0

অণুগল্পঃ অপরাহ্ণ সুসমিতো

Posted in

অণুগল্প





সমান্তরাল
অপরাহ্ণ সুসমিতো







দোলনায় দোল খেতে খেতে আমি রঙ্গীন দিনগুলোতে ভেসে যাই। সুবর্ণ বিকেলে ডুবে যাই।


আলো মাখা একেকটি আদি সকাল, ঝলসানো দুপুর, মায়ের বেড়ে দেয়া গরম ভাতের ধোঁয়ার সৌরভে হারাতে থাকি। 


দোলনার রশির বাঁধনে সন্ধ্যার প্রভা ছুঁয়ে যায়, আনমনে ঝিকঝিক করতে করতে সাঁওতাল সময় হুমহুম করে দৌঁড়ে যায়। টের পাই এক এক করে স্বপ্ন রাজকুমার ছুটে যাচ্ছে দূর পরগণায়।

আমার বাবা দরিরাম হাই স্কুলের শিক্ষক। একদিন সন্ধ্যায় বাবা ছুটে ছুটে এসে বাড়িতে জানালেন যে আমাকে দেখতে ছেলে পক্ষ আসবে । বাড়ি জুড়ে হৈ রৈ। বড় ভাইয়া ছুটে চলে গেল পশ্চিমে,মিষ্টি আনতে। মা বসবার ঘরে ফুল তোলা টেবিলক্লথ সাজায়,ছোট বোন কোথা থেকে কিছু ফুল এনে ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখে। 


ছেলে বিসিএস (ট্যাক্স) ক্যাডারের। নির্দিষ্ট সময়ের ২ ঘন্টা পরে এলো। বসায় এক ধরনের তাচ্ছিল্যভাব। মা আমাকে সাজুগুজু করানোর জন্য মহাব্যস্ত হয়ে উঠেছিল,আমি সাজিনি। গলা ফাটিয়ে বলেছিলাম,মা আমি বিয়ে করবো না এখন।


কিছু চাইনা চাইনা করে যে সব বিষয়ের কথা বললেন তাতে আমার শিক্ষক বাবার ঘাম ছুটে গেল। মায়ের মুখটা একদম গোল হয়ে গেল নীলে। বুঝতে পেরেছিলাম যে বাবার সমস্ত কিছু বিক্রি করেও সেসব মেটানো সম্ভব নয়। 


কোনো কষ্টই আমাকে স্পর্শ করলো না। ফেসবুকে লিখলাম;


আমার মুক্তি আলোয় আলোয় ...


কতো যে লাইক,কতো মন্তব্য। এক ভাইয়া জনাতে চাইলেন কী হয়েছে..


ভাইয়াকে সব খুলে বললাম। ভাইয়া লোকটাকে একচোট গালিগালাজ করলো। কতো কী যে প্রগতির কথা। নারীমুক্তির কথা। টের পেলাম এই প্রগতিশীল ভাইয়ার প্রতি আমি দুর্বল হচ্ছি।


আমাদের দেখা হতে লাগল সঘন। আমরা পাখ পাখালির মতো উড়তে লাগলাম। 


আচানক আজ ঘুম থেকে উঠে দেখি ভাইয়ার স্ট্যাটাসে বিয়ের সুখবর। ভাইয়ার ঝলমলে ছবির পাশে গহনায় সঘন এক বধুর ছবি।



মনে হলো সব কিছু উড়ে যাচ্ছে গ্রেনেট পাখির মতো কিছু ধ্বনির মতো। পলাতক হরিয়ালের মতো। না না আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে না। 


কষ্টে আমি কাঁদি না। হাসি। হাসতে হাসতে আমার চোখ ভিজে যায়। 



বাবার নুয়ে পড়া মুখের আদল ছুঁয়ে আমি হাসতে হাসতে বলি;



দু:খ আর কতো বেশি করে আসবি ? আয় আয় 



আবারো দোলনায় দোল খেতে খেতে ভেসে যায় জাড্য সময়। তিতির পাখি ছানার মতো কাজল পরে সন্ধ্যা টুপ করে ডুবে গেল আমার নোনা প্রহরে।

0 comments: