রম্যরচনাঃ দিশাহীন ধ্রুবতারা
Posted in রম্যরচনা
যমরাজের সাক্ষাৎকার
দিশাহীন ধ্রুবতারা
যমরাজ তখন সবে খেতে বসেছেন। বাইরে শোরগোল শোনা গেল। চিত্রগুপ্ত হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে বলল, “মহারাজ, সর্বনাশ হয়েছে!” বিরক্ত যমরাজ মাংসের হাড় মুখে নিয়েই বললেন, “তোমার তো রোজই কিছু না কিছু সর্বনাশ হয়। ঝামেলা না পাকিয়ে খেতে দাও তো!” বাইরে শোরগোল বেড়েই চলেছে। হঠাৎ বিচিত্রগুপ্তের হাঁউমাঁউ চিৎকার শোনা গেল, “হায় প্রভু! একি সর্বনাশ হল!” যমরাজ তখনও জানেন না কি হয়েছে। চিত্রগুপ্ত চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “রাজামশাই, কোথাকার দু’টো উজবুক যমদূত দু’জন জ্যান্ত মানুষকে ধরে এনেছে।” যমরাজের মুখ থেকে মাংসের হাড় খসে পড়লো। “এতো উজবুক গাধাদের দল নিয়ে আমি মরতে কেন যে লাশ নিয়ে ব্যাবসা শুরু করলাম! উফ্ এদের দিয়ে একটা কাজও ঠিকমত হয় না। একটা কাজ করতে দশটা ভুল করে রাখে। আপদ যত সব আমার কপালেই এসে জুটেছে!” রাগ হবে নাই বা কেন! এযে তাঁর গদি নিয়ে টানাটানি। দেবরাজের কাছে খবর পৌঁছালে যে কি হবে! আর তিনি যদি ত্রিলোকেশ্বরকে জানান তাহলেই সেরেছে! যমরাজের কয়েকদিন ভাগ্যটাই খারাপ যাচ্ছে। আজকাল বিষ্ণুদেব রোজই নারদকে পাঠাচ্ছেন সব খবর নিতে। এদিকে মহাদেবের কাছে ঝাড় খাওয়া যেন রোজকার কাজ দাঁড়িয়ে গেছে। ইতিমধ্যে খবরদারির জন্য দু’টো ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো মোতায়েন হয়ে গেছে। ব্রহ্মা চাপ দিচ্ছেন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসাবেন। তায় এ এক নতুন ঝামেলা!
সভায় এসে দেখলেন, সামনে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে দুই যমদূত। দেখেই রাগে চেঁচিয়ে দু’টো খিস্তি মেরে বললেন যমরাজ, “এ শালা দুটোকে জুতিয়ে বার করে দে কেউ!” সঙ্গে সঙ্গে সভার এক কোন থেকে তীব্র হাসির শব্দ ভেসে এলো। ঘাবড়ে গেলেন তিনি। আবার চিৎকার করে বললেন, “কার এতো হাসি পেয়েছে রে?!” পেছন থেকে বেরিয়ে এলো দু’টো মানুষ। একজনের কাঁধে বড় ভিডিও ক্যামেরা। অন্যজনের এক হাতে ডিএসএলআর আর অন্য হাতে মাইক্রো ক্যাসেট রেকর্ডার। “সরি স্যার, কিছু মনে করবেন না। আপনার খিস্তি শুনে হাসি পেয়ে গেল।”
-খিস্তি শুনে হাসি পাওয়ার কি আছে?!
-না, মানে, আসলে কিনা এসব খিস্তি আমাদের কাছে ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে!
মাথা চুলকোলেন যমরাজ। এরা আবার কি দাবী করবে, ভগবান জানে! নাহ, এদের সাথে সাবধানে কথা বলতে হবে। বুঝিয়ে বলতে হবে। অর্ডার পড়ল, “ওরে কে আছিস, দু’টো চেয়ার দিয়ে যা। দেখছিস না, ওঁরা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন!” সঙ্গে সঙ্গে দু’টো চেয়ার এসে গেল। সাথে দু’টো প্লেটে মিষ্টি আর জল। “কতক্ষণ আর খালি পেটে থাকবে। বসে খাও আগে, তারপর কথা হবে।” ক্যামেরা কাঁধে ছেলেটি বলে উঠল, “আহা এসবের কি দরকার ছিল! তবে রাগ করবেন না, আমরা একটা করে মিষ্টি নাহয় খাব।” একটা মিষ্টি মুখে দিয়েই ছেলেটা পাশের ছেলেটিকে বলে উঠল, “ভাই রাজদীপ, এতো সেই হলদিরামের শোনপাপড়ি রে! আজকাল যমলোকেও হলদিরামের ব্রাঞ্চ খুলে গেছে নাকি রে! রাজদীপের হাতেও মিষ্টি, ডিএসএলআর টা গলায় ঝোলানো। রাজদীপ শুধু মাথা নেড়ে বলল, “হুঁ”। ছেলেটি আবার বলল, “স্যার, আপনি এ মিষ্টি কোথায় পেলেন?! এখানেও হলদিরাম আছে?!” যমরাজ বললেন, “বাবা, এ মিষ্টি আমার নিজের হালুইকর বানিয়েছে।” রাজদীপ বলে উঠল, “জিজ্ঞেস করে দেখবেন, পৃথিবীতে থাকা কালীন নিশ্চয়ই সে হলদিরামে কাজ করত!” যমরাজ সুযোগ বুঝে কথা শুরু করলেন, “তা বাবা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমরা ভুল করে তোমাদের ধরে এনেছি। তোমাদের আবার দিয়ে আসবো। কিন্তু দেখ বাবা একথা কাউকে বল না যেন! দেবরাজ জানলে আমার কান কেটে নেবেন! তা তোমাদের আর কিছু বলার আছে? এখানে ঘুরে দেখতে পার কিছুক্ষণ যদি ইচ্ছে হয়।” রাজদীপ বলল, “না স্যার, আমরা এসেই একটু ঘুরে নিয়েছি। কোনও ব্যাপার নয়, স্যার। তবে আপনার কাছে কিছু জিনিস জানার ছিল। কাইন্ডলি যদি একটু কিছু জিনিস বলেন তো খুব ভালো হয়।”
-হ্যাঁ বাবা, বল।
-স্যার, আপনার বয়স কত হল?!
-তা ধর, ৫০ হাজার তো বটেই। আমি হিসাব রাখি না।
-সেকি স্যার, আপনি এতদিনেও রিটায়ার করেন নি?
যমরাজের মুখে কথা সরল না। এরা বলে কি! আবার প্রশ্ন ধেয়ে এলো, “আপনি কিভাবে স্বর্গ আর নরকের জন্য মানুষ বাছেন?”
-তা বাবা, সেটা পাপ পুণ্যের উপর নির্ভর করে। যদি কেউ সারাদিন মেয়েদের দেখে শিষ দেয়, সে তো আর সর্গে যাবে না! আজকাল সব রেপকেসের পাপীরা আসছে। অনেক ঝামেলাকর ব্যাপার।
-তা স্যার, আপনি কখনও ঘুষ নিয়ে নরকের লোককে স্বর্গে পাঠান নাকি?
-একান্তে বলছি বাবা, গোপন রেখ। তা মাঝে মাঝে হয় বই কি!
-ও, আচ্ছা, চিত্রদার বয়স কত হল?
চিত্রগুপ্ত কাঁপা গলায় উত্তর দিল, ৪৫ হাজার। রাজদীপ বলে উঠল, “ও, আপনারও রিটায়ারমেন্ট নেই! বাহ! তা স্যার, আমাদের পৃথিবীতে কি চলছে জানতে পারেন নিশ্চয়ই?”
-তা পারি বাবা মাঝে মাঝে।
-তাহলে স্যার আমাদের মৃত্যু আটকান না কেন?!
-আর বল না। আমাদেরও তো কাজ এটাই। কমিশন আটকালে খাব কি?! তায় এখন আবার ইয়ার এন্ডিং এর চাপ আছে।
-তা স্যার, আপনার একটা ছবি নিতে পারি তো?! আমার নিজস্ব সংগ্রহের জন্য?
-নিজস্ব সংগ্রহ?! তাহলে নিতে পার। কিন্তু কাউকে দেখিও না বাবা, তাহলে আমার জেল হয়ে যাবে।
ডিএসএলআর এ ছবি তুলে রাজদীপ বলল, “দারুণ এসেছে। ঠিক আছে স্যার, আমরা তবে চলি”
এরপর রাজদীপ যা বলল শুনে যমরাজ সিংহাসনেই মূর্ছা গেলেন।
অন্য ছেলেটির কাঁধের বড় ক্যামেরাটির দিকে ফিরে রাজদীপ বলে উঠল, “এতক্ষণ আপনারা দেখছিলেন, যমলোক থেকে লাইভ। ক্যামেরায় সুখেন দে র সাথে আমি রাজদীপ দত্ত। চ্যানেল আনন্দ সংবাদ।”
লাইভ টেলিকাস্ট অব যমালয় । হাই 'টি আর পি' অ্যাণ্ড নো কমার্শিয়াল ব্রেক ! ব্লক বাস্টার ব্রেকিং নিউজ ফ্রম *আনন্দ ।
ReplyDelete