা।
ReplyDelete