0

প্রাচীন কথা - মিথিল ভট্টাচার্য্য

Posted in


প্রাচীন কথা


মহাকাব্যের উপেক্ষিতা (প্রথম পর্ব) 
মিথিল ভট্টাচার্য্য



বহু বহু যুগ পর আজ এই হতভাগিনী এসেছে আপনাদের কাছে নিজের অকিঞ্চিৎকর কাহিনী তুলে ধরতে। কি হলো? নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, কে আমি? ধরে নিন, এক মহাকাব্যের পরম উপেক্ষিতা কেউ আমি। 

এবার নিশ্চয়ই আপনাদের ঠোঁটের কিনারায় ফুটে উঠছে এক ঝলক হাসি। ...মহাকাব্যের উপেক্ষিতা? তবে এ নিশ্চয়ই দুর্ভাগী সৌমিত্র জায়া উর্মিলা না হয়ে যায়না। 

কি? উর্মিলা নও তুমি? তবে কে হতে পারো? তবে কি তুমি অর্জুনের উপেক্ষিতা পত্নী উলুপী? তাও নও। তবে বাপু আমরা হাত তুলে নিলুম, তুমিই বলে দাও, তুমি কে?

আমি জানতাম এই অভাগী এমনি এক চরিত্র যার স্মৃতি অব্দি হারিয়ে ফেলেছে আজকের এই জগৎ। আমার নাম বলতে পারি আপনাদের, কিন্তু আমার নামে কি আজ আপনারা আমাকে চিনতে পারবেন ?

আমি ইলিয়াড মহাকাব্যের এক অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তিত্ব ঈনন। কি হলো? চিনতে পারলেননা তো? আমি জানতাম। সেই দিনই আমার নাম ছিল চির অবহেলিত, আজ কেউ সেই নাম মনে রাখবে এই দুরাশা করি কোন সাহসে?

কিন্তু এমনি আমার দুর্ভাগ্য, যে যার কারণে আমি চির অবহেলিতা তার নামটা একবার নিলেই আপনারা মুহূর্তের মধ্যে চিনে নিতে পারবেন আমায়। যেন আমার নিজের মূল্য শূন্য, শুধু একটাই আমার পরিচয় যে আমি তার উপেক্ষিতা...

কি নিশ্চয়ই জানতে ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে যে, কার কথা বলছি আমি, চিন্তা করবেননা নিশ্চয়ই বলবো, তাকে ঘিরেই আমার জীবন কাহিনী আবর্তিত হয়েছে চিরটাকাল, তাকে বাদ দিয়ে আর কিই বা আমার বলার মতো পরে থাকে? 

...কিন্তু তার আগে একবার আপনাদের নিয়ে যাই আমার শৈশবে, আমি এক নিম্ফ, ওহো, আপনারা তো ভিন্ন দেশের মানুষ, কি করে বোঝাই বলুন তো নিম্ফ-র সংজ্ঞা? ধরে নিন, আমি ছিলাম এক পার্বত্য পরী, আমার পিতা ছিলেন কেবরেণ। গ্রীসের দক্ষিণে ট্রয়ে অর্থাৎ এখনকার তুরস্কের ফ্রিগার ইদা পর্বতে ছিল আমাদের বাস। আমরা ছিলাম প্রাচীন মতের বিশ্বাসী, কোনও অলিম্পিয়ান দেব দেবী নন, আমাদের আরাধ্য ছিলেন সমস্ত অলিম্পাস দেব দেবীর আদি মাতা রিয়া, তার বাইরে আর কাউকে উপাসনা করার কোনও প্রয়োজন অনুভব করিনি আমরা। 

....আর তাঁর আশীর্বাদ স্বরূপ পেয়েছিলাম অদ্ভুত কিছু দৈব শক্তি, বিশেষ করে মানুষকে সেবার মাধ্যমে রোগমুক্ত করে তোলার অদ্ভুত ক্ষমতা। আর বলা হতো, এই ক্ষমতা নাকি আমাদের দলের মধ্যে সব থেকে বেশি ছিল এই অভাগীর, যেকোনও রুগ্ন মানুষকেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার এক অদ্ভুত বরদান এই হতভাগী পেয়েছিলো তার আরাধ্যার কাছ থেকে । 

...কি গর্ব ছিল আমার তা নিয়ে, অথচ আজ তা মনে পড়লে নিজের প্রতি করুণায় ভরে যায় অন্তর, কি পারলাম এই ক্ষমতা নিয়ে? যে মানুষটাকে সব থেকে বেশি ভালোবেসেছিলাম জীবনে, সেই যখন এসে দাঁড়ালো সামনে তখন ঘৃণায়, ক্রোধে আর সর্বোপরি প্রতিশোধস্পৃহায় ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তাকে একদিন। চাইলে পারতাম তাকে সুস্থ করে তুলতো। পারতাম পুরো অতীতকে পিছনে ফেলে রেখে নতুন করে, নতুন করে শুরু করতে আমাদের জীবন ...কিন্তু নিজের হাতে সব ধ্বংস করে দিয়েছিলাম সেদিন। 

দেখুন তো, কি সব বকছি তখন থেকে! কি বলছিলাম, আর চলে এলাম কোন প্রসঙ্গে, কি করি বলুন? আমার সব কিছুর মধ্যেই যে লুকিয়ে আসে সেই একজন। ...যতই অবহেলা করে থাকুক সে আমায়, তাকে ছাড়া আর কারোর কথা যে ভাবতেও পারিনি জীবনে কোনও দিন...

হ্যাঁ, যা বলছিলাম, ইদা পর্বতে থাকার সময়ই প্রথম আমার জীবনে এসেছিলো আমার স্বপ্নের সেই মানুষটি। তার প্রকৃত নাম কেউ জানতো না সেদিন, রাখালেরা তার নাম দিয়েছিলো আলেকজাণ্ডার। আমার স্বপ্নের আলেকজাণ্ডার। এতো রূপ যে কোনও মানুষের হতে পারে ভাবতে পারিনি কোনও দিন। তখন কি ছাই জানতাম এই রূপই কাল হবে আমার জীবনের! পাহাড়ে ঝর্ণার ধারে গিয়ে যখন দুজনে বসতাম, তখন নিজের ভাগ্যকেই হিংসে হতো, এতো রূপবান একজন মানুষ আমার জীবন সঙ্গী! 

তারপর একদিন মাতা রিয়ার সামনে বিবাহের পবিত্র বন্ধনে বাঁধা পড়েছিলাম দুজনে। পাহাড়ের এক কোণে ছিল আমাদের ছোট্ট ঘর। আর সেই স্বপ্নের মধ্যেই এক সময় আমার কোল আলো করে এসেছিলো আমাদের দুজনের ভালোবাসার প্রতীক আমাদের করিথাস। 

সত্যি কোনও সুখ স্বপ্নের মতোই যেন দ্রুত কেটে যাচ্ছিলো আমাদের জীবন। ভোর বেলা রাখালের দলের সাথে ভেড়া চড়াতে বেরিয়ে যেত আমার আলেকজাণ্ডার। আর সারাদিন করির সাথে তার অপেক্ষায় থাকতো তার ঈনন। সন্ধে বেলায় সারাদিনের কাজ সেরে ঘরে ফিরত আমার স্বপ্নের মানুষটা। আর করিকে কোলে নিয়ে হাসি মুখে ছুটে গিয়ে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তাম আমি, যেন উসুল করে নিতে চাইতাম সারাদিনের প্রতিটি বিরহের মুহূর্তকে, হায় তখন যদি একবার জানতাম যে ভবিষ্যতে কত ভয়ানক বিরহ অপেক্ষা করছে এই হতভাগীর ভাগ্যে!

স্বপ্ন সে যতই মধুর হোকনা কেন, একটা না একটা সময় তাকে ভাঙতেই হয়, আর আমাদের জীবনের এই সুখ স্বপ্নও ভেঙে গেছিলো একদিন। আর সেই স্বপ্নকে নির্মম হাতে ভেঙেছিল অলিম্পাসের তিন মহান দেবী, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে...



সেই ঘটনা আমি নিজের চোখে দেখিনি, আজ জানি সেই তিন দেবী হেরা, এথেনা আর আফ্রোদিতে নিজেদের সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় বলি দিয়েছিলো আমার সাধের সংসারকে। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর সত্যকে না জেনেও নিজের সমস্ত অন্তর দিয়ে অনুভব করেছিলাম এর অশুভ আভাস। 

সেদিন এক অদ্ভুত আলোয় যেন ভরে গেছিলো আমাদের এই অবহেলিত ইদা পর্বত। প্রকৃতি যেন আভাস দিচ্ছিলো অনেক বৃহৎ কোনও ঘটনা ঘটতে চলার। আমাদের দলের সবাই যেন এই আলোর ছোঁয়ায় এক নতুন প্রাণশক্তি অনুভব করেছিল তাদের অন্তরে। কিন্তু কেন জানিনা এক অশুভের আভাসে কেঁপে উঠেছিল আমার প্রাণ। বারবার করে কেউ যেন বলে উঠছিলো আমার অন্তর থেকে "সাবধান ঈনন, খুব বড়ো এক সর্বনাশ এগিয়ে আস্তে চলেছে তোমার এই ছোট্ট সংসারে!"

সেই দিন আমার আলেকজাণ্ডার প্রত্যাশিত সময়ের অনেক আগেই উদ্ভ্রান্তের মতো ফিরে এসেছিলো আমাদের ছোট্ট আস্তানায়। আমার চেনা মানুষটা যেন সেই একদিনে সম্পূর্ণ বদলে গেছিলো। এক বৃহত্তরের আহ্বান যেন প্রতিমুহূর্তে তাকে সরিয়ে নিচ্ছিলো আমার ছোট্ট জগৎ থেকে। অনেক বিশাল কিছুর স্বপ্নে মগ্ন হয়ে গেছিলো সে। 

এই ছোট্ট ইদা পাহাড় যেন আর ধরে রাখতে পারছিলোনা তার আলেকজাণ্ডারকে। আর সেই স্বপ্নে কোনও স্থান ছিলোনা তার এই ঈনন আর তার ছোট্ট করিথাসের। আর সেই স্বপ্নেই ভর দিয়ে একদিন আমাদের ছোট্ট পরিবারকে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, কোনও এক অজানা জগতে হারিয়ে গেছিলো আমার আলেকজাণ্ডার। 

পাগলের মতো হয়ে গেছিলো সেদিন তার এই ঈনন। ইদা পাহাড়ের সর্বত্র তন্ন তন্ন করে সে খুঁজেছিলো তার স্বপ্নের মানুষটিকে, তার আলেকজাণ্ডারকে। এমনকি জীবনে প্রথমবার ইদা পাহাড়ের বুক থেকে নেমে এসে সমতলের গ্রামগুলিতে ব্যাকুল হয়ে খোঁজ করেছিল তার ভালোবাসার মানুষটির। কিন্তু না। কেউ খোঁজ দিতে পারেনি সেইদিন তাকে তার আলেকজাণ্ডারের। এক নিমেষে যেন ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছিলো সেই অভাগী মা ছেলের দুটি জীবন। কিন্তু তাদের কথা সেদিন কেউ ভাবেনি - না অলিম্পাসের সেই মহান দেব দেবীরা, না কোনও রাজবংশ, আর না তাদের জীবনের প্রাণ পুরুষ সেই একজন। 

ধীরে কেটে যায় কয়েক বছর, একটু একটু করে নিজের যন্ত্রণার সাথে সংগ্রাম করে ছোট্ট করিথাসকে বুকে নিয়ে জীবন পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো এই ঈনন শুধু একটাই স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে, "এক না এক দিন আবার তার জীবনে ফিরে আসবে তার আলেকজাণ্ডার"

এরপর ঘটেছিলো এই অভাগীর জীবনের সব থেকে ভয়ানক অভিজ্ঞতা। তার প্রাণের মানুষটিকে হারানোর থেকেও হাজার গুণে যন্ত্রণাদায়ক সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। আজ ও সেই তিক্ত স্মৃতি হানা করে বেড়ায় এই অভাগীকে। ইদা পাহাড়ের বুকে রাখালেরা এক নতুন খবর নিয়ে এসেছিলো, আমাদের ট্রয়ের সুদর্শন রাজকুমার প্যারিস নাকি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী নারীকে গ্রীকদের থেকে কেড়ে নিয়ে এসেছে। এতো দিনে ট্রয়ের সামনে নত হতে হয়েছে গ্রীকদের উঁচু মাথাটা। রাজকুমার আর সেই বিশ্বসুন্দরীকে সম্মান জানাতে সমস্ত সাধারণ প্রজাদের আহ্বান করেছে মহারাজ প্রিয়াম। তা সে মানুষ হোক কি পার্বত্য পরীরা। সবার জন্য রাজপ্রাসাদের দ্বার আজ উন্মুক্ত এই সমারোহে। আমাদের দলের সবাইও নেচে উঠেছিল এই সুযোগে একবার অন্তত রাজধানীতে যাওয়ার খুশিতে। সত্যি কথা বলতে আমি নিজের ভেতর থেকে কোনও আগ্রহ অনুভব করিনি, তাও যেতে রাজি হয়েছিলাম আমার করির কথা ভেবে, আমি না গেলে ওই বেচারীরও যাওয়া হয়না, এই সুযোগে অন্তত একটু বেরিয়ে আসুক আমাদের এই দুঃখের আস্তানা থেকে। আজ ভাবলে নিজের কপালে কষাঘাত করতে ইচ্ছে হয়... 

কেন? কেন গেছিলাম সেই দিন সেই সমারোহে? আর কিছু না অন্তত একটা অলীক স্বপ্ন তো বেঁচে ছিল এই অভাগীর জীবনে, সেটাতো অন্তত হারাতাম না যদি সেদিন যেতে রাজি না হতাম!

দলের সবার সাথে মিশে অবশেষে একদিন সত্যি গিয়ে পৌঁছলাম ট্রয়ে। কি প্রাসাদ! কি অদ্ভুত সুন্দর বাগিচা! কত সুন্দর সব মূর্তি! কি অপূর্ব বিশাল মন্দির দেবতা এপেলো, দেবী এথেনা আর দেবরাজ জিউসের! আমরা পার্বত্য জাতি, প্রকৃতির মধ্যেই আমাদের বাস, এইসব না আগে কখনও দেখেছি আর না দেখার কল্পনা করেছি! মুখে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম মানব সভ্যতার এই সব অদ্ভুত সৃষ্টি দেখে। করি আমার হাত ধরে হতবাক হয়ে দেখে যাচ্ছিলো এই অদ্ভুত নগরকে, আর মাঝে মাঝেই অবোধের মতো একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিল তার এই মাকে। আর ছাই আমিও কি কিছু জানি? দুজনে মিলে নতুন নতুন চমকে অবাক হয়ে গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেই মূল অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে, কিন্তু অতি বড় দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি এই সব চমকের আড়ালে কত ভয়ঙ্কর এক সত্য অপেক্ষা করছে এই অভাগী মা আর তার ছেলের জন্য। 

ভীড়ের মধ্যে এসে আমরা দাঁড়ালাম মূল প্রাঙ্গনে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজকুমার আর সেই বিশ্বসুন্দরী এসে দাঁড়াবেন এখানে। অধীর আগ্রহে আমরা সবাই অপেক্ষা করছি রাজকুমার আর সেই সুন্দরীকে একবার একঝলক দেখার জন্য। 

একটা সময় একটা অদ্ভুত সুন্দর রথ এসে দাঁড়ালো, এক দীর্ঘদেহী তরুণ ক্ষিপ্র ভঙ্গীতে ওই রথ থেকে নেমে এলো প্রাঙ্গনে। নিজের হাত সে বাড়িয়ে দিলো ওই রথেই বসে থাকা এক রাজবংশীয়া রমণীর দিকে, তরুণের হাত ধরে নেমে এলেন সেই রমণী। এতো দূর থেকে কিছু পরিষ্কার দেখাও যাচ্ছিলোনা । করির হাত ধরে ভীড় ঠেলে আমি সামনে এগিয়ে আসি রাজকুমার আর ওই সুন্দরীর এক ঝলক দেখার জন্য। রাজকুমার পিছন করে দাঁড়িয়ে আছে ওই বিশ্বসুন্দরীর হাত ধরে। তারপর ওই সুন্দরীকে নিয়ে আমাদের দিকে এক মুখ হাসি নিয়ে ফিরে দাঁড়ালেন রাজকুমার। কিন্তু এ কে! 

এ তো কোনও রাজকুমার নয়। এ তো আমার আলেকজাণ্ডার! আলেকজাণ্ডার এখানে! বিস্ময়ে আনন্দে যেন আমার হৃদস্পন্দন থেমে যাবার জোগাড় হয়েছিল। 

...তীক্ষ্ণ চীৎকার করে উঠি "আলেকজাণ্ডার..."

না। ভীড় ঠেলে আমার কণ্ঠস্বর পৌছোয় না আমার আলেকজাণ্ডারের কানে। কিন্তু বিরক্ত হয়ে ওঠে আমার পাশে দাঁড়ানো নগরবাসীর দল। 

একজন তীব্র স্বরে বলে ওঠে "এই পাহাড়ী নিম্ফদের নিয়ে এই সমস্যা, না কাউকে চেনে আর না মানুষদের সাথে মিশতে জানে, কেন যে এদেরও আসতে দিয়েছে মহারাজ প্রিয়াম? রাজকুমার প্যারিসকে কি অদ্ভুত নামে ডাকছে দেখো ?"

রাজকুমার প্যারিস? কে রাজকুমার প্যারিস? এ তো আমার আলেকজাণ্ডার! এরা সবাই আমার আলেকজাণ্ডারকে রাজকুমার প্যারিস কেন বলছে? কেন এরা সবাই মিলে চক্রান্ত করে সরিয়ে দিচ্ছে আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষটির থেকে? করিকে বুকে নিয়ে আমি প্রাণপণে ভীড় ঠেলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি আমার আলেকজাণ্ডারের কাছে। কিন্তু না, কেউ আমাকে একটুও দয়া করে পৌঁছতে দিলোনা। রাজপ্রহরীরা আমাদের ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো ভীড়ের মধ্যে, আমি প্রাণপনে চীৎকার করে উঠলাম তার উদ্দেশ্যে, কিন্তু আমার ডাক তার কানে পৌঁছোলনা। ওই বিশ্বসুন্দরী তার হাত ধরে তাকে নিয়ে আবার রথে গিয়ে উঠলো, রথ তাদের নিয়ে এগিয়ে গেলো রাজ প্রাসাদের দিকে...

কিন্তু এত সহজে আমি আমার থেকে আবার হারিয়ে যেতে দেবোনা আমার আলেকজাণ্ডারকে। আলেকজাণ্ডারের নিশ্চয়ই কোনোও রোগ হয়েছে, সে কোনওভাবে তার স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে, নয়তো এরা জোর করে আটকে রেখেছে এখানে। আমি একবার তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারলেই সে আবার আমার হাত ধরে ফিরে আসবে তার ঈনন আর করিথাসের জীবনে। 

রাতের অন্ধকারে করিকে নিয়ে বহুকষ্টে প্রহরীদের লুকিয়ে ঢুকেছিলাম ওই রাজপ্রাসাদে, দাসীদের পিছু নিয়ে একসময়ে এসে পৌঁছলাম "রাজকুমার প্যারিস"এর ঘরে। ঘরের এক অন্ধকার কোণে এসে লুকিয়েছিলাম আমার আলেকজাণ্ডারের অপেক্ষায়। একটা সময় সেই কক্ষে এসে ঢুকল সে, আগের মতো ছুটে এসে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়েও থমকে গেলাম। তার হাত ধরে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে ওই বিশ্বসুন্দরী। আমার আলেকজাণ্ডার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। যেন নিজেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে ওই মায়াবিনীর দৃষ্টিতে। একটা প্রচণ্ড রাগে আমার মাথার ভেতরটা যেন পুরো জ্বলে যাচ্ছিলো। এই মায়াবিনী কোনও ছলনায় আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে আমার আলেকজাণ্ডারকে। ওই মায়াবিনীকে চুম্বন করে, শয্যায় রেখে কিছু সময়ের জন্য কক্ষের বাইরে বেরিয়ে গেলো আলেকজাণ্ডার। 

আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। এই মায়াবিনী সব কিছুর মূলে। ওকে আমি কিছুতেই আমার আলেকজাণ্ডারকে আমার থেকে কেড়ে নিতে দেবোনা। আত্মরক্ষার জন্য রাখা ধারালো ছুরিটা বার করে এক একপা করে এগিয়ে গেলাম ওই মায়াবিনীর দিকে। আজকে ওর সব মায়া নষ্ট করে নিজের আলেকজাণ্ডারকে আবার ফিরে পাবে ইনন। আমার করি আবার পাবে ওর বাবাকে। আচমকা ওই মায়াবিনীর দৃষ্টি গিয়ে পড়লো আমার উপর, একটা তীক্ষ্ণ আর্তনাদ বেরিয়ে এল তার গলা থেকে। আর দেরি করা চলবেনা আমি আমার ছুরিটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর উপর। একবার গলায় ছুরিটা বিদ্ধ করে দিতে পারলেই আমার আর করির সব যন্ত্রণা শেষ, আমার আলেকজাণ্ডার আবার ফিরে আসবে আমাদের জীবনে। ওই মায়াবিনী প্রাণপণ চেষ্টা করছে নিজেকে বাঁচানোর কিন্তু, আমার ধারালো ছুরি একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ওর গলার দিকে। আর কয়েক মুহূর্ত। তারপরেই সব কিছু আবার আবার আগের মতোই হয়ে যাবে...

কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেউ যেন হাতটা ধরে আটকে দিলো, একটা রোষের চীৎকার করে আমি পেছন ফিরে তাকালাম। আমার হাত ধরে আছে আমার আলেকজাণ্ডার। সেই মুখ, সেই অদ্ভুত একজোড়া নীল চোখ। আমি যেন সব ভুলে গেলাম, মোহগ্রস্তের মতো বলে উঠলাম "আলেকজাণ্ডার?"

আমাকে দেখে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল আমার আলেকজাণ্ডার, আমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সে, যেন নিজের চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, কয়েকটা নীরব মুহূর্ত যেন সাক্ষী হয়ে রইলো আমাদের সেই পুনর্মিলনের। আর ওই কয়েকটা নীরব মুহূর্তে যেন কয়েক যুগের প্রতীক্ষা মিটিয়ে আমি তাকিয়ে থাকলাম আমার ভালোবাসার দিকে। আর সেও যেন এক পাথরের মূর্তির মতো স্তব্ধ তাকিয়ে রইলো এই অভাগীনীর দিকে। 

অবশেষে একটা বিধ্বস্ত স্বরে সে বলে উঠলো "ঈনন?"

আমি যেন শরীরে প্রাণ খুঁজে পেলাম। হে মাতা রিয়া, তোমার অশেষ কৃপা, আমার আলেকজাণ্ডারের মনে পড়ে গেছে আমাকে, তাহলে নিশ্চয় কেটে গেছে ওই মায়াবিনীর মায়া। এবার আবার আমরা তিনজন এক হয়ে যাবো।

আমি অধীর স্বরে বলে উঠলাম "হ্যাঁ আলেকজাণ্ডার, আমি তোমার ঈনন। কতদিন ধরে তোমাকে খুঁজছি আমি ,চলো আর একমুহূর্ত না, এই মায়াপুরী ছেড়ে আমরা আবার ফিরে যাই আমাদের ইদা পাহাড়ে। ওই দেখো করিও এসেছে তোমাকে নিতে, চলো আজ রাতেই আমরা তিনজন পালিয়ে যাই এই মায়াপুরী থেকে।"

করি ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসে আমার কাছে, এক দৃষ্টিতে বেচারা তাকিয়ে রয়েছে ওর বাবার দিকে, কতবছর পর দেখছে এই মানুষটাকে ও। 

করির হাতটা এক হাতে ধরে অন্য হাতে আমার আলেকজাণ্ডারের হাত ধরে আমি এগিয়ে যেতে গেলাম দরজার দিকে। কিন্তু আমার আলেকজাণ্ডার পাথরের মূর্তির মতো যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে এক জায়গাতেই। 

আমি ব্যাকুল স্বরে বলে উঠলাম "কি হলো আলেকজাণ্ডার, চল?"

আলেকজাণ্ডার এক অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে ফিরে দাঁড়ালো, আমার চোখে চোখ রেখে একটা গভীর স্বরে সে বলে উঠলো "আমার নাম আর আলেকজাণ্ডার নয় ঈনন। আমি এখন এই ট্রয়ের রাজকুমার, রাজকুমার প্যারিস। আর তুমি যাকে হত্যা করতে গেছিলে সে আমার পত্নী হেলেন।"

আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম, এই মায়াবিনী আমার আলেকজাণ্ডারের পত্নী? তাহলে আমি কে? না না, আলেকজাণ্ডার এখনও নিশ্চয়ই পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি এই মায়াবিনীর মায়া থেকে। তাই এইসব ভুল বকছে। 

আর সেটাই আমি হেসে বলে উঠলাম, "তুমি রাজকুমার প্যারিস কিভাবে হবে আলেকজাণ্ডার? তুমি তো আমার আলেকজাণ্ডার, ফ্রিগার ইদা পাহাড়ের রাখাল আলেকজাণ্ডার। এরা নিশ্চয়ই তোমাকে কোনও বিষ খাইয়েছে। তুমি ভয় করোনা, তুমি তো জান তোমার ঈনন যে কোনও রোগের উপশম করতে পারে। সব বিষের প্রতিষেধক আমার জানা। তোমাকে আমি আবার সুস্থ করে তুলবো, বিশ্বাস করো আমায়।"

একটা বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আলেকজাণ্ডার, "আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি ঈনন, আমি কোনও রাখাল নই, আলেকজাণ্ডারও নই। কোনওদিন ছিলামও না। ওই অধ্যায়টা ছিল আমার জীবনের এক অভিশপ্ত পরিচ্ছেদ। তুমি শান্ত হয়ে বসো, আমি তোমাকে সব জানাচ্ছি ।"

আমি বিস্ময়ে, আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। কি বলছে এগুলো আমার আলেকজাণ্ডার? সে কোনওদিন আলেকজাণ্ডার ছিলোনা মানে? একি ধরণের পরিহাস করছে সে আমার সঙ্গে? করিকে কোলে নিয়ে কোনওমতে কক্ষের এক পাশে একটি আসনে গিয়ে বসি আমি, আর স্তব্ধ হয়ে শুনি আমার আলেকজাণ্ডারের মুখে এক অদ্ভুত কাহিনী। আমার জীবনের অভিশাপের কাহিনী। 

আলেকজাণ্ডার বলে চলেছিল, সে ট্রয়ের রাজা প্রিয়াম আর রানী হেকুবার পুত্র। তার মা তার জন্মের সময়েই স্বপ্ন দেখেন যে তিনি এক জ্বলন্ত মশাল প্রসব করছেন। জ্যোতিষীরা বলেন এই পুত্র হতে ধ্বংস হবে সমস্ত ট্রয়। তাই তার জন্মের পরেই তার পিতা তাকে নির্বাসিত করেন ওই ইদা পাহাড়ের উপত্যকায়। রাখালেরা তাকে খুঁজে পায়, তারাই তার নাম দেয় আলেকজাণ্ডার। এরপর যখন সে আমাদের ছেড়ে চলে আসে এই ট্রয়ে এক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে, আর তখনি তাকে চিনতে পারে দেবতা এপেলোর আশীর্বাদ ধন্যা তার বোন ক্যাসান্ড্রা। আর তার পরিচয় জানতে পেরে সব কিছু ভুলে তাকে নিজের বুকে টেনে নেন মহারাজ প্রিয়াম। আলেকজাণ্ডার ফিরে পায় তার রাজকুমার প্যারিসের পরিচয়। আর তারপরেই সে গ্রিসের স্পার্টায় গিয়ে রাজা মেনেলাসের পত্নী বিশ্বের সেরা সুন্দরী রানী হেলেনের প্রেমে পড়ে। আর তার সাথে নিজের স্বামী ও শিশু কন্যাকে ছেড়ে ট্রয়ে পালিয়ে আসে রানী হেলেন। আর এখন সেই তার সব কিছু , তার ভালোবাসার পত্নী।

আমি স্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম এই অদ্ভুত কাহিনী, এই কাহিনী যা আমার জীবনের সব থেকে ভয়ঙ্কর সত্য। আমার আলেকজাণ্ডার, রাখাল আলেকজাণ্ডার নয়। সে রাজকুমার প্যারিস। আর তার ভালোবাসার মানুষ আর আমি নই, এখন সেই স্থান এই হেলেনের। আমার আর কোনও মূল্য নেই আমার আলেকজাণ্ডার… না ভুল বললাম - এই রাজকুমার প্যারিসের কাছে।

তাও আশা এক মরীচিকার মতো, মিথ্যে জেনেও মানুষ তার পিছু ছাড়তে পারেনা। আমিও পারিনি। 

ব্যাকুল স্বরে বলে উঠেছিলাম, "তুমি আর ইদা পাহাড়ে ফিরে যাবেনা আলেকজাণ্ডার?"

একটা পরিষ্কার বিরক্তির চিহ্ন এবার ফুটে ওঠে তার মুখে, আমার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় স্বরে সে বলে ওঠে "আলেকজাণ্ডারের আর কোনও অস্তিত্ব নেই ঈনন, এই নামে আর কোনওদিন তুমি ডাকবেনা আমায়। আমি ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস। এটাই আমার আজকের পরিচয়। ওই সময়কে একটা দুঃস্বপ্ন মনে করে আমি চিরকালের যেন ভুলে যেতে চাই।"

আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম, দুঃস্বপ্ন? আমাদের একসঙ্গে কাটানোর ওই অমূল্য সময়গুলো দুঃস্বপ্ন আমার আলেকজাণ্ডারের কাছে? না, এই ব্যক্তি সঠিক কথাই বলছে। এ আমার আলেকজাণ্ডার হতেই পারেনা। এ সত্যিই এই ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস।
 
রাজকুমার প্যারিস এবার আমার চোখের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। অন্যদিকে নিজের মুখ ফিরিয়ে সে বলে ওঠে, "আর আমি চাইনা ঈনন যে আমার তোমার আর করিথাসের সঙ্গে পূর্ব সম্পর্ক কারোর সামনে আসুক। ক্ষমা করো, কিন্তু এক পার্বত্য নিম্ফের সাথে এক রাজকুমারের সম্পর্ক আর তার গর্ভজাত সন্তান, ট্রয়ের রাজবংশের পক্ষে মর্যাদার হবেনা। তোমরা ইদা পর্বতে ফিরে যাও, গোপনে তোমাদের যতটা সাহায্য করা সম্ভব আমি করবো।"

নিজের স্তম্ভিত অবস্থা থেকে প্রচণ্ড কশাঘাতে অবশেষে বাস্তবের মাটিতে ফিরে এসেছিলাম আমি, ধীরে ধীরে করির হাতটা ধরে রাজকুমার প্যারিসের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। ক্লান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলে উঠি, "আমার সম্পর্ক ছিল আমার আলেকজাণ্ডারের সাথে, রাজকুমার প্যারিসের সাথে নয়। চিন্তা করবেননা রাজকুমার, যখন আমার আলেকজাণ্ডারই আজ মৃত তখন রাজকুমার প্যারিসকে অকারণে বিব্রত করবেনা এই পার্বত্য নিম্ফ। আর আমার আর করির জন্য আপনার কোনও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এত বছর করিকে নিয়ে যখন আমি একা বাঁচতে পেরেছি ভবিষ্যতেও পারবো। খালি একটাই প্রশ্ন আছে আপনার কাছে, একজন পার্বত্য নিম্ফকে পত্নীর মর্যাদা দেওয়া যদি ট্রয়ের রাজপরিবারের পক্ষে অমর্যাদার হয়, তবে এক বিবাহিত নারীকে নিয়ে পালিয়ে আসা কোন নীতিতে মর্যাদার হয় বলতে পারেন?"

আমার প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননা রাজকুমার প্যারিস, আমার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেন তিনি। শয্যা থেকে উঠে তার পাশে এসে দাঁড়ায় সেই বিশ্বসুন্দরী হেলেন। 

না আর কোনও রাগ, বিদ্বেষ আমি অনুভব করিনি এর প্রতি, যখন আমার ভালোবাসা স্বেচ্ছায় আমার থেকে দূরে সরে গেছে, তখন একে দোষারোপ করে কি লাভ ?

হেলেনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবার ফিরে তাকিয়েছিলাম রাজকুমারের দিকে। ক্লান্ত হেসে বলে উঠেছিলাম, "আমি জানতাম আমার এই প্রশ্নের উত্তরটুকুও আমি পাবোনা, আর তার আশাও ছিলোনা। আমি স্বেচ্ছায় আজ চলে যাচ্ছি আলেকজাণ্ডার, ওহ ভুল বললাম, রাজকুমার প্যারিস। শুধু একটা কথা বলে যাই যাওয়ার আগে, যে রমণীর জন্য তুমি আমাকে বিনা কারণে ত্যাগ করলে, সেই রমণীও একদিন এইভাবেই তোমাকে এক ফেলে রেখে চলে যাবে নিজের জগতে। আর সেইদিন তুমি ফিরে আসতে চাইবে তোমার সেই "দুঃস্বপ্নের জগতে", কিন্তু ততদিনে সেই জগতের পথটাই না তুমি ভুলে যাও!"

করির হাতটা ধরে রাজকুমার প্যারিসের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হই আমি। কিন্তু শেষবারের মতো আমার আলেকজাণ্ডারের স্বর আমাকে আবার থামিয়ে দিয়েছিল "অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছ ঈনন?"

পিছন ফিরে তার আর তার কণ্ঠলগ্না বিশ্বসুন্দরীর দিকে তাকিয়ে অল্প একটু হেসে বলে উঠেছিলাম, "না, অভিশাপ নয়, অনুভব। যে নারী নিজের সুখের জন্য নিজের নির্দোষ স্বামী আর শিশু কন্যাকে ছেড়ে স্বেচ্ছায় নিজের দুদিনের প্রেমিকের সাথে পালাতে পারে, সে নিজের বিপদ দেখলে নিজের প্রেমিককে ছেড়ে পালাতেও এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করবেনা।"

করির হাতটা শক্ত করে ধরে আমি বলে উঠি, "চল করি, আমরা ফিরে যাই আমাদের স্বর্গ আমাদের ছোট্ট ইদা পাহাড়ে, এই বিশাল রাজপ্রাসাদ তোর আমার যোগ্য নয়।"

আমার বালক পুত্র একবার ফিরে তাকায় নিজের পিতার দিকে, এত সময়ের মধ্যে প্রথমবার আমি ভয় পেয়েছিলাম। করির দৃষ্টির মধ্যে জমে ছিল অমানুষিক ক্রোধ আর ঘৃণা। ভয়ে কেঁপে ওঠে আমার অন্তর। কে জানে এই ঘৃণা অদূর ভবিষ্যতে আবার কোন বিনাশ ডেকে আনতে চলেছে আমার জীবনে...!

আর এক মুহূর্তও দেরি না করে, করির হাতটা শক্ত করে ধরে, রাজকুমার প্যারিস আর তার প্রেয়সী হেলেনকে পেছনে ফেলে ট্রয়ের রাজপ্রাসাদ থেকে আমি ফিরে আসি আমার জগতে, আমার ইদা পাহাড়ের বুকে।



0 comments: