গল্প - অন্তরা রায়
Posted in গল্প
গল্প
ফিরে আসে কখনো
অন্তরা রায়
রাত 10 টা, তিয়াসের জন্মদিনের পার্টি সেরে ফিরছিলো সপ্তক। যশোর রোড হয়ে মধ্যমগ্রাম মোড় থেকে সোজা ডানদিকে ঘুরলো গাড়িটা। সপ্তক গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমটার ভলিউম জোরে বাড়িয়ে দিলো। সোনু নিগম, ইয়ে দিল দিওয়ানায় গমগম করছে গাড়ীর ভেতরটা। কলারটা তুলে আবার আগের জায়গায় টেনে নেয় সপ্তক। আজ ও পেরেছে।অনেকদিনের অনেক নখরা সহ্য করেছে দেবাবৃতার। পাতি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা শ্যামলা মেয়ে, তার আবার অতো দেমাক! পুরুষের কাছে তা ভাঙতে কতক্ষন? তবে আর যাই হোক, আলাদা একটা চমক আছে ওই মেয়ের মধ্যে, সেটা ঠিক। আর চোখ দুটো, কি ভীষণ......। তবে ড্রিঙ্কে মনে হয় ওষুধের পরিমানটা হয়তো একটু বেশি হয়ে গেছিলো। তিয়াস,মিথিলা শেষের দিকটায় একটু ভয়ই পেয়ে সপ্তকের ভরসায় ছেড়ে দেয়। সেটাই চেয়েছিলো ও। রিস্ক না নিলে ঠিকঠাক ফল কি পাওয়া যায় বাপ? আর এই বোধ আর সাহস আছে ক’জনের? একা একাই হেসে ওঠে ও। শক্ত করে ধরে স্টিয়ারিংটা।
সামনে একজন মহিলা হাত দেখাচ্ছে। দাঁড়াতে বলছে যেন। লিফ্ট চাইছে কি? উফফ, কি সেক্সি লুক মাইরি ! হলুদ শিফন শাড়িটায় যেন এক রহস্যময়ী। বেশ বেকায়দায় পড়েছে মনে হচ্ছে। পাশেই একটা লাল গাড়ি।
-- দেখুন না, আমার গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক ডাউন। একটা লিফ্ট দেবেন?
-- হ্যাঁ নিশ্চই। কতদূর?
-- বেশি দূর কষ্ট দেবো না, কথা দিলাম।
হাঃ হাঃ করে হেসে ওঠে সপ্তক। --কোনো প্রব্লেম নেই ম্যাম, আসুন প্লিজ।
-- থ্যাংক ইউ স্যার।
মহিলা বেশ খলবলে টাইপ। অল্প সময়ে বেশি কথা বলে হেসে হেসে মন জয় করার টেকনিক বোধ হয় ওর জানা। এমন মহিলা সপ্তকের মনপসন্দ । বয়েস তিরিশ হবে। সে হোক।এতটা রাস্তা এমন একজন রোড পার্টনার পেলে মন্দ কি? পুরো রাস্তাজুড়ে মহিলা নানান রকম গল্পে জুড়ে নিচ্ছিলো ওর অনেকটা। সপ্তক আড় চোখে কয়েকবার পাশের সিটটায় চোখ বোলাচ্ছিলো।
-- গাড়ীটা থামান।
-- এখানে নামবেন? যদি ভেতরের কোথাও হয় বলতে পারেন, আমি ছেড়ে দিয়ে আসতে পারি।
-- না, ধন্যবাদ। বাই দ্য ওয়ে, আপনার ঘড়ি, গলার চেন, আর ওয়ালেটটা আমার হাতে দেবেন প্লিজ।
-- মানে? এ কি অসভ্যতা !
-- অসভ্যতা? ভালো কথা বলছি তাই? যা বলছি সেটাই করুন কেস খেতে না চাইলে।
বুকের ওপর থেকে একটানে আঁচলটা নামিয়ে ফেলে মহিলা। মুখটা সামনে এনে বলে
-- রেপ বুঝিস? রেপ করতে যাচ্ছিলি এখুনি চিৎকার করে এটাই বলবো। এমনিতেই তো শালা আপাদমস্তক গিলে আছিস। ভাবতে পারছিস পরটুকু? প্রমান করতে খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে না। জায়গামতো পয়সাও খাওয়ানো আছে, বুঝলি? ভালো চাস তো ওগুলো দিয়ে জাস্ট ফুটে যা।
দেবাবৃতার মুখখানা চোখের সামনে ভেসে উঠছে কেন? একটু আগেই তো জোর করে.......। তাকাতে পারছিলো না ও। বুকের কাছে শার্টের বোতামটা শক্ত করে খামচে ধরে রেখেছিলো। চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসছিলো। কি যেন বলতে চাইছিলো, তবু বলতে পারছিলো না। গাড়ির ভেতরের ঠাণ্ডাটা যেন ওকে ছুঁতে পারছিলো না। একএক করে সমস্ত দিয়ে দিলো। ব্রেসলেট আর আংটিগুলোও চোখ এড়ায়নি মহিলার। জায়গাটা বেশ সুনসান । যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে বেরোনো যায় তত বুদ্ধিমানের কাজ। সামনে একটা বাইকে দুজন লোক। শাকরেদ মনে হলো। মুখ বাঁধা রুমালে, শুধু চোখ জোড়া অনেকটাই স্পষ্ট। তাকিয়েছিলো সোজাসুজি ওর দিকেই। হলুদ শিফন দরজা বন্ধ করে মুখটা গাড়ির ভেতরে নিলো।
-- খুব সখে একাজে নয়। আর হ্যাঁ জানেন, শুধুমাত্র বড়োলোকের বকাটে ছেলেপিলেই এফাঁদে পা দেয়। তাদের সংখ্যা অবশ্য কম নয়। রাস্তায় কাউকে মরতে দেখলে এরা এগিয়ে যাবে না। রাস্তার ভিখিরিকে একটা টাকাও এরা কখনো দেয়না। কিন্তু আমাদের মতো কাউকে ঘর অবধি পৌঁছে দিতে চায় সহজেই।
জোরে হেসে ওঠে মহিলা।
সামনের বাইকে পিছনে বসে পরে মহিলা। হলুদ আঁচলে ঢেকে ফেলে নিজেকে। তারপর মুহূর্তে মিলিয়ে যায় সামনের অন্ধকারে। কিংকর্ত্যব্যবিমূঢ় সপ্তক। কিছুটা সময় নেয় বুঝতে।কি হলো ওর সাথে এতক্ষণ!
মিনিটখানেক পর স্টার্ট দেয় গাড়িতে। কিন্তু বাড়ির দিকে নয়। একটা নাগাদ পৌঁছয় তিয়াসের বাড়ি। কমবেশি ওরা সবাই ড্রাঙ্ক । দরজা খুলেতেই সোজা ও পৌঁছে যায় ভেতরঘরে ।ছ্যাঁৎ করে ওঠে সপ্তকের ভেতরটায়। হলুদ নাইটিতে শুয়ে আছে দেবাবৃতা ।
শাস্তিটা ঠিক কে দিলো?
মাথায় হাত রেখেছে সপ্তক। চোখের কোণে তখনও জলছাপ রেখে গেছে খানিক আগে ও নিজেই। দেওয়ালে মুঠো করে ঘুষি মারে নিজেকেই। নেশার ঘোরে ...
না, সপ্তক অপেক্ষা করবে সকাল অবধি। বলবে সবটা। ক্ষমা চাইবে। সমর্পন করতে চায় আজ নিজেকে। নিজের অন্যায়ের কাছে। পরিণাম যাইহোক। ক্ষমা ওকে পেতেই হবে যে করেই হোক। নিজেকে কাপুরুষ অন্তত ভাবতে চায়না আর। অপেক্ষা সকালের।
বাকিটা দেবাবৃতার হাতে...
0 comments: