0

ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়

Posted in

ধারাবাহিক


আহিরণ নদী সব জানে
রঞ্জন রায়


৮) 

জোশী মহারাজের সঙ্গে দেখা করা যে এত কঠিন হবে তা রূপেশ বর্মা ভাবতে পারেনি। ব্যাংকের বারান্দায় মন্ত্রীজির পাশে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি যা স্থানীয় হিন্দি পত্রিকায় পরের দিন ছেপে বেরোল তাতে নিঃসন্দেহে শ্রীমান ব্যাংক ম্যানেজারের লোকের চোখে ‘ভাও’ বাড়িয়ে দিয়েছিল। গত কয়েকমাস ধরে ছুরি গাঁয়ের পথেঘাটে চলাফেরার সময় লোকজন রাস্তায় চিনতে পারে; বয়স্ক মানুষেরা হাত তুলে নমস্কার করে। ‘জয় রাম সাহেব’ শুনতে শুনতে ওর কান পচে গেছে। আগে ও লজ্জা পেত, হাত তুলে প্রতি নমস্কার করত। তারপরে হাত ওঠা বন্ধ হয়ে গিয়ে একটু মাথা ঝোঁকানো শুরু হলো। ইদানীং তা ও হয় না,বিশেষ করে বাইক চালানোর সময়। 

জোশী মহারাজের বাড়িতে সামনের বড়ো হলঘরে একটি মুদি দোকান চলে, তাতে গদিতে বসে তাঁর ছেলে গিরীশ। রোগা পটকা পানচিবোনো মুখে একগাল হাসি গিরীশ অধিকাংশ সময় লুঙ্গি আর হাতকাটা গেঞ্জি পরেই দোকানে বসে। এই দোকানে শুধু মুদি বা ‘কিরানা সামান’ নয়, শুকনো ডুমুর ফল থেকে তৈরি ‘অঞ্জির’ বলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ভেষজ, ত্রিফলা, আনন্দকর ট্যাবলেট সবই পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ জিনিসপত্তর আঢাকা টিনের ড্রামে রাখা। মাকড়সার জাল ও টিকটিকি কাছের দেওয়ালে শিকার ধরায় ব্যস্ত। 

মহারাজের আসল পেশা হলো গুরুগিরি, পুরুতগিরি এবং বিভিন্ন আর্থিক সমস্যার নিদান হেঁকে প্রণামী নেওয়া। প্রথমবার যাওয়া মাত্র গিরীশ দেঁতো হেসে বলল পিতাশ্রী তো অমুক গাঁয়ে শিষ্যবাড়ি গেছেন। ঘন্টা দুই পরে আসতে। এবার ব্যাংকের ‘লাঞ্চ আওয়ারে’ ফুর্সত পেয়ে রূপেশ ধাওয়া করল যাতে আজই ওঁর সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলা যায়। ও এখন প্রবেশনে আছে। তাই একটা ডেইলি পজিশন মেমো ওকে রোজ সন্ধ্যেবেলা ডাকে ফেলতে হয় যাতে বিভিন্ন হেডের ডিপোজিট অ্যকাউন্টএর সংখ্যা ও অ্যামাউন্ট হেড অফিস জানতে পারে। 

গাঁয়ের লোকজন প্রথম থেকেই লোন পাওয়ার জন্যে চাপাচাপি করছে; কিন্তু ওর চেয়ারম্যানের সেই এক কথা। আগে ভাল করে ‘জনসম্পর্ক’ কর, জমা খাতা খোল, কে কী কেমন এইসব খোঁজ নাও, তারপর তোমাকে লোন দেওয়ার পাওয়ার দেওয়া হবে। ও জানে প্রত্যেক নতুন শাখা ও নতুন ম্যানেজারের জন্যে উনি আলাদা আলাদা ডিপজিট গ্রোথ রেট ও বেঞ্চমার্ক ঠিক করে দিয়েছেন। সেটা ছোঁয়ার পর এক-দুদিনের ওয়ার্কশপ করে তবে কর্জা দেওয়ার অনুমতি পাবে। 

এবার গিয়ে শুনল উনি পূজোয় বসেছেন। ম্যানেজারকে একটু বসতে বলেছেন। ওকে খাতির করে গিরীশ একটা কাঠের চেয়ারে বসায়। রামনিবাস সাদা চাদরে ঢাকা গদ্দিতে গিরীশের পাশে বসে খোশগল্পে মেতে ওঠে। 

রূপেশ এদিক ওদিক মন দিয়ে দেখে; সাদা চাদর ও গিরীশের তাকিয়ার কভার বেশ ময়লা। গিরীশের কাঁধের পাশ দিয়ে উঁকি মারা পৈতেরও একই হাল। একটু পরে চা এল, কাপের আসল রঙ কবেই ফিকে হয়ে গেছে। বড্ড চিনি। ওর মুখের ভাব দেখে গিরীশ আশ্বস্ত করে যে এটা পাউডার মিল্কে বানানো নয়, ওদের ঘরের কালো গরুর দুধ দিয়ে তৈরি। 

দোকানের বারান্দায় জনাচারেক মহিলা বসে কুলো দিয়ে চাল গম থেকে কাঁকর বেছে আলাদা করে রাখছে। রূপেশ অন্যমনস্ক ভাবে ওদের চাল গম বাছাই দেখছিল, হটাৎ টের পেল যে ওরাও টের পেয়েছে। দু’জন মাথায় ঘোমটা টানতে টানতে নীচু গলায় অন্যদের কিছু বলল। এবার ওরা একটু পাশ ফিরে বসে নিজেদের কাজ করতে লাগল। 

একটা স্টিলের থালায় করে এল মৌরি, লবংগ আর ছোটা ইলাইচি। অতিথি সৎকার সুসম্পন্ন। এবার ও উসখুস করছে। ব্যাংকে যদি অন্য গ্রাহকেরা এসে বসে থাকে? ও চাপরাশিকে বলে এসেছে যে আধঘন্টার বেশি লাগবে না। এ তো প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল। ও উঠে পড়ে,বলে নাহয় কাল একবার আসবে। 

এমন সময় একটা চড়া সুরে শোনা গেল—আরে এত অধৈর্য হলে চলে? তাহলেই হয়েছে। একজন দীর্ঘদেহী প্রৌঢ় ভেতর বাড়ি থেকে একটু ঝুঁকে ঢুকছেন। খালি গা, ধুতি পরা, যজ্ঞোপবীত যত্ন করে মাজা, পায়ে কাঠের খড়ম। বাঁকা ঈগল নাকের নীচে সাদা ঝোলা গোঁফ, আর ঠোঁটে ব্যঙ্গের হাসি। কিন্তু ঈষৎ পিঙ্গল যে চোখজোড়া ওকে দেখছে তাতে কোন প্রসন্নতা নেই। 

ম্যানেজার এ্যাদ্দিনে এখানকার কায়দা-কানুন শিখে গেছে। একটু ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে পা ছোঁয়ার ভঙ্গিটুকু করল,খানিকটা কুস্তির আখড়ায় চ্যালা যে ভাবে গুরুকে অভিবাদন করে। কিন্তু পা ছুঁল না। জোশীজি বললেন –শুনুন সাহেব, বয়স কম। তাই এত ছটফটানি; আপনারা হলেন সরকারি নৌকর। রাগ করবেন না,যে নোকরি করে সেই নৌকর, সে কলেক্টরই হোক কি ব্যাংক ম্যানেজার। কিন্তু আপনাদের কাজ প্রশাসন চালানো নয়, ব্যবসা করা। অধৈর্য হলে ইতোনষ্টঃ ততোভ্রষ্টঃ। 

ব্যবসায়ীর কাজ জাল পেতে পাখি ধরা; অনেক ধৈর্য দরকার। যেমন আপনি আজকে অনেক আশা নিয়ে এসেছেন যে আমার বচত খাতা খুলবেন। কিন্তু আমি অত সহজে ধরা দেব না। ব্যাংকের কাজ কী? না,লোকের সঞ্চিত পয়সা জমা নিয়ে সুদ দেওয়া আর সেই পয়সা জরুরতমন্দ লোককে সুদে কর্জ দেওয়া। তো আপনারা এখনও খালি জমা নিচ্ছেন, কাউকেই লোন দিচ্ছেন না। বলি, জমাদাতাদের সুদ কী আপনার পকেট থেকে দেবেন? ব্যাংকের বাড়িভাড়া? বিজলি বিল? আপনাদের মাইনে? এটা কী ব্যাংক না চিটফান্ড? 

রূপেশের আত্মবিশ্বাস টলে যায়। মিনমিন করে বলে—কী বলছেন? আমরা সরকারি ব্যাংক, ইন্দিরা গান্ধীর তৈরি। আমাদের চেয়ারম্যান স্টেট ব্যাংকের। 

জোশীজি হাত তুলেছেন। 

দিল্লি থেকে মন্ত্রীজি এসে উদঘাটন করেছেন, নইলে সন্দেহ থেকেই যেত। অত ঘাবড়ালে চলে? বসুন, জলটল খান। আরও কথা আছে। 

ও সবিনয়ে জানায় যে চা জলটল সব হয়ে গেছে। এখন ওকে ব্যাংকে যেতে অনুমতি দেওয়া হোক। হয়ত গ্রাহক বসে আছে। 

জোশীজি আবার হাত তুলে রামনিবাসকে বললেন—তুম যাও বেটা! ব্যাংক জাকে বৈঠে রহো –ম্যানেজার সাহাব লৌটনে তক। গ্রাহকদের বলবে অপেক্ষা করতে,সাহেব মহারাজের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় ব্যস্ত। 

চলে যেতেই ছেলে গিরীশকে বললেন ক্যাশবাক্স থেকে একটা একশ টাকার নোট আর একটাকার সিক্কা দিয়ে ওর দোকানের নামে খাতা খুলতে। অবাক রূপেশ কোন কথা না বলে ব্রিফকেস থেকে ফর্ম ও ডিপোজিট স্লিপ বের করে ফিল আপ করা শুরু করে। 

উনি বললেন—এই দিয়ে শুরু হলো, বুঝলে ম্যানেজার; একশ এক টাকা। এর পরে আমার নামেও খুলব। কিন্তু এখন নয়, আগে তুমি লোন দেওয়া শুরু কর, তারপর। 

আর শোন, রামনিবাসকে ইচ্ছে করে সরিয়ে দিলাম। তুমি ব্যাংকে গেলে ও জিজ্ঞেস করবে মহারাজ কত টাকা দিয়ে খাতা খুলেছেন? বলবে না। যদি দোস্তি ইয়ারির খাতিরে বলে ফেল তবে আমি তোমার হেড অফিসে নালিশ করব। গ্রাহকের খাতার মন্ত্রগুপ্তি ফাঁস করার অপরাধে তুমি বরখাস্ত হবে; প্রবেশনে আছ তো। 

রূপেশের হাড়পিত্তি জ্বলে যায়। একবার ভাবে টাকাটা ফেরত দিয়ে উঠে আসে। কিন্তু অনেক আগেই শিখে গেছে যে রাগের মাথায় কিছু করতে নেই। রাগের গ্যাসটাকে কবজা করে ভেতরে বেঁধে রাখলে সেটা বেলুনের মত ওপরে ওঠার শক্তি দেয়। আগেই সেটা বের করে দিলে শক্তি নেতিয়ে পড়ে,ঠিক চুপসে যাওয়া গ্যাস বেলুনের মত। 

ও ফ্যাকাশে হেসে বলে যে মন্ত্রগুপ্তি ফাঁস হবে না। 

এবার ও উঠতে যাচ্ছিল, উনি হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে গিরীশকে ইশারা করেন। ও ভেতর থেকে একটা বড়ো কাঁসার জামবাটি ভরে পায়েসের মত কিছু নিয়ে আসে। উনি সেটা রূপেশকে ধরিয়ে দিয়ে সস্নেহে বলেন—খান, লজ্জা করবেন না। মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি যে দুপুরের খাওয়া হয় নি। 

ওর ইতস্ততঃ করা দেখে বুঝিয়ে বললেন—এটা হলো পীযূষ। আমাদের একটা গরু আজ প্রথম দুধ দিয়েছে। কোন মায়ের সন্তানের জন্যে প্রথমবার যে দুধ বের হয় সেটা একটু গাঢ় থাকে। এটা তাই; আর সন্তানের জন্যে সেই দুধ হলো অমৃত। সুরভির মত সমস্ত গাভীই আমাদের মাতা। গীতামাহাত্ম্যে ব্যাসদেব বলেছেন ‘সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ’। তাই এটাকে আমরা পীযূষ বা অমৃত বলি। খেয়ে নিন। 

রূপেশ চামচ দিয়ে একটু একটু করে বাটি খালি করল। এমনসময় চাপরাশি ঠুল্লু দৌড়তে দৌড়তে হাজির। সায়েব চলুন, সরপঞ্চ কুমারসায়েব এসেছেন। 

ধমকে উঠলেন জোশীজি। কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন যে সরকারের ব্যাংক কার ভরসায় ছেড়ে ও এখানে এসেছে। ও আমতা আমতা করে বলল যে কুমারসায়েব আর রামনিবাস ওখানে বসে আছে, কুমারসায়েব ম্যানেজারকে ডেকে আনতে বললেন, জরুরি কাজ আছে তাই ও এসেছে। 

জোশীজি হাত নেড়ে ওকে প্রায় তাড়িয়ে দিয়ে বললেন যে কুমারসায়েবকে একটু বসতে বল। ম্যানেজার আসছে। 

তারপর বললেন রামনিবাসের সঙ্গে আহিরণ নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখেছে বটে, কিন্তু আহিরণ নদী আর কোসগাই পাহাড়ের পুরাণকথা ও জানে কি না। আর রামনিবাসের নারীঘটিত দুর্বলতার কথা ম্যানেজার সায়েবের জানা আছে কি না। ওর হতভম্ব ভাব দেখে বললেন যে কারও সঙ্গে দশ পা চলার আগে ভাল করে খোঁজ খবর নেওয়া উচিত। যেমন রামনিবাসদের বাড়িতে গমপেষানোর কল অর্থাৎ ‘আটা চাক্কি’ আছে বটে, কিন্তু ঘরে খাওয়ার লোক কম নয়। ওর বাবা আর ওর বিয়ে সব আমিই করিয়েছি। ভাল ঘরের সুন্দরী গোরী চিট্টি পদ্মিনী মেয়ে, কিন্তু রামনিবাসকে জাদুটোনা করেছে এই গ্রামের কালিন্দী; স্বভাবে নগরবধূ। 

-- হাঁ করে আছ ম্যানেজার, বিয়ে কর নি, স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম কী জানবে? তবে শোন নর্মদা নদীর দুঃখের কথা। অমরকন্টক গিয়েছ? নর্মদার উদগম স্থল? এখান থেকে কাঠঘোরা মহকুমা সদরে গিয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে পেন্ড্রার বাসে চাপবে। সাড়ে তিন ঘন্টা; সেখান থেকে বাস বদলে আরও আধঘন্টা গেলে অমরকন্টক, সেখানে সোনগুঢ়ার পাশে দেখবে ছোট্ট একটি কুন্ড আর জলধারা। সেই হলো শিশু নর্মদা। এর জন্মদাতা মহাকাল পর্বত, আমরা বলি মহারাজ ‘মৈকাল’। একবার হলো কি, রাজকুমার শোন নদ সুন্দরী নর্মদার প্রেমে পড়ল। প্রেম প্রগাঢ় হলো। বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়তে রাজকুমারের আপত্তি নেই। নিজেই প্রস্তাব নিয়ে গেল নর্মদার পিতা মৈকাল মহারাজের কাছে। মৈকাল গম্ভীর হলেন; একমাত্র মেয়ে নর্মদা ,ছোটবেলা থেকেই মাতৃহারা। বড়ো মায়া। মেয়েকে ডেকে বললেন পুরুষের মন চঞ্চল, একমুখী নয়। আর রাজকুমারেরা বহুপত্নীক। তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি দোটানায় পড়েছি। 

নর্মদা বাবার গলা জড়িয়ে বলল এত ভেব না। ও খুব ভাল, আমায় কথা দিয়েছে। 

মৈকাল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। 

বিকেল হতে চলল। এতক্ষণে রাজকুমার শোন নদের অমরকন্টকের ছোট পাহাড়ির কাছে পৌঁছে যাবার কথা। রাজকুমারী নর্মদা সেজেগুজে অপেক্ষায় অধীর। সখী চম্বল নদীকে বললেন—যাও সখি; একটু এগিয়ে দেখ, ও বোধহয় এসে গেছে। তাহলে ওকে বরণ করে নিয়ে এস। 

চম্বল অপাঙ্গে তাকিয়ে বলল—দেখ সখি; আমার রাজকুমারের সামনে যাওয়ার মত বস্ত্র-আভরণ কিছুই নেই। এমন বেশে তোমার প্রতিনিধি হয়ে গেলে তোমারই বদনাম হবে। এখন তুমি যা ভাল বোঝ। 

নর্মদা যত্ন করে নিজের বহুমূল্য বস্ত্রালংকারে চম্বলকে সাজিয়ে দিলেন। 

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। অমরকণ্টকের আগে ছোট পাহাড়ি পাকদন্ডী পথে রাজকুমার শোণ আর ছলাকলাপটিয়সী চম্বল নদীর দেখা হলো। সেই আধো অন্ধকারে শোণ চম্বলকে নর্মদা ভেবে ভুল করে বসলেন। চম্বল ও শোণের এই অশুভ মিলনে ঘনিয়ে এল মেঘ; বিদ্যুৎএর ঝলকানি আর বাজের আগুনে আকাশ চিরে চিরে গেল। 

এদিকে অপেক্ষা করতে করতে ব্যাকুল হয়েছে নর্মদা আর মৈকাল পর্বতের কপালে ভ্রূকুটি। না রাজকুমার শোণ না চম্বল নদী, কারও দেখা নেই,কোন খবর নেই। 

শেষে দুজনে মিলে খুঁজতে বেরোলেন। পেয়ে গেলেন দুই অপরাধীকে; ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত রাজকুমার আর চম্বলের চেহারায় বিজয়িনীর হাসি। 

নর্মদা শাপ দিলেন সখী চম্বলকে—যে প্রতারণা তুমি আমার সঙ্গে করেছ একদিন তোমার স্বামী তোমাকে এমন করেই ঠকাবে। আর রাজকুমার শোণ, তোমার বুকের মধ্যে ভালবাসা শুকিয়ে জেগে উঠেছে বল্গাহীন কাম। শাপ দিলাম, তোমার বুকের জল শুকনো বালিতে ভরে যাবে। মর্মাহত রাজকুমার শোণ বললেন—আমি নিজে প্রতারিত হয়েছি, তোমার বসন ভূষণ দেখে। তুমি অবিচার করলে। আমিও বলছি তুমি আজীবন কুমারী থাকবে। 

এবার সরপঞ্চ নিজে এসে হাজির হয়েছেন জোশী মহারাজের ডেরায়। পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। নতুন সরকারি নিয়মে পুকুরের ঠিকা,মাছমারা ও বিজলি কনেকশন, সাপ্তাহিক বাজারের খাজনা ও ঘরছাড়া গরুমোষ কাঞ্জিহাউসে বাঁধা রাখা ইত্যাদি থেকে পঞ্চায়েতের যত আমদানি হয়, সব কোন না কোন ব্যাংকে খাতা খুলে জমা করতে হবে, তার অডিট হবে। কাজেই ম্যানেজার সায়েবকে এবার গা তুলতে হয়। 

ব্যাংক বন্ধ করার ফাঁকে রামনিবাস ফিসফিস করে জানতে চাইল মহারাজ কত টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন?

0 comments: