0

প্রবন্ধ - জয়দীপ মজুমদার

Posted in


প্রবন্ধ


রিভার্স পাম্পিং
জয়দীপ মজুমদার


আমরা সবাই জানি পাম্প জল তোলে ট্যাংক ভরে। কিন্তু কোনও কারণে মোটরের কানেকশান যদি উল্টো হয়ে যায় তাহলে মোটর উল্টো দিকে ঘোরা শুরু করে যার ফলে পাম্পও উল্টো দিকে চলা শুরু করে। একবার যদি পাম্প উল্টো দিকে চলা শুরু করে তাহলে ট্যাংক ভরার বদলে ট্যাঙ্ক খালি করে দেয়। মানে এই অবস্থায় পাম্প যদি নাও চলে তাহলেও বোধহয় ভালো। কারণ সেক্ষেত্রে অন্তত আর যাই হোক পাম্প ট্যাংককে খালি করতে পারবেনা। মানুষের হৃৎপিণ্ড এরকম একটা পাম্প যে প্রতি মুহূর্তে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে। আর তার মোটর হচ্ছে প্রাণশক্তি যে এই পাম্পটাকে চালাচ্ছে। কিন্তু সেই শক্তির সব সময় দরকার হয়না। মানুষ জন্মাবার ঠিক পরেই ফুসফুসে যখন প্রথম বাতাস ঢোকে এই পাম্প চলতে শুরু করে দেয় আর তার সঙ্গে রক্তের চলাচল শুরু হয় শরীরের সমস্ত কোষগুলোতে। বাতাসের বিশুদ্ধ অক্সিজেন সারা শরীরে পৌঁছয় আর সারা শরীরের সমস্ত কোষের দূষিত কার্বনডাইঅক্সাইড রক্তে বয়ে এসে ফুসফুস হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। এটা চিরন্তন সনাতন পদ্ধতি এর জন্যে কাউকে কিছু করতে হয়না। সেটা একটা কান্না দিয়ে শুরু হয় এবং কখনও কখন সেটা ঠিকমতো না হলে ডাক্তার বাচ্চাকে উল্টোমুখো চ্যাংদোলা করে পেছনে একটু চাঁটি মেরে দেয় যাতে বাচ্চা কাঁদে এবং ফুসফুসে হাওয়া ঢোকে। এর পর আর কিছু করতে হয়না এবং এই পাম্প চলতেই থাকে যেরকম করে গাড়ী স্টার্ট হবার আগে একটু ব্যাটারীর দরকার হয় ইঞ্জিন স্টার্ট নেবার জন্যে। কিন্তু ইঞ্জিন একবার স্টার্ট নেবার পর আর ব্যাটারীর দরকার হয়না উল্টে ইঞ্জিন তখন ব্যাটারীকে চার্জ করতে পারে। যেরকম টিউবওয়েলে জল না উঠলে একটু জল ঢেলে পাম্প করতে হয়। তবেই যে জিনিষটা চাইছি সেটা পাব। তার মানে যে জিনিসটা আমি চাইছি সেটা আমার মধ্যে রয়েছে কিন্তু পরিমাণটা অনেক কম। সেই পরিমাণটা বাড়ানো মানে শক্তির ব্যবসা করা। ব্যবসায় লাভ ক্ষতি থাকে। যারা এই ব্যাবসায় পটু ওরা সমাজ সংস্কারক মহাপুরুষ হয়ে যায়।কিন্তু যারা পটু নয় ওরাও চেষ্টা করে কিন্তু হেরে যায় এবং ভেসে যায় ওদের সমস্ত পসিটিভ এনার্জি গুলো টিউবওয়েলে জল ঢালার মত হারিয়ে যায়। টিউবওয়েলে জলতো ওঠেইনা উপরন্তু যা জল সঞ্চিত ছিল লাভের আশায় তাও হারিয়ে গন্ধ হারানো খুশবু বিহীন ফুল হয়ে যায় মাঝখান থেকে। সেই আমি যখন জীবন যুদ্ধে হেরে যাই কিছুই করতে পারিনা, তখন আমার অসাফল্যকে প্রচার করে মহান হই ফেসবুকে বা ব্লগে পোষ্ট করে লাইক পাই আর মনে করি আমার কাজ শেষ। বাকী কাজ সরকার করবে। একবারও ভাবিনা সরকার যদি পঞ্চাশটা বা একশটা লোকের সংস্থান করতে পারে তাহলে আমিও একটা লোকের সংস্থান করতে পারি। আসুন আমরা সেই কঠিন কাজটা করবার শপথ করি যেদিন একটা লাওয়ারিশ লোকের সংস্থান করতে পারব সেই দিন ফেসবুকে পোষ্টিং দেব সেই দিন ব্লগে লিখব আমার সাক্সেস স্টোরি। তারপর সরকারকে বলব আমি আমার কাজ করে কথা বলছি বাতেলা দিচ্ছিনা হাওয়ায় সমাজ সংস্কারের কথা বলছিনা। 

কারণ আমাদের দেশে পোকা মাকড়ের মতো ফ্লাইওভারের নীচে রাস্তার ধারে মানুষ জন্মাচ্ছে। আমি আপনি এই দেশেকে represent করিনা। এই দেশকে represent করে ওরা। কারণ সংখ্যায় ওরা অনেক বেশী। সেই সব মানুষগুলোর কাছ থেকে থেকে আর কি আশা করা যায় যাদের জন্মই হয় শুধু শারীরিক বা পাশবিক কামনায়। 

যে লোকগুলো জানেনা কাল সকাল খাওয়া জুটবে কি জুটবে না কিন্ত খাওয়া জুটুক না জুটুক 'ঐ কাজটা' চাই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে। এই সব অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত লোক গুলোকে সিরিয়া ইরাকে কাজে লাগানো হয়েছে উগ্রপন্থায়। প্রায় ধ্বংসের মুখে ওখানে পুরুষ জাত যুদ্ধ আর দাঙ্গায়। আর স্ত্রী মা বোনেরা পরিণত হয়েছে পতিতায় উগ্রপন্থীদের পণ্যে। প্রতিদিন নারী গণধর্ষণ উৎসব চলছে। সেখান থেকে যে সব অবৈধ পুরুষ সন্তানরা জন্মাচ্ছে একটু বড় হতেই ওদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর মেয়েদের তৈরী করা হচ্ছে বড় করা হচ্ছে মনোরঞ্জনের জন্যে next generation পতিতা। সারা দুনিয়ার কিছু দেশ থেকে ফাণ্ডিং হচ্ছে আর এদের জন্মদাত্রীরা পেটের দায়ে বা ইচ্ছের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে ধর্ষিতা হচ্ছেন ওখানকারই উগ্রপন্থীদের হাতে। ধর্ম সেখানে এসব মা বোন মেয়েদের প্রোটেকশান দেয়না। সেখানে দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়না। স্বধর্মের লোকেদের হাতে ইজ্জত ভূলুন্ঠিত হওয়ার খবর নিউস পেপারের শিরোনামে আসেনা। জীবন এভাবে চলছে। এ প্রতিদিনকার দশটা পাঁচটা কাজ। যারা পেরেছে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। যেভাবে চিতার আগুনে জল ঢেলে উল্টো মুখে লাঠি দিয়ে শ্মশানে কলসী ভেঙে যে মরে চলে গেল তার সংগে সমস্ত সম্পর্ক চোকানো হয়। আর যারা রয়ে গেছে প্রতিদিন ধর্ষিতা হচ্ছে, তাদের কান্না তাদের সর্বশক্তিমান অবদি পৌঁছায়না ধর্ম এদেরকে বাঁচাতে পারছেনা। ইরাকের মেসোপটেমিয়ার টাইগ্রীস ইউফ্রেটিস নদীর মিলনস্থল ও তার অববাহিকায় একসময় যে সভ্যতা শুরু হয়েছিল এখন সেখানে তার অন্তেষ্টি হচ্ছে। নরকের সেই শেষ সীমায় আমরা এখনও পৌঁছাইনি। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। সেই ক্ষমতা আমাদের আছে। 

আমার এখানে গাল্ফ নিউজের প্রথম পাতায় ওদের খবর আসেনা, আসে ইণ্ডিয়ায় দুটো মেয়ে রেপ হয়েছে সেটা প্রথম পাতায় । Indian males are f**king bulls এই T shirt পরে ইস্তানবুল এয়ারপোর্ট লোকজনদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে তার কিছু পোষ্টিংও আমি দেখেছি WhatsApp এ

অথচ ইণ্ডিয়া যখন সব চাইতে কম পয়সায় space satellite পাঠিয়ে celebrate করে সেই খবর Gulf News এর প্রথম পাতায় আসেনা। তাহলে আগেরটা কেন আসে? ধর্মীয় বলে। কিন্তু শুনেছি ইকনমি তো ধর্মের বাপ। পৃথিবীতে ইকনমি আগে এসেছে ধর্ম পরে। 

বাড়ীতে অনেক ছেলে মেয়ের মধ্যে একটা যদি খারাপ হয় তাহলে তাকে আমরা counselling করাতে নিয়ে যাই special education দিই। কিন্ত ওর negativity publish করিনা বা প্রচার করিনা root cause এ যাওয়ার চেষ্টা করি। Solution খোজার চেষ্টা করি। স্কুলের ওপর ছেড়ে দিইনা বা সরকারের পর ছেড়ে দিইনা। 

তার মানে এই নয় ধর্ষণকারী শাস্তি না পেয়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু ধর্ষণকারীর চরম শাস্তি হবার পরেও আমাদের কাজ আছে। আমাদের প্রত্যেককে আমাদের অনুপাতের বরাদ্দের সেই কাজটুকু execute করতে হবে। 

বহুদূর হেঁটে আজ দেখতে পাচ্ছি কোনও একটা অজানা কারণে হৃৎপিণ্ডের পাম্পটা উল্টো দিকে ঘুরছে যার ফলে শরীরের সমস্ত অক্সিজেন বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে আর বাতাসের দূষিত কার্বনডাইঅক্সাইড শরীরের ভেতর ঢুকছে। এই অবস্থা বেশী দিন চললে যেকোন সময় ধংস অনিবার্য। 

কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, সব কিছু ঠিক ছিল আর দরকার ছিল খালি মোটরের ডাইরেকশানটা উল্টো করে দেওয়া। ব্যাস। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাহলেই শরীরে অক্সিজেন ঢুকবে আর কার্বনডাই অক্সাইড বাইরে বেরিয়ে যাবে। 

সত্য যুগে যেরকম মন্দির মসজিদ বা গির্জা ছিলনা সেরকম থানা পুলিশ বা জেল ও ছিলনা। প্রত্যেকটা মানুষ সেখানে এক একটা দেব শিশু ছিল। সেখানে মানুষের বিবেক মানুষকে পথ দেখাত। 

আরো তিনটে যুগ পেরিয়ে আসার পর বাতাসে এখন আর অক্সিজেন পাওয়া যায়না পাওয়া যায় শুধুই কার্বনডাইঅক্সাইড। কিন্তু তা থেকেও অক্সিজেন তৈরী করা যায় বাঁচা যায় এবং অন্যদের বাঁচার রসদ তৈরী করা যায় যেরকম গাছ বানায়। 

আমরাকি তার খানিকটা চেষ্টা করতে পারিনা? যদি করা শুরু করি দেখবেন সত্য যুগ আসবে নয় এসে গেছে। 

0 comments: