0

প্রপঞ্চ - শিশির রায় ও পল্লববরন পাল

Posted in


পল্লববরন পাল
জিভ না থাকলে কী কী অসুবিধে হত? প্রশ্ন করেছিলাম ক’জনকে। কয়েকটা উত্তর তুলে দেওয়া যাক:

ডাক্তার : ও কী কথা! ভয়ঙ্কর অসুবিধে হত। ‘ম্যাস্টিকেশন’ জানেন? গোদা বাংলায় যাকে বলে চিবোনো। ও কাজটা করে দেয় দাঁত, কিন্তু সুবিধে করে দেয় কে শুনি? জিভ। ও-ই তো মুখের মধ্যে পোরা খাবারদাবারকে আক্ষরিক অর্থে ‘পথে’ নিয়ে আসে। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনই জিভ টানলে আসবে ‘টেস্ট বাড’রাও। জিভ না থাকলে তারাই বা কোথায়! জিভে কামড় পড়লে একটুক্ষণের মধ্যেই সেরে যায় তো কী, আন্ডারএস্টিমেট করবেন না মোটেই। জিভে আছে রাজ্যের নার্ভ আর রক্তজালিকা। আর ব্রাশ-ট্রাশ তো অনেক পরের কথা, দাঁতগুলোকে পরিষ্কার রাখার বেসিক কাজটা কিন্তু জিভই করে দেয়। এ একটা পেশি, কিন্তু বাইসেপেরও বেশি!

লিঙ্গুয়িস্ট : হাসালেন মশাই। কথা বলবেন কী করে, জিভটা না থাকলে? কথা বলার ক্ষেত্রে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর হল গিয়ে দাঁত, ঠোঁট আর জিভ। জিভ না সাহায্য করলে দাঁত আর ঠোঁট মিলে কিচ্ছুটি করতে পারবে না, গলা দিয়ে যে ধ্বনি বা শব্দই বেরোবে, হবে নিতান্ত নিরর্থক। ট, ড, ল, স, ড়— বলতেন কী করে শুনি? ও, একটা মজার কিন্তু জরুরি তথ্য দিই। টিয়েপাখির মানুষের বুলি নকল করা তো দেখেছেন? করে কী করে? ওদের জিভটা অদ্ভুত রকম মোটা। সেই মোটা জিভের ডগাটা মুখের ভেতর নানান জায়গায় দরকার মতো ঠেকিয়ে ওরা ঠিক মানুষের গলা, মানুষের বলা ফুটিয়ে তোলে।

কালীমন্দিরের পূজারি : এই, একান থেকে যান তো! কী সব অলক্ষুণে কতা! মা আমার সামনে দাঁইড়ে আচেন ওই যে, আহা কী সুন্দর লাল টুকটুক জিবখান। বলে কিনা জিব না থাকলে কী অসুবিধে... অসুবিধের বান ডাকত না? এই যে ক’দিন পর কালীপুজো, জিব ছাড়া কালী ভাবা যায়! রক্ষে করো রক্ষেকালী! আরে ওই যে জিব কেটে দাঁইড়ে আচে বোমভোল মহাদেবের গায়ের উপ্‌রে, মায়ের ওই তো স্বরূপ। বলে কিনা জিব না থাকলে... যত্তসব...

ওয়াইন টেস্টার : সাফ কথা, অন্য প্রফেশন দেখুন। জিভ ছাড়া ওয়াইন টেস্টার? আরে কতশত নিয়মে নিজের মুখ আর জিভটা বাঁচাই, জানেন? একগাদা ওষুধের লিস্টি করা আছে, যেগুলো খাওয়া যাবে না। জিভের সেনসেশন ভোঁতা হয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। সিগারেট ফুঁকফুঁক? উঁহু, বিলকুল বারণ। মগজের যে অংশ স্বাদ আর গন্ধের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে, তার স্নায়ুর জোর কমে যায়। নিয়ম করে দাঁতের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়, দাঁত আর মুখের রেগুলার হেলথ চেক-আপ। পরিবেশ দূষণ-টূষণেরও মাপজোখ রাখতে হয় মিস্টার। ও দিকে খাবারে কম নুন, কম চিনি। হাঁইহাঁই করে বিরিয়ানি গিলে নিলাম, নৈব নৈব চ। জিভ আমাদের লক্ষ্মী দাদা, লক্ষ্মী।

ফেবু-কবি : আমার কবিতাজীবন থেকে আপনি জিভ ছিনিয়ে নিতে পারেন না! আগুনের লকলকে জিভ-এর মতো উপমা কোব্তেয় না থাকা মানে সে তো আলুনি উপ্‌মা! উফ্‌, মা! 

খাদ্যরসিক রবীন্দ্রপ্রেমী : আমি একটু-আধটু রবীন্দ্রনাথ জানি মশাই। আমার প্রিয় কবিতা ‘বীথিকা’র ‘নিমন্ত্রণ’। কেন জানেন? গুরুদেব ওখেনেই লিখে গেছেন— ‘উদরবিভাগে দৈহিক পরিতোষ/ সঙ্গী জোটায় মানসিক মধুরতা।/ শোভন হাতের সন্দেশ, পানতোয়া,/ মাছমাংসের পোলাও ইত্যাদিও/ যবে দেখা দেয় শোভামাধুর্যে-ছোঁওয়া/ তখন সে হয় কী অনির্বচনীয়!’ ইত্যাদি। ও, আসল কোটেশনটাই তো বললাম না! ওই কবিতারই লাইন— ‘জেনো, বাসনার সেরা বাসা রসনায়।’ আহা! কী লেখা! এই কে আছিস, আর এক প্লেট মটন কোবরেজি দিয়ে যা এই টেবিলে! 

সাপ : অ্যাই তুই কে রে, আমাদের চেরা জিভে ছাই দিতে এসেছিস? এমন বিষদাঁত ঝাড়ব না...

শিশির রায়

0 comments: