1

গল্প - হিমাংশু চৌধুরী

Posted in


গল্প


আগুনপাখি
হিমাংশু চৌধুরী


"আব্বে, মাগীটাকে দেখেছিস? কি ফিগার শাল্লা! পুরো মাখখন বে, মাখখন! এগদম খাপ্পাই মাল। চল বে এট্টুস খবর করি।"

কথাগুলো কানে আসতেই সতর্ক হয়ে চারপাশে তাকায় অদ্রিজা। স্টেশন থেকে বাড়ি অবধি যাবার রাস্তাটা বেশ নির্জন। আজ আবার প্রোজেক্ট সাবমিশনের শেষ দিন ছিলো, অফিস থেকে বেরতে দেরি হয়েছে। সেক্টর ফাইভ থেকে যখন বেরিয়েছে, তখনই ন'টা বেজে গেছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও যখন অটো পেলো না, তখন বাধ্য হয়েই ২১৫ রুটের একটা বাস ধরে উল্টোডাঙ্গায় এলো অদ্রিজা। উল্টোডাঙ্গা থেকে ট্রেন ধরে যখন তাদের স্টেশনে এসে নামলো, তখন প্রায় এগারোটা বেজে গেছে। যা ভেবেছিলো, কোন রিক্সা পাওয়া গেলোনা ওখানে। একবার ভাবলো বাড়িতে ফোন করি, কিন্তু করতে গিয়েও করলোনা। বৃদ্ধ বাবা আর মা শুধু বাড়িতে, তাদের চলাফেরাও রেস্ট্রিকটেড, খামোখা তাদের বিব্রত করে লাভ নেই। আগেই অফিস থেকে বেরনোর সময়ে জানিয়ে দিয়েছিলো, যে, রাত হবে। এরকম রাত ওর মাঝে মাঝেই হয়ে যায়, যদিও, এতটা রাত আগে কোনদিন হয়নি। একটু ভয় ভয় করছিলো, তাও অদ্রিকে বাধ্য হয়ে হেঁটে ফেরার রাস্তা ধরতে হলো।

স্টেশন চত্ত্বরের টিমটিম করে জ্বলা কয়েকটা বালব তাও কিছুটা আলো দিচ্ছিলো। সিঁড়ি বেয়ে বাইরে নেমে দু'পা এগোতে না এগোতেই ঝাঁপিয়ে এলো অন্ধকার। অন্যদিন এখানে দু'একটা পান বিড়ি সিগারেটের দোকান খোলা থাকে, রাস্তায় দু'চারজন গল্পগাছা করে, স্টেশনের সামনেটাতেই একটা ছোটখাটো বাজার বসে, দু'একজন বাজারু ভাঙা বাজার থেকে জিনিসপাতি কেনে, একটা সাইকেল স্ট্যান্ড আছে, সেখানেও কয়েকজন থাকে। মোদ্দা কথা গোটা রাস্তাটাতেই কমবেশি লোকের দেখা পাওয়া যায়। আজ বাজার উঠে গেছে, সাইকেল স্ট্যান্ডও বন্ধ। শীতের রাত্রি, অদ্রির মনে হলো সে ছাড়া রাস্তায় বোধহয় আর একটা লোকও নেই। এই অন্ধকারে কুড়ি পঁচিশ মিনিট হেঁটে বাড়ি পৌঁছাবে কি করে ভাবতে থাকে অদ্রি। কিন্তু এখানে দাঁড়াবেই বা কোথায়? লাস্ট ট্রেইন এখনও যায়নি, অদ্রি একবার ভাবলো তার জন্য স্টেশনে গিয়ে একটু অপেক্ষা করবে নাকি? যদি কেউ নামে ওদের পাড়ার, তাহলে তার সঙ্গেই ফেরা যাবে। কিন্তু, কেউ যে থাকবেই লাস্ট ট্রেনে, তার কোনও গ্যারান্টি তো নেই। হয়তো দেখা গেল, কেউ নামলোই না, উলটে তখন আরও দেরী হয়ে যাবে। তাই সাতপাঁচ ভেবে যা থাকে কপালে বলে ও এগোতে শুরু করলো রাস্তা ধরে।

প্রত্নতাত্ত্বিক সময়ে বোধহয় কোনও একদিন এই রাস্তায় পিচ পড়েছিলো। রোজ অফিস যাবার সময়ে তাড়াহুড়োয় আর ফেরার সময়ে ক্লান্তিজনিত কারণে রিকশা চড়ে যাতায়াত করাটাই অদ্রির অভ্যেস হয়ে গেছে। রিকশাতে হাজার ঝাঁকুনি খেলেও ঠিক খেয়াল হয়না রাস্তাটা কতটা খারাপ হয়েছে। আজ খানিকটা এ রাস্তা ধরে হেঁটে এগোতেই অদ্রিজা টের পেলো রাস্তার অবস্থা। তার উপরে কোনও লাইট জ্বলছেনা, ঘুটঘুটে অন্ধকার। অবশ্য একটু পরেই চোখটা একটু সয়ে এসে আবছা সব কিছু দেখা যেতে শুরু করলো। সাথে থাকা মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে খুব সাবধানে উঁচুনিচু বাঁচিয়ে ও এগোচ্ছিলো বাড়ির দিকে, এমন সময়ে ঐ কথাগুলো ওর কানে ঢুকলো।

থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ও ভাবতে শুরু করে, কি করবে এখন। আশেপাশে কোনও লোক দেখা যাচ্ছেনা যে সাহায্য চাইবে। দু'একটা বাড়ি রাস্তার ধারে অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে বটে, কিন্তু তাতে কোনও লোক কস্মিনকালেও বসবাস করেছে বলে ওর মনে হলোনা। ভাবতে ভাবতেই দেখে অন্ধকার ফুঁড়ে ভোজবাজির মতো বেরিয়ে এসেছে চারটে ছায়ামূর্তি। চট করে অদ্রি ফোন আনলক করার চেষ্টা করে, কোনও একটা, যেকোন একটা নাম্বারে ফোন করতে চায় সে। কিন্তু সে সুযোগ আসার আগেই একজন এসে ফোনটাই হাত থেকে ছিনিয়ে নিলো। "আ বে, মামণি যে দেখি পুলিশে ফোন করতে চায়। চলো সোনামণি, আগে একটু গপ্পোসপ্পো করি, তাপ্পর না হয় পুলিশকাকুদের ফোন করবে। আচ্ছা, আমরাই না হয় তোমার হয়ে করে দেবো। তাপ্পরে বাড়ি যাবে।" এই বলে বাকিরা ওর হাত ধরে টানতে শুরু করলো। মুখে তাদের মদের বিশ্রী গন্ধ, আর শরীরে গা গোলানো উগ্র কামনার গন্ধ।

অদ্রি মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করে। এই বিপদ থেকে ওকে কে বাঁচাবে? বাঁচতে গেলে নিজেকেই হয়তো কিছু করতে হবে। মরিয়া হয়ে ও চেঁচায়, "বাঁচাও, বাঁচাও।" কেউ কি নেই, যে সাহায্যে এগিয়ে আসবে? অদ্রিজা ভাবে। আশেপাশে যে দু'একটা বাড়ি ছিলো, তাতে যে লোকজন এখনও থাকে, তার প্রমাণ পাওয়া গেলো যখন তাদের জানালাগুলো এবারে দ্রুত বন্ধ হয়ে গেলো।

"আব্বে, মালটা তো হেব্বি টেঁটিয়া আছে, বেকার বাওয়াল মাচাচ্ছে। সাপটে ধরতো বে," বলেই ওদের মধ্যে যাকে লিডম্যান মনে হচ্ছে, সে সপাটে একটা চড় মারলো অদ্রির গালে। পিছন থেকে একজন জাপটে ধরলো ওকে, আরেকজন ওর কাঁধ থেকে ঝোলা ভ্যানিটিব্যাগ ধরে টান মেরে ওটা ছিঁড়ে নিয়ে এসে রাস্তার ধারে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। ওদের মনে এখন শরীরের নেশা চেপে বসেছে, পয়সা কড়ির দিকে এখন ওদের আর নজর নেই। মুখের মধ্যে একটা নোনতা স্বাদ টের পায় অদ্রিজা। বোধহয় দাঁতের ফাঁকে ঢুকে গিয়ে কেটে গেল গালটা। "উঃ", বলে চিৎকার করে উঠলো সে।

যে চড় মেরেছিলো, সে এরপর পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে অদ্রির মুখের মধ্যে সজোরে ঠেসে গুঁজে দিলো। এবারে জিভটা কেটে গেলো, বুঝতে পারলো অদ্রিজা, কিন্তু আর চেঁচানোর উপায় নেই। ময়লা রুমালটা প্রায় গলা অবধি ঢুকিয়ে দিয়েছে ওরা। নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছে। পিছন থেকে যে ওকে জাপটিয়ে ধরে রেখেছিলো সে, তখন অদ্রির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তার নোংরা থাবা দিয়ে অবাধে আক্রমণ করে চলেছে। অসহায় অদ্রিজার আর কিছুই করার ছিলোনা, তবুও এই চারটে নরপশুর বিরূদ্ধে যতদূর সম্ভব লড়াই দেবার চেষ্টা ও করেছিলো, কিন্তু কোনও লাভ তাতে হলোনা। উলটে অদ্রি আরো কয়েকটা চড় থাপ্পড় খেয়ে শেষে ক্ষান্ত দিলো।

চারজনে মিলে ওকে প্রায় পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে চললো রাস্তার উপরে একটু দূরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটা গাড়ির দিকে। সেখানে গিয়ে একজন গেল সামনে ড্রাইভিং সিটে, একজন তার পাশে, আর বাকি দু'জন মাঝের সিটে অদ্রির সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়লো।

গাড়ি শব্দ করে স্টার্ট দিলো। দু'জন ওকে চেপে ধরে রেখেছে সিটের উপর। গাড়িতে এলকোহলের ভারী গন্ধ ভাসছে চারিদিকে। অদ্রি তাকিয়ে দেখলো ইতস্তত ছড়ানো রয়েছে মদের বোতল, সিগারেটের টুকরো ইত্যাদি। গা গুলিয়ে উঠে বমি পাচ্ছিলো, কিন্তু কোনরকমভাবে বমনেচ্ছা দমন করলো ও, এখন বমি করলে নিজের বমিতে নিজেই দম আটকে মরতে হবে।

দ্রুতবেগে গাড়ি এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ বাঁক নিয়ে একটা মাটির রাস্তা দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেলো। তারপরে আরেকটু এগিয়ে থেমে গেল। অদ্রিজাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামানো হলো। অদ্রিজা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় দেখলো গাছগাছালিতে ভর্তি চারপাশ, মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা, সেখানে একটা চাটাই পাতা। উপরে পাতলা প্লাস্টিকের একটা নীচু ছাউনি। মনে হচ্ছে, এটাই এদের ঠেক।

ধপ করে অদ্রিজাকে ফেলা হলো চাটাইয়ের উপর। হেডলাইট নিভে গিয়ে এখন আবার অন্ধকার। চারটে জানোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার ওপরে। অসহায়ভাবে শুয়ে অদ্রিজা প্রতীক্ষা করতে থাকে চরম অবমাননার। আটটা উল্লসিত নোংরা হাত যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াতে থাকে তার সারা শরীরে।

"খোল শালী, কাপড় খোল নিজে থেকে। অনেক রঙ নিচ্ছিলিস, এবারে দেখ কেমন বানাই তোকে। ছটফট করিস না, তাহলে দেখিস কেমন সুখ পাবি। হে হে হে।" হায়েনার মতো হাসতে থাকে চারজন।

হঠাৎই, ঠিক এই সময়ে একটা তীব্র ক্রীঁইইইইচ শব্দ শোনা যায় উপর থেকে। অন্ধকার জঙ্গল আবছা আলোকিত হয়ে ওঠে। সবাই সচকিত হয়ে উপরে তাকিয়ে দেখে, অন্ধকার ভেদ করে তীব্রবেগে নেমে আসছে এক বিরাট পাখি, তার সারা গায়ে লেলিহান অগ্নিশিখা, বাঁকানো ভয়ঙ্কর ঠোঁট যেন অগ্নিশুদ্ধ লৌহশলাকা। 

অগ্নিচূর্ণ তার পালক থেকে ঝরে ঝরে পড়ছে, অার চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠছে। স্বয়মপ্রকাশ জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে পাখির সারা গা।

আগুনপাখি!

চারপাশের জঙ্গল আলোকিত করে নেমে আসে আগুনপাখি, এসে গাছগুলোর মাথায় বৃত্তাকারে চক্কর কাটতে থাকে। তারপরে একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিয়ে হুউশ করে নেমে আসে নীচে। দু'একটা গাছের মোটা ডাল চড়চড় করে পুড়তে শুরু করে। আগুনপাখি তার ডানার ঝাপটা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া বইতে শুরু করে আর আগুন নির্বাপিত হয়ে যায়।

এই অপার্থিব দৃশ্য দেখে অদ্রি এবং বাকি চারজন হতবাক হয়ে পড়ে। অদ্রির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ওকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ওরা। "এটা আবার কি বে?", বিড়বিড় করে বলে একজন। আর একজন তার পকেট থেকে পিস্তল বের করে তাক করে আগুনপাখির দিকে।

এইসব গোলমালের মধ্যে অদ্রি তার কাপড়চোপড় একটু বিন্যস্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে একটু পিছিয়ে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। আক্রমণকারী ছেলে চারটের তখন আর তার কথা ভাবার কোন সময় নেই। তাদের মাদকসিক্ত মগজে আর কিছু ঢুকুক বা না ঢুকুক, এটুকু সহজেই তারা বুঝেছে, যে এ বড় সহজ সময় নয়। তাদের একজনের হাতে পিস্তল, মনে হয় সেই গ্রুপ লিডার- বাকিরা হাতে চাকু নিয়ে ক্লাসিকাল এটাক পজিশনে দাঁড়িয়ে পড়েছে, আগুনপাখির সামনে মোটামুটি দশ বারো ফুট দূরে, অর্ধবৃত্তাকারে।

অকস্মাৎ খুব দ্রুত এগিয়ে আসে পাখি। বস্তুত, অত বড় চেহারা নিয়ে যে এত দ্রুত নড়াচড়া করা যায়, সেটা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যেই আগুনপাখি এগিয়ে এসে পিস্তল হাতে ধরে রাখা যুবকটির হাতে ঠুকরে দেয়। এক লহমায় কনুই থেকে খসে পড়ে হাতটি। ডানহাতের আগা থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে আর পোড়া মাংসের কটু গন্ধে বাতাস ভরে ওঠে। ছেলেটি প্রথমে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তার কেটে পড়ে যাওয়া হাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপরে এক বিকট চিৎকার করে পাশের জঙ্গলের দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে। আগুনপাখি তখন অল্প ডানা মেলে উড়ে গিয়ে ছেলেটির মাথায় ঠোক্কর মারলো। সঙ্গে সঙ্গে মাথাটি ফেটে গেল অনায়াসে মাঝখান থেকে। আর্তনাদ করে ছেলেটি লুটিয়ে পড়ে মাটির উপরে। পাখি ক্রীঁইইচ শব্দ করে তার উপরে গিয়ে বসে তার ডানা দিয়ে মুড়ে দেয় তাকে। ক্ষণকাল পরে সে যখন উঠে আসে, তখন সেখানে একমুঠো পোড়া ছাই ছাড়া আর কিছুই নেই। দমকা একটা হাওয়া এসে তাও উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়।

বাকি তিনজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চিত্রার্পিতের মতো সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্যপট দেখছিলো, যেন সিনেমা দেখছে, বা কোনও ম্যাজিক শো হচ্ছে। হঠাৎ যেন হুঁশ ফিরে পেয়ে তারা প্রাণভয়ে দৌড়ে ঢুকে গেলো পাশের জঙ্গলে। পাখি নির্বিকার বসে তা দেখতে থাকে, তার পলকহীন চোখে, পালাতে দেয় ওদের। বাকি জীবনে ওদের আর সাহস হবেনা বিপথে যাবার।

এতক্ষণ অদ্রি অবাক বিস্ময়ে চেয়েছিলো আগুনপাখির দিকে। অদ্ভূত ব্যাপার, তার কিন্তু একটুও ভয় করছেনা। শান্তভাবে আগুনপাখি এসে বসে তার সামনে, বসে মাথা নামিয়ে আনে তার পেটের কাছে। অদ্রি তার মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দেয়। তার গরম লাগেনা। মাথা নীচু করে আদর খায় পাখি। যেভাবে ছোটবেলায় আদর খেত অত্রি, তার থেকে তিনবছরের ছোট ভাই।

আইপিএস পাশ করে অত্রির প্রথম পোস্টিং হয়েছিল মাওবাদী অধ্যুষিত এক জেলায়। সেখানে এক গ্রামে মাওবাদীদের লাগানো আগুন থেকে দুটো ছোট বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়েছিলো সে। বাচ্চাদুটোকে কোনওরকমে বাইরে ছুঁড়ে দিয়ে বাঁচাতে পারলেও নিজে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি অত্রি সেই আগুনের বেড়াজাল থেকে। তার বডি চেনার মতো অবস্থায় ছিলোনা।

পাখি মাথা তুলে চায় অদ্রিজার দিকে। নিষ্পলক সেই চোখে গভীর মমতা। তারপরে হঠাৎই ডানা মেলে আগুনপাখি উড়ে যায় রাতের আকাশ বেয়ে, গাছেদের মাথা ছাড়িয়ে উপরে, আরো উপরে। ক্রমশ ছোট হতে হতে আগুনপাখি আলোকবিন্দু হয়ে যায়। অদ্রি দেখতে পায় অসংখ্য আলোকবিন্দু উড়ে বেড়াচ্ছে ঐ আকাশে।

যতক্ষণ দেখা যায়, দেখতে থাকে অদ্রি। তারপরে দৃপ্ত ভঙ্গিতে মাথা তুলে নির্ভয়া সে এগিয়ে যায় বাড়ির দিকে। সে জানে তার ও তার মতো নারীদের কাছে আছে সুরক্ষাকবচ।

আগুনপাখিরা। এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজেও তাদের সংখ্যা বড় কম নয়।

1 comment: