1

প্রাচীন কথাঃ সৌরেন চট্টোপাধ্যায়

Posted in


প্রাচীন কথা 




উত্তরাপথের পথে 
সৌরেন চট্টোপাধ্যায় 





= ২য় পর্ব =



পিছনে ধূসরবর্ণা নাতিউচ্চ পর্বতমালা আর কালচে সবুজ বনভূমির বিস্তীর্ণ চালচিত্র। উচ্ছল-স্রোতা, সদা চঞ্চলা তমসা নদী বনভূমির উপত্যকাকে তার অবিরাম নূপুরনিক্বণে আমোদিত করে নেমে এসেছে শান্ত জনপদ প্রীতিকূটে। স্বাধীনচেতা তমসার স্রোতধারা উপল ও ছোট-বড় প্রস্তরখণ্ডে ব্যহত হয়েও জনপদটিকে অশ্বখুরাকৃতিতে বেষ্টন করে বয়ে চলেছে কোন এক অজানা নদের বক্ষলগ্না হতে। শৌর্য, কলা, বৈভবের সঙ্গে রিরংসা, ব্যাভিচার, নিষ্ঠুরতার রঙে রঙিন উত্তরাপথের মানচিত্রে আপন গন্ধে মত্ত কস্তুরী মৃগের মত নিরন্তর জ্ঞানের চর্চায় মগ্ন স্নিগ্ধ-শীতল ছায়াঢাকা ছোট্ট জনপদ প্রীতিকূট। ছোট বড় কুটির ও সংলগ্ন বাগিচার মধ্য দিয়ে কংকর-সমাচ্ছন্ন রাঙ্গা মাটির বীথিকা; আশপাশের স্বচ্ছ জলের তরাগ ও দীর্ঘিকাগুলিতে পাদপশ্রেণীর প্রতিবিম্ব, পত্র-পুষ্প-ফলভারে আনত তরুশোভিত মনোরম উদ্যান, প্রস্তর-নির্মিত দেবদেউলে সকাল-সন্ধ্যা শঙ্খ-ঘন্টাধ্বনি --- ইত্যাদি সবই যেন এক অনাবিল অপরূপ শিল্প-সুষমায় প্রীতিকূটকে সাজিয়ে রেখেছে। 

প্রীতিকূটের মধ্যস্থিত ব্রাহ্মণাধিবাসের গৃহগুলি সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বটুকদের অধ্যয়ন ধ্বনিতে উপাসনালয়ের মত মুখরিত থাকে। ব্রাহ্মণাধিবাসকে কেন্দ্র করে পল্লীর সীমানা অবধি নানা পেশা ও বর্ণের মানুষের বাস। তাদের গৃহগুলি অনাড়ম্বর অথচ পরিচ্ছন্ন। লোকালয়ের মাঝে মাঝে চণক ও সোমলতার ছোট ছোট ক্ষেত, কোথাও বা গোময়লিপ্ত প্রাঙ্গণে কিশোরীরা পাখিদের জন্য ছড়িয়ে দিয়েছে নীবারের কণা, কোথাও কৃষ্ণাজিনের উপরে বিছানো শ্যামাক শুষ্ক হচ্ছে রৌদ্রাতপে; শুকনো হলে তা থেকে তৈরি হবে পুরোডাশ। 

কামসূত্র প্রণেতা মহর্ষি বাৎস্যায়নের বংশজাত প্রীতিকূটের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আচার্য চন্দ্রভানু ভট্ট বেদাদি চতুর্দশবিদ্যায় সুপণ্ডিত। তাঁর গৃহটি যেন কোন প্রাচীন ঋষির আশ্রম। পুষ্প-লতার প্রাচীরবেষ্টিত প্রশস্ত সমচতুষ্কোণ ভূমির উপর পত্রাচ্ছাদিত মৃন্ময় কক্ষগুলি সুচারুভাবে সংস্থাপিত। প্রবেশপথের দুইপাশে ঔষধি ও ছোট পুষ্পবাগিচা। প্রাঙ্গণের মাঝামাঝি একটি ছোট আটচালায় আচার্যর চতুষ্পাঠী, সেখানে নিত্য প্রভাতে বটুকরা বিদ্যাশিক্ষা লাভ করতে আসে। একদিকে সারিবদ্ধ ভাবে পাকশালা, ঢেঁকিশালা ও ভাণ্ডার ঘর; অন্যদিকে পাশাপাশি দুটি শয়নকক্ষ; কক্ষগুলির তিন অরত্নি পরিমাণ উঁচু দাওয়া থেকে সোপানশ্রেণী নেমে এসেছে গোময়লিপ্ত পরিচ্ছন্ন প্রাঙ্গণে। কক্ষদুটির মধ্যে একটি সঙ্কীর্ণ পথ বাটীর পিছনের দিকে চলে গিয়েছে। সেখানে অনেকখানি জায়গা জুড়ে নিম্ব, বদরী, বিল্ব, পনস, হরীতকি, আমলকী, বিভীতকী ইত্যাদি নানা ধরণের বৃক্ষের সমাবেশে আচার্যদেবের গৃহটি নিবিড় ছায়াচ্ছন্ন ও শান্তিময়। 

শরৎ ঋতুর স্বর্ণাভ প্রভাতকাল। সূর্যালোকের সোনারঙ ক্রমশঃ স্ফটিকবর্ণে রূপান্তরিত হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই বটুকদের সম্মিলিত সুললিত কণ্ঠের সামগীত সমাপ্ত হয়েছে। পাঠ সমানাপন্তে তারা পাততাড়ি, কুশাসন ইত্যাদি গুছিয়ে মৃদুমন্দ কলধ্বনিতে আচার্যের গৃহপ্রাঙ্গণ বৈকালিক বলাকার মত মুখরিত করে বিদায় নিল। ওরা চলে যাবার পর চন্দ্রভানু তাঁর পুঁথিপত্র সযত্নে যথাস্থানে গুছিয়ে রেখে ধীর পদক্ষেপে অঙ্গনে এসে দাঁড়ালেন। পিছনের উদ্যান থেকে ভেসে আসা একটি মাত্র ডাহুকের ডাক গৃহের নৈঃশব্দ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

আচার্যদেবের বয়স পঞ্চাশোর্ধ হলেও তাঁর দীর্ঘ মেদহীন শরীর এখনো সর্জবৃক্ষের মতই ঋজু ও সবল। গাত্রবর্ণ পক্ক গোধূমের ন্যায়, প্রশস্ত ললাট, মুণ্ডিত মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে পুরুষ্টু শিখা, চক্ষুদ্বয় জ্ঞান ও মেধার আলোকে উজ্জ্বল। তাঁর পরণে দুগ্ধশুভ্র ধৌতি ও উত্তরীয়। 

চন্দ্রভানু চারিদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বান বা মালতি কাউকেই দেখতে পেলেন না। মনে পড়ল, আজ থেকে বাথান পর্ব শুরু হচ্ছে। ভগ্নী মালতি নিশ্চয় অন্যান্য পুরবাসিনীদের সঙ্গে গো-বাথানে গিয়েছে। আর বান! তাঁর প্রকৃতির মতই স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও ভাবুক কিশোর একমাত্র পুত্রটি যে কখন কোথায় থাকে, আর কি যে ভাবে, তা নিয়ে চিন্তা করাই বৃথা। 

প্রাঙ্গণের এক কোণে একটি শেফালী গাছের নীচে প্রস্তর ও মৃত্তিকা-নির্মিত বেদী, তার চারিপাশে ভোরের ঝরে পড়া ফুলরাশির মিষ্টি মধুর গন্ধে স্থানটি আমোদিত। আচার্যদেব বেদীতে এসে বসলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর মন থেকে পার্থিব সমস্ত চিন্তা অপসারিত হয়ে উপনিষদের একটি শ্লোক অনুরণিত হতে লাগল। 

--- ‘দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে।

তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশ্নন্নন্যোহভিচাকশীতি।।’ --- শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ

[সর্বদা সংযুক্ত সমান-স্বভাব দুইটি পক্ষী (জীবাত্মা ও পরমাত্মা) একই দেহবৃক্ষকে আশ্রয় করে রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি (জীবাত্মা) বিচিত্র স্বাদ-বিশিষ্ট সুখদুঃখরূপ কর্মফল ভোগ করেন, অপরটি (পরমাত্মা) কিছুই ভোগ না করে কেবল দেখে যান।] 

প্রীতিকূটের একেবারে পূর্বপ্রান্তে অনেকখানি জায়গা জুড়ে গো-বাথান। জনপদের ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ সকল সম্প্রদায়ের সকল মানুষই তার মালিক। গো-বাথানের সব রকম গব্যে সকলেরই সমান অধিকার। শতাধিক গোপালক ও শূদ্র রাখাল বালক বাথানের গোরুগুলির রক্ষণাবেক্ষণে সর্বক্ষণের জন্য নিযুক্ত আছে। বাথানেরই একপাশে তাদের বসবাসের জন্য সারিবদ্ধ পর্ণকুটির ও একটি পানীয় জলের কূপ রয়েছে। একপাশে দুগ্ধবতী গাভী, স্বাস্থবতী বকনা ও বাছুরগুলির জন্য গোশালা, অন্য পাশে পৃথক গোশালায় সতেজ ষণ্ড এবং বলদগুলির আস্তানা, সব মিলিয়ে গরুর সংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক। গোপালকদের তত্বাবধানে গোশালাগুলি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। বাথানের বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গনে অনেকগুলি শাল্মলী, কিংশুক, তিন্তিড়ি, তমাল, ছাতিম জাতীয় ঘন পত্রাচ্ছাদিত বড় বড় গাছ স্থানটিকে ছায়াচ্ছন্ন করে রেখেছে। মোটা মোটা কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশের মজবুত বেড়া দিয়ে বাথানের সীমানাটি ঘেরা। সীমানার বাইরে একটি বিশাল দীর্ঘিকা, সেটিরও চারপাশের তীরে নানা ধরণের গাছ থাকায় জল শীতল ও নির্মল। গোপালক ও রাখাল বালকেরা দীর্ঘিকার জলে গরুগুলিকে নিয়মিত স্নান করায়, নিজেরাও করে। তারপরেই দিগন্তব্যাপী তৃণক্ষেত্র, প্রীতিকূটের গোচারণভূমি। প্রতিদিন সকালে ও বৈকালে রাখালেরা গরুগুলিকে সেখানে চারণ করায়। 

গো-বাথানে উৎসব শুরু হয়েছে। পক্ষকালব্যাপী এই উৎসবের আনন্দ প্রীতিকূটের নিস্তরঙ্গ জীবনকে হিল্লোলিত করে তোলে। গতকাল ছিল গো-পার্বন। এই দিন অতি প্রত্যুষে গ্রামের শুচিস্নাতা এয়োস্ত্রীরা নতুন কাপড় পরে পোড়া মাটির পাত্রে লাক্ষারস, সিন্দুর, হরিদ্রা ইত্যাদি নিয়ে এসে গাভীগুলির দেহ রঞ্জিত এবং ষণ্ড ও বলদগুলির শৃঙ্গে ফুলের মালা জড়িয়ে দিয়ে বরণ করেছে। কয়েকদিন আগে থেকেই প্রীতিকূটের যুবাপুরুষেরা গোপালকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাথান-প্রাঙ্গনের লতাগুল্মাদি পরিষ্কার ও গোময় লিপ্ত করে তকতকে করেছে। মাঝে মাঝে বংশদণ্ড এবং পত্র-পুষ্পে সাজিয়ে তোরণও রচিত হয়েছে। তোরণগুলির মাথায় নানা রঙের বস্ত্রখণ্ডের নিশান মৃদু বাতাসে আন্দোলিত হচ্ছে। বাথান উৎসব গোমাতার পূজা; জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে অঞ্চলের সকল মানুষই এই বৎসরকালীন উৎসবে মহানন্দে সামিল হয়। ভোর থেকেই আশপাশের গ্রামগুলি থেকে বড় বড় ডালা, ঝুড়ি ও বাঁকে করে নতুন ফসল, ফল-মূল, আনাজপাতি প্রভৃতি নিয়ে মানুষ আসতে শুরু করেছে। গাভীমাতাকে তুষ্ট করতেই তাদের এই উপাচার। পূজার পরে এই সবই রান্না হবে। উৎসবের প্রথম ও শেষ দুটি দিন প্রীতিকূটের প্রতিটি ঘরেই অরন্ধন, গো-বাথান প্রাঙ্গনেই পঙক্তি ভোজন। একপাশে বড় বড় অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জলিত করে রন্ধন বিশারদরা ইতিমধ্যেই রন্ধনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পূজা-পাঠ ইত্যাদি প্রথম প্রহরেই সমাপ্ত হয়েছে, দিনের দ্বিতীয় প্রহরে মূল উৎসবের সূচনা তারপরে ভোজন পর্ব। শবর ও কিরাত সম্প্রদায়ের লোকেরা গত দু দিন ধরে তমসার তীরবর্তী জঙ্গল ও পিছনের টিলায় ফাঁদ রচনা করে প্রচুর হরিণ, ময়ূর, খরগোশ, বন্য-কুক্কুট ধরেছে। তারা প্রীতিকূটের সীমানার বাইরে গোষ্টিবদ্ধভাবে বাস করলেও এই সার্বজনীন উৎসবে সামিল হতে কোন বাধা নিষেধ নেই। তারা এখন নারী-পুরুষ মিলে বাথানের বাইরে তরাগের পাশে বসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের শিকার করা প্রাণীগুলির মাংস পরিস্কার ও খণ্ডিত করছে। একটি লতাকুঞ্জের আড়ালে বিশালদেহী কৃষ্ণকায় এক অনার্য পুরুষ মাধ্বী, সীধু, পৈষ্টী, ইত্যাদি নানা ধরণের সুরাভাণ্ড নিয়ে বসেছে। তার মুখের হাসিটি শিশুর মতই অনাবিল। বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষেরা অনেকেই কর্মের অবসরে দু-এক ভাণ্ড সেবন করে যাচ্ছে। 

বাথান উৎসবে সব চেয়ে আনন্দ সদ্য যুবক-যুবতীদের। এই কয়টি দিনে তাদের উপর অভিভাবকদের অনুশাসনের তর্জনি উত্তোলিত হয় না। বয়স্করা পুজা ও উৎসবের নানা অনুসঙ্গের তত্বাবধান করতে, আর হয়ত বা কিছুটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাঁদের শাসনের বন্ধনকে কিছুটা শৈথিল্য দেন। সুতরাং সারা বছর ধরে তরুণ-তরুণীরা যে এই ক’টি দিনের জন্য বিশেষ উন্মুখ হয়ে থাকবে তাতে আর আশ্চর্য কি! 

উৎসবের সময়ে আর একটি প্রয়োজনীয় কর্ম হয়। সেটি হল, কাঠের ইক্ষু মর্দন যন্ত্র দিয়ে ইক্ষু-রস নিষ্কাশন। তারপর বড় বড় অয়স-কটাহে সেই রস জ্বালিয়ে গৌড়দেশীয় পদ্ধতিতে গুড় তৈরী হয়। সকাল থেকেই বান তার সঙ্গীদের সঙ্গে ইক্ষুমর্দন যন্ত্রের পাশে বসে আছে। তাদের প্রত্যেকের হাতেই একটি করে ছোট মাটির ভাণ্ড। মর্দনকারীরা যন্ত্রটিকে ধুয়ে পরিষ্কার করছে, গো-শকটে ইক্ষুদণ্ডের বোঝা আনা হচ্ছে, কয়েকজন সেগুলিকে নামিয়ে হাতের কাছে গুছিয়ে রাখছে। রস নিষ্কাশন হতে এখনও যথেষ্ট বিলম্ব থাকলেও বালকগুলির কোন তাড়া নেই। তারা উৎসুক চোখে ওদের কাজ দেখছে এবং যন্ত্র থেকে ইক্ষুরস নির্গত হওয়ার কাঙ্খিত সময়টির জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে। যন্ত্রচালকদের নিয়ামক বৃদ্ধ মানুষটি শ্রদ্ধেয় আচার্য চন্দ্রভানুর এই কন্দর্পকান্তি পুত্রটিকে ভালরকম চেনে। সে কাজের ফাঁকে একবার এসে বানের ঘন কুঞ্চিত চুলে আদরের হাত বুলিয়ে বলে গিয়েছে, বাছারা একটু অপেক্ষা কর, রস বেরোলেই আগে তোমাদের ভাঁড়গুলো ভরে দেব। বালকেরা বৃদ্ধের কথায় বিশ্বাস করেছে। 

পিতৃস্বসা মালতি সেই সময় তার সঙ্গিনীদের সঙ্গে গো-বাথানের একটি পত্র-পুষ্পবহুল কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে বেদীতে পা ঝুলিয়ে বসে তরুণীসুলভ নানা রসিকতায় মগ্ন। মালতির সাজ-পোশাক সাধারণ হলেও সে অত্যন্ত রূপবতী ও সুরসিকা কিন্তু প্রগলভা নয়। মাত্র কিছুদিন আগেই তার পুষ্পোৎসব হয়ে সে কৈশোর– যৌবনের সন্ধিক্ষণে পা রেখেছে। সৈন্ধব লবণ আর কাঁচা মরিচ সহযোগে করঞ্জক ও তিন্তিড়ি খেতে খেতে পাশে বসা সখীর কি একটা কথায় মুক্তাবিনন্দিত দন্তে অধর দংশন করে মরালগ্রীবাটি বামদিকে ঈষৎ হেলিয়ে ষণ্ডদের গোহালের দিকে তাকালো। দেখল, বাদলের ঘন মেঘবর্ণ একটি যুবক বিশালাকৃতি ষণ্ডগুলিকে গোহাল থেকে গো-বাথানের চত্বরে বের করে আনছে। যুবকটির ঘাড় পর্যন্ত লোটানো চুল কপালের কাছে একটা লাল ফেট্টি দিয়ে বাঁধা, পুরু ঠোঁট, নাক কিঞ্চিৎ চাপা, কিন্তু চোখদুটির বড় মায়াময়। ওর সঙ্গিনীরা তখন কি একটা রসিকতায় এ ওর গায়ে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। মালতি অপাঙ্গে আর একবার যুবকটিকে দেখল, সে নির্বিকার ভাবে ষণ্ড ও বলদগুলিকে বাথান-প্রাঙ্গনের খুঁটিতে বাঁধতে ব্যস্ত। তার পেশল তাম্রাভ শরীরের দিক থেকে চোখ ফেরানোর আগেই প্রিয় সহচরী দীপিকা হেসে বলল, কি রে মালতি, শেষ পর্যন্ত ওই অনার্য পুরুষটিই যে তোর কঞ্চুলিকার ভিতরে ভূকম্প বাঁধিয়ে দিল! 

--- যাঃ, কি যে বলিস! তুই ভারী অসভ্য! মালতি ছদ্মকোপে উষ্মা প্রকাশ করল। 
--- ওহে গোপালক, একবার এদিকে এসো তো! দীপিকার কথা শুনে প্রগলভা রোহিণী যুবকটিকে লক্ষ্য করে উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠল। 

গোপালক তার হাতে ধরা ষণ্ডের রজ্জুটি একটি খুঁটিতে বেঁধে এগিয়ে এলো। তার শরীর ও মনের কুন্ঠিত ভাব দেখে রসিকারা নিজেদের সংবরণ করতে না পেরে খিলখিল করে হেসে উঠল। মালতি কিন্তু সঙ্গিনীদের কলহাস্যে সামিল না হয়ে নিজেকে ছদ্ম গাম্ভীর্যের আবরণে ঢেকে অন্য দিকে একটি পত্র-পুষ্পশোভিত তোরণের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগল। 

--- কি নাম গো তোমার? দীপিকা হাসিমুখে শুধালো। 

--- আজ্ঞে বিধু, যুবক লজ্জা-কুন্ঠিত গলায় উত্তর দিল। 

--- বিধু! বিধু মানে তো চাঁদ! পাশ থেকে এক রসিকা যুবতী সহাস্যে বলল। 

--- এই মাটির কৃষ্ণচন্দ্র যে সদ্য প্রস্ফুটিত মালতিকেও তার চন্দ্রমায় মাতোয়ারা করে দিয়েছে, দীপিকা বলল। 

--- যাঃ, তোরা যে কি বলিস! মালতি অস্ফুটে বলতে গেল, আড়চোখে সে বিধুকে দেখছে, আশ্চর্য এক অনুভূতির স্রোতধারা তার অনাঘ্রাতা কুমারী শরীর ছুঁয়ে প্লাবিত হয়ে চলেছে। 

--- আমি যাই গো ঠাকরুণরা, অনেক কাজ বাকি আছে যে! বিধু এই উদ্ভিন্নযৌবনা রসিকাদের হাত থেকে যেন মুক্তি পেলে বাঁচে!

--- যাও, তবে ডাকলে এসো বাপু কালাচাঁদ, দীপিকা বলল, কি জানি মালতির যদি বিশেষ কোন দরকার পড়ে। 

--- যে আজ্ঞে, বিধু চলে গেল। মালতি ও তার সহচরীদের মরালীর মত কলহাস্যে গো-বাথানের প্রাঙ্গণ সকালের নির্মল সূর্যালোকের মত উদ্ভাসিত করে তুলল। 

ইতিমধ্যেই গো-বাথানে প্রীতিকূট ও অন্যান্য জনপদবাসীদের বেশ ভিড় জমে গিয়েছে। সকলেরই পরণে নতুন পোশাক। কিশোরী, যুবতী ও অল্পবয়স্কা বধূদের সাজ-সজ্জায় বিশেষ ঘটা; পুরাতনীদের অঙ্গেও অন্যান্য দিনের আটপৌরে সাজের বদলে মানানসই পোশাক। এমনকি আচার্য চন্দ্রভানুর মত রাশভারী বিদগ্ধ মানুষও তাঁর সমবয়সী কয়েকজন শ্রদ্ধেয় পণ্ডিতদের সমভিব্যহারে উৎসব-প্রাঙ্গনে এসে উপস্থিত হয়েছেন; এঁদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। একটি ছায়াচ্ছন্ন গাছের নীচে বেদীতে তাঁরা বসা মাত্র ইক্ষু-মর্দনের বৃদ্ধ নিয়ামক নিজে এসে তাঁদের প্রণাম জানিয়ে রসপূর্ণ ভাণ্ড দিয়ে অভ্যর্থনা করেছে। পণ্ডিতেরাও আজ আর নিজেদের অহংকার বা গাম্ভীর্যের আবরণে নিজেদের ধরে রাখেন নি, নিজেদের মধ্যে রসালাপ ও হালকা রসিকতায় বেশ মেতে আছেন। 

বান ও তার সঙ্গী-সাথীরা প্রাণ ভরে ইক্ষুরস পান করে নতুন নতুন খেলা উদ্ভাবন করে সমস্ত প্রাঙ্গণ জুড়ে ছুটোছুটি করছে। তাদের বালসুলভ চপলতা ও কৌতুকক্রীড়ায় সারা গো-বাথান মুখরিত। এরই মধ্যে তারা একটি সুবৃহৎ রসাল বৃক্ষের শাখায় রজ্জু ও কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে একটি দোলনাও ঝুলিয়ে ফেলেছে। 

বয়স্ক কয়েকজন এরই মধ্যে মাধ্বী পান করে কিঞ্চিৎ প্রগলভ। নিজেদের বয়স ও আভিজাত্য ভুলে যেন ফেলে আসা যৌবনের দিনগুলিতে ফিরে গিয়েছেন, তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে অসংলগ্নতা ও চটুলতার প্রকাশ। 

আচার্য চন্দ্রভানু বয়স্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গো-বাথানের চারিদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাঁর কৈশোর-যৌবনের দিনগুলির কথা স্মরণ করে মনে মনে আমোদিত হলেন। কিছুক্ষণ সঙ্গীদের সঙ্গে কাটিয়ে এক সময় উঠে দাঁড়ালেন, প্রীতিকূট ও সংলগ্ন জনপদবাসীদের এই মিলন উৎসবের আনন্দময় পরিবেশে তাঁর মুখমণ্ডল প্রশান্ত। তিনি অলস পদবিক্ষেপে গোশালার পাশ দিয়ে বাথানের উত্তর সীমানার দিকে এগিয়ে গেলেন। অদূরে অনার্যরা মাংস প্রস্তুত করতে ব্যস্ত; তাদের পাশ দিয়ে সামনের ফসলের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে একটি পায়ে চলা পথের বঙ্কিম রেখা দূরে মিলিয়ে গেছে। অন্য পাশে দুটি গাছের মাঝখানে মাধবীলতা কুঞ্জ থেকে উচ্ছল নারী-কন্ঠের কলধ্বনি শুনে একটু হাসলেন তিনি। মেয়েদের কাকলির মধ্যে তাঁর প্রিয় ভগ্নীর কন্ঠস্বর চিনতে তাঁর ভুল হল না। দেখলেন গোশালাটি সেই মুহূর্তে অরক্ষিত, কোন গোপালক চোখে পড়ল না। গাভী ও ষণ্ড-বলদগুলি যথাস্থানে বাঁধা রয়েছে, কেবল দুটি গোবৎস ইতস্ততঃ ছোটাছুটি করছে। একটি সদ্যঃপ্রসূত গোবৎস নব পদবিক্ষেপের উৎসাহে সীমানার কাছে কদলিকা-বাগিচার দিকে চলে গিয়েছে দেখে পরম মমতায় সেটিকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক পা এগিয়ে চিত্রবৎ স্থির হয়ে গেলেন আচার্য চন্দ্রভানু। তাঁর কূর্চভাগ-এর রেখাটি গভীরতর হল, ওষ্ঠাধর দৃঢ় সংযুক্ত। সামনের দিগন্তব্যাপী জনহীন ফসলের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা পায়েচলা পথটি যেখানে মিশেছে সেখানে একটি ধূলিঝড় ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে। আচার্য স্থির দৃষ্টিতে একটু সময় সেই দিকে তাকিয়ে বুঝলেন সেটি একটি মানুষের দল। এত দূর থেকে সঠিক বোধগম্য না হলেও অনুমানে বুঝলেন তারা সংখ্যায় শতাধিক তো হবেই! চন্দ্রভানু প্রথমে ভেবেছিলেন তারা গ্রামান্তরের মানুষ, গো-বাথান উৎসবে যোগ দিতে আসছে। কিন্তু তাদের পরণের কৃষ্ণ বর্ণের পোশাকটাই তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, বাথান উৎসবে কেউই কখনো কাল রঙের পোশাক পরে না, তা অমঙ্গলের প্রতীক। আগন্তুকরা এখনও যথেষ্ট দূরে আছে, তাদের গতি বেশ দ্রুত হলেও পদব্রজে তাদের বাথানে পৌঁছাতে অন্ততঃ দুই দণ্ড লাগবে। এই সময় বাথানের সকলেই নিশ্চিন্তে উৎসবের আনন্দে মেতে রয়েছে, তাঁর অনুমান যদি সত্য হয় তাহলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। তিনি তীব্র-গম্ভীর স্বরে ‘ধানুউউক’ বলে ডাক দিলেন। চন্দ্রভানুর মত স্থিতধী মানুষের হঠাৎ এ ধরণের চীৎকার শুনে কাছাকাছি যারা ছিল, তারা সকলেই বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে গেল। অন্যান্যরা আসার আগেই একজন কালো কষ্টি পাথরে খোদাই করা মূর্তির মত মধ্য বয়স্ক মানুষ যেন মাটি ফুঁড়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালো। লোকটির মাথায় কাঁচাপাকা ঘন কুঞ্চিত বাবরি চুল, মেদহীন, পেশী ও শিরাবহুল শরীরের প্রতিটি কোষে যেন এক অফুরন্ত শক্তি সংরক্ষিত হয়ে আছে। তার হাতে মানুষ-প্রমাণ একটি মোটা বেত্রযষ্টি, নিয়মিত পরিচর্যায় সেটি তার ধারকের মতই তৈল-চিক্কণ। এ অঞ্চলের লোকেরা জানে ধানুকের হাতে ঐ বেত্রদণ্ডটি থাকলে বিশ জন পুরুষও তার সমকক্ষ হতে পারে না; দণ্ডটি সে এমন বেগে ঘোরায় যে দূর-নিক্ষিপ্ত তীরও তাতে প্রতিহত হয়ে যায়। 

অল্পক্ষণের মধ্যেই বাথানের বেশীরভাগ প্রৌঢ় ও যুবা পুরুষেরা ছুটে এল। চন্দ্রভানু দূরের দৃশ্যটির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, আমার অনুমান যদি সঠিক হয়ে তাহলে ঐ লোকগুলি এই ধূমল প্রদেশের সামন্ত রাজা দুর্জয়ের আজ্ঞাবহ দুর্বৃত্ত। ধন-সম্পদের চেয়েও কিশোরী ও যুবতী নারী এবং গো-সম্পদের ওপরেই ওদের বেশী লোভ, আর স্বার্থসিদ্ধির জন্য ওরা যে চরম নিষ্ঠুর, শিশু-বৃদ্ধ-নারী কেউই ওদের নৃশংসতার হাত থেকে রক্ষা পায় না, এবং সব রকম অমঙ্গল কাজ করতে সিদ্ধহস্ত তা তো সকলেরই জানা, সম্ভবতঃ সেই কারণেই প্রীতিকূট অরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও ওরা আমাদের গো-বাথানে আজকের এই উৎসবের দিনটিকেই বেছে নিয়েছে। 

--- ওরা তো শক্তিশালী ও সশস্ত্র, একজন সভয়ে শুধালো, ওদের মত নৃশংস লুন্ঠকদের সঙ্গে কি করে আমাদের নারী-শিশুদের রক্ষা করব আচার্যদেব? 

--- শক্তি বা যুদ্ধ-কৌশলে আমরা যে ওদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারব না তা আমিও জানি, চন্দ্রভানু গম্ভীর গলায় বললেন, আমাদের বুদ্ধি ও চাতুর্যের সঙ্গে ওদের প্রতিহত করতে হবে। 

--- আপনি আমাদের আদেশ দিন ও পরিচালিত করুন আচার্যদেব, ধানুক বলল, উপস্থিত অন্যরাও তার কথার সমর্থন জানালো। 

--- দ্যাখো আমরা এখানে উৎসব করতে এসেছি, সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হয়েও আসিনি, তাছাড়া আমাদের হাতে সময়ও বেশি নেই, সুতরাং অবস্থার বিচার করে কৌশলের দ্বারাই ওদের প্রতিহত করতে হবে, চন্দ্রভানু সামান্য সময় চিন্তা করে বললেন, সাধারণ ভাবে যা অস্ত্র নয় সেগুলিকেই অস্ত্রে পরিণত করে নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। 

গোপালকদের দলপতি শ্রীনিবাসকে ডেকে বললেন, তুমি আমাদের গোধন ও গোশালা রক্ষার ভার নাও। বাথানের সব গরুগুলিকে গোশালার ভিতরে ঢুকিয়ে তোমার দলের লোকজনদের নিয়ে পাহারা দাও, প্রত্যেকের হাতে লাঠি বা যে কোন অস্ত্র অবশ্যই রেখো। শ্রীনিবাস ঘাড় নেড়ে নির্দেশ পালন করতে চলে গেল। 

প্রিয় বয়স্য বিনোদ ভট্টর কাঁধে হাত রেখে আচার্য বললেন, বন্ধু তুমি কয়েকজন শক্তিশালী যুবককে নিয়ে মেয়েদের সুরক্ষার দায়িত্ব নাও। গোশালার পিছনের যে অকর্তিত ইক্ষু ক্ষেতটি আছে, তার অন্তরালে আত্মগোপন করাই শ্রেয় হবে। এখন তো ওদের নিয়ে প্রীতিকূটে যাওয়া ঠিক হবে না, কারণ দুর্জয়ের হানাদাররা হয়ত সেখানে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে! বিধু পাশেই দাঁড়িয়েছিল, সেও নিঃশব্দে বিনোদ ভট্টর অনুগামী হল। 


--- ধানুক, তুমি ওই শবর, কিরাত আর বাথানের বাকি সব সমর্থ পুরুষদের দুভাগে ভাগ করে একাংশকে চারিদিকের বড় বড় গাছের ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে বল, শবরদের নিত্যসঙ্গী তির-ধনুক ইত্যাদি ছাড়া বেশি শস্ত্র তো আমাদের সঙ্গে বেশি নেই! তাই ওদের সবাই যেন যতটা সম্ভব প্রস্তর খণ্ড সঙ্গে রাখে। আর তুমি নিজে সবচেয়ে বলশালী এবং লাঠি চালনায় দক্ষ সৈরিকদের নিয়ে বাথানের অনেকটা আগে দুর্বৃত্তদের আগমন পথের দুপাশে একটু দূরত্ব রেখে শস্যক্ষেত্রের মধ্যে সরীসৃপের মত বুকে হেঁটে ঢুকে নিশ্চল কিন্তু সজাগ হয়ে আত্মগোপন করে থাকবে। 

--- কিন্তু ধরুন ওরা যদি কোন দুস্কৃতি না হয়? আচার্যর এক বয়স্য চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলেন। 

--- এ বিষয়টিও আমি চিন্তা করেছি বন্ধু, চন্দ্রভানু উত্তর দিলেন, আমি নিজে সবার পুরোভাগে ওই যে ঐ ঘন নিচুল-এর ছোট ঝোপটি রয়েছে সেখানে প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থান করব; আমি দক্ষিণ হস্ত উত্তোলন করলেই ধানুক বুঝবে ওরা আক্রমণকারী। ওরা অতিক্রম করে এলেই বাথানে প্রবেশের আগেই সে সৈরিকদের নিয়ে ওদের পিছন থেকে অতর্কিতে আক্রমণ করবে, তারপর গাছের উপর থেকে বাকিরা --- শেষে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। কিন্তু সাবধান! খুব অপারগ না হলে দেখো যেন অযথা কোন প্রাণহানি না হয়। 

--- কিন্তু ওরা সামন্ত দুর্জয়ের নির্দয় ঘাতক বাহিনী হলে তো আপনার জীবন সংশয় হতে পারে! 

--- আচার্য চন্দ্রভানু প্রিয় সঙ্গীর এ কথার উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলেন। 

আচার্যদেবের পরিকল্পিত ব্যুহ অনুযায়ী ধানুকের তত্ত্বাবধানে সকলেই অত্যন্ত দ্রুত আসন্ন বিপদের সম্মুখীন হতে প্রস্তুত হল। মাংস ও অন্যান্য খাদ্য সম্ভারগুলি মাধ্বী বিতরণকারী সেই বিশালদেহী অনার্যের কাছে সরিয়ে এনে রাখা হয়েছে। সেখানেও দশজন বলবান পুরুষ পাহারায় আছে। উৎসবমুখর প্রাঙ্গনটিতে এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। তাঁর নির্দেশে বয়স্করা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছেন, এবং বাহ্যত রন্ধনকার্যও যথারীতি চলতে থাকল। কিন্তু রন্ধন বিশারদরা এখন কেবল বিশাল বিশাল পাত্রে জল ভর্তি করে উনানে চাপিয়ে দিয়ে তাদের লোহার ভারি ভারি হাতা-খুন্তি ও জ্বালানির জন্য আনা মোটা মোটা কাষ্ঠখণ্ডগুলিকে হাতের কাছে সাজিয়ে রাখছে। চন্দ্রভানু আর একবার সব কিছু ভাল করে দেখে নিয়ে সন্তুষ্ট মনে দৃঢ় পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। 

শুধু বান ও তার সঙ্গীদের কোথাও দেখা গেল না। ---- (ক্রমশঃ প্রকাশ্য)

1 comment: