0

ধারাবাহিক - প্রিয়াঙ্কা চ্যাচটার্জী

Posted in


পর্ব-৯ 

সহদেব ও মারীচ যাত্রা করে উজ্জয়িনীর উদ্দেশ্যে। মারীচ সঙ্গী থাকায় সহদেবের মন প্রশান্ত , অবশেষে দীর্ঘ যাত্রার শেষে উপস্থিত হয় উজ্জয়িনীতে ।নগরে প্রবেশ করে দেখেন সমগ্র নগরী নববধূর সাজে সজ্জিত। তারা জানতে পারে সম্রাটের সাথে রাজকন্যা পদ্মগন্ধার বিবাহ। কিন্তু নগরে প্রচুর মগধের সৈন্যের উপস্থিতি দেখে বিস্মিত হয় সহদেব। সহদেবের ঠিক বোধগম্য হয় না কি জন্য এত সৈন্য সমাগম? এক পান্থশালাতে রাত্রি কাটায় তারা দুজনে। তিনদিন পরেই অমাবস্যা। 

অমাবস্যার রাত, রাত্রি গভীর, চারিদিকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। পথে জ্বলন্ত মশালের আলোক থাকলেও অপশক্তির এই তমিস্রা দূর করার মতো আলোক অনুপস্থিত। সেদিন গোপনে তারা প্রাসাদে গিয়ে দেখেন সম্রাট সেখানে নেই। এক দাসীকে কিছু স্বর্নমুদ্রা ও গহনার বিনিময়ে তার কাছে জানতে পারেন সম্রাট অশোক, তার নববিবাহিতা বধূ ও উজ্জয়িনীর রাজা প্রসেনজিত প্রমোদ ভ্রমনে বেরিয়েছেন, বাগানবাটিতে রাত্রি অতিবাহিত করবেন। 

সহদেব আর মারীচ রাজপ্রাসাদ হতে নির্গত হবার পরেই মারীচ বলেন 

---আমার মনে হয় মহাকালের মন্দির সম্রাটের গন্তব্য। আমরা সেখানেই যাই। 

ছদ্মবেশে মহাকালের মন্দিরে উপস্থিত হয়ে প্রণাম করে তারা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সন্ধান করে, অবশেষে হতোদ‍্যম হয়ে ফিরে যাবে ঠিক করে। সেইসময় পুনরায় মহাকালের মন্দিরে প্রণাম করে চলে যাবেন, হঠাৎ চোখে পড়ে মন্দিরের পেছনে যেন ক্ষীণ আলোক রশ্মি। সহদেব সেই আলোক অনুসারে এগোতেই দেখেন মহারাজ অশোক মন্দিরের পেছনে, একটি বৃত্ত ও পঞ্চকোণ অঙ্কন করেছেন। পায়ের তলদেশ আঠালো কিছু স্পর্শ করতেই, হাতে নিয়ে প্রদীপের আলোয় দেখলেন, টাটকা রক্ত। পঞ্চভুজের পাঁচ বিন্দুতে প্রদীপ জ্বলছে, সেই এক চিত্র। বুকের ভেতরে দামামা বাজতে থাকে তাদের। সেই ক্ষীণ রশ্মিতে দেখা যায় রাজন প্রসেনজিৎ ঐ বৃত্তের মধ্যে শুয়ে আছে। চারিদিক ঘন অন্ধকার। জনমানব নেই। পেঁচা ডাকছে মাঝে মাঝে। কিছু কাক কা কা রবে ঐ স্থানেই উড়ছে। কি ভয়াল সেই জনমানবহীন অন্ধকার পরিবেশ। কাকের ঐ কর্কশ শব্দ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই। যেন নিঝুম পুরি। বুকের ভেতর অবধি কেঁপে যায়। সম্রাট অশোক, দুর্বোধ্য ভাষায় কি মন্ত্র বিড়বিড় করতে লাগলেন। প্রসেনজিৎ সংজ্ঞাহীন,শুয়ে আছে। 

এদিকে সম্রাট প্রসেনজিৎকে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে, তার চুলমুঠি ধরে, বক্ষের মধ্যে শানিত তরোয়াল ঢুকিয়ে দেন। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে। ছুরি দিয়ে বক্ষ কেটে প্রসেনজিতের স্পন্দিত হৃদয় নির্গত করে কারো উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তারপর সেই রুধির ধারায় অঙ্গুরীয় নিমজ্জিত করে পান করেন তৃপ্তির সাথে। সাক্ষাৎ শয়তান যেন ভর করেছে রাজনের উপর। মুখে শয়তানী হাসি। 

‌‌‌‌‌কী করনীয় ভেবে পায় না সহদেব। মারীচ বলে 

-- মনে তো হয় শয়তানের খেলা স্থগিত।তবে প্রভুই জানেন ভবিষ্যতে কী হবে। কুমার আপনি মগধে ফিরে যান। আপনি যদি একবার সম্রাটের সন্দেহভাজন হন তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত। 

সহদেব যাত্রা করে মগধের উদ্দেশ্যে।

0 comments: