1
undefined undefined undefined

কবিতা - পল্লববরন পাল

Posted in


কবিতা


হাতে রইলো বাণিজ্য
পল্লববরন পাল


নীল বিদ্রোহ

কতবার তোকে বলেছি আকাশ – নীল চোখ দেখাস না – সহ্য করতে পারিনা – স্বপ্ন দেখে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে সত্যিই সুনীলের মতো গাণ্ডুগাণ্ডু লাগে – এমনিতেই দেশে এখন কেউ আর ওসব দেখেটেখে না – দিনরাত ড্যাঙডেঙিয়ে নীলউৎসব

অনেক মানুষকে একসাথে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলো যারা, ঠাণ্ডাঘরের এসিহাওয়ায় ঠেস দিয়ে ঘুমোচ্ছে –মানুষ আর স্বপ্ন দেখেনা, ঢপের চপ খায় – হজমও করে নিমেষে – আবার খায় - চপ এখন নীল, ঢপ এখন শিল্প –

এখন নীল আর স্বপ্নের রঙ নয় – শহর সাজছে বিষনীলে – সেতু থেকে আবাসন, সংস্কৃতি থেকে রাজনীতি জুড়ে সাড়ম্বর নীলচাষ – নারীও ঊরুসন্ধির দরজায় লাগিয়েছে নীল রঙ– স্বপ্ন না বিষ?

আয় আকাশ, আমার পুরুষদণ্ডের ওপর প্রজাপতি হয়ে এসে বোস – আর একবার দরজা ভেঙে শুরু করি নীলবিদ্রোহ


সম্বদ্ধোনা

বুদবার আউড্ডোর মঞ্চে - সাম্বাদিক পেস-ফেস ক্যামেরা আলো হৈচৈ –পোচুর মানুস মানে পাব্লিকের সামনে আম্মা আপনাকে সম্বদ্ধোনা দেবেন –নেবেন না মানে? আপনার আস্পদ্দা তো কম নয়? আপনি এতো বড়ো একজন ইয়ে, সারা দেস্‌ আপনাকে চেনে, সম্মান করে – আর আপনি আম্মাকে অসম্মান করচেন? সুনুন দাদা, আড়াইটেয় গাড়ি পাটিয়ে দেবো– মাঞ্জাটাঞ্জা দিয়ে রেডি থাকবেন, ব্যাস্‌

গাড়ি যদি খালি ফেরে - মনে রাকবেন – বৌদি কিন্তু মেয়েচেলে –আমাদের কাচে পাঁচ থেকে পঁচাসি সব এক রে্ট - রাস্তাঘাটে কোতায় ককোন কী হয়ে যাবে - বাঁচাতে পারবেন তো? আপনার নামে আলিপুরদুয়ার বা সুন্দরবনে রেপকেস – ভিক্টিম রেডি আচে স্টকে – কোর্টে আপনাকে সনাক্ত করবে - ভাল্লাগবে?

আপনি বুদ্দিমান লোক – বুদ্দিজিবি – আম্মা আপনাকে সম্মান দিচ্চেন, আর আপনি আম্মাকে রিটান্‌ দেবেন না –কোন কম্পানির মাল আপনি?


ঢ্যা র‍্যা র‍্যা র‍্যা

অহঙ্কার নাকি স্পর্ধা –গর্ব নাকি গরিমা - ঠিক কোন শব্দটা মানানসই হবে – টালবাহানা করতে করতে কলেজস্ট্রীট কফিহাউস থেকে শিবপুর বি ই কলেজ – সিধে রাস্তা সোয়া ঘন্টার পথ – দরজা খুলতেই জি বাংলা সারেগামাপাধানি – দত্তদা আর বৌদি এতক্ষণ তোমার জন্য বসে বসে– এখন আর চা দিলামনা, হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসো‍ - জানো আজ নিউজে বললো – সিডনি না কোথায় রেস্টুরেন্টে ঢুকে ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যা – কাশ্মীরসীমান্তে ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যা – সারদা নারদা বরোদা ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যা

খাবার টেবিলে রুটির সঙ্গে ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যা – রাতবিছানায় রুটিন-রতির ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যা পেরিয়ে –

কই রে? অহঙ্কার না গর্ব? নাকি স্পর্ধা? 

কোথায় গেলি? কী যেন শব্দগুলো?

ঢ্যা র‍্যা র‍্যা র‍্যা

ঢ্যা র‍্যা র‍্যা র‍্যা


গামছা ও মোমবাতি

ইদানিং মোমবাতি আর গামছা শিল্পের রমরমা – যে কোনও রহস্যমৃত্যুতে অবশ্য নয় – এন্‌কাউন্টারে আভিজাত্যের নীল রক্তের গন্ধ না থাকলে যে পাব্লিক খায় না – সম্ভ্রান্ত আততায়ীদের সঙ্গে থাকে অস্ত্র ও গামছা – মিডিয়ার সামনে গামছামুখে বুকের ছাতি চওড়াতর। গামছা থাকে থানার লকারেও – কখনও ছিঁচকের মুখ ঢেকে ভিআইপি গ্রেপ্তার দেখালে পদোন্নতির টুপাইস্‌ ভালো বদলি মেলে।

মোমবাতি আবার খুচরোপন্থী নয় – হোলসেল – তেমন তেমন রহস্যমৃত্যু হলে ঝটকায় হাজার হাজার

ঘরে ঘরে ক্ষুদ্রশিল্প - সরকারী উৎসাহ ও সহজ কিস্তিতে ব্যাঙ্কঋণ – স্যটাস্যট আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলায় বেকারি শেষ– হুঁ হুঁ বাওয়া, আমার সিণ্ডিকেট ব্রেন নিয়ে আর কোনও কথা হবে না


হ্যালো

রাত্রে ঘুমের মধ্যে, অফিসে নিজস্ব একলা কাজের ঘরে হঠাৎ হঠাৎ বাবা ডেকে ওঠে প্রিয় ডাকনামে – চমকে উঠি। মা অসুস্থ আধোগলায় জিজ্ঞেস করে – আমাকে ফেলে আর ফিরে যাবে না তো? কাকা তার স্বভাবসিদ্ধ হাজারদুয়ারি অট্টহাসি মুখে ডাক দিয়ে যায়......

আরো কত প্রিয় মুখ, সেই তিরিশ বছর আগে হারানো বন্ধু মানবমিত্র থেকে শুরু করে ...

এক মিছিল হারিয়ে যাওয়া মুখ ...

গতকাল গভীর রাতে প্রথম পল্লব এলো


হাতে রইলো বাণিজ্য

এক গাল হেসে বলতে গেছি – কেমন আছো – ও মা, হাঁ করতেই মুখের ভেতর থেকে হড়কে বেরিয়ে এল মস্ত এক সকাল আটটার হৈহৈ বাজার। প্রশ্নের আগেই গামছার হাওয়াকামানে বিরোধী মাছির জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে করতে এসে গেলো উত্তর – ভেটকি চারশো

কোনোক্রমে মুখ বুঁজে মাছের বোট্‌কা ঘেমোগন্ধ সামলে বেরিয়েছি, মানচিত্র আঁকা এক দৈত্যাকার শপিংমল মুচকি হেসে বললো - এতদিন কোথায় ছিলেন?

আমি তখন ফ্যালফ্যাল চোখ, আর মনে মনে চব্বিশ গুণ সাতের অঙ্কে চার সাতে আঠাশের আট, হাতে রইলো...

আবিশ্ব এই বিজ্ঞাপিত অস্তিত্বের চীৎকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেমন আছি – আমিও কি ছাই জানি নাকি?

1 comment:

  1. অনির্বাণ রায়21 May 2018 at 22:35

    এতোদিন স্থির বিশ্বাস ছিল - তুমি আদ্যোপান্ত প্রেমের কবি। কিন্তু এখন তো তোমাকে উগ্রপন্থী বলে মনে হচ্ছে - কলমের বদলে ছুরি দিয়ে লিখছো!
    বদরক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে, আমাদের সবার বুকের থেকে।
    তুমি লিখে যাও পল্লবদা।

    ReplyDelete