0

Someপ্রতীক - ছন্দা দাশ

Posted in



হেডিং পড়ে কপালে ভাঁজ পড়লেও দিনের আলোর মত‌ই সত্যি যে বর্তমান প্রজন্ম উল্লেখ করার মত‌ই ব‌ই বিমুখ হয়ে পড়েছে দিন দিন।এর প্রভাব কিন্তু একদিন একটা জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে।বাবা মা ভাবছেন এখন দিনকাল যা পড়েছে তাতে ওরা তো নিজেদের পাঠ্যবই পড়তেই সময় পাচ্ছে না তাতে আবার অন্যব‌ই ?সে কিছুতেই হয়না। রেজাল্ট ভালো করতেই হবে।তা না হলে ভালো স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না।সে সবার পিছনে পড়ে থাকবে। জীবন ব্যর্থ হবে। একথা সত্যি যে বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে স্কুল পর্যায়েই লেখাপড়ার যে পরিমাণ চাপ, এতে করে স্কুলের পড়া শেষ করতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট কিছু ব‌ইয়ের বাইরে অন্য কোন ব‌ই পড়ার সময় ও সুযোগ তেমন একটা থাকে না। এখনকার বাচ্চারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায় আর না হয় গৃহশিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে। স্কুল থেকে ফিরে এসে আবার ব‌ইখাতা নিয়ে বসে।হোম‌ওয়ার্ক শেষ করে যতটুকু সময় পায় , তারা ঘুমিয়ে রেস্ট নেয় আর নয়তো খেলাধুলা করে। তবে তাদের খেলাধুলা মানে মোবাইল বা কম্পিউটারে বসে ভিডিও গেইম খেলা। সন্ধ্যার পর আবার স্কুলের পড়া শিখতে হয়।রাতের পড়া শেষ করে অল্প কিছু সময় পেলে তারা টিভিতে কার্টুন বা অন্য কোন আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম দেখতে বসে।স্কুলের নির্দিষ্ট কিছু ব‌ইয়ের বাইরে অন্য কোনো ব‌ইয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। অভিভাবকরা ও চায়না তাদের সন্তান স্কুলের ব‌ইয়ের বাইরে অন্য কোন ব‌ই পড়ুক।এসব কারণে নতুন প্রজন্ম ব‌ই পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তারা খুব ভালো রেজাল্ট করে ও মেধাবী হতে পারছেনা। আমরা এখন কী দেখছি? মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী বাংলা নববর্ষ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ভাসা ভাসা। ভালো কোন ধারণা নেই। এরজন্য মূলত দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের অভিভাবকদের মানসিকতা। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে পাঠক শূন্য আমাদের দেশ হবে। ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ পাই আমরা যখন শপিং সেন্টার ,ব‌ইমেলার দিকে দৃষ্টিপাত করি। একসময় বড় বড় শপিং সেন্টারে একটি বা দুটি বইয়ের দোকান অবশ্যম্ভাবী ছিল। ছোটবেলায় আমরা সেসব দোকান থেকে ছোট ছোট গোয়েন্দা সিরিজের বই, রূপকথার ব‌ই, শিশু কিশোর ম্যাগাজিন ইত্যাদি কিনে নিজেকে রাজা মনে করতাম। যতক্ষণ না সে ব‌ই পড়তে না পেয়েছি মনে শান্তি আসতো না।পড়ার পর সে ব‌ই আবার বিনিময় করতাম বন্ধুদের সাথে।সে আর এখন নেই।এ প্রসঙ্গে আমাদের অন্যতম কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন "এখন আর ব‌ই প্রকাশ করিনা। কার জন্য করবো, কিসের জন্য করবো?এখন তো ব‌ইয়ের পাঠক নেই। যখন ছিল তখন ব‌ই প্রকাশের আগ্রহ ছিল। এখন ব‌ই প্রকাশ করলে প্রকাশকের কাছে লজ্জায় পড়তে হবে।

আরেকজন অন্যতম প্রধান কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন,"আমি ভেবে কুল পাইনা পাঠকেরা কোথায় হারিয়ে গেল? আমি তো এখনও লিখছি। কিন্তু সেই আগ্রহী পাঠক কোথায়? তবে কি আমি ভালো আর লিখতে পারছি না?এই দুই কবির আক্ষেপ থেকেই সুস্পষ্ট ফুটে উঠেছে ব‌ই পড়া থেকে আমরা কতটা বিমুখ হয়েছি। অথচ একথা ভুলে গেলে চলবে না একমাত্র ব‌ইই পারে মানুষের মানসিক উন্নয়ন ঘটাতে, জ্ঞান অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত করতে।ব‌ই হচ্ছে সেই বন্ধু,যে একজন মানুষকে তার ভালোমন্দ বিচারের সর্বোত্তম পরামর্শ দিয়ে থাকে।যে মানুষ ব‌ই পড় তার চিন্তা চেতনা অনেক গভীর,তার দূরদর্শিতা,তার জীবনবোধ সমাজের, দেশের, পরিবারের জন্য কল্যাণকর। এইজন্যই ভিক্টর হুগো বলেছেন "ব‌ই বিশ্বাসের অঙ্গ,ব‌ই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে।অত‌এব ব‌ই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবচ।"আর হেনরি ওয়ার্ড বলেছেন' ব‌ইয়ের মতো ভালো সঙ্গী আর কিছু নেই।ব‌ইয়ের সঙ্গে কথা বলা যায়,ব‌ই উপদেশ দেয়, কিন্তু কিছু করতে বাধ্য করায় না"

একটু পিছন ফিরে যখন দেখি মনে হয় কতো দ্রুত দিনগুলো পাল্টে গেল।তখন ও ঘরে ঘরে টেলিভিশন
আসেনি। থাকলেও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ছিল না।তখন বিনোদনের একমাত্র সেরা মাধ্যমে ছিল ব‌ই। প্রায় প্রতি ঘরেই ব‌ই পড়ার প্রবণতা ছিল সদস্যদের। জন্মদিন, রেজাল্ট ভালো হলে বড়রা ছোটদের ব‌ই উপহার দিতেন।সেই ব‌ই পেয়ে ছোটরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠতো।বার বার নতুন ব‌ইয়ের গন্ধ শুঁকে যেন ওরা তৃপ্তি লাভ করতো। বড়রা ও অবসর সময়ে বসে গল্প, উপন্যাসের পাতায় নিজেদের মগ্ন থাকতো। বড়দের দেখেই তো ছোটরা শেখে। তাই ওরাও ব‌ই পড়ার প্রতি অনুরক্ত হয়। দূর্রভাগ্যবশত এখন বড়রাও আর ব‌ই পড়ে অবসর সময় কাটায় না। বরং তারা জি বাংলা,ষ্টার প্লাস,ষ্টার জলসার পঁচা,উদ্ভট,শিক্ষাহীন সিরিয়ালগুলোর মধ্যে আটকে থাকে। যখন আমাদের দেশে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো প্রভাব বিস্তার করে , তখন থেকেই মূলত ব‌ইয়ের পাঠক ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এরপরে ভিসিডি, ডিভিডি প্লেয়ার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন এল।ওসবের প্রতি আকর্ষণের কারণে ব‌ইয়ের প্রতি আকর্ষণ আরও হ্রাস পেল।আর এখন তো সামাজিক মাধ্যমের মধ্যেই ছেলে, বুড়ো, যুবক, যুবতী সবাই আসক্ত।এ যেন মাদকাসক্তির চাইতেও মারাত্মক। মহামূল্যবান ব‌ই পড়ে র‌ইল অযত্নে, অবহেলায়। বাচ্চারা এখন কি দেখছে? বাবা,মা,ভাই,আপু সবাই ফেসবুক আসক্ত। ছোটরা তো বড়দের দেখেই শিখবে। তাই ওরাও আর ব‌ই পড়ে না।ওতে ওদের কোন আগ্রহ নেই। এভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে আমরা মেধাহীন জাতিতে পরিণত হব।এ থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে‌ই হবে। আমার, আপনার জন্য, দেশের জন্য। আমাদের নতুন প্রজন্মকে ব‌ইয়ের দিকে টানতে হলে সবার আগে ওদের হাতে ব‌ই তুলে দিতে হবে। অভিনয় করে হলেও তাদের সামনে প্রতিদিন নিয়ম করে ব‌ই পড়তে হবে।এতে করে ওরা বড়দের অনুসরণ করে ব‌ইয়ের দিকে আকৃষ্ট হবে। এটা পরিবার থেকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাই আসুন আপনার প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য আজ‌ই,এখুনি‌ই ব‌ই পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে সচেষ্ট হোন।ব‌ই পড়ার সুদিন ফিরে আসার প্রত্যাশায় আমরা জাগি।

0 comments: