1

ব্যক্তিগত গদ্য - শাশ্বতী সরকার

Posted in


ব্যক্তিগত গদ্য


চিঠি 
শাশ্বতী সরকার 



আবালবৃদ্ধবণিতা চিঠি পেতে সকলেই ভালোবাসেন। জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন যে মানুষটি তিনিও এক চিঠির অপেক্ষায় বসে আছেন এখনও – না অন্য কোনও চিঠি নয়, যৌবনের চিঠি। তার ভিতরকার যুবক বা যুবতীটি চিঠি চান তার প্রেমিকা বা প্রেমিকটির কাছ থেকে। চারদিকে এত হানাহানি, রেষারেষি, হিংস্রতার মধ্যেও অনন্ত যৌবন নিয়ে আমরা বসে আছি একখানা সবুজ চিঠির আশায়।

বহুকাল বাদে তোমার সাথে আবার যখন দেখা হলো, মুছে ফেলা যন্ত্রণারা সব এক এক করে পা রাখতে লাগল আমার বিছানায়। কারণ যন্ত্রণা ও তুমি- এ যেন কখন এক সূত্রে বাঁধা হয়ে গেছে। অনেক ভেবে দেখলাম জানো, তোমার আমার সম্পর্কটা সাধারণ চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে বেঁধে ফেলা ঠিক হবে না।আমি বরং রোজ তোমায় একটা করে চিঠি দেব। তুমি তো আমার কাছে ঠিক কবিতার মতন। আচ্ছা, কবিতার কোনও পুংলিঙ্গ হয় না? তুমিই ভেবে একটা নাম দিও না, প্লিজ! রোজ রাতে তোমায় আমি নতুন নতুন ঢং-এ আঁকব আর সকালে পৌঁছে দিয়ে আসব তোমার ড্রয়িংরুমে। 

জানো, সেদিন যখন পাগলের মত তুমি একে একে তারাদের ডেকে তোমার ঘর-সংসার দেখাচ্ছিলে, কি যে অনুভূতি হয়েছিল আমার! মনে হচ্ছিল যেন প্রবল ঝড় উঠেছে – সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে নটরাজ মেতেছেন প্রলয় নাচনে। বিশ্বাস করো, একটুও বাড়িয়ে বলছি না। ভয়ও হচ্ছিল, সবাই তোমাকে শিবের মতই পাগল না ভাবেন। হাসিও পাচ্ছিল –তুমি সত্যিই পাগল, এক্কেবারে শিশু ভোলানাথ। আমার মন-কবুতরের পায়ে বেঁধে এ চিঠি পৌঁছে দিলাম তোমার কাছে। ইচ্ছে হলে উত্তর দিও, নাহলে দিও না। তবে আমি কিন্তু রোজ তোমাকে চিঠি লিখব, হ্যাঁ রোজ। আমার ভালো থাকার জন্য লিখব, নিজেকে বোঝার জন্য লিখব, নিজেকেই আয়নায় নতুন নতুন রূপে দেখার জন্য লিখব। আমার ভাল, আমার মন্দ – সব সব লিখব, নিজেকে উজাড় করে দেব চিঠির মধ্যে। রং-বেরঙের চিঠিগুলো আমার দুঃখগুলোকে নিয়ে উড়ে যাবে প্রজাপতি হয়ে। মুক্ত বাতাসে আমার কথাগুলো প্রতিধ্বনি তুলবে – “ভালোবাসি, ভালোবাসি...”

1 comment: