0

রম্যরচনা - সাম্য দত্ত

Posted in



রম্যরচনা


পাঁচ এক্কে এক 
সাম্য দত্ত





29শে এপ্রিল

-না, কাল আপনাকে দেখলাম উশ্রীর ধারে, মর্নিং ওয়াক কারছিলেন।তাই ভাবলাম একবার দেখা কোরে যাই, হে হে হে।
-ওটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস, আজ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে করছি।
-ভেরি গুড, ভেরি গুড! তা, গিরিডিতে আপনার কেতো দিন হোলো?
-আমাদের কয়েক পুরুষের বাস এখানে। বাবা এখানকার নামী চিকিৎসক ছিলেন, দাদু...
-অউর, আপকা হাতিয়ার?
-হাতিয়ার? 
-দ্যা ভেনিশিং গান।
হেসে বললাম, আপনি বিজ্ঞানের জগতের খবরও রাখেন তাহলে?
-উপায় আছে প্রোফেসর, খবর দিবার লোক আছে।
-সে তো বুঝতেই পারছি।
লোকটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ। বসার ঘরে আজ আমার ল্যুমিনিম্যাক্সটা জ্বালানো হয়নি, কিন্তু আবছা অন্ধকারেও স্পষ্ট বুঝতে পারছি লোকটার জ্বলজ্বলে, ধূর্ত দুটো চোখ একদৃষ্টে আমারই দিকে চেয়ে আছে।
-একবার দিখাবেন?
-ও জিনিস তো হাতের কাছে রাখিনা সবসময়। ওটা থাকে আমার ল্যাবরেটরিতে।
আবার বিরতি, এবার আরো দীর্ঘ। তারপর আবার সেই বরফের মতো ঠাণ্ডা, হিসহিসে কন্ঠস্বর, আমি ফিফটি ল্যাকস অফার করছি প্রোফেসর। আপনি ইচ্ছা কোরেন তো আজহি দিতে পারি, কেশ।


মাথা নেড়ে বললাম,  টাকার আমার অভাব নেই। তাছাড়া, হঠাৎ করে বড়লোক হবার বাসনাও নেই। একা মানুষ, দিব্যি চলে যায়।সুতরাং....
-সেভেন্টি ফাইভ ল্যাকস, সোচিয়ে প্রোফেসর।


লোকটার ধৃষ্টতা এবার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে একটু কড়া করেই বলতে হলো, আমার প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আমার দীর্ঘদিনের সাধনার ফল। তাদের একটিকেও বেচে মুনাফা করার মানসিকতা আমার নেই। বিক্রির প্রশ্নই ওঠে না।
-ওয়ান কোরোর প্রোফেসর, ফাইনাল অফার। সোবার কাছে আমি জিনিস চেয়ে নিই না, দরকার হোলে...
-জানি। আমার আর কিছু বলার নেই। আপনি আসুন।
-এটা আপনার শেস কোথা?
-শেষ কথা।

রহস্য রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ু বললেন, আচ্ছা, এই অ্যানাইহিলিন যন্তরটা কি মশাই?
-নিশ্চিহ্নাস্ত্র। ফেলুদা বলল, শত্রুকে জখম না করে, বিনা রক্তপাতে তাকে একেবারে গায়েব করে দেবার মোক্ষম হাতিয়ার। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুশমনের দিকে তাক করে ঘোড়া টিপে দিলেই কেল্লাফতে।
- আরেব্বাস! এর কাছে আপনার কোল্ট পয়েন্ট থ্রি টুও তো নস্যি মশাই! 
-সে তো বটেই! তবে শুধু অ্যানাইহিলিনই নয়, প্রোফেসর শঙ্কুর প্রত্যেকটি আবিষ্কারই এককথায় ইউনিক। আপনি মিরাকিউরল বড়ির নাম শুনেছেন?
এর উত্তরে লালমোহনবাবু বললেন, তিনি প্রোফেসর শঙ্কুর নামই এই প্রথম শুনছেন। 
-কাগজে ছবি দেখলুম মশাই! বেঁটেখাটো, টাকমাথা, মুখে ছুঁচলো দাড়ি। এতবড় কনভেন্টর দেখে বোঝে কার সাধ্যি! 

'কনভেন্টর' অবিশ্যি 'ইনভেন্টর'-এর জটায়ু সংস্করণ। তবে ভদ্রলোক বললেন, গিরিডিতে তাঁর এক পরিচিত থাকেন।
-অবিনাশ চাটুজ্জ্যে। এথিনিয়াম ইনস্টিটিউটে তিন ক্লাস ওপরে পড়ত। যদি যাবার মতলব করেন, তাহলে বলুন, এই বেলা লিখে দিই।


এখানে বলে রাখি, বিখ্যাত আবিষ্কারক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর আবিষ্কার অ্যানাইহিলিন পিস্তল বা নিশ্চিহ্নাস্ত্র যে তাঁরই ল্যাবরেটরি থেকে থেকে চুরি গেছে, একথা কাগজে পড়েছিলাম। কিন্তু চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই যে ভদ্রলোক ফেলুদাকে ফোন করে তার সাহায্য চাইবেন এই চুরির তদন্তে, সেটা আন্দাজ করতে পারিনি। শঙ্কু অবশ্য বলেছিলেন, তিনি ফেলুদার সুনামের সঙ্গে পরিচিত। 

-তোমার বাবা জয়কৃষ্ণ ছিলেন আমার সহপাঠী। তোমাদের বাড়ি গিয়েছি তাঁর সঙ্গে, তখন অবিশ্যি তুমি খুবই ছোট।

উত্তরে ফেলুদা জানিয়েছিল সেও প্রোফেসর শঙ্কুর গুণমুগ্ধ, এই বিপদে তাঁকে সাহায্য করতে পারলে তার ভালোই লাগবে। 


-তাহলে তোমাকে বলে রাখি, দু'দিন আগে বেনারসের এক ভদ্রলোক হঠাৎ বেয়াড়া এক আব্দার নিয়ে হাজির হন। তিনি অ্যানাইহিলিন কিনতে চান, এক কোটি পর্যন্ত অফার করেন।
-এবং আপনি রাজি হননি, তাই তো?
-সে আর বলতে! কি জানো ফেলুবাবু, বিজ্ঞানকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য কাজে লাগাব, তেমন ইচ্ছে তো হয়নি কখনও!
-ভদ্রলোকের নাম?
-তোমার পুরনো আলাপী। মগনলাল, মগনলাল মেঘরাজ।


ফোনটা এসেছিল আধঘন্টা আগে। ইদানীং ফোন এলে ফেলুদা স্পিকারে দিয়েই কথা বলে। প্রোফেসরের কথা শেষ হওয়ামাত্র শুনতে পেলাম, আমার ঠিক পাশেই লালমোহনবাবুর হাঁটুদুটো পরস্পরের সঙ্গে ঠোকাঠুকি খেয়ে বিশ্রী ঠকঠক আওয়াজ তুলেছে। ভদ্রলোকের মাথাটাও ক্রমশ যেন নীচের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, ধরে না ফেললে হয়ত পড়েই যাবেন। ওঁকে দোষ দেওয়া যায় না। অতীতে যতবার এই দুর্ধর্ষ দুশমনের সঙ্গে ফেলুদার সংঘর্ষ হয়েছে, প্রত্যেকবার একটা বড় ঝড় বয়ে গেছে ওঁর ওপর দিয়ে। আমিও যেন বুকের ভেতরের ধুকপুকুনিটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আর কতবার? কতবার এই ভয়ানক শয়তানের মুখোমুখি হতে হবে? 


ফেলুদা কিন্তু দেখলাম বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল, ঠিকই বলেছেন, এঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার আমার মোলাকাত হয়েছে। নিঃসন্দেহে একটি অসামান্য বিচ্ছু। তবে ভাববেন না, এই বুনো ওলের জন্য বাঘা তেঁতুলের ব্যবস্থা আমিই করব।

ফেলুদাকে এত অস্বাভাবিকরকম গুম মেরে যেতে অনেকদিন দেখিনি। শঙ্কুর ফোনটা এসেছিল সকালে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ প্রথমে বেনারসের ইনস্পেক্টর তেওয়ারি আর তারপর লালবাজারের ইনস্পেক্টর গড়গড়ি ফোন করে জানালেন, ফেলুদার কথামতো কাশী এবং কলকাতায় মগনলালের দুই বাড়ি আর গদিতে একসাথে রেইড হয়েছে। কিছুই পাওয়া যায় নি, তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাশীতেই মগনলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন বাজে ন'টা। এই চার ঘন্টা ফেলুদা একনাগাড়ে আমাদের বসার ঘরটাতে পায়চারি করেছে, তার ভুরুদুটো অসম্ভব কোঁচকানো, যদিও এখন ঠোঁটের কোণে একটা হাসির আভাস দেখে বুঝতে পারছি ও হয়ত একেবারে অন্ধকারে নেই। মাঝেমধ্যে থেমে ওর নীল ডায়রিতে হিজিবিজি কিসব লিখেছে আর একটার পর একটা চারমিনার ধ্বংস করেছে। জানি এইসময় ও কথা বলা পছন্দ করে না, তবু খেতে বসে সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, পিস্তলটা তো মগনলাল পায়নি, তাই না ফেলুদা! 
উত্তরে গম্ভীর ভাবে মাথা নেড়ে বলল, পেলে সে আর এ তল্লাটে থাকত না। দুনিয়াময় ও জিনিসের খদ্দেরের তো আর অভাব নেই।

-তাহলে এবার?
-এবার মাছ। তারপর দই, তারপর চাটনি। তারপর একটা পান খেয়ে গিরিডিতে একটা ফোন করব। তারপর ঘুম। 
একটু থেমে বলল, তবে, আমার মন কি বলছে জানিস, তোপসে! চেনা পথে এই রহস্যের সমাধান হবে না।দেখি, প্রোফেসর কি বলেন....




30শে এপ্রিল

আজ রাত দশটা নাগাদ ফেলুর ফোন পেলাম। মগনলালের বাড়িতে খানাতল্লাসি যে নিষ্ফল হয়েছে, সেটা জানিয়ে ও বলল, প্রোফেসর, আমার ধারনা মগনলাল এই চুরির সঙ্গে জড়িত নয়। আপনার অস্ত্রের ওপর তার লোভ ষোলআনা, কিন্তু সেটা তার হাতে পৌঁছয়নি। 

মনের মধ্যে একটা সন্দেহ ক্রমেই দানা বাঁধছিল। বললাম, ফেলু, আমি যা ভাবছি, তুমিও কি ঠিক তাই ভাবছ?
ফেলু একমুহূর্ত চুপ। তারপর বলল, এছাড়া আর উপায় নেই প্রোফেসর। যিনি এসব কিছুর মূলে থেকেও এখন আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাঁর সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর উপায় দেখছি না।

-তোমার ইঙ্গিত বুঝেছি ফেলুবাবু। বেশ, আমি আমার নিওস্পেক্ট্রোস্কোপ বের করে রাখব। তোমরা তিনজন বরং কালই এখানে চলে এস। তবে একটা কথা-
-কি?
-অ্যানাইহিলিন চুরি যাবার পর থেকে মানসিক চাপটা বেশ টের পাচ্ছি। এ অবস্থায় হয়ত আমার পক্ষে কনসেনট্রেট করার অসুবিধা হবে। সুতরাং, একজন ভালো মিডিয়ামের খোঁজ করতেই হচ্ছে! 
-সে আর ভাবনা কি? একজন তো হাতের কাছেই আছেন।

-কে? কার কথা বলছ?
-নাম বললেই চিনবেন, তারিণীচরণ বাঁড়ুজ্যে।




চা এল। দুধ-চিনি ছাড়া চা। খুড়ো তা'তে একটা তৃপ্তির চুমুক দিয়ে তাঁর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বিড়ির একটা ধরালেন। কিন্তু গপ্প মাঝপথে থেমে গেলে কী আর শ্রোতাদের ভালো লাগে! তাই ভুলু একটু তাড়া দিল, কী হল খুড়ো! শুরু করুন আবার! 
-দাঁড়া, দাঁড়া! -খুড়ো বললেন, সেই বেনেটোলা টু বালিগঞ্জ হেঁটে এইচি। একটু রেলিশ করে চা খেতে না পারলে কি আর গপ্প বলার মুড থাকে!
-আচ্ছা, ফেলু মিত্তির তো নামকরা ডিটেক্টিভ। -মাঝখান থেকে ন্যাপলা হঠাৎ ফোড়ন কাটল, তাঁর সঙ্গে আপনার সত্যিই পরিচয় আছে, নাকি এটাও ওই আর্টের খাতিরে রঙ চড়াচ্ছেন?

সত্যি! খুড়োকে এরকম কথা বলার সাহস এক ন্যাপলারই আছে! 

খুড়ো কিন্তু ভুরুটা ওপরে তুলে বললেন, বলিস কি! আমার ইস্কুল লাইফের বন্ধু ছিল সিদ্ধেশ্বর বোস। আমরা দুজনে ছিলাম, যাকে বলে হরিহর আত্মা! সেই সিধুকে তোদের ওই টিকটিকি জ্যাঠা বলে ডাকে, সেই সুবাদেই পরিচয়। কম করে বিশ বচ্ছর তো হবেই.... তা সে যাকগে.... আমরা গিরিডি পৌঁছলাম পয়লা মে বিকেলের দিকে। ঠিক হলো, রাত গভীর হলে শঙ্কুর ল্যাবরেটরিতেই বসা হবে। প্ল্যানচেটের অভিজ্ঞতা যে আমার আছে, সে কথা তোদের আগেও বলেছি। তবে শঙ্কুর এই যন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় ছিল না। তাই তাকে বলেছিলাম আগেভাগে যেন আমাকে একটা ডিমনস্ট্রেশান দিয়ে দেয়। নিওস্পেক্ট্রোস্কোপ। অ্যাসিড ব্যাটারি তোরা দেখেছিস তো? অনেকটা সেইরকম দেখতে একটা যন্তরের সঙ্গে দুটো বৈদ্যুতিক তার দিয়ে জোড়া একটা ধাতব হেলমেট। মনে মনে তারিফ করলাম। এরকম যন্তর থাকলে মিডিয়ামের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

রাত দুটোর পর বসা হলো। যন্তরটাকে রাখা হয়েছে একটা গোল টেবিলের ওপর আর তা'কে ঘিরে পাঁচটা চেয়ার সাজিয়ে বসেছি আমরা পাঁচজন। আমার ডান দিকে লালমোহন, তার পাশে তপেশ। বাঁদিকে ফেলুচাঁদ আর শঙ্কু। 

আমি প্রথমেই বলে নিলাম, 'তোমরা সবাই জানো আজ আমরা কোন প্রেতাত্মাকে আহ্বান করতে চলেছি। ঘটনাচক্রে ইনি আমাদের প্রত্যেকেরই বিশেষ পরিচিত। এখন আমাদের কর্তব্য হলো, এক মনে তাঁর স্মরণ করা। শেষবার তাঁকে যেভাবে দেখেছ, সেটুকুই হুবহু মনে করার চেষ্টা কর।'


মিডিয়াম যেহেতু আমি, হেলমেট আমাকেই পড়তে হলো। প্রথম আধঘন্টা চুপচাপ। তারপর হঠাৎ একটা তবলার বোলের মতো শব্দ পেয়ে দেখি, লালমোহনের হাতদুটো কেঁপে উঠে টেবিলটাকে তবলার মতো বাজিয়ে তুলেছে। ভাগ্যিস ছোকরা নিজেই ভুলটা টের পেয়েছিল, তাই জিভ কেটে 'সরি!' বলে কোনমতে হাতদুটো স্টেডি করে নিলে।


আরো আধঘন্টা কাটল। ভেতরে ভেতরে একটু অধৈর্য হয়ে উঠেছি, এমন সময়! এখনও স্পষ্ট মনে আছে, বুঝলি! ল্যাবরেটরির ঘড়িতে ঢং-ঢং করে তিনটে বাজছে, আর পাঁচজোড়া চোখের সামনে যন্ত্রের ঠিক সেন্টারে একটা নীলচে ধোঁয়া ধীরে ধীরে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে। আর তার ভেতরে ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে একটা কঙ্কালের অবয়ব। প্রথমে দেখা গেল গলা থেকে ওপরের দিকটা, তারপর ক্রমে ক্রমে শরীরের নীচের অংশ। ধারালো মুখ, ক্ষুরধার দৃষ্টি, ঠিক যেমনটি চিনতাম। থুতনির খাঁজটা? হ্যাঁ! সেটাও দেখা যাচ্ছে! আরও পনেরো মিনিট পর পুরো শরীরটা স্পষ্ট হলো। আর চিনতে ভুল হবার কোনও কারণ নেই! 


-হ্যাল্লো, মাই চিলড্রেন! অনেকদিন পর তোমাদের একসাথে দেখে বড় ভালো লাগছে।

সেই গমগমে গলা, সেই নিখুঁত সাহেবি উচ্চারণ! কি বলবো তোদের, লাস্ট শুনেচি নাইন্টি টুতে। অ্যাদ্দিন পরও গায়ে কাঁটা দিল!

আমাদের মধ্যে ফেলুই প্রথম কথা বলল,
-আমরা খুব বিপদে পড়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।

-হ্যাঁ, জানি। খোদ নিশ্চিহ্নাস্ত্রই নিশ্চিহ্ন। কি, তাই তো, মাই ডিয়ার প্রোফেসর? 
-আজ্ঞে হ্যাঁ। আমরা অবিশ্যি প্রথমে মগনলালকে সন্দেহ করেছিলাম - শঙ্কুর জবাব।
-হা হা হা। মগনলাল! সেই যার একটি ভেঙে পাঁচটি হয়, সেই ভিলেন! না হে, এটা তার কীর্তি নয়।
-তবে কে?
-আই টুক ইট।
-আপনি!
 এবার আমাদের হাঁ হবার পালা। 

-ওহ্ ইয়েস! আই হ্যাড টু পারফর্ম মাই লাস্ট ভ্যানিশিং অ্যাক্ট।


আড়চোখে একবার ঘরের বাকি মুখগুলো দেখে নিলাম। অন্ধকারেও দিব্যি বুঝতে পারছি, আমি যে তিমিরে, অন্যরাও সেই তিমিরেই। তবুও সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, 
-কিন্তু কি ভ্যানিশ করলেন স্যার? একটু বুঝিয়ে বলবেন কি!" 

-ডেথ 
ঘর কাঁপিয়ে উত্তর এল। 
-মৃত্যু। অ্যানাইহিলিনের ট্রিগার টিপে মৃত্যুকেই নিশ্চিহ্ন করে দিলাম। সো দ্যাট আই কুড স্টে অ্যালাইভ, ফরেভার।

-হ্যা....হ্যা....হ্যালাইভ! 
জটায়ুর গলাটা বোধহয় ভয় আর বিস্ময়ের কম্বিনেশনেই একটু কেঁপে গেল।

-ইয়েস লালমোহন, আয়্যাম অ্যালাইভ। তোমাদের মধ্যে দিয়েই তো আমি বেঁচে আছি। তুমি, তপেশ, ফেলু, তারিণী আর শঙ্কু। অনেকটা পাজলের পাঁচটা টুকরোর মতো। এবার বুঝেছ?
-বুঝেছি।
শঙ্কুর উত্তর।

-এবার টুকরোগুলো জুড়ে দাও। কি পাচ্ছ বল দেখি?


মনে হলো ধাঁধাটা ধরতে পেরেছি। মনে জোর এনে বললাম, 
-আমরা যাঁর বহুমুখী প্রতিভার পাঁচটি প্রজেকশন, সেই আপনাকে।

-রাইট এগেইন! সৃষ্টি আর স্রষ্টার মাঝে মৃত্যু বড় অস্বস্তিকর একটা পরদার মতো, বুঝলে! তোমাদের রেখে গেলাম; যাতে বড়, আরো বড় হবার নেশায় পেয়ে সবাইকে বেজায় বুড়ো হয়ে যেতে না হয়। অথচ যখন দেখি চারপাশে ঠিক সেইটাই হচ্ছে, তখন বুঝতে পারলাম, আমার কাজ এখনও ফুরোয়নি! তাই.... আচ্ছা, রহস্যের সমাধান তো হলো, এবার বিদায়! জিতে রহো বচ্চো! ভালো থেকো, আর যারা আগামী কয়েকশো বছর তোমাদের মধ্যে দিয়ে আমায় খুঁজবে, তাদের খুব ভালো রেখো। টেক কেয়ার!


নীল ধোঁয়ার কুণ্ডলী সমেত আত্মা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। কয়েক মিনিট সব চুপ। তারপর ফেলু উঠে বাইরে গেল, বুঝলাম চারমিনার ধরাবে। শঙ্কুর দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ বোজা, যেন ধ্যানস্থ। জানলা দিয়ে সকালের প্রথম আলো এসে পড়ছে। সূর্য উঠছে, দোসরা মে'র সূর্য। মনে মনে বললাম, হ্যাপি বার্থডে, মানিকবাবু।



0 comments: