4

ধারাবাহিক - অমিতাভ প্রামাণিক

Posted in


ধারাবাহিক


সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে
অমিতাভ প্রামাণিক


“আগে এ রকম ছিল না। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে গড়াতাম, মা এসে দু’তিনবার ডাকলেও উঠতাম না। জানলা দিয়ে রোদের কুচি এসে পড়ত আমার মুখে, ভিজিয়ে দিত আমার চোখের পাতা। রান্নাঘর থেকে ছ্যাঁকছোঁক শব্দ আর মিষ্টি গন্ধ আসত, বুঝতাম মা জলখাবার বানাচ্ছে। আমরা সবাই একসঙ্গে খেতাম। তারপর বাবা আর মা তাঁত বুনতে বসে যেত, আর আমি একটা বই নিয়ে পড়তে বসতাম, নয় খেলতাম ভাই জনের সঙ্গে। 

এখন সেসব দিনগুলো স্বপ্ন মনে হয়। 

বাবা বলছিল, শহরে কারখানা বসছে কাপড় বানাবার। তাতে খুব তাড়াতাড়ি কাপড় বানানো যায়। মা-বাবা দুজনে মিলেও অত তাড়াতাড়ি কাপড় বুনতে পারত না। আস্তে আস্তে আমাদের কাছ থেকে কাপড় কেনা কমতে লাগল। বন্ধ করে দিতে হ’ল আমাদের তাঁত। একদিন বাড়িতে এসে কারা আমাদের তাঁত নিয়ে চলে গেল। বাবা বলল, ‘বিক্রি করে দিলাম। এবার আমাদের শহরে যেতে হবে।’

শহরে আমাদের সবকিছু অন্যরকম। ভোর ছ’টায় ভোঁ বাজে, চারটের আগেই আমাদের উঠে পড়তে হয়। মা পাঁচটার মধ্যে আমাদের জন্যে খাবার বানিয়ে আলাদা আলাদা কৌটোয় ভরে ফেলে। মুখ-টুখ ধুয়ে নাকে মুখে গুঁজেই আমাদের ছুটতে হয় সবাইকে আলাদা আলাদা কারখানায়। আমি আর বাবা যাই একটা কারখানায়, ভাই আর একটায়, মা যায় সেলাই কারখানায় ছোট বোন শেলিকে নিয়ে। বাবা অবশ্য এখন আর ক’দিন কাজে যেতে পারছে না, বাড়িতেই আছে, কিন্তু বাবাকে দেখার কেউ নেই। মা থাকতে পারে না, কাজে যেতেই হয়, না গেলে চলবে কেমন করে?

এখন চারটে বাজে, আমার ঘুম ভেঙে গেছে। আমরা শুয়ে আছি গাদাগাদি করে খড়ের বিছানায়। আমার পাশে ভাই জন, তার পাশে শেলি, তার পাশে মা। মা’র বয়স মাত্রই তিরিশ বছর, এর মধ্যেই গায়ের চামড়া খসখসে হয়ে গেছে, মাথায় চুল পেকে গেছে অনেক। এখানকার লোকে বলাবলি করে, মা খুব তাড়াতাড়ি বিধবা হবে। এখানে অনেক মহিলারাই হচ্ছে। 

আমার এটা মনে হতেই গা শিউরে উঠছে। ক’দিন আগেই বাবা কারখানা থেকে ফিরেছে জ্বর নিয়ে। সারা গায়ে চাকা চাকা দাগ। এখানে অনেকেরই হচ্ছে। বেশ অনেকজন মারা গেছে। জ্বর বেড়েই চলে, কমে না। আজ কে বাবাকে দেখবে? জন না শেলি? আমি পারব না, আমাকেও আজ যেতেই হবে। পরশু যাইনি বলে গতকাল বেদম মার খেয়েছি কারখানায়, কালকের মাইনেও কাটা গেছে। আমি জনের দিকে তাকালাম। ও আমার চেয়ে দেড় বছরের ছোট মাত্র। অঘোরে ঘুমাচ্ছে এখন। ওর চুল উস্কোখুস্কো, মুখ পাণ্ডুর, ঠোঁট ফাটা, চোখের কোণে কালি। ও এত রোগা কেন? আমি জনকে হাল্কা ধাক্কা দিতেই ও ধড়মড়িয়ে জেগে উঠে ফ্যাকাশে চোখে আমার দিকে তাকাল। 

আমাদের গ্রামের বাড়িটা ছিল একদম অন্য রকম। এখানে এই খড়ের গাদার মত মেঝেতে ইঁদুরের লাফালাফি ছিল না সেখানে। এখানে মেঝেটা ঢালু দিকটা যেখানে শেষ হয়েছে, তার পাশেই নালা, পূতিগন্ধময় সেটা। সারা শহরের আবর্জনা সেখান দিয়ে বয়ে যায়। আমাদের এর চেয়ে ভাল বাড়িতে থাকার উপায় নেই। 

জনকে নিয়ে আমি উঠে গেলাম কাঠে সিঁড়ি দিয়ে ওপরের তলায়, যেখানে গাদাগাদি করে শুয়ে আছে আরো জনা বিশেক লোক। বাইরে এখনও সূর্য ওঠেনি। রাস্তায় কাদা, তার ওপরে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে কতগুলো মদ্যপ। তাদের আশেপাশে মরা পশুপাখি কিছু, তাদের গায়ে ডুমো ডুমো মাছি। নর্দমার ওপর থেকে উঠে এসে তারা মরা ইঁদুর-বিড়ালের ক্ষত চাটছে। ওদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমি আর জন একটা কাবার্ড থেকে বের করে আনলাম দুটো পাঁউরুটি। ঠাণ্ডা, শক্ত রুটি – এরাই আমাদের ব্রেকফাস্ট। 

এই জায়গাটাকে কবরখানা বললে খুব অত্যুক্তি করা হবে না। 

আমরা অবশ্য দিনের অধিকাংশ সময় কাটাই যে জায়গাটায়, সেটা হচ্ছে কারখানা, তার নাম ক্রমফোর্ড টেক্সটাইল মিল। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি আমাদের কাজ। দিনে বারো ঘন্টা, সপ্তাহে ছ’ দিন, মাইনে সপ্তায় দু’ পাউণ্ড। পাঁচতলা উঁচু কারখানা, শ’ দুয়েক কর্মচারী।বাবা আর আমি যে একই কারখানায় কাজ পেয়েছি এটাই ভাগ্যের। কারখানার মধ্যেটা ঘন অন্ধকার। সেখানে গ্যাসলাইট জ্বালিয়ে কাজ হয়। ঘটাং ঘটাং শব্দে মেশিন ঘুরে চলে, ভেতরে প্রচণ্ড গরম, কেননা ঘুপচি ঘরজোড়া মেশিন আর তার শুধু একদিকে এক চিলতে একটা জানলা। 

মেশিনের যে জায়গাগুলোতে অন্যরা দাঁড়াতে পারে না, কেননা দাঁড়ানোর মত অতটা জায়গা নেই, সেখানেই ছোটদের কাজ দেওয়া হয়। বয়সে ছোট মানে যে কাজ কম, তা তো নয়, সারাদিনের কাজ। একটু নড়চড় হ’লেই দুমদাম পিঠে পড়ে সুপারভাইজারের কিল। বড়দের মাইনে পাঁচ পাউণ্ড, ছোটদের দুই। অনেকেই দিনে দুই শিফট কাজ করে একটু বেশি পয়সার জন্যে। দুই শিফট মানে সারাদিন সারারাত ধরে, একবিন্দু না ঘুমিয়ে। প্রায় সবারই চোখের চারিদিকে কালির পোঁচ, শিরদাঁড়া বেঁকে গিয়েছে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। ওরা আর এ জীবনে সুস্থ হবে না। 

আমি যেখানে কাজ করি, তার পাশেই কাজ করত জেন বলে একটা মেয়ে। কত বয়স হবে তার? বছর বারো তেরো সম্ভবত। একদিন কাজ করছে, হঠাৎ খেয়াল করে নি, মেশিনের লম্বা ডাণ্ডাটা ঘুরে গিয়ে লাগল ওর মাথায়, আর ব্যাস, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল মাথা ফেটে। মেঝেটা লালে লাল হয়ে গেল মুহূর্তে। সেই দেখে কতগুলো লম্পট লোক হ্যা হ্যা করে হাসতে লাগল। একটা ষণ্ডামতন লোক, সুপারভাইজারের চ্যালা সে, আমাদের কলার ধরে সরিয়ে না নিয়ে গেলে আমি ওদের মুণ্ডু ফাটিয়ে দিতাম। শয়তানের বাচ্চারা! 

জেনকে সরিয়ে দিল ওরা, ও আর কাজে আসেনি। কোথায় গেল, তাও জানি না। 

ওর জায়গায় এলো আর একজন, তার নাম স্টেলা। কী সুন্দর দেখতে তাকে, মাথায় রেশম রেশম চুল। মনে হয় না কোনওদিন কারখানায় কাজ করেছে আগে। এ বোধ হয় জেনের চেয়ে বয়সে একটু ছোটই হবে। কিন্তু দেখে মনে হয় বড়। সরল মুখখানা। হাতের আঙুলগুলো চাঁপা ফুলের কলির মত। আমার কেমন যেন মনে হ’ত ঐ হাত দিয়ে ও বেশিদিন মেশিন ঘোরাতে পারবে না।

পারেও নি স্টেলা বেশিদিন। একদিন একটা ঢোলা স্কার্ট পরে এসেছিল, সেই স্কার্টই ওর কাল হ’ল। সম্ভবত অন্যমনস্ক ছিল কোনও কারণে। একটা মড়মড় শব্দ হতেই আমরা দেখলাম ওর স্কার্ট জড়িয়ে গিয়েছে মেশিনে আর সেটা টেনে নিচ্ছে স্টেলাকে মেশিনের মধ্যে। আমরা ছুটে গিয়ে মেশিনের সুইচ বন্ধ করার আগেই ওর দেহটা টেনে নিলো মেশিনের রোলার। মট মট করে হাড় গুঁড়ো হওয়ার শব্দ হ’ল। লাল হয়ে গেল মেশিনের খাঁজকাটা গিয়ার।

সুইচ বন্ধ করার কয়েক সেকেণ্ড পরে থরথর করে স্টেলার দলা পাকানো দেহটা নিস্পন্দ হয়ে গেল। এবারেও এক মুরুব্বি গোছের লোক এসে আমাকে আর ভাইকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল জায়গা থেকে। 

পরদিনই স্টেলার জায়গায় ঐ বয়সীই আর একজন কাজে লেগে গেল।”



* * *



এ হচ্ছে ব্রিটেনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশনের শুরুর দিকের গল্প। এর হাত ধরে এলো সারা ইওরোপের শিল্পবিপ্লব। পৃথিবীর ইতিহাস বদলে গেল এর ফলে।যে সব মানুষদের অধ্যাবসায় ও অনুসন্ধিৎসায় এসব সম্ভব হ’ল, তাদের কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। 

তাদের একজনের নাম জিম। তার বাবা জাহাজের কারবারী, স্কটল্যান্ডের বড় সরকারী চাকুরে, মা-ও উচ্চশিক্ষিতা। জিমের অবশ্য স্কুলের পড়াশুনায় তেমন মতিগতি নেই। বাড়িতে মা’র কাছে যেটুকু পড়াশুনা, তারপরে এক গ্রামার স্কুলের খানিকটা বিদ্যাভ্যাস। অঙ্কে, যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা নিয়ে তার যত উৎসাহ, ল্যাটিন-গ্রীকে বিন্দুমাত্র না। 

জিমের যখন বয়স আঠারো বছর, তখন তার মা মারা যায়, বাবার স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়ে। জিম এক বছর লন্ডনে যায় যন্ত্রবিদ্যা শিখতে, শিখে ফিরে আসে স্কটল্যান্ডের বাড়িতে। গ্লাসগোতে তখন ব্যবসাবাণিজ্যের খুব পসার, সেখানেই সে ভাবল নিজের যন্ত্রপাতি বানানোর ব্যবসা শুরু করবে। ইঞ্জিনিয়র আর জাহাজের নেভিগেটরদের কাজে লাগে এমন যন্ত্রপাতি, যেমন প্যারালাল রুলার, রিফ্লেক্টিং কোয়াড্রান্ট, টেলিস্কোপের অংশ, ব্যারোমিটার – এইসব টুকুটাকি জিনিস বানাতে বা সারাতে সে সিদ্ধহস্ত। এসব যারা করে, তাদের বলা হয় হ্যামারম্যান। গ্লাসগোতে নিয়ম হচ্ছে সাত বছর শিক্ষানবিশী না থাকলে হ্যামারম্যানস গিল্ড তাকে ব্যবসার অনুমতি দেবে না। ফলে গ্লাসগোতে অঙ্ক বা প্রযুক্তিগত কৌশল জানা লোক না থাকা সত্ত্বেও জিমের আবেদনপত্র নাকচ হয়ে গেল। 

কিন্তু ভাগ্য যার সহায়, তাকে ঠেকাবে কে? গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সময় আনা হ’ল কিছু জ্যোতির্বিদ্যার যন্ত্রপাতি। আর সেসবের দেখভালের ও সারাইয়ের জন্যে চাই প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ। আনপড় লোক দিয়ে তো এসব কাজ হয় না। সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্যে জিমকেই বহাল করা হ’ল। সে কিছুদিনের মধ্যেই ওগুলো সারিয়ে ফেলায় তার বেশ নামও হয়ে গেল। ম্যাকফার্লেন অবজার্ভেটরি নামে এক বিশ্বমানের অবজার্ভেটরিতে সেই যন্ত্র স্থাপন করা হ’ল। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক জিমকে বললেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই একটা ওয়ার্কশপ বানাতে। তাদের একজন হচ্ছেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ জোসেফ ব্ল্যাক, যিনি ম্যাগনেসিয়াম, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ইত্যাদি আবিষ্কার করেছিলেন। আর একজনের নাম অ্যাডাম স্মিথ, তিনি দার্শনিক।

এঁরা জিমের বন্ধু হয়ে গেলেন। সেটা ১৭৫৭ সাল। ভারতে তখন রবার্ট ক্লাইভ নবাবের সেনার সঙ্গে লড়ছে। 

প্রথম প্রথম জিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারের টুকিটাকি যন্ত্রপাতি সারাই টারাইয়ের কাজ করত, ছাত্রদের ডেমোন্সট্রেশন দেখাত। বছর দুই পরে জন ক্রেগ নামে এক আর্কিটেক্ট-ব্যবসাদারের সঙ্গে পার্টনারশিপে একটা খেলনা আর বাদ্যযন্ত্র তৈরী ও বিক্রির ব্যবসা খুলে ফেলল। সেটা চলল বছর ছয়েক। তাতে ষোলোজন কর্মচারীও ছিল। ১৭৬৫ সালে ক্রেগ মারা যায়, ততদিনে ক্লাইভ সুবে বাংলার দেওয়ানি নিয়ে নিয়েছে দিল্লীশ্বর দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে, আর জিমের ব্যবসার এক কর্মচারী সেই ব্যবসা কিনে নিয়েছে জিমদের কাছ থেকে। 

জিম তার আগের বছরেই বিয়ে করেছে তার খুড়তুতো বোন মার্গারেটকে, তাদের পর পর পাঁচটা বাচ্চা হয়েছে, ছ’নম্বরের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় মার্গারেট। পরে জিম আবার বিয়ে করে, আরো দুটো বাচ্চা হয় তার। 

জিমের পুরো নাম জেমস ওয়াট। ১৭৫৯ সালে তার বন্ধু জন রবিসন জলীয় বাস্পের শক্তির ওপর তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই রবিসন পদার্থবিদ, বয়সে জিমের চেয়ে বছর তিনেকের ছোট, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক এবং সাইরেনের আবিষ্কর্তা। জলীয় বাস্পের শক্তি অবশ্য মানুষ বহু আগে থেকেই জানে, যখন থেকে কেটলিতে জল গরম করতে শুরু করেছে সে। জল গরম হয়ে বাস্পীভূত হলেই বন্ধ কেটলির ঢাকনা উঠে যায় বাস্পের চাপে, এ তো আর আজকের পর্যবেক্ষণ নয়। সেই বাস্পশক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে টমাস নিউকোমেন নামে এক ব্রিটিশ ধর্মযাজক একটা ইঞ্জিনও বানিয়ে ফেলেছেন। তার সেই ইঞ্জিন কাজে লাগিয়ে এত বছর ধরে ধাতুর খনি থেকে জল বের করে ফেলা হয়। পঞ্চাশ বছরে সেই ইঞ্জিনের কোনও বিবর্তন আসেনি।

ওয়াট আগে কখনও বাস্পচালিত ইঞ্জিন দেখেনই নি। রবিসনের পরামর্শ মত সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে তিনি এ সম্বন্ধে যত তথ্য জানা ছিল, সব পড়ে ফেললেন। নিজে একটা মডেল বানানোর চেষ্টা করলেন, সে তেমন জুতের হ’ল না। কিন্তু একটা জিনিস তাঁর চোখে পরিষ্কার হয়ে গেল, জলকে বাস্পীভূত করার জন্যে তাকে গরম করে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে দিলেই হয় না, তার পর তাকে ক্রমাগত লীনতাপ সরবরাহ করে যেতে হয়। এই লীনতাপের ব্যাপারটা মাথায় না রাখলে ক্যালকুলেশনে গড়বড় হয়ে যাবে। নিউকোমেনের ইঞ্জিন যদি আরও উন্নত করতে হয়, তবে তাঁকে তো মাথায় রাখতেই হবে কত কম শক্তি সরবরাহ করে কত বেশি কাজ পাওয়া যায়। ইঞ্জিনের কাজ হচ্ছে তাপশক্তিকে যান্ত্রিকশক্তিতে পরিণত করা। যত কম তাপশক্তি খরচ করে, অর্থাৎ যত কম জল গরম করে বাস্পীভূত করে বেশি যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যাবে, তত উন্নত হবে ইঞ্জিন। 

শুনতে যত সহজ লাগছে, ব্যাপারটা তত সহজ নয়, কেননা এসব হচ্ছে তাপগতিবিদ্যার বিষয়, যার সূত্রাদি আবিষ্কার হতে লেগে গেছে এর পরে আরও শ’ খানেক বছর। 

বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটা নিউকোমেন ইঞ্জিন ছিল, খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওয়াটকে বলা হ’ল সেটা সারাতে। ওয়াট খুটখাট করে সারানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হ’ল না। ওয়াটও নাছোড়বান্দা, ছাড়বেন না কিছুতেই। পরীক্ষা করতে করতে তাঁর নজরে পড়ল, যত তাপ দেওয়া হচ্ছে ইঞ্জিনে, তার তিন-চতুর্থাংশ খেয়ে নিচ্ছে ইঞ্জিনের সিলিন্ডার গরম করতেই। এ তো একেবারে গচ্চা! কেননা সেই সিলিন্ডারই আবার ঠাণ্ডা করার জন্যে ঠাণ্ডা জল ছিটোতে হচ্ছে তার গায়ে। একগাদা তাপশক্তি বেমক্কা খরচা হচ্ছে শুধু এতেই, এরা যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে না মোটেই। 

১৭১২ সালে নিউকোমেন বানিয়েছিলেন তার ইঞ্জিন। ১৭৬৫ সালে এই পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে জেমস ওয়াট ঠিক করলেন, তাঁর ডিজাইন এমন হবে যাতে জলীয় বাস্প ঘনীভূত হয়ে জলে পরিণত হবে অন্য একটা চেম্বারে, যাতে সিলিন্ডার গরম না হয়ে যায়। সিলিন্ডারের তাপমাত্রা বজায় রাখা হবে যে তাপমাত্রার বাস্প তার ওপরে এসে পড়ছে সেই তাপমাত্রাতেই, আর তার জন্য তার গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হবে সেই তাপমাত্রার বাস্পের একটা জ্যাকেট। এর ফলে সিলিন্ডার গরম-ঠাণ্ডা করার জন্যে তাপ ফালতু খরচা হবে না, সেই তাপটা যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। সে বছরের শেষের দিকে এই ডিজাইনে একটা মডেল বানিয়ে ফেললেন ওয়াট। 

কিন্তু মডেল বানানো এক জিনিস, আর তাকে কার্যকরী মেশিনে রূপ দেওয়া আর এক। এই সব মেশিন টেশিনের জন্যে চাই টাকা, মানে পাউন্ড, সে কোত্থেকে আসবে? রসায়নবিদ জোসেফ ব্ল্যাক কিছু পাউন্ড দিলেন। জন রেবাক নামে একজন, যিনি পরে এক বিখ্যাত লৌহসংস্থা ক্যারন আয়রণ ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি দিলেন বেশ কিছু পাউন্ড। রেবাকের বাড়ির পেছনে ওয়াটের ইঞ্জিন তৈরীর গবেষণা চলতে লাগল। ওয়াট তার ডিজাইনের পেটেন্ট করে নিলেন।

ইঞ্জিনের প্রধান দুই পার্ট, পিস্টন আর সিলিন্ডার তৈরীর জন্যে যে প্রিসিশন দরকার, তাতেই সময় চলে যাচ্ছিল। সে সময় ধাতুর সবকিছুই বানাতো আনপড় কামারেরা, তারা এসব সূক্ষ্ম কাজ হুট করে করতে পারবে কী করে? ঢিমে তালে চলল তাই কাজ। পয়সা চাই, আরও পয়সা। উপায় না পেয়ে ওয়াট প্রথমে এক জায়গায় জমি জিরেত জরিপের, পরে অন্য এক জায়গায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ নিলেন। 

এ ভাবে চলে গেল আরও আট বছর। রেবাক দেউলিয়া হয়ে গেলেন। ওয়াটের পেটেন্ট স্বত্ত্ব কিনে নিলেন ম্যাথু বোল্টন নামে এক ব্যবসায়ী। এতে ওয়াটের শাপে বর হ’ল, কেননা বোল্টনের চেনাশুনার আর টাকাপয়সার সূত্র ধরে তিনি পেয়ে গেলেন পৃথিবীর অন্যত্র গুণী লৌহশিল্পীদের, যারা তাঁর পিস্টন আর সিলিন্ডার মাপমতন টায়ে টায়ে বানিয়ে দিতে সক্ষম, কোনওরকম ভুলচুক না করে। এর ফলে ওয়াট পরে তাঁর ইঞ্জিনের আরও দু-দুবার নতুন উন্নত ডিজাইন বানিয়ে তাদের পেটেন্ট করে নিলেন।

আর এ ভাবেই তৈরী হ’ল জেমস ওয়াটের নতুন উন্নত বাস্পচালিত ইঞ্জিন। আগে যে ইঞ্জিন শুধুমাত্র খনি থেকে জল তোলার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল, জেমসের নতুন ডিজাইনের ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে তার ব্যবহার শুরু হ’ল দ্রুতগতি পরিবহনের কাজে।

সভ্যতার চাকাকে তা ঘুরিয়ে দিল এক সম্পূর্ণ নতুন পথে। 



* * *



তবে ব্যাপারটা শুধুমাত্র এ জন্যেই আসেনি। শিল্পবিপ্লবের আগেই ব্রিটেনে শুরু হয়েছিল কৃষিবিপ্লব। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষের প্রথম প্রয়োজন রোটি-কাপড়া-মকান, যার শুরুতেই আছে খাদ্য। সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায় খাদ্যের প্রয়োজনেই মানুষকে নিরন্তর সংঘর্ষ করতে হয়েছে, এখনও হচ্ছে। খাদ্য বানাতে লাগে কৃষি, আর কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকতে হ’ত প্রচুর মানুষকে। কৃষিব্যবস্থার উন্নতিসাধন হ’লে, অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে কম মানুষকে কাজে লাগিয়ে বেশি খাদ্য প্রস্তুত করতে পারলে তবেই না পাওয়া যাবে শিল্পের জন্যে প্রয়োজনীয় কর্মীর সরবরাহ। 

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই ব্রিটেনে খাদ্য সরবরাহের গতি জনসংখ্যার স্ফীতিকে ছাড়িয়ে যায় এবং তা চলতে থাকে পরবর্তী শতকব্যাপী। পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহের ফলে জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পায় ইংল্যাণ্ড ও ওয়েলশে। ১৭০০ সালে যেখানে মানুষ ছিল পঞ্চান্ন লক্ষের মত, একশো বছরে তা বেড়ে হয় নব্বই লাখ। খাদ্য তৈরীতে মানুষ লাগছে কম আর জনসংখ্যা বাড়ছেও দ্রুততালে, এই দুই-ই একসাথে ঘটায় শিল্প গড়ার জন্যে অতিরিক্ত মানুষের জোগান চলে আসে। 

ব্রিটিশরা তো আমাদের মত ভাত-ডাল-তরকারি খাওয়া নিরামিষাশী নয়, তাদের চাই মাংস। মাংস আসে পশু থেকে, মানে সরাসরি নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভিজ্জ খাবারের সঙ্গে তাদের চাই পশু-উপযোগী খাদ্যও। ঘাস-লতা-পাতা ছাড়াও পশুদের উপযোগী খাবার হচ্ছে শালগম আর মটর প্রজাতির গুল্ম ক্লোভার। 

কৃষিবিপ্লবের প্রধান প্রধান প্রযুক্তিগত বিবর্তনের একটা হচ্ছে ক্রপ রোটেশন। কৃষিবিদ্যা শেখার পর থেকেই মানুষ কীভাবে যেন জেনে গেছে, ফসল নির্দিষ্ট সময়ে চাষ করলে তা থেকে ফলন ভালো হয়। এর ফলে চাষ হ’ত মূলত বছরে দুবার। যখন চাষ হ’ত না, তখন জমি ফাঁকা পড়ে থাকত, তাতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেত। আগের কাটা ফসলের গোড়া পচে ও তার ওপর ব্যাকটেরিয়া এবং মাটির মধ্যের অন্যান্য প্রাণীদের জৈব বিবর্তনে মাটিতে তৈরী হ’ত সার, যা পরের ফসলের বৃদ্ধির জন্যে অপরিহার্য। একটা জমি যখন চাষ হচ্ছে, পাশে জমি ফেলে রাখা হ’ত এই কারণে; আবার তাতে যখন চাষ হ’ত, আগের জমি হয়ে থাকত পতিত।এইভাবে টাইম রোটেশনে চাষ করা হ’ত জমি।

ব্রিটিশ চাষীরা আবিষ্কার করল, দুবার ফসল চাষের মধ্যে এই শালগম আর ক্লোভার বদলাবদলি করে চাষ করে নিলে ফলন বেশ ভাল হয়। একই ফসল উপর্যুপরি চাষ করলে জমি থেকে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট ক্রমাগত হ্রাস হয়, ফসলের পোকা বা পেস্টের সংক্রমণও বেশি হয়। এই রকম দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ফসল বদলাবদলি করে চাষ করলে তার সম্ভাবনা কমে যায় অনেক।

শালগম চাষ হয় শীতকালে। এরা ফলে মাটির নীচে, এর শিকড় চলে যায় মাটির বেশ অনেকটা নীচে। এই শিকড় শালগমের জন্যে প্রয়োজনীয় মিনারেল সংগ্রহ করে যেখান থেকে, সেখানে অন্যান্য ফসলের শিকড় পৌঁছায়ই না। অন্যদিকে ক্লোভার মটর প্রজাতির হওয়ায় তাদের শিকড় ছোট, তাতে থাকে রাইজোবিয়া নামে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া, যারা গাছের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সার প্রস্তুতে সক্ষম, ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

এই পদ্ধতিতে সুফল পাওয়ায় সারা ইওরোপে ছড়িয়ে পড়ল ক্রপ রোটেশনে চাষ। গম, সর্ষে, যব, ওট, মটর – এদের ফলন বেড়ে গেল একর প্রতি ষাট থেকে একশো শতাংশ, মাত্র একশো বছরে, এবং বাড়তেই থাকলো তার পরেও। 

অবশ্য শুধু ক্রপ রোটেশনই নয়, তার সাথে যুক্ত হ’ল ওলন্দাজদের আবিষ্কৃত নতুন লাঙলের ডিজাইন। 

ওলন্দাজরা লাঙল পেয়েছিল চিনাদের কাছ থেকে। সেই লাঙলের মাথায় লোহার ফলা। কতটা মাটির নীচে যাবে সেই ফলা, তাও অ্যাডজাস্ট করার বন্দোবস্ত ছিল তাতে। এই লাঙলের আর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অন্যান্য ইওরোপীয় লাঙল, যাতে ভারী চাকা লাগানো থাকত বলে তা টানতে লাগত ছ’টা বা আটটা বলদ, এটা একটা বা দুটো বলদ দিয়েই টানা সম্ভব। ওলন্দাজদের দেশ সমুদ্রের লেভেলে, কোনও কোনও জায়গা তার চেয়েও নীচু বলে জলা জায়গায় ভরা, তারা জলাজমির ব্যবহার খুব ভাল জানে বলে ব্রিটেনের ইস্ট অ্যাংলিয়া আর সমারসেটের জলা জমিতে চাষের বন্দোবস্ত করার জন্যে হল্যান্ড থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল ওলন্দাজ কনট্রাক্টরদের। ইস্ট অ্যাংলিয়ার জমিকে বলা হ’ত ফেন আর সমারসেটের জলাজমিকে মুর। ওখানে ভারী চাকাওয়ালা লাঙল দিয়ে চাষ করতে পারত না ব্রিটিশ চাষারা, তাই সেখানে ফসল ফলাতে পারেনি।

ওলন্দাজদের লাঙল দিয়ে খুব সহজেই সেই জমি চষে তাতে ফসল ফলিয়ে ফেলল তারা। ততদিনে কাস্ট আয়রণ দিয়ে জিনিসপত্র বানাতে সিদ্ধহস্ত হয়ে গেছে ব্রিটিশ কামারেরা। জোসেফ ফোলিয়াম্বে নামে একজন কামার পেটেন্ট করলেন ওলন্দাজ লাঙল ডিজাইনের ওপর আরও উন্নতি করে। লাঙলের ফলা, যেটা মাটির মধ্যে ঢুকে যায়, সেটা ছাড়াও তার ঠিক পেছনের জায়গাটা আর লাঙলের ওপর ভর দিয়ে তা মাটির নীচে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য দাঁড়ানোর জায়গাটা লোহার পাতে মোড়া হ’ল, যোগ করা হ’ল শক্ত ঢেলা ভাঙার জন্যে লোহার শাবলের মত একটা অংশ। ১৭৬০ সালে ফোলিয়াম্বে এই রকম লাঙল বানানোর জন্যে ইংল্যান্ডের রথারহ্যামে একটা কারখানাই বানিয়ে ফেললেন। ১৭৭০ সালে তা সবচেয়ে কমদামী আর সবচেয়ে কার্যকরী লাঙল হিসাবে সারাদেশে আদৃত হ’ল। স্কটল্যাণ্ড, ফ্রান্স এমনকি সুদূর আমেরিকা থেকে এই লাঙলের অর্ডার আসতে লাগল তার কাছে। 

এ সবের সঙ্গে যুক্ত হ’ল উন্নত ড্রেন ও সেচব্যবস্থা, ভূমি-সংক্রান্ত আইন, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, ফসল বিক্রির জন্যে প্রয়োজনীয় বাজার ব্যবস্থা। বড়ো জমিতে চাষবাস করতে পারলে বেশি সুবিধা, তাতে যন্ত্রপাতি ভাল করে ব্যবহার করা যায়, আলের জন্যে জমি ছেড়ে রাখতে হয় না। চাষবাসের জন্যে সরকার সুবিধা দিতে লাগলে দেশে প্রচুর জমিওয়ালা ধনী চাষীর সংখ্যা বাড়তে লাগল।

ফলে মাংসের উপযোগী পশুচাষের সুবন্দোবস্ত হ’ল। আর অল্প মানুষে বেশি ফলনের দরুন শিল্পের উপযুক্ত শ্রমিক পেতেও অসুবিধে হ’ল না। খাদ্যবস্তু অপেক্ষাকৃত সস্তায়ও মিলতে লাগল।

অবশ্য যা বললাম, এর জন্যে প্রয়োজন হয়েছিল ধাতুবিদ্যারও। ধাতব আকরিক থেকে ধাতু পেতে গেলে লাগে প্রচুর তাপের। তখন তাপের জোগান দিতে ব্যবহার ছিল শুধুমাত্র কাঠের। বনে গিয়ে কাঠ কাটো, সেটা থেকে বানাও কোক বা চারকোল, তা পুড়িয়ে যা তাপ পাওয়া যায়, তা দিয়েই যা ধাতুবিদ্যা সম্ভব, সেটাই ছিল তখনকার জ্ঞান। 

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক ও আরও কয়েকজন অবশ্য কয়লা পুড়িয়ে তাপের ব্যাপারটা লক্ষ করে ধাতুবিদ্যায় তার ব্যবহার জনপ্রিয় করে তুললেন। তৈরী হ’ল নতুন ধরণের ফার্নেস, যার নাম রিভারবারেটরি ফার্নেস বা কাপোলা। ধাতব আকরিক আর কোকের মিশ্রণ কয়লায় আগুনের শিখায় পুড়িয়ে দিলে ধাতুর অক্সাইড বিজারিত হয়ে ধাতু তৈরী হয়। এতে সুবিধা হচ্ছে কয়লায় যে সালফার থাকে, তা ধাতুর সাথে মিশে যায় না। আকরিক থেকে সীসা আর তামা নিষ্কাশনে এই পদ্ধতি চালু হয়ে গেল। 

কিন্তু নতুন যুগের উপযুক্ত ধাতু এরা নয়, লোহা। লোহার ব্যাপারটা সীসা-তামার চেয়ে আলাদা। লোহা সহজে বিজারিত হতে চায় না, লোহা তৈরীতে তাপ লাগে অনেক বেশি। লোহার রকমফেরও অনেক বেশি – পিগ আয়রন, রট আয়রন, কাস্ট আয়রন। অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ায় আব্রাহাম ডার্বি নামে একজন ব্লাস্ট ফারনেস তৈরী করে লৌহ নিষ্কাশনের পথ সুগম করলেন। তা পরে আরও উন্নত হ’ল তার ছেলে দ্বিতীয় আব্রাহাম ডার্বির হাতে ১৭৫০ সাল নাগাদ, আর তার ছেলে তৃতীয় আব্রাহাম ডার্বি ১৭৭৮ সালে বানালেন পৃথিবীর প্রথম কাস্ট আয়রনের ব্রিজ। 

তার পরে পরেই আবিষ্কার হ’ল লোহার পাত বানানোর নতুন পদ্ধতি, যার নাম রোলিং। আগে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে যে লোহার পাত বানানো হ’ত, রোলিং পদ্ধতিতে তার চেয়ে অন্তত পনের গুণ তাড়াতাড়ি লোহার পাত বানানো সম্ভব হ’ল। হেনরি কোর্ট নামে একজন এর আবিষ্কর্তা। 

তবে ব্রিটিশ শিল্পবিপ্লব যে ভারতীয় শিল্পকে ধরাশায়ী করে দিল একেবারে, সেটা হচ্ছে বস্ত্র বয়নশিল্প।

বাংলার তাঁতশিল্প বিশ্ববিখ্যাত। এখানকার তাঁতীরা সুতি ও রেশমের যেমন কাপড় বানাতে পারে, সারা দুনিয়ায় তার জুড়ি মেলা ভার। ঢাকাই মসলিনের কাপড় পরতে পারলে বর্তে যেত ইওরোপীয় রাজকন্যারা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাত ধরে দেওয়ানি লাভের পর সেই শিল্পের ওপর প্রবল আঘাত আছড়ে পড়ল বাংলার উপকূলে। 

১৭৬০ সালের আগে সারা পৃথিবীতেই কাপড় বোনা ছিল এক কুটির শিল্প। মূলত তুলো আর পশুর লোম যেমন উল দিয়েই বোনা হ’ত কাপড়। তাঁতীদের বাড়িতে থাকত একটা হাতে-চালানো তাঁত, তা চালানোর দায়িত্ব বাড়ির পুরুষটির, তাকে সাহায্য করত তার ছেলেরা। তাঁতী-বৌ আর বাড়ির মেয়েরা সুতো কাটতো চরকায়, যে সুতো দিয়ে কাপড় বোনা হবে তাঁতে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ব্যবস্থা তেমন খারাপ কিছু ছিল না। এতেই সমাজের সবার আচ্ছাদন জুটে যাচ্ছিল। 

১৭৩৪ সালে জন কে নামে ল্যাঙ্কাশায়ারের এক তাঁতী তৈরী করলেন ফ্লাইং শাটল নামে এক যন্ত্র, যা দুগুণ দ্রুততায় কাপড় বুনতে পারে। ফলে তার কারখানা বসে গেল। তাঁতীরা বুঝতে পারল তাদের সর্বনাশ আসতে চলেছে, তাই তারা এই মেশিনে কাপড় বুনতে নিমরাজি ছিল, কিন্তু যখন দেখল, এতে বেশি চওড়া কাপড় বোনা যাচ্ছে আর বেশ তাড়াতাড়ি, তাদের আর উপায় রইল না কারখানায় কাজ করা ছাড়া। কিন্তু কারখানা বসলেই তো হ’ল না, অত সুতো পাবে কোথায়? তাই সুতো কাটারও নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হ’তে লাগল। ধর্মীয় কারণে ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত লুইস পল ১৭৩৮ সালে বার্মিংহ্যামে জন ওয়াইয়াটের সঙ্গে মিলে পেটেন্ট করলেন রোলার স্পিনিং মেশিন। ফ্লায়ার আর ববিন সিস্টেমের সেই মেশিনে উলের সুতো সব জায়গায় সমান পুরু হ’ত যা সাধারণ চরকায় সম্ভব ছিল না। উলকে টানা হ’ত দুটো আলাদা স্পিডে ঘোরা রোলারে, যেজন্যে সেটা একই সাথে টুইস্ট আর স্পিন দুটোই হ’ত। পরবর্তীতে সুতির সুতো বানাতেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হ’তে লাগল। বছর চারেকের মধ্যে এরা দুজন বার্মিংহ্যামে গাধায় টানা এক সুতোকল বসিয়ে ফেলল। কিন্তু তাতে লাভ করতে না পেরে সেই কল বন্ধ করে দিতে হয়। 

অন্যেরা যখন তাদের পদ্ধতি ব্যবহার করে কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন, লুইস পল ও জন তখন মগ্ন তার ডিজাইনের উন্নতিসাধনে। ১৭৪৮ সালে তারা হাতে-টানা কার্ডিং মেশিন আবিষ্কার করলেন। আর তারও দশ বছর বাদে তাদের প্রথম আবিষ্কৃত রোলার স্পিনিং মিলের ডিজাইন বদলে নিলেন তার ওপর এক দ্বিতীয় পেটেন্ট। 

ম্যাঞ্চেস্টারের সঙ্গে ওর্সলির কয়লাখনির মধ্যেখানে ছিল ডিউক অফ ব্রিজওয়াটার নামে এক নালা। ১৭৬১ সালে এই নালা পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পে এক নতুন দিগন্ত শুরু হয় ব্রিটেনে। পরের বছর বার্মিংহ্যামে বসে সোহো ফাউন্ড্রি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। ১৭৬৪ সালে পৃথিবীর প্রথম জলশক্তিচালিত কটন মিল বসে ল্যাঙ্কাশায়ারে, তার নাম থর্প মিল। সেই বছরই জেমস হারগ্রিভস আবিষ্কার করেন মাল্টিপ্‌ল্‌ স্পিন্ডল স্পিনিং জেনি, তাতে এক একজনের পক্ষে প্রথমদিকে আটগুণ এবং পরে আরো বেশিগুণ দ্রুততায় সুতো কাটা সম্ভব হয়। হারগ্রিভসের আইডিয়া ছিল যে একটার বদলে অনেকগুলো স্পিন্ডলকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে তাতে সুতো জড়ালে একসঙ্গে অনেক সুতো কাটা সম্ভব। নিজের জন্যে রেখে তিনি প্রতিবেশী তাঁতীদের কিছু এই স্পিনিং জেনি বিক্রি করেছিলেন। বোকা হারগ্রিভস তার আবিষ্কারের পেটেন্ট নেননি প্রথমে। পরে তিনি নটিংহ্যাম চলে যান, সেখানে তখন হোসিয়ারি শিল্পের রমরমা। সেখানে শিপলি নামের একজনকে তিনি তার জেনি বানিয়ে দেন এবং ১৭৭০ সালে এর পেটেন্ট নেন। ততদিনে ল্যাঙ্কাশায়ারে তার জেনির প্রায় কুড়ি হাজারটা কপি হয়ে গেছে। হারগ্রিভস মামলা করে সেসব বন্ধ করেন। টমাস জেমস নামের একজনের সঙ্গে পরে তিনি একটা মিল চালু করেন, যা ১৭৭৮ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত চালু ছিল। 

তবে তার আগেই ডার্বিশায়ারে রিচার্ড আর্করাইট চালু করেন ক্রমফোর্ড মিল। লুইস পল ও জন ওয়াইয়াটের স্পিনিং ফ্রেমের ডিজাইন বদলে তিনি চালু করেন ওয়াটার ফ্রেম। এতে ফ্রেম ঘুরানো হ’ত ওয়াটার-হুইল দিয়ে। প্রথমে ঘোড়া দিয়ে এই কাজ করতে গিয়ে দেখলেন শক্তি কম পড়ে যাচ্ছে, অনেক বেশি পাওয়ার চাই। তাই ব্যবহৃত হ’ল ওয়াটার হুইল, আর সে জন্যেই এটা বানানো হ’ল ক্রমফোর্ডে। এর কাছেই ওয়ার্কসওয়ার্থ সীসার খনি, যেখানকার উদ্বৃত্ত জলের নালা ক্রমফোর্ড দিয়ে বের করে দেওয়া হ’ত।সেই জল কাজে লেগে গেল ক্রমফোর্ড মিলের শক্তি জোগাতে।

১৭৭২ সালে এই মিল চালু হয়, বারো ঘন্টার দুই শিফটে চব্বিশ ঘন্টা চলত সেই মিল। পাঁচতলা উঁচু সেই কারখানায় শুরুর দিকেই কাজ করত দু’শো কর্মচারী, ক্রমফোর্ড এলাকার অত লোক জোগান দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই কারখানায় কাছেই তিনি শুরু করেন কর্মীদের আবাসন, পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম প্রচেষ্টাগুলোর অন্যতম প্রথম। কারখানার কর্মীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু, সবচেয়ে ছোটটার বয়স হয়ত বছর সাতেক। পরে সর্বনিম্ন বয়স বাড়িয়ে দশ বছর করা হয়। বাচ্চাদের সপ্তাহে ছ’ ঘন্টার লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়, যাতে তারা কারখানার রেকর্ড রাখতে পারে, যা তাদের অশিক্ষিত মা-বাপদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রতিদিন ভোর ছ’টায় আর সন্ধ্যে ছ’টায় এর গেট বন্ধ করে দেওয়া হ’ত পরের শিফটের কর্মীদের জন্যে। যারা সেই সময়ের মধ্যে না ঢুকত, তাদের শুধু সেদিনেরই নয়, আর একদিনের মাইনেও জরিমানা করা হ’ত। 



* * *



শিল্প গড়তে হ’লে শুধু তো কর্মচারী আর প্রযুক্তি হলেই চলে না, তার চাই কলকারখানা বসানোর পুঁজি, চাই কাঁচামাল, চাই বানানো জিনিস বিক্রি করার বাজার, চাই প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্বিষ করে ফেলার হাতিয়ারও। সে সব আসবে কোত্থেকে? 

খুব পরিকল্পনা করে যে এসব হয়েছিল, তা হয়ত নয়, কিন্তু আমাদের সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা মাতৃভূমি ব্রিটেনের এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল অজানিতে। ভারত তুলোর চাষে বহুকাল ধরেই উন্নত। যদিও ব্রিটেনে তুলোর চাহিদা মেটানোর আরও অন্য অনেক দেশ ছিল, তবুও এক বড়সড় অংশ জাহাজে ভর্তি হয়ে চলে যেতে লাগল ব্রিটেনের কলকারখানায়।কিন্তু সবাই তো সাদা কাপড় পরতে চায় না। রং-বেরঙের পোষাকের চাহিদা বেশি। কিন্তু তুলোয় সুন্দর রং লাগানো এত সহজ তো নয়, অন্ততঃ তখন তা জানা ছিল না। কাপড়ে রং করার জন্যে মূল উপাদান ছিল গাছগাছড়ার বিভিন্ন অংশ থেকে সংগ্রহ করা নানা রঙের রঙীন আরক। গাছের ছাল, শিকড়, পাতা, ফল এমনকি কাণ্ড থেকেও বিভিন্ন উপায়ে ছেঁকে নেওয়া হ’ত এই রং। মোটেও সহজসাধ্য কাজ ছিল না এগুলো। প্রচুর সময় তো লাগতোই, কেননা জল বা অন্যান্য দ্রাবকে গাছপালার অংশগুলি চুবিয়ে রাখতে হ’ত, তারপর সেগুলোকে ঘন করে কাপড়ে লাগানো হত। এর আগে অবশ্য কাপড়গুলোকে ভালো করে ধুয়ে ব্লিচ করে নেওয়া হ’ত, যাতে তাতে হলদেটে ভাব না থাকে। সব রং কাপড়ে সহজে তো ধরে না, তাই আরও সব রাসায়নিক পদার্থ মেশাতে হ’ত রং ধরানোর জন্যে। তুলোতে রং ধরাতে হলে মর্ড্যান্ট বলে এক ধরণের পদার্থের প্রয়োজন হয়। ভেষজ রঙের জন্যে বিভিন্ন গাছের চাষও করতে হ’ত।যেমন নীলগাছ থেকে সংগ্রহ করা হ’ত নীল। ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হওয়া ম্যাডার বলে এক গাছড়ার– যা অনেকটা আমাদের আয়ুর্বেদে মঞ্জিষ্ঠার মত – শিকড় থেকে এভাবে নিঙড়ে নেওয়া হ’ত খুনখারাপি লাল রং। 

শুধু গাছপালা থেকে নয়, প্রাণীজগত থেকেও সংগ্রহ হ’ত জামাকাপড়ের রং। মেক্সিকো আর মধ্য আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে প্লিকোপুরপুরা পানসা বলে এক সামুদ্রিক শামুকের গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসরিত রস থেকে টাইরিয়ান পার্প্‌ল বলে এক রং পাওয়া যেত, যা ছিল অত্যন্ত মহার্ঘ, কেননা ব্যবহারে আর সূর্যের আলোয় অন্য রং যেমন ফিকে হয়ে যায়, তেমন না হয়ে এই রং আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। খুব বড়লোকেরাই স্ট্যাটাস সিম্বল হিসাবে এই রঙের পোশাক পরতে পারত, এতই ছিল এর দাম। একে রয়্যাল পার্প্‌ল, ইম্পিরিয়াল পার্প্‌ল বা ইম্পিরিয়াল ডাই-ও বলা হ’ত। রাজবাড়িতে সন্তানাদি জন্মালে তার পোশাক এই রঙের বানানো ছিল রীতি।

বলাই বাহুল্য, এই সব প্রাকৃতিক রং নিষ্কাশন পদ্ধতি শুধু যে সময়সাপেক্ষ ছিল তাই নয়, জীবিত বস্তু থেকে সংগৃহীত বলে টিঁকসই নয় তেমন। গাছপালা বা প্রাণীজগত পচনশীল, কেটে ফেলে রাখলে পচে গন্ধ হয়, তা থেকে নিঙড়ে নেওয়া রংও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরকম ব্যবহার করত। কয়েকটি মাত্র রং পাওয়া যেত, খুব বেশি চয়েস ছিল না। অধিকাংশ রং এখনকার রংবেরং-এর পোশাকের তুলনায় অনেক অনুজ্জ্বল ছিল। 

বাংলায় নীল চাষ সম্ভব বুঝে জোর করে বাংলার ধানচাষিদের নীল চাষে বাধ্য করানো শুরু হ’ল। আর তা না করলে তাদের ওপর নেমে আসতে লাগল নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার।

বাংলার চাষিরা ধনী না হ’লেও দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পরে থাকার সংস্থান ছিল তাদের। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানি লাভের পরপরই উপর্যুপরি অতিরিক্ত করের আঘাতে তারা ধরাশায়ী হ’ল। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মত নেমে এল নীলচাষে বাধ্য হওয়া। পর পর তিন বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় মন্বন্তরে এক তৃতীয়াংশ বঙ্গবাসী মারা গেল। কম্পানী তাদের লাভের টাকা গুনতে ব্যস্ত, চারিদিকের হাহাকার কানে গেল না তাদের। সেই সঙ্গে বাংলার তাঁতশিল্পকে ধ্বংস করতে ব্রিটেন থেকে জাহাজ বোঝাই হয়ে ভারতে আসতে লাগল মেশিনে বোনা সস্তার কাপড়, তার ওপর কোনও কর নেই, অথচ বাঙালীদের মসলিন বিক্রি করতে গেলেই তার ওপরে একগাদা ট্যাক্স। দেশি জিনিস মহার্ঘ হয়ে উঠল, বিদেশি জিনিস সস্তা। মা ষষ্ঠীর কৃপায় দেশে মানুষ কম নেই, তারা সস্তার জিনিস পেলে বেশি দাম দিয়ে জিনিস কিনবে কেন? 

একে একে বন্ধ হয়ে যেতে লাগল বাংলার মহত্তম শিল্পীদের তাঁত।



* * *



বাংলায় যখন মন্বন্তরের আগুন ধিকধিক করে জ্বলা সবে শুরু হয়েছে, সেই সময় ১৭৬৯ সালের পনেরোই অগাস্ট মাত্র এক বছর আগে ফ্রান্সকে হস্তান্তরিত করা দ্বীপ কর্সিকার রাজধানী আজাচ্চিওতে জন্ম হ’ল নেপোলিয়ন বোনাপার্টের। তার আগে জার্মানীতে সঙ্গীত থেমে গেছিল পঁয়ষট্টি বছরের জোহান সেবাস্টিয়ান বাকের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে, ১৭৫০ সালে। কিন্তু পৃথিবী তো সঙ্গীত ছাড়া বেশিক্ষণ ঘুরতে পারে না, তাই তার শূন্যস্থান ভরাতে সেখানেই ছ’ বছর পরে জন্ম হয়েছে উলফগ্যাং অ্যামেদিউস মোৎজার্টের, আর তার চোদ্দো বছর পরে লুডুইগ ফন বিঠোফেনের, ১৭৭০ সালে। 

সময়ের কী অদ্ভুত লীলা! সময় দেখার জন্যে প্রয়োজন ঘড়ির আর তার ব্যবসায়ে সারা বিশ্বে নামী হচ্ছে সুইশরা। অথচ ১৭৭৫ সালে স্কটল্যান্ডে জন্ম হ’ল ডেভিড হেয়ারের, আর ঘড়ির ব্যবসা করে দু’পয়সা কামাতে পঁচিশ বছর বয়সে জাহাজে চেপে উনি হাজির হলেন বাংলার শহর কলকাতায়। 



(ক্রমশ)

4 comments:

  1. খুব আকর্ষণীয় পর্যায়ে এসে পড়েছে ধারাবাহিকটি। ইউরোপের কৃষি ও যন্ত্র বিপ্লবের 'সেই সময়'কে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছ। অনেক অজানা প্রশ্নের জবাব দেবে এই রচনা, এভাবেই চলতে থাকলে।

    ReplyDelete
  2. Rangeet and sanjukta21 August 2016 at 16:52

    Darun dada...ei lekhata sangrahe rakhar moto..

    ReplyDelete
  3. Rangeet and sanjukta21 August 2016 at 16:55

    Sab koti porbo porechhi. Khub informative ekti lekha.

    ReplyDelete
  4. অতি সাবলীল লেখা, ইতিহাসের প্রতিটি মোড় তাদের নিজস্ব শ্বাসে, চলনে, আর্তনাদে জীবন্ত। সত্যিই সংগ্রহে রাখার মতন।

    ReplyDelete