0

অণুগল্প - ঝুমা সমাদ্দার

Posted in





অণুগল্প


অন্তরমহল
ঝুমা সমাদ্দার





"শ্ শ্ শ্, চুপ চুপ" – মা বলেছিল। "ও কথা বলতে নেই। কারুক্কে বলবি না কোনওদিন। আমরা তোকে ভালোবাসি না?” - মা আমাকে ভালোবাসে। বাবাও। জন্মদিনে বাবা আমাকে এত্তবড় টেডিবেয়ারটা এনে দিয়েছিল।

“কিন্তু, মা, বাবা আমাকে… আমার খারাপ লাগে মা, ব্যাথা লাগে, রক্ত... আমি মুছে নিয়েছি টেপফ্রক'টা দিয়ে, দেখ তুমি।"

“আমি মানা করে দেব, মা। বাবা আর অমনি করবে না। বাবা তোমাকে ভালোবাসে, মা। ও কথা বলতে নেই। বোলো না কাউকে, কেমন?”

“কাউকে না? লালি'কে-ও না? তুমি তো আগের বারেও বলেছিলে বাবা'কে মানা করবে, কই বাবা শোনে নি তো তোমার কথা?”

“না, কাউকে না। বলে না, মা। এ সব কথা বলতে নেই।"

এ সব কথা বলতে নেই। মা ঘরে না থাকলে বাবার কাছে যেতে নেই। বাবা'কে দেখলেই যে আমার বমি পায়, বলতে নেই। মুখটা তেতো জলে ভরে যায়, গিলে নিতে হয়। বলতে নেই।

দাদু'র যেদিন খুব শরীর খারাপ করলো, মা মামার বাড়ি গেলো। আমার পরদিন পরীক্ষা বলে আমাকে নিয়ে গেল না, সেই রাতে সারারাত নিজেকে বাথরুমে বন্ধ করে রেখে দিয়েছি। হি হি! কেমন জব্দ!

"মামনি, অমনি করে না, মা, ভারী অবাধ্য হয়েছ তুমি, ঠাণ্ডা লাগবে, এস, বেরিয়ে এস।" বাবা ডেকেছে কতবার। দরজার ফাঁক দিয়ে জল ছুঁড়ে দিয়েছি বাবার গা'য়ে।

সকালে মা ফিরে এসে দেখে আমি বাথরুমের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমোচ্ছি। মা এসে ডাকতেই দরজা খুলে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ধূম জ্বর আমার। ডাক্তার আঙ্কেল এসে কতবার জিজ্ঞেস করল, কেন এমন করেছি আমি। বলিনি আামি। শ্ শ্ শ্, বলতে নেই।



না, এখনও বলিনি আমি। শ্ শ্ শ্, বলতে নেই।

“হাঃ হাঃ, তুমি কি গো! এ সব কথা কি বলতে আছে, নাকি? ঘরের কথা... দাদা সেই কবে থেকে একলা, বলো দেখি? বৌদি মারা গেছে আজ পঁচিশ বছর হয়ে গেল। সেই থেকেই তো একলা। কম কষ্ট পেয়েছে? এখন তোমাকে ঘরের মধ্যে দেখে একটু এদিক ওদিক… হতেই তো পারে…। পারে না? বলো? আর তা ছাড়া, আমি তো তোমাকে ভালোবাসি গো! দাদাও ভালই বাসেন তোমাকে। ও সব কথা বলতে নেই, ছিঃ! এক্কেবারে পাগলী বউ'টা আমার।" - নাকটা টিপে দিয়ে অফিসে চলে গেলেন। ফেরার সময় হাতে দামী লেডিস পারফিউম। কি সুন্দর গন্ধ! আমার বমি পায়।

সব্বাই আমাকে ভালোবাসে। এত ভালোবাসে কেন সবাই আমাকে?

ছিঃ, সবেতেই সন্দেহ আমার। সব ঘরের কথা, বলতে নেই, বাইরে বলতে নেই।

“বউমা …একবার শুনে যাও তো এদিকে, পা'টা বড় যন্তন্না হচ্ছে, একটু টিপে দাও তো মা। আর একটু উপরে, না, উঁহু, আরও একটু উপরে।"

পার্কে ঘুরতে গিয়ে ফেরার সময় বৌমা'র জন্য চিকেন কাটলেট। বমি পায় আমার।

“সত্যি, কপাল করে শ্বশুরবাড়ি পেয়েছিস। না শ্বশুর-শাশুড়ি, না ননদ-জা। ভাসুর এত ভালবাসেন তোকে, একেবারে নিজের মেয়ের মত।"

সত্যি, মেয়ের মতো। কেন যে? শরীর'টা যদি আমার না থাকত!

শ্ শ্ শ্, বলতে নেই।

0 comments: