কবিতা - বন্দনা মিত্র
Posted in কবিতাকবিতা
রক্তের দাগ
বন্দনা মিত্র
ফুলশয্যার পরের দিন সাদা চাদরে রক্তের দাগ পাওয়া যায় নি।
এই অপরাধে আমার প্রথমা দিদি শাশুড়িকে
পত্রপাঠ বাপের বাড়ি পাঠানো হয়।
জন্মের শোধ।
দশ বছরের মেয়েটি বড় দুরন্ত ছিল।
আজ গাছের মাথায় তো কাল পুকুরের নীচে।
সতীর মহিমা বোঝার আগেই সতীত্বের পরীক্ষায় ডাহা ফেল।
বলা বাহুল্য আমার দাদা শ্বশুরের আবার বিয়ে হয়।
প্রথমা দিদি শাশুড়ি সারা জীবন শাঁখা, সিঁদূ্র, আলতা পরে
বাপের ঘর করে গেছেন ।
অপবাদ থাকায় রান্না ঘরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি কোনওদিন
তাছাড়া আর সব – মানে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ।
নিরামিষ হবিষ্যি একবেলা, শুধু একাদশী তিথিতে
চুনো মাছ দাঁতে কাটা - এয়োতি তো বটে।
সে প্রায় সত্তর বছর হয়ে গেল,
কষ্টেসৃষ্টে বুড়ি আজও বেঁচে আছে।
দিদি শাশুড়িকে রাগ করে বলি
“তোমার উচিত ছিল কোর্টে যাওয়া।
গলায় গামছা দিয়ে গুণে নিতে হিসেবের কড়ি-
নিয়মিত ভরণপোষণ।
আজকের দিন হলে উচিত জবাব পেত –
এই সব অকারণ অত্যাচার, মান্ধাতার রীতিনীতি
আর চলত না”।
একগাল হেসে বুড়ি বলে
“রাত হলো, সাবধানে বাড়ি যাস নাতবউ।
রাস্তায় কিছুমিছু হলে,
শাড়িতে বা ওড়নায় রক্তের দাগ খুঁজে পেলে
ঘরে তোকে তুলবে না নাতি আর।
খবরে দেখিস না? টিভি তো চালাস ঘরে”।
শরীরে আগুন রেখে ভয়ে ভয়ে ফিরে আসি চেনা পথে।
যেমন খাঁচায় ঢুকে হাঁফ ছাড়ে উড়ে যাওয়া টিয়া।
সব কিছু ঠিকঠাক, নিয়মিত, রঙ করা বিনীত দেওয়াল।
বাঁকুড়ার ঘোড়া আর ছৌ নাচ মুখোশের ফাঁকে
সাবধানে মাপজোক করে
দেখাই না, ঢেকে রাখি শাড়িতে রক্তের দাগ।
0 comments: