0

ধারাবাহিক - সোমঙ্কর লাহিড়ী

Posted in















১৯ 

“টি ভ্যালীর” অফিসের দুর্গা প্রসাদ ওরফে ডিপির ডাকা প্রেস কনফারেন্সে সমস্ত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নর্থ বেঙ্গল কভার করা রিপোর্টাররা হাজির। তাদের উপযুক্ত খাতিরদারির পরে ডিপি নিজে সেখানে উপস্থিত হলেন। পরনে আদ্যান্ত ক্যাজুয়াল ড্রেস। থ্রী কোয়ার্টার, কিটো, কানে দুল, গলায় ট্যাটু, সব মিলিয়ে আগের সেই ফর্মাল মানুষটাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ভুঁড়িটা বাদ। 

কর্ডলেস মাইকটা হাতে নিয়ে প্রথমেই জানিয়ে দিলেন, 

আপনারা যে ফুটেজটা দেখেছেন সেটা আসল। সত্যি একশ শতাংশ। ইয়েস আয়্যাম ইন লাভ উইথ শেলী। আমরা খুব শীঘ্রী বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি। এবারে আপনারা বলুন যে আপনারা কি জানতে চান? 

উত্তর যদি আগে দিয়ে দেওয়া তবে প্রশ্ন করা আর প্রশ্নের পর প্রশ্ন চালিয়ে যাওয়া সাধারণের পক্ষে হয়ত অসুবিধার, কিন্তু রিপোর্টারা তো আর সাধারণ নন। তাঁরা রিপোর্টার। 

শুরু হয়ে গেল ডিপির বিবাহিত জীবনের কাটাছেঁড়া। ছেলে মেয়ে কি ভাবছে অবধি ও প্রশ্ন করে ফেলল একজন। অদ্ভুত অসংলগ্ন উত্তর দিতে থাকল ডিপি। তারপরে যখন শুভলক্ষ্মী ম্যাডামের মানে ওনার বিবাহিতা স্ত্রীর প্রসঙ্গ এলো ডিপি সরাসরি বলে দিল, 

শী ইস আ বীচ। শী হেল্পড মিডিয়া পিপল ফর দোজ ফুটেজ। শী ফাকড হারসেলফ উইথ দ্যাট বাস্টার্ড সিঙ্গার অ্যান্ডি। জাস্ট টু কভার আপ শী মেড অল দ্যাট ফাস। আই ডেফিনেটলী ডাম্পড হার আপ। উইদ ইন নো টাইম। 

প্রেস কনফারেন্স আরো প্রায় আধ ঘণ্টা চলার পরে যখন সাংবাদিকদের ককটেল সার্ভ করা হচ্ছিল ঠিক তখনই পুলিসের জীপটা “টি ভ্যালীর” চত্ত্বরে ঢুকল। 

তবে হ্যাঁ সিনেমার মতো করে পুলিস অফিসারটি “ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিঃ ডিপি বাজোরিয়া” ইত্যাদি কিছু না বলে। ডিপি বাজোরিয়ার কাছে গিয়ে নিচু বলল, 

আপনাকে একবার আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে স্যা.. মিঃ বাজোরিয়া। 

কেন? 

আপনার স্ত্রী বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। শী ইস নো মোর। 

তা আমি কি করতে পারি বলুন আমি তো ওনাকে সুইসাইড করতে বলিনি? 

মিডিয়া খাবার পেয়ে গেল। 

আপনার প্রেস মিটের সময় এখান থেকে কেউ একজন আপনার পুরো কনভার্সেসান ওনার ফোনে পাঠিয়ে যাচ্ছিলেন। এটা শোনার পরেই উনি সম্ভবত এই সুইসাইডাল ডিসিশানটা নেন। নোটস এ আপনাকে দায়ী করেছেন ক্যাটেগোরিকালি। আর ফোনে রেকর্ডেড মীটিং এর উল্লেখ ও করেছেন সেই নোটে। আমাদের সাথে একটু চলুন, অ্যান্ড প্লীজ ডোন্ট ক্রিয়েট এনি সিন। 

কোন নাটকীয়তা ছাড়াই ডিপিকে পুলিসের পিছনে পিছনে গিয়ে জীপে উঠতে হল। উকিলের ব্যবস্থার জন্য কোম্পানীর ম্যানেজার স্থানীয় লোকেরা ফোন করা শুরু করল। 

সবকটা সাংবাদিক পুলিসের গাড়ীর পিছনে পিছনে দৌড় লাগাল। এখন নতুন ব্রেকীং হেডলাইন করতে হবে। টাটকা আত্মহত্যা, প্রেস কনফারেন্স থেকে ফোনে পুরো খবর স্ত্রী কাছে পাঠানো। মানে একাধারে যৌনতা, রহস্য, আত্মহত্যার ত্রহ্যস্পর্শ! উফ একেবারে মাখা কেস। শুধু পাবলিকের মুখে থুড়ি চোখে তুলে দিতে পারলেই হল। ট্যাম চড়চড় করে উঠবে। 

“টি ভ্যালির” থেকে বেশ দূরে শিলিগুড়ি শহরে বাজোরিয়া হাউসে কমলা প্রসাদ বাজোরিয়াকে দেখে মনে হওয়ার কোন উপায় নেই যে তাঁর পরিবারের উপরে এতবড় একটা ঝড় এসেছে। 

টেলিফোনে উকিলের কি বন্দোবস্ত হয়েছে তার খোঁজ নিলেন। পুলিসের উপর মহলে ফোন। রাজনৈতিক মহলের উপরের দিকে ফোন করে যথোচিত ব্যবস্থা করার পরে। নিজের স্ত্রীকে আস্বস্ত করলেন যে তাঁর ছেলের বিশেষ কিছু ক্ষতি হবে না। স্ত্রী চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যাওয়ার পরে তিনি ডাকলেন, 

মুনিমজী। 

সরকার। 

ম্যায়নে আপসে বোলা থা কে ও গানা গানেওয়ালা ছোকরেকো কেরিয়ার খতম করনে কে লিয়ে, হ্যায় না? 

হুজুর 

উসকা প্রেসেন্ট স্টেটাস ক্যা হ্যয়? 

সরকার ম্যায়নে আদমি কা ইন্তেজাম কর দিয়া থা, ও ছোকরে ড্রাগস মে ডুব ভি গ্যায়ে থে, কেরিয়ার ভি, কন্ট্র্যাক্টস ভী চল গ্যয়া থা উস্কে হাত সে। ডর কে মারে যাদা ড্রাগস মে ডুবোদিয়া থা আপনে আপ কো। 

ফির? 

ফির হুজুর ক্যা মালুম ক্যায়সে ও সবকুছ ছোড়ছাড়কে আপনা জিন্দেগী ফির বানানা শুরু কর দিয়া। 

তুম বাকোয়াস বন্ধ করো। যব দেখা কি ও লড়কা ফিরসে ওয়াপস আপনে কেরিয়ার মে ব্যাক কর রহে হ্যায় ক্যা তুম ফিরসে আপনে আদমি কো কহেকর উনহে ফাইন্যানশিয়ালি রুইন নেহী কর সকতে থে? তুম ব্যঠে ব্যঠে দেখতে রয়ে গেয়ে। ও সিসি টিভি ওয়ালা মামলা তুম ক্লীয়ার ভী নেহী কিয়া? 

সরকার ও তো ছোটা সাবনে হামে উধর অ্যালাও নেহী করতে কভী। 

তুমহারে আপনে কৈ আদমি নেহী উধার? 

দেখো আজ উসি ফুটেজ কে ওজাহ সে মেরে ঘর কা লক্সমি ঘর ছোড়কে চলবসা। 

এতক্ষণ শক্ত থাকা মানুষটা এবারে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন, মাথা নীচু করে। ক্যালকুলেটিভ ব্যবসায়ীর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা নরম মনের বাবা, শ্বশুর, একটা মানুষ। মুনিমজী জানতেন এই বৌমাকে তার সরকার প্রানের থেকেও বেশী ভালবাসেন বা বাসতেন। মুনিমজীরা জানেন কখন চুপ থাকতে হয়, কখন হাতজোড় করে গলতির জন্য মাফি মাংতে হয়। 

কমলাপ্রসাদ নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা তুললেন। মুনিমজীহাত জোড় করে বললেন, 

সব গলতি মেরা সরকার, ম্যায় হী কসুরওয়ার হুঁ। ম্যাঁয় আপসে হাত জোড়কে মাফি মাংতা হুঁ হুজুর। 

কমলাপ্রসাদের গলার আওয়াজে বোঝা গেল যে ভেতরের সেই ক্যালকুলেটিভ ব্যবসায়ীটা আবার স্টেয়ারিং হাতে নিয়ে নিয়েছে। শান্ত গলায় বললেন, 

মার ডালো দোনোকো। জিতনা জলদি হো সকে। ফোন লাগাও তুমহার কলকাত্তাকে আদমি কো। 

সরকার আজকাল ও লড়কা বহত টাইট সিকিয়োরিটি মে রহেতা হ্যায়। 

মুনিম আদমি জেড প্লাস সিকিয়োরিটি কে অন্দর সে ভী উড়া দেতা হ্যায়। তুমহারা ও গানেওয়লা কো জেড প্লাস মিল রাহা হ্যায় ক্যা? ফোন লাগাও ইয়া খুদ যাও। ম্যায় ও শুয়ার কে বাচ্ছে কো মরা দেখনা চাহতা হুঁ ওর উস রান্ড কো ভি। যাও। পয়সে কে লিয়ে মাত সোচো। 

সঞ্জয়ের সেই ব্লু এল.ই.ডি প্যানেল দিয়ে তৈরী স্ন্যাপ ব্যাক টুপি তৈরী হয়ে গেছিল। একেবারে নিখুঁত, কাছে থেকে দূর থেকে যে ভাবেই দেখা হোক না কেন ওটা যে এল.ই.ডি দিয়ে তৈরী সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। মনে হবে গাঢ় নীল রঙের ভেলভেটের টুপি। মাথায় দিয়ে, ব্যাটারীর কানেকশান দিয়ে দেখতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ ঘরের আয়নার সামনে এদিক সেদিক থেকে ঘুরিয়ে ফরিয়ে দেখে যখন নিজে নিশ্চিন্ত হল যে টুপিটা পাওয়ার পেয়ে এল.ই.ডি গুলো জ্বলতে থাকলেও বোঝা যাচ্ছে না দিনের আলোয় বা ঘরের অন্ধকারে তখন সন্তুষ্ট হয়ে টুপিটা মাথা থেকে খুলে রাখল। 

সেই লোকটা ঘরের মধ্যে এতক্ষণ চুপ করে বসে সঞ্জয়ের এই কার্যকলাপ দেখছিল। তারপরে জিজ্ঞাসা করল, 

এটা কি? 

আপনার জেনে লাভ? 

নিছক কৌতূহল বলতে পারো। 

তবে কৌতূহলটা চেপে রাখুন। কারণ আপনিই আমাকে শিখিয়েছেন কৌতূহলেই বেড়াল মরে। 

তা মরে। তবে তুমি এতক্ষণ ধরে এটাকে নিয়ে যে পরিমাণ মনোযোগ দিয়েতৈরী করলে এটা যে খুব সাধারণ জিনিস নয় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে চেষ্টা করলে জানতে পারব না তা কি হয়? জেনে নেবো। 

তবে তাই নিন। এখন বলুন আমার নেক্সট কাজটা কি? আর কবে আপনি আপনার বাকী কমিটমেন্টটা রাখবেন? 

লোকটা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল কি কমিটমেন্ট বলত আমি তো মনে করতে পারছি না? 

সঞ্জয় খুব ঠান্ডা গলায় বলল, আমার সাথে খেলবেন না। 

লোকটা ততধিক ঠান্ডা গলায় বলল, 

খেলাটা খেলতে জানলে ভালো অপোনেন্টের সাথেই খেলে মজা, কি বল? তুমি আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখাও যত খুশি, কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু আমি মরে গেলে যে তুমি তোমার আর তোমার মায়ের দুঃখের কারণ যে মানুষটা তার খবর পাবে না। এত বছর ধরে তো চেষ্টা করলে, মা বলল তার নাম? আর কোথায় থাকে? 

সঞ্জয় বুঝতে পারল লোকটা তার এই তাসটা কিছুতেই দেখাবে না। আর তার মা আজ অবধি যা বলেছে মেলাতে গিয়ে ব্যার্থ হতে হয়েছে তাকে। সঞ্জয় মনে মনে ভাবল ঐ লোকটাকে যে তার চাই। অনেক হিসেব বাকি আছে লোকটার সাথে। তারপরে হেসে বলল, 

যেটুকু আমি জানতে পারিনি তাই দিয়ে আপনার কি মনে হয় বাকী জীবনটা আমি কাটাতে পারব না? 

কেন পারবে না? পৃথিবীতে কি আর বেজন্মারা বেঁচে নেই? কোর্টে যাবে একটা বটতলার উকিলকে পাকড়াও করে একটা এফিডেবিট করে বলবে আমি শ্রীঅমুক চন্দ্র তমুক আজ থেকে শ্রীতমুক চন্দ্র অমুক হলাম হ্যানাত্যানা। ব্যাস। আর তুমি হাতের কাজ জানা লোক, কেউ তোমাকে ডিগ্রী ডিপ্লোমা দেখে মোবাইল বা ঘরের ইলেকট্রনিক জিনিস সারাতে দেবে না। তোমার হাতের কাজ দেখেই দেবে। তবে আর প্রবলেমটা কোথায়। কিন্তু প্রবলেমটা তুমি নিজেই জানো। তোমার শৈশব, কৈশোর যৌবনের একটা সাবস্ট্যানশিয়াল টাইম তোমাকে একটা লোকের জন্য সাফার করতে হয়েছে। তোমার অসুস্থ মাকে নিয়ে জীবনের সব স্বাদ আহ্লাদ ছেড়ে দিয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে। সেই মহিলা যাকে তুমি তোমার জ্ঞান হয়ে ইস্তক দেখে আসছ একটা আধভাঙ্গা বাড়ীতে একটা ভাঙ্গা জীবন কাটাচ্ছেন তোমাকে নিয়ে। যে লোকটার জন্য তোমার জীবনে কোন বন্ধু নেই, বান্ধব নেই, প্রেমিকা নেই স্ত্রী নেই শুধু আছে প্রবল রাগ, হতাশা, অপমান নৈরাশ্য তাকে তুমি ছেড়ে দেবে? কি সঞ্জয় পারবে? আজীবন বুকে করে একটা আগুন নিয়ে বাঁচতে? 

সঞ্জয়ের মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে সামনের লোকটাকে চাইলে মুহুর্তের মধ্যে সে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু লোকটা নিশ্চিন্তে বসে হাতের ফোনটাকে নিয়ে দু আঙ্গুলে ধরে খেলাচ্ছলে ঘুরিয়ে চলেছে। কোন হেলদোল নেই। 

তারপরে মুখটা তুলে বলল, আমাকে মেরে ফেলে কোন লাভ নেই। তোমার মাকে যে দুজন দেখছেন তারা দিনের দুটো নির্দিষ্ট সময়ে আমার একটা নম্বর থেকে একটা ফোন পায়। সেটা যেদিন পাবে না, সে দিন তোমার মায়ের ও শেষ দিন। ট্রেন্ড নার্স, কি করে লোক কে ঘুম পাড়িয়ে দিতে খুব ভালো করে জানে, তাই আমাকে মেরে ফেলার কায়দাটা মারতে যেও না। খামোকা হাত পোড়াবে। 

সঞ্জয় জানে লোকটার অনেক বুদ্ধি। এর সাথে এঁটে ওঠা খুব শক্ত। গণেশদার মতো গুন্ডাগর্দি করে না। কিন্তু শয়তানিতে কোন অংশে কম নয়। 

সঞ্জয়কে প্রথম আলাপের দিন নাম বলেছিল বলেছিল হিরন্ময় নন্দ। আর ধীরে ধীরে সঞ্জয়কে বুঝিয়ে ছিল যে ওর এই জীবন হওয়ার কথা নয়। ওর বাবা আছে সব আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেটা সময় মতো লোকটা জানিয়ে দেবে। তারপরে তাকে ধীরে ধীরে শুধু কথা বলে বলে মানসিক ভাবে হিংস্র করে তুলল। সঞ্জয়ের তখন মনে হত সেই লোকটাকে যদি একবার হাতের কাছে পায় তবে তাকে খুন করলে তার এই আগুনে রাগের উপশম হবে। 

এর মধ্যে একদিন বাড়িতে ফিরে দেখল তার মাকে বিশুমামার কাছে হেনস্থা হতে। আগুনে রাগ এবারে পোড়াতে শুরু করল। প্রথম শিকার বিশুমামা। সেই আতঙ্কিত চোখ মুখ ফাটা মাথা, রক্তের ধারা, সব মিলিয়ে যে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা তৈরী হল সেটা থেকে যে তার যৌন উদ্দীপণা আসতে পারে সেটা কল্পনার অতীত ছিল। কিন্তু বাস্তবকে কে অস্বীকার করতে পেরেছে। 

তারপরের অনেক ঘটনার মাঝে তাকে লোকটা একটা কাজ দিল তার প্রিয় গায়ক অ্যান্ডিকে ভয় দেখানর। কি ভাবে সে ঐ বিল্ডিং এ ঢুকবে, কি ভাবে বেরোবে, ঢোকার সময় তার চেহারা কেমন হবে, বেরনর সময় সেই চেহারা মেকাপের বদল ঘটিয়ে কেমন করতে হবে সেই সব একেবারে পাখি পড়া করে তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল সেই লোকটা। ঘড়ি ধরে প্র্যাকটিস করিয়ে ছিল সব কিছু। সেখানে অ্যান্ডির চোখের ভয় দেখে সে আবার কাম তাড়িত হয়ে পড়ে। না হলে তার সেখান থেকে সরে পড়ার কোন অসুবিধাই ছিল না। 

লোকটাই তাকে বাইরে বেরনর ব্যবস্থা করে দেয়, মেকাপ ইত্যাদি তাকে ছাদের সিঁড়িতে গিয়ে বদল করে নিতে হয়েছিল। কপাল ভালো কেউ সেখানে আসেনি। আসলে কপালে দুঃখ ছিল, যেমন সিকিয়োরিটির লোকটার হয়েছিল। 

দ্বিতীয় বারে যখন সেই একই কাজ দিল তখন সঞ্জয় সেয়ানা হয়েছে আরো বেশী। লোকটার খবরাখবর ছাড়াও নিজে গিয়ে সব কিছু আগে থেকেই দেখে এসেছে। ততদিনে সিসি ক্যামেরাকে কাছ থেকে কি করে অকেজো করে দিতে হয় সেই কৌশল তার হাতে। নিজের টুপিকে মোবাইলে যে ধরেনের সুক্ষ এল.ই.ডি দিয়ে প্যানেল করে সেই ধরনের সুক্ষ এল.ই.ডি প্যানেলের স্ট্রিপ কে কায়দা করে নিজের টুপিতে লাগিয়ে নিয়ে সেটা পরে সিসি ক্যামেরার সামনে গেলেই কেল্লা ফতে। 

আর তারপরে যখন লোকটার কাছে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় চেয়েছিল লোকটা সনন্দে রাজীও হয়েছিল, আর তার মায়ের দেখাশোনার জন্য নার্সের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল, জানিয়ে ছিল আর একটা কাজ করে দিলেই সে তাকে জানিয়ে দেবে সেই লোকটার পরিচয় আর তার বর্তমান ঠিকানা। 

এখন বুঝতে পারছে এর সাথে বুদ্ধির খেলায় জেতা খুব শক্ত। লোকটা তাকে অনেক দিক দিয়ে আটকে রেখেছে। সেই বাধা কেটে বেরতে গেলে আগে তাকে লোকটার দেওয়া কাজগুলোই শেষ করতে হবে। এখন শুধু শান্ত হয়ে সুযোগের অপেক্ষা। 

লোকটা তার দিকে ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞাসা করল, ধ্যান করছ নাকি? সঞ্জয়? অনেকক্ষন ধরে তোমার এই ধ্যানস্থ ভাব দেখছি, তাই ভাবলাম। 

সঞ্জয়ের ঘোর কাটল যেন। তারপরে টুপিটা হাতে নিয়ে বলল, এটা নিয়ে বেশি রহস্য করার কোন কারণ নেই। এটা এল.ই.ডি প্যানেলকে কায়দা করে টুপির মধ্যে আটকানো এটা আমার নিজের সিকিয়োরিটির কাজে লাগে। হয়েছে? 

লোকটা হেসে বলল, সেটা বলার আগে কি অত ধ্যান করছিলে? 

না ভাবছিলাম। 

কি? 

আপনাকে এমনি মারব? না কি যন্ত্রণা দিয়ে। 

লোকটা ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। 

0 comments: