0

গল্প - পল্লব চট্টোপাধ্যায়

Posted in


গল্প


কাহার গলায় পরাব
পল্লব চট্টোপাধ্যায়


(১)শয়তান দল

আমাদের পাড়ায় একটা ক্লাব করেছিলাম আমরা। আমাদের এক মহাফাজিল বন্ধু কাঞ্চন, ডাক নাম কানু, ছিল বইয়ের পোকা একেবারে। প্রায় একার উদ্যোগে একটা বাংলা বইয়ের লাইব্রেরি বানিয়েছিল নিজের বাড়িতে, অবশ্যই আমাদের আর পাড়ার অনেকের কাছ থেকেই ঝড়তি-পড়তি বই কুড়িয়ে-বাড়িয়ে, নামমাত্র চাঁদায় সেগুলো দিয়ে আসত বাড়ি বাড়ি, কাঁধের ঝোলায় বইপত্র আর একটা বাঁধানো খাতায় বইয়ের লিস্টি নিয়ে। এ ব্যাপারে ওর কোনও ক্ষোভ ছিল না, কারো সাহায্যের প্রত্যাশাও সে করত না। এমনকি চাঁদার টাকার সিংহভাগই যেত বই বাঁধানো, বইয়ের পোকা মারার ওষুধ, কাঠের শেলফ বানানো- এসবে। সেই কানু একদিন বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ পড়ে কী যে হয়ে গেল একটা ক্লাব খোলার কথা বলতে লাগল সমানে। ক্লাবের নাম নাকি হবে ‘সন্তান-দল’! লালন আবার কানুর প্রতি কথায় ফোড়ন মারবেই। বলল, ‘কেন রে, বন্দেমাতরম গেয়ে দেশ উদ্ধার করতে হবে নাকি? তা ইংরেজ তো নেই, মারবি কাকে?’
- ‘দূর শালা, বন্দেমাতরম তো সরকারি সম্পত্তি হয়ে গেছে, ওটা ছোঁবার জো নেই। আমাদের স্লোগান হবে- ‘যৌবন জলতরঙ্গ রোধিবে কে? হরে মুরারে, হরে মুরারে!’
বীরু, আমাদের বিহারী বন্ধু। তাতে কী, দুর্দান্ত বাংলা শিখে গেছে, আবার কানুর মস্ত চামচাও বটে, সংগমের বৈজয়ন্তীমালা স্টাইলে বলে- ‘হোগা, হোগা, জরুর হোগা। এই আমি চাঁদা দিলাম’, বলে আস্ত একটা টাকা ঠং করে রাখল হরিদের বারান্দার রকের উপর। ‘বোলো ভাইসব- শয়তান-দল জিন্দাবাদ।‘
আমরা সবাই হেসে উঠলাম হো হো করে। ‘বলিস কি রে, শয়তান-দল!’

তা বীরুর বাবা বাসের কন্ডাক্টার, ওর হাতে প্রচুর নগদ টাকা-পয়সা বাপের পকেট মেরে পাওয়া। আমাদের কাছে তখন একটাকাই অনেক। তবু চেয়ে-চিন্তে আমরা সবাই একটাকা করে চাঁদা দিয়ে ক্লাব খুলে বসলাম। সামন্তবাবুর মেসবাড়িতে একটা গুদামঘর মতন ছিল, রাজ্যের হাবিজাবি আবর্জনা জমেছিল সেখানে। কাবাড়িখানায় বেচে ভালরকম টাকা আদায় করে দেব এই আশ্বাস দিয়ে রুমটা বাগালাম বটে, তবে অপোগণ্ডটা আবার মাসে দশটাকা ভাড়া চেয়ে বসল। অনেক ভুজুং-ভাজুং দিয়ে ওটা আট টাকায় নামানো গেল। তবে অন্ততঃপক্ষে একটা ক্যারাম আর একটা টেবিল-টেনিস বোর্ড না হলে কি ক্লাব হয়? কিন্তু টাকা আসে কোত্থেকে?
- ‘রমেনদাকে ধরলে হয় না?’ আমি বললাম।
ছোটন, বাপি, তাপস সবাই হেসে উঠল। ‘রমেন ঘোষ? ও ব্যাটা তো প্রথমেই দশরথের বাবার নাম জিজ্ঞেস করবে। পেরে গেলে সতেরোর নামতা। তারপর শেষ পর্যন্ত আট-আনা দেবে। শালা কঞ্জুষ এক নম্বরের, সামন্তর বাপ একেবারে।
- ‘না রে, ওর দাওয়াই আছে আমার কাছে, চলনা গিয়ে দেখি

-‘কি হে, তোমরা আজও এখানে? কাজকর্ম, পড়াশুনা, খেলাধুলা কিছুই করোনা মনে হচ্ছে!’ রমেনদার চিরকালীন ডায়লগ আমাদের দেখে।
- ‘না না দাদা, আমরা পড়াশুনা করি। এই দেখুন না, এই গোবরা এবার পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছে। আমিও হায়ার সেকেণ্ডারি পাশ করেছি’ - আমি জাহির করি।
- ‘হুঁ, তা কি চাই এখন।
- ‘রমেনদা, আমরা একটা ক্লাব করছি, শয়তান, ইয়ে মানে সন্তান-দল। একটা ক্যারাম আর একটা টেবিল-টেনিস বোর্ড কিনতে হবে। কিছু চাঁদা যদি...’
- ‘কই হে, গোবর্ধন, বল দেখি ক্যারম বানান কি ইংরেজিতে?’ 
- ‘এই বলছি। সি-এ-আর-আর-ও-এম।
- ‘দুটো আর লাগবে কেন, একটায় হয়না বুঝি?’
- ‘একটা দিলেও চলে। তবে ক্লাবের বোর্ড যখন, সবাই মিলে খেলবে- একটু শক্ত-পোক্ত হওয়া চাই বৈকি। তাই দু-খানাই দিলাম।
- ‘বা বা বা, কী যুক্তি! ঠিক আছে, তুই বল দেখি বীরু শেরশাহের বাবার নাম কী ছিল?’
- ‘মনশাহ।
- ‘মানে?’
- ‘মানে সোজা। মন-সের-পোয়া-ছটাক। সেরের বাবা মন, আর বেটার নাম পোয়া। আরে ভাইয়াজী, হামলোগ বাসই চালাই না, হামার চাচা চাউল বেচে বাজারে, আউর চিনি ভি। সব তৌল-মোল কা জ্ঞান আছে!
- ‘উফ্‌, জেনারেল নলেজের কী ছিরি সকলের! দিনরাত তো হরিদের রকে বসে আড্ডা দিস। পাড়ার বাইরে পা রেখে দুনিয়াটা দেখেছিস কখনও?’
আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত জ্বলছিল রাগে। তুমি নাহয় ঘোরাঘুরি করে কন্ট্রাক্টারি কর, যুবতী বউটি ঘরে একা থাকে সারাদিন। আমরা পাহারা দিই না? শেষে আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলাম।
- ‘আচ্ছা দাদা, আমরা তো কিছুই জানি না। তা আপনি কি জানেন মুরারীলাল কে?’
- ‘এ আবার কেমন প্রশ্ন? কে মুরারীলাল?’
- ‘ওহী তো বাত হ্যায় দাদা। বীরু মুচকি হাসে, ‘ঘরমে তো থাকুন কভি, তবে তো জানবেন!’
- ‘হ্যাঁ দাদা, আমরা নজর রাখি, তাইতো বউদির কিছু হয়নি এখনও। এবার কানু বুদ্ধি করে মোক্ষম দিয়েছে একটা। রমেনদা কাত!

বলা বাহুল্য, টেবিল-টেনিস না হলেও ক্যারাম-বোর্ড আর একসেট ডাম্ববেল- বারবেল জুটতে দেরী হয়নি আমাদের মহামান্য মুরারীলাল, থুড়ি রমেনদার কৃপায়।
‘বোলো, শয়তান-দল জিন্দাবাদ!’

(২)গুণধর মাহাতো

কালীপুজোর সকালে বাড়ির ছাতে টুনি-বাল্ব আর আকাশ-প্রদীপ লাগাচ্ছি, সন্ধেয় দেওয়ালিতে জ্বলবে, এমন সময় শয়তান-দলের আবির্ভাব। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে, লালন বলে, গুণাদের বাড়ি যেতে হবে।
দেখ দেখি কাণ্ড! ছোট ভাই-বোনগুলো আশা করে বসে আছে এবার অনেক উঁচুতে লম্বা বাঁশের মাথায় রঙিন সেলোফেন কাগজের বাক্স বানিয়েছি, তাতে ইলেক্ট্রিক বাল্ব জ্বলবে। এখন সে কাজে বিরতি ঠুকে চল কে কোথায় গুণা আছে তার বাড়ি। ‘গুণাটা কে, আর হঠাৎ তার বাড়িই বা যাব কেন?’ আমি শুধোই।
- ‘আরে গুণা, মানে গুণধর মাহাতো, মনে নেই আমাদের সঙ্গে স্কুলে পড়ত।‘ ছোটন মনে করাল।
- ‘মনে পড়েছে, জেলগোড়ার পেট্রোল পাম্পটা ওদের, তাই না? তা ও ত ম্যাট্রিকের পর আর পড়াশুনা করলই না, এখন আছে কোথায়?’
- ‘বাবার বিজনেস দেখে। মানে, টাকা ওড়ায় আর কি!’
- ‘তো আমরা কি ওদের বাড়িতে ডাকাতি করতে যাব নাকি?’ আমি চিন্তিত হয়ে বললাম।
তাপস, কানু, বীরু সবাই হাসতে লাগল আমার কথা শুনে। ‘দাঁড়া, তোদের জন্যে চা আনি,’ আমি বললাম, ‘তারপর সব কথা শুনব।‘

ক্লাবটাকে ঠিকভাবে তৈরি করতে একটা মাঠ দরকার, সেটা নাহয় হয়ে যাবে। সরকার বেশ কিছু ধানজমি অধিগ্রহণ করে রেখেছিল কারখানার বিস্তারের জন্যে, সে যে আর হবে না তা বোঝাই যাচ্ছে, আর হলে তখন দেখা যাবে। তার কিছুটা ঘষা-মাজা করে ফুটবল ক্রিকেটের উপযুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। তবে দরকার ক্রিকেটের সরঞ্জাম, ভলিবল নেট আর কোর্ট, লাইব্রেরিটাকে বড় করে তৈরি করা, আর...আর যদি নাটকের ক্লাব করা যায়। স্বপ্ন অনেক, কিন্তু রেস্ত কই। তাই তাপস, বীরু আর বাপি চার্চের হলভাড়া নিয়ে খোঁজ করতে গেছিল, যদি চ্যারটি শো করে দু-একটা বাংলা সিনেমা আনা যায়। তবে অ্যাডভান্স ডিপোজিট লাগবে। সে পয়সা কে দেবে? রমেনদাকে আর চাপ দেওয়া যাবে না।

গতকাল হঠাৎ করেই ওদের দেখা গুণধরের সঙ্গে। সব শুনে আজকে ও আমাদেরকে দেওয়ালির মিষ্টি খেতে ডেকেছে। আজ খেয়ে-দেয়ে আধঘণ্টা বিশ্রাম নিয়েই আমাদের বেরোতে হবে। পাথরডি বলে একটা টাউনশিপ আছে আমাদের পাড়া থেকে ছ-সাত কিলোমিটার দূরে, সেখানেই থাকে ওরা- সাইকেলে গেলে বড়জোর আধঘণ্টা।

উঃ, বাড়ি বানিয়েছে বটে পাথরডির মাহাতোরা। যেন রাজপ্রাসাদ, তবে তেমন ছিরি-ছাঁদ নেই, শুধু খরচ করা হয়েছে অঢেল। আমাদের খাতিরে প্রথমেই বাদামের শরবত, তারপর একথালা কালচে রঙের পেড়া এল। ‘এগুলো এরকম রঙ কেন রে গুণা, খেতেও কিরকম অদ্ভুত যেন’, আমি বললাম।
- ‘আরে খেয়ে ফেল দোস্ত, এ একেবারে আসলি মাল, বাড়িতে তৈরি। গুণার সাফাই। অগত্যা অনিচ্ছাসত্বেও বেশ কয়েকটা পেড়া খেয়ে ফেললাম সকলে। তাতে কাজ হলো। একশো টাকা হলের ডিপোজিট গুণা দিয়ে দেবে ঠিক হয়ে গেল। পরে টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে সেটা শোধ করে দিলেই হবে।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাড়ি ফিরে এলাম। এসেই দেখি বাবা আমাদের চার ভাইবোনদের নিয়ে তৈরি হয়ে বসে আছেন বাইরের বারান্দায়। আমাকে দেখেই হৈ হৈ করে উঠলেন- ‘এই যে, তোর জন্যেই বসে আছি। এই সবকটাকে নিয়ে কয়েকটা কালীঠাকুর দেখিয়ে এনে বাজি পোড়ানোর আগেই ঘরে ফিরে আসতে হবে- এ কি আমার একার কাজ! চা টা খেয়ে নে, বেলা থাকতে থাকতে বেরিয়ে পড়া যাক। চাণক্য বলেছেন- ‘প্রাপ্তে তু ষোড়শবর্ষে পুত্র মিত্রবদাচরেৎ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাবার সঙ্গে বন্ধুত্ব না বাড়িয়ে একটা ঘুম দিতে পারলেই ভাল হতো। যেই না ভাবা অমনি খুব হাসি পেয়ে গেল। ‘চল রে সবাই, বেড়িয়ে ঠাকুর দেখে আসি’, আমি হাসতে হাসতেই ভাইবোনদেরকে বললাম। তারা কেমন যেন অবাক হয়ে দেখতে লাগল আমাকে। 

এর পর শুরু হলো আসল খেলা। আমি বাঁ-পা টা বাড়াতেই যেন মনে হলো বাড়ানো পায়ের নীচে মাটি নেই, আছে গভীর খাদ। তারপর সাহস করে পা রাখতেই দেখি, না মাটিই তো আছে! আবার ডান পা বাড়ানোমাত্র একই অভিজ্ঞতা। বেশ খানিকক্ষণ সন্তর্পণে অনেকক্ষণ ধরে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে চলার পর মনে ভরসা এল যে না, সব ঠিকঠাকই আছে। এদিকে আমি সঙ্গে এসেও সবার চেয়ে পিছিয়ে পড়েছি, বাবা আর ভাই-বোনেরা সবাই একটু এগিয়ে দাঁড়িয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তারপর যে কিভাবে একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম, সে এক অন্য কাহিনী।
যাক্‌, এর ফলে জীবনে একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করলাম- আসল জিনিষ মানেই নিরাপদ জিনিস নয়। খুব সরলমনে গুণধর আমাদিগকে আসল ভাঙের মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছিল। শিক্ষালাভ করলাম যে সরলতা মানেই শ্রেষ্ঠ জিনিষ নয়, রাজা, বাঁদর আর মাছির গল্পটা মনে করে শিউরে উঠলাম মনে মনে। 


(৩) আসলি মাল

গুণধরের কৃপায় আর বন্ধুবর্গের উদ্যমে চার্চ হল নয়, স্থানীয় সিনেমা হল ভাড়া নিয়েই ১৬র জায়গায় ৩৫ মিলিমিটারের রোলের দুটো বাংলা সিনেমা দেখানো হল। তখন আমাদের বিহারের ঐ শহরে বাংলা নাটক-থিয়েটার রমরমিয়ে চললেও, সিনেমা আসত মাসে হয়ত একটা, তাও আবার চারটে মোটে শো। অথচ শহরে প্রায় ১০০০০ বাঙালি, এছাড়াও ছিল আশেপাশের বঙ্গভাষী-বহুল গ্রামগুলো। তাই আমাদের বেশ কিছুটা লাভ হলো। সেই টাকায় বেশ চমৎকার গড়ে উঠল আমাদের সন্তান-দল, যদিও তার পরিচিতিটা হলো শয়তানের দল হিসেবেই।
এই ঘটনার পরে গুণধরের খাতির আমাদের বন্ধুমহলে খুব বেড়ে গেল। পাড়ার দাদা-দিদিদের বিয়ে আর অন্য অনুষ্ঠানগুলোতে ওর নেমন্তন্ন পাওয়া প্রায় নিয়মিত হয়ে গেল। এছাড়া ওর বোকা-বোকা কথাবার্তা, সরলমনে আমাদের গুল-গল্প নির্বিচারে বিশ্বাস করার প্রবণতা আর কথায়-কথায় চা-সিঙ্গাড়া-সিগারেট খাওয়ানোর দিলদারিতে গুণা এলেই আমাদের দলের মধ্যে একটা উৎসবের মেজাজ এসে যেত। আমার কাছে তো এটুকুই মনে হতো বেশ। অন্ততঃ রমেনদা বা সামন্তবাবুকে তোয়াজ করতে হত না আর। তবে বন্ধুদের মধ্যে একটা দল গড়ে উঠল যারা ওকে বোকা বানিয়ে মজা পেত, প্রয়োজনে কিছু মালকড়ি আদায় করতেও ছাড়ত না। 

আগে হরির বাবা-মা চাষের সময়টাতে, মানে ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটাই-ছাঁটাই-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় গ্রামেই কাটাতেন বলে ওদের বাইরের বারান্দাটাই আমাদের আড্ডাস্থল ছিল একরকম, এখন একটা নিজের জায়গা হওয়াতে সেটা তো বন্ধ হলই, লাইব্রেরিও উঠে এল ক্লাবে, সন্ধের পর ঘণ্টা-দুই মেম্বাররা বই দেওয়া-নেওয়া করতে পারত, কানুর বাড়ি-বাড়ি ঘোরার পরিশ্রমটা কমে গেল। ইতিমধ্যে কানুর দিদির বিয়েতে গুণধরকে নেমন্তন্ন করায় পুরো অনুষ্ঠানটা জমে গেছিল। ব্যাটা আশিটা রসগোল্লা খেয়ে দেখিয়ে দিল যে সুকুমারের ষষ্ঠিলোচন হয়ত কাল্পনিক চরিত্র নয়। ভাগ্যিস তার আগে বরযাত্রীদের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তার পরে বাসরে বসে ঠেঠ মানভূমের ভাষায় ঝুমুর গেয়েও মাতিয়ে দিয়েছিল। তার বছরখানেকের মধ্যে তাপসের দাদার বউভাতেও যথারীতি ওকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছিল যেন তাপস-লালন আর বাপির মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি নিয়ে। সন্ধের পর গুণা এল ওর মোটর বাইকটা নিয়ে, চাসনালা থেকে যোগেশ-ভাইকেও দেখি আসার সময় তুলে নিয়েছে ওর বাসা থেকে। যোগেশ আমাদের থেকে কিছুটা বড় হলেও বন্ধু, বি-এস-সি পাশ করে চাকরিতে না গিয়ে কয়লাখনিগুলোয় ছোটখাটো কন্ট্রাক্টের কাজ শুরু করেছে। ডাকাবুকো অকুতোভয় মানুষ, কিন্তু আমাদিগকে খুবই ভালবাসত। গুণা আসামাত্র দেখি লালন-বাপি খুব খাতির করে বাদামের শরবত নিয়ে আসছে। লালনের বোন লিপি আর পাড়ার আর একটি মেয়ে গ্লাসের পর গ্লাস নিয়ে আসছে আর ওকে খাইয়ে যাচ্ছে। তারপর মিষ্টি খাওয়াও চলল যথারীতি।

এর পরে শুরু হলো আসল খেলা। ‘বাসর কোথায়, বাসর?’ চেঁচামেচি জুড়ে দিল গুণা। যত বোঝাই বউভাতে বাসর হয় না, কে শোনে। শেষে দেখে একটা হলঘর আলো করে বসে আছে নতুন বৌদি, পাশে দাঁড়িয়ে তাপসের দাদা পরশ। গুণা তাই দেখে ছুটে গিয়ে পরশদার পা জড়িয়ে ধরে গান শুরু করে দিয়েছে- ‘দাদা, পায়ে পড়িরে, মেলা থেকে বউ এনে দে!’ তাপস আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে মৃদুস্বরে বলল, ‘শুরু হয়ে গেছে। শুধু ভাঙ নয়, একটা তামার পয়সাও ঘষে দিয়েছিলাম শরবতে, এখন আসলি মাল কাকে বলে দ্যাখ!’ 

একেই বলে বোধহয় গুরুমারা বিদ্যে। ভাগ্যিস যোগেশভাই ছিল সঙ্গে, বাইক চালিয়ে নিয়ে গেল সঙ্গে করে। গুণা চালালে নির্ঘাৎ একটা দুর্ঘটনা ঘটত। 

না, গুণা সে যাত্রা বেঁচে গেল তবে ওর ‘আসলি মাল’ খাওয়া আর খাওয়ানোর স্বভাবটা মনে হয় চিরদিনের জন্যে বিদায় নিল। অবশ্য আমাদের পাড়ায়, আমাদের আড্ডায় আসা-যাওয়া ওর বন্ধ হয়নি। বাপির বোধহয় একটা অপরাধবোধ ছিল মনে মনে কাণ্ডটার জন্যে, তাই ওর খুড়তুতো বোনের বিয়েতে গুণাকে খুব আন্তরিকভাবে অনুরোধ করল বাঁকুড়া যাবার জন্যে। আমাকেও বলেছিল, পরীক্ষা থাকায় যেতে পারিনি। তবে সেখানে কি হয়েছিল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ শুনেছি বন্ধুদের মুখে।


(৪) রীনা বনাম নারী

নেশার ঝোঁকে ‘মেলা থেকে বউ এনে দে’ বললেও গুণা যে সত্যিই বিয়ের জন্যে উতলা হয়ে উঠেছিল তা বুঝতে আমাদের খুব একটা দেরি হয়নি। ফলে ওকে নিয়ে হাসি-মস্করা বেড়েই চলেছিল দিন দিন আর এসব শুনে গুণধরকে কোনদিন আপত্তি প্রকাশ করতে দেখিনি, বরং ও এই ঠাট্টা-ইয়ার্কিগুলোকে উপভোগই করত। বাঁকুড়ায় বিয়েবাড়ি গিয়ে শাড়ি-গয়না-প্রসাধনে সুসজ্জিতা এতগুলো বঙ্গললনাকে দেখে ওর তো মাথা ঘুরে গেছে। বেচারা জীবনে পয়সা দেখেছে প্রচুর, কিন্তু শহুরে আভিজাত্যের তেমন অভিজ্ঞতা ছিলনা ওর, যদিও বাঁকুড়াকে খুব একটা আধুনিক সহর বলা চলে না। কনের কলেজ-বান্ধবীদের মধ্যে ইতিমধ্যে একটিকে মনে ধরেছে তার। মেয়েরা কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছিল। এতগুলি সুন্দরী একযোগে হাসলে হাইলণ্ডের পল্টন ঠকে (কথাটা কিন্তু আমার নয়, বঙ্কিমের দাদা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘পালামৌ’ বইতে লিখেছিলেন), ইনকে আগে তু ক্যা চীজ হ্যায় রে গুণা মাহাতো! তিনি যথারীতি ঘায়েল হয়ে তখন বাপিকে ধরলেন- ‘হ্যাঁরে, মেয়েগুলা কি আমাকে দেখে হাসছিল?’ চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। বাপি দেখল এই সুযোগ, ওর মাথায় তখন শয়তান আবার জেগে উঠেছে। বলল, ‘সবাই নয়, তবে ফর্সামতন মেয়েটা, ওই যার একটু গজদন্ত আছে, আমাকে শুধোচ্ছিল, ‘বাপিদা, তোমার সঙ্গে ওই হ্যাণ্ডসাম ছেলেটি কে?’ আমি বলি কি, তুই একটা ভাল দেখে ঝুমুর ধর তো বাসরে, সবাই দেখুক যে হ্যন্ডসাম ছেলেটার আরো অনেক গুণ আছে।
ব্যস, গুণাকে আর পায় কে? চান্স পেতেই তার গান শুরু হয়ে গেল-
মুখেতে পাওডর ধনির চলে হিলে-ডুলে, এহো চলে হিলে-ডুলে,
অ মরি কি সুন্দরী মাথা বাঁধা চুলে'
আমার মন গেল ভুলে।
মানভূম রাঢ় অঞ্চলের বিচিত্র উচ্চারণে এই গান শুনে মেয়েদের কি হাসি! এ ওর গায়ে ঢলে পড়তে লাগল। গুণার জীবন যেন সার্থক হলো।

কিছুক্ষণ পরে কথা হচ্ছে বাপি আর তাপসের সঙ্গে। 
- হ্যাঁরে বাপি, মেয়্যাটার সাথে আলাপ করাবি নাই?
- করাতাম, কিন্তু ওর দেরি হচ্ছিল বলে বাড়ি চলে গেল যে। আসলে ভদ্রঘরের মেয়ে কিনা, বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে দেয় না। তবে যাবার আগে তোর নাম ঠিকানা নিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে। 
- নাম কি বটে উয়ার?
- রীনা- এবার তাপসের মুখ থেকে শব্দটা বেরিয়ে এল। বাপি অবাক হয়ে ওর দিকে চাইতেই তাপস একটা ইশারা করল, যেন থাক না, কি হবে আসল নামটা জানিয়ে। 
- হ্যাঁরে, আমাকে চিঠি দিবেক তো?
- আরে দেবে, দেবে। আগুন তো ওদিকেও বরাবর লেগেছে মেরে ইয়ার!

এর দিন পনের পরে গুণা সত্যিই পেল একটা চিঠি। মেয়েলি হাতের লেখায় বয়ানটা মোটামুটি এরকম-
ডিয়ার,
সেদিন বিয়েবাড়িতে এতগুলো মানুষের মধ্যে চোখে পড়ার মতো লোক একজনই ছিল। আমার মন্দ ভাগ্য, আমি শুধুই দেখেছি, আলাপ করার সাহস বা সময় পাইনি। অনেক গুণ ধর তুমি, তাই তো এরকম নাম। তা বলে বাপিদার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে এসো না যেন। আমার বাবা খুব কড়া মানুষ, জানতে পারলে কী যে হবে!
৭ই পৌষ বাড়ির সকলের সঙ্গে আসছি শান্তিনিকেতন, তুমি এলে দেখা হবে। 
ইতি তোমার নারী।

চিঠিটা গুণধর একবার পড়ল, দুবার পড়ল, পাঁচবার পড়ার পর ওর বিশ্বাস হল যে সত্যি সত্যিই এরকম একটা চিঠি সে হাতে পেয়েছে। তারপর সেই বিকেলেই সে ছুটে এল বাপিদের বাসায়, বাপিকে খুলে দেখাল সেই বিখ্যাত প্রেমপত্র।
বাপি তো খুব খানিকক্ষণ অবাক হবার ভান করল। গুণার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা দেখার পুরো প্ল্যানটা ওরই। লালন আর তাপসের সঙ্গে যুক্তি করে চিঠিটা যে লালনের বোন লিপিকে দিয়ে লেখানো হয়েছে, বেচারা গুণধরের সাধ্য কি তা ধরে? ও শুধু গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়ল আর বলল, ‘হুঁ, মেয়েটা সত্যিই মজেছে। তা যাবি নাকি শান্তিনিকেতন?’
- ‘যাব নাই মানে? ইটো আমার কাছে জীবন-মরণ সমিস্যা বটে, যেতে তো হবেকেই।
- ‘তাহলে চলে যা। অণ্ডাল কিম্বা দুর্গাপুরে নেমে বোলপুরের বাস পেয়ে যাবি। ঘুরে আয় তবে, বেস্ট অফ লাক!’
- ‘তার মানে? আমি একা যাব নাকি? তোরাও চ’, আমি কী চিনি শান্তিনিকেতনের!’
বাপি তো তাই চায়। কিন্তু ও চাইছিল গুণা নিজের মুখে প্রস্তাবটা দিক আর তাতে সে এখন একশ’ভাগ সফল। তবু মুখে বলল, ‘তুই আমাকে খুব ফাঁসালি দেখছি। নতুন ব্যবসা শুরু করতে চলেছি, এত কাজ! তবে তাপস আর লালন গেলে আমি যেতে রাজী আছি।
- ‘তা চ কেনে, সবাই মিলেই যাই। লালনকে বলে দেখি, কী বলিস?’
- ‘লালন আর কানু ক্লাবে আছে এখন। তুই এগো, আমি তাপসকে নিয়ে আসছি।
গুণা খুশিমনে এগোতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। ‘আচ্ছা, উয়ার নাম তো রীনা, নামটো অমন লিখেছে ক্যানে বল ত?’
- ‘তা আমি কী জানি? মনে হয় ধরা পড়ে যাবার ভয়ে নামটা উলটে নারী লিখেছে।‘ 
কথাটা মনে ধরল গুণার। খুব গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ল ও। না, মেয়েটা শুধু রূপসী নয়, বুদ্ধিও আছে ঘটে! ও মনে মনে একটা হিসেব কষে নিল চারজনের শান্তিনিকেতন যাওয়া আসা, থাকা-খাওয়া-বেড়ানো সব মিলিয়ে খরচের এস্টিমেটটা, বাবার থেকে বেশ খানিকটা ক্যাশ ঝাড়তে হবে। 
গুণা এগিয়ে যেতেই আনন্দে একপাক নেচে নিল বাপি। তারপর ছুটল তাপসকে ডাকতে।

তাপস যেতে পারল না। আর বোলপুরে লালনের মামাবাড়ি, অতএব থাকার জন্যে হোটেল নিতে হবে না। খাবার খরচাও অনেকটা বেঁচে গেল। দুদিন পৌষমেলা খুব ঘোরা হ’ল, কিন্তু ‘তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’। আর দেখা হবে কোত্থেকে? বেচারা রীনা (আসল নামটা যে কী ছিল, তাও তো জানিনা) তো বিন্দুবিসর্গও জানেনা এসবের। দু দিন পরে লালন কোথা থেকে খবর পেল যে ওরা তারাপীঠ চলে গেছে সবাই মিলে, সেখান থেকেই বাঁকুড়া ফিরবে। 
- ‘চল রে গুণা, তাহলে ফেরা যাক, বাপি বলে।
- ‘ফিরব মানে? তারাপীঠ কত দূর বটে?’

অগত্যা বাধ্য হয়েই একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে তারাপীঠ ঘুরে আসা হল। ফল যে কিছুই হলো না তা বলাই বাহুল্য, গুণা শুধু মন্দিরে পুজো দিয়ে তারামায়ের আশীর্বাদ চেয়ে নিল ভাল করে; পরদিন বর্ধমান হয়ে ওরা ফিরে চলে এল ধানবাদ। 


(৫) কোথায় পাব তারে

এই ঘটনার পর প্রায় মাসখানেক কেটে গেছে। গুণধর আর কোন চিঠিপত্র না পেয়ে অধৈর্য হয়ে উঠেছে। শেষে একদিন থাকতে না পেরে সোজা এসে হাজির বাপির কাছে। 
- ‘ওরে বাপি, কিছু একটা কর মাইরি। রেতে ঘুম হছ্যে না।
- ‘ডাক্তার দেখিয়েছিস?’
- ‘গুলি মার ডাক্তারকে। হ্যাঁরে, রীনা চিঠি দেয় না ক্যানে?
- ‘দেবে দেবে। ওদের বি-এর টেস্ট পরীক্ষা চলছে যে! এই তো আর এক সপ্তাহ।

সত্যিই দিন দশেকের মধ্যে এসে গেল আর একখানি চিঠি। বয়ান একই রকম, ‘প্রিয় গু-নধর, বাড়িতে দেখা করা সম্ভব নয়, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে দীঘা যাচ্ছি দু’দিনের ট্রিপে, ১২ই ফেব্রুয়ারি। নিশ্চয়ই দেখা কোরো। তবে কলেজের একজন প্রফেসার থাকছেন সাথে, তাই একটু কায়দা করে। আর হ্যাঁ, কোন হোটেলে উঠছি এখনও জানিনা, তাই বীচের ধারে-কাছের হোটেলগুলোতে একটু খোঁজ নিয়ে নিও। আর বাপিদাকে এনো না প্লীজ, বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেলেই বিপদ। অনেক ভালবাসা। ইতি তোমার নারী। 
চিঠিটা দেখেই তো বাপি খাপ্পা! বাপিদাকে এনো না- মহা বিচ্ছু হয়েছে ত লিপিটা। কথাটা প্রায় ঠোঁটের গোড়ায় এসেই পড়েছিল, কোনওমতে সামলে নিল। আবার 'গু-নধর', হাসিও পেল, ব্যাটা গুণা প্রেমের ঘোরে নিশ্চয় খেয়াল করে নি। মুখে অবশ্য বলল, ‘যাক, ভালই হল। আমার কি আর সবসময় সবজায়গায় ছোটা সম্ভব? প্রেম করবে গুণা মাহাতো, আর ছুটে মরবে বাপি শর্মা! তুই তাহলে কানু বা তাপসকে নিয়ে চলে যা, যদিও ওরা দীঘা জিনিসটা খায় না মাথায় দেয় তা-ই জানেনা। লিপির উপর রাগে লালনকে বাদ দিয়েই ফেলল বাপি।
- ‘রাগ করিসনা, দোস্ত। তুই না গেলে আমিও যাব নাই। থাক বরং, বাপের দেখা কন্যেকেই বিহা করব নাহয়।
বাপি দেখল মামলা গড়বড়। বলল, ‘আরে না না। আমি না গেলে যাওয়া আসা, বাস-ট্রেনের ঝক্কি, হোটেল খোঁজা এসব কে করবে? তোর চিন্তা নেই, রীনার ধারে-কাছে চৌহদ্দির মধ্যে আমি যাব না। 
লালনদের খুঁজতে ক্লাবে এলো ওরা দুজন। রীনার অনারে চা-সিঙ্গাড়া খাওয়াল গুণা। না, লালন লিপির পাত্র খুঁজতে আসানসোল-দুর্গাপুর-রানীগঞ্জ ছুটে বেড়াচ্ছে, ওর সময় নেই এখন। ঠিক হলো তাপস আর বাপি দীঘা যাবে গুণাকে নিয়ে।

গুণা ক্লাব থেকে উঠে মোটর-বাইকে স্টার্ট দিল। আমি ধরলাম গিয়ে- ‘একটু কলেজের মোড়ে ছেড়ে দিবি?’ উঠে বসলাম ওর বাইকে। সবাই মিলে একটা সাদাসিধে ছেলেকে ঠকাচ্ছে, ঘাড় ভাঙছে, ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই কলেজের মুখে নেমে ওকে দু-মিনিট দাঁড় করিয়ে একটু বোঝাবার চেষ্টা করলাম- ‘অ্যাই ব্যাটা, জানিস, তোকে টুপি পরানো হচ্ছে? রীনা বলে কেউ নেই।’
- ‘হঁ, বললেই হল! আমি নিজের চোখে দেখেছি, সব মিথ্যা? আর চিঠিগুলা?’
- ‘ওগুলো অন্য কারো লেখা।
- ‘জানি গুরু, তুমার জলন হচ্ছে। চিন্তা করিস না, পরের বছরকে ইঞ্জিনীয়ার হঞে যাবি, তখন তরও জুটবেক।

নাঃ, এ ব্যাটার দেখছি মাথার চর্বি-ঘিলু সব মিলেমিশে ঘেঁটে ‘ঘ’ হয়ে গেছে। ক্লাস ছিল, আমি আর কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়লাম।


দীঘাতে নাকি অনেক কেলো হয়েছিল শুনলাম। একটা দিন তো লেগে গেল রীনাকে খুঁজতে। তারপর সকাল থেকে তিনজনে মিলে চন্দনেশ্বর থেকে শঙ্করপুর তন্নতন্ন করে খুঁজল। বাপি তো মন্দারমণি যেতে চাইছিল, তখনও সেদিকটা তেমন ডেভেলাপ হয়নি, কিন্তু তাপস সাহস পেল না। তারপর বিকেলে একহাঁড়ি গেঁজানো তালের রস খেয়ে পাক্কা ‘তালিবান’ হয়ে ওরা যখন বীচের দিকে এল, গুণার তখন টলায়মান অবস্থা। হঠাৎ ‘ঐ তো- বলেই দৌড় দিয়েছে। ‘আরে কি হল, গুণা, আরে কোথায় চললি’...বলতে বলতেই জলের ধারে একা বসে থাকা একটি মেয়ের হাত ধরে টেনে তুলেছে গুণধর। নিয়ে কেউ কিছু বোঝার আগেই শুরু করে দিয়েছে লোকগীতির সুরে গাইতে-
“চলো রীনা-
ক্যাশুরিনার ছায়া গায়ে মেখে,
এঁকে বেঁকে-
লাল কাঁকড়ের পথ ধরে
একটু একটু করে,
এগিয়ে যাই- চল ক্যানে?......... গদাম!!!”
না, শেষ শব্দটা গুণার নয়, পেছন থেকে মেয়েটার স্বামীর মারা ঘুঁসির আওয়াজ। 

তারপর কিভাবে সেই ভদ্রলোকের কবলমুক্ত করে তাঁর কাছে ক্ষমা-টমা চেয়ে তিনজনে ফিরে এল সে আরেক গল্প। 


(৬) ট্রাজেডি না কমেডি


ফিরে আসার পর ভেবেছিলাম গুণার হয়ত মোহভঙ্গ হবে, ওর বাবা এক স্বজাতের মানে কুর্মিঘরের একটি নবম শ্রেণীর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করছিলেন, হয়ত সুড়সুড় করে সেই পথই ধরবে, কিন্তু বিধাতাপুরুষের মনে বোধকরি অন্য কিছু ইচ্ছে ছিল। ও সেদিন ক্লাবে এসে আর কাউকে না পেয়ে কানুর সঙ্গেই গল্প জুড়ে দিয়েছে। কানু ছেলেটার স্কুল-কলেজের পড়াশুনা যেমনই হোক, ও ছিল বইয়ের পোকা, বই পড়তে আর পড়াতে- দুটোই ভয়ানক-রকম ভালবাসত। ও তখন বসে বসে শেক্সপীয়ারের ‘ওথেলো’র বাংলা অনুবাদ পড়ছিল। গুণার কাছে ওথেলো পড়া আর থেলো হুঁকো টানার মধ্যে কোনও তফাৎ ছিল না। তবু ও খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল- ‘কানু, কি পড়ছিস বস?’
- ‘শেক্সপীয়ারের ট্রাজেডি আর কমেডি।
- ‘সেগুলা আবার কী? গিরিডি আর কুমারডি?’
- ‘নারে বোকা। শেক্সপীয়ারের ট্রাজেডি।
- ‘ও তাই বল। কার লেখা রে?’
এবার হতাশ হয়ে মাথা নাড়ল কানু। ‘শেক্সপীয়ার। উইলিয়াম শেক্সপীয়ার। ইংরেজ কবি আর নাট্যকার।
- ‘আর কুমারডি ট?’
- ‘কুমারডি নয়, কমেডি। তুই পড়বি?’
- ‘উয়াতে কি রীনার কথা লিখা আছে?’
- ‘পড়েই দেখ না। এটা পড়, এটা বাংলাতে আছে, পরশু ফেরত দিস।‘ ‘মিডসামার নাইট্‌স্‌ ড্রীমের’ উৎপল দত্তের করা ভাবানুবাদ ‘চৈতালি রাতের স্বপ্ন’ বইটা গুণার হাতে দিল কানু।

বইটা ঠিক এক সপ্তাহ পরে পড়ে ফেরৎ দিল গুণা। আর কাণ্ড দেখ, সেবার রবীন্দ্র ভবনে শহরের একটু বড় ছেলেমেয়েরা মিলে রবি ঠাকুরের ‘মায়ার খেলা’ গীতি-নাট্য স্টেজ করল। স্থানীয় স্কুলের হেডমিস্ট্রেস শ্রীমতী রমা বর্মন এসব অনুষ্ঠান করানোতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত, নাটকটা ভালই জমেছিল। আমরা রাত এগারোটায় দলবেঁধে হেঁটে ফিরছি ক্লাবে, সেখানে রাখা আছে গুণার মোটরবাইক। চলতে চলতে গুণা কি ভেবে হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠল-
‘উয়ারা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না।
শুধু সুখ চল্যে যায়...। বলতে বলতে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। না, আমরা বা গুণা বিন্দুমাত্র নেশা করিনি কেউ সেদিন। 


(৭) কলকাতা

মাসে-দু’মাসে রীনার চিঠি আসা আর গুণাকে এখানে সেখানে ডেকে পাঠানো যেন একটা বরাবরের ঘটনা হয়ে দাঁড়াল। বলা বাহুল্য, সেখানে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যেত না। বাপির নতুন ইলেকট্রিক গুড্‌সের ব্যবসা, কেনাকাটার জন্যে কলকাতা যেতে হবে। অগত্যা চিঠি চলে এল নারী অর্থাৎ রীনার কাছ থেকে গুণার কাছে। গুণা, বাপি আর এবার কানুও গেল সঙ্গে। কানুর বেশ কিছু বই কেনার ছিল কলেজ স্ট্রীটের বইবাজার থেকে। ও অবশ্য নিজের প্রয়োজনটা গুণাকে জানিয়ে দিয়েছিল আর এই সামান্য অতিরিক্ত খরচ তার কাছে তেমন কিছু নয় বলে ও কিছুই মনে করেনি। 
শেয়ালদা স্টেশনে একটা দালাল ওদেরকে কার্ড ধরিয়ে ঠিকানা বাতলে দিল মির্জাপুর স্ট্রীট আর আমহার্স্ট স্ট্রীটের জংশনে একটা ছোট হোটেলের। হাঁটা রাস্তায় নাকি। কিন্তু দালাল যে রাস্তাগুলোর নাম বলল দেখা গেল সেই নামে কোন রাস্তাই নেই ধারে-কাছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল যে রাস্তাগুলোর নাম নাকি আসলে সূর্য সেন স্ট্রীট আর রাজা রামমোহন রায় রোড। রবি ঠাকুর স্বপ্নে যে হ্যারিসন রোডকে চলতে দেখেছিলেন, কানু দেখল চলতে চলতে একসময় তার নাম বদলে গেছে, হয়ে গেছে মহাত্মা গান্ধী রোড। বড় শহরের বড় বড় কারবার, কি আর করা যায়!

কলকাতায় এসে বাপি গুণাকে একখানা শ্যামবাজারের ঠিকানা ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়ল এজরা স্ট্রীটের পাইকারি বাজারে। গুণা বেচারা শ্যামবাজারের কী জানে, ও কানুর সঙ্গে চলে এল কলেজ স্ট্রীট বই বাজারে। কানু বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, আনন্দ, দে’জএর দোকানে বইয়ের অর্ডার দিতে লাগল আর সেই ফাঁকে গুণধর কিনে ফেলল ‘১০১টি বিখ্যাত প্রেমপত্র’ নামে একটা অদ্ভুতধরণের বই। কানু একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল- ‘কি রে, এ বইটা কী করবি? তোর চিঠিপত্র তো একতরফা!’ উত্তরে গুণা শুধু একটু লাজুক হাসি হাসল। আরও অবাক হয়ে কানু লক্ষ্য করল যে গুণা আর একবারও রীণার কথা বলছে না, শ্যামবাজার যাবার প্রসঙ্গও তুলছে না। সন্ধের সময় হোটেলে ফিরে বাপি যখন শুধোল শ্যামবাজার গিয়েছিল কিনা, শুধু একবার বলল- ‘যেঞে কী হবেক, রীণা তো নাই উখানে। ইবার আমি উয়ার ঘরকেই যাব!’
প্রমাদ গণল বাপি, এইরে, সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যায় বুঝি! তবু মুখে বলল, ‘তা ভালই বলেছিস। এবার তাহলে একটা ভোজ পাওয়া যাবেই, কী বল? কিন্তু তোর বাবা কি সব মেনে নেবেন?’
- ‘ইঃ, লিবেক নাই ক্যানে? বি-এ পাস মেয়্যা ভাবতে পেরেছে কখনো আমাদের ঘরে আসবেক!’
- ‘তা নয়, পণ তো পাবেন না?’
- ‘এঃ, বড় যে তোয়াক্কা করি! বাপের টাকাই খায় কে, তার আবার পণ!’ 
- ‘তাহলে চল কাল ঘর ফিরি।
- ‘দাঁড়া দোস্ত, কাল কলকাতার সিনেমা আর থিয়েটার দেখেই ফিরব, তোদের যদি দেরি না হয়।

পরদিন ওরা থেকে গেল। রূপবানীতে বাংলা সিনেমা আর রঙমহলে নাটক দেখে তিনজনেই খুশী। পরদিন যখন ফিরল, রীণার কথা কারো যেন মনেই নেই। শুধু গুণধরকে একটু বেশীমাত্রায়ই চিন্তিত মনে হলো, যদিও ও এতদিনে হয়ত বুঝেই গেছে কি করুণ ভাগ্যের পরিহাস চলছে ওর সঙ্গে। 

বাড়ি ফেরার পর সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এখন আর গুণা চিঠিপত্র পায় না আর এ নিয়ে তার কোনও অভিযোগ-অনুযোগ বা হা-হুতাশ আছে বলেও মনে হয় না। আমার ফাইনাল ইয়ারের পড়া চলছে, খুব ব্যস্ত, কানুর বাবা উড়িষ্যায় বদলি হয়েছেন, সেখানে নতুন কারখানা বসবে। ওরা দুই-ভাই মিলে নতুন মুদীর দোকান খুলতে চায় নতুন কলোনীতে, বাপির ইলেকট্রিক গুডসের দোকান মোটামুটি চালু হয়ে গেছে, বীরু টিস্কো মাঠে এক ওভারে চারটে ছক্কা মেরে জেলা ক্রিকেটে চান্স পেয়ে গেছে, এমনকি মুরারীলালও শয়তান-দলের তাড়া খেয়ে রমেন ঘোষের বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে, খুশী হয়ে রমেনদা এবার আমাদের সরস্বতী পূজায় পঞ্চাশ টাকা চাঁদা দিয়ে ফেলেছে- সরস্বতী বানান কাউকে একবারও জিজ্ঞেস না করে!

শুধু লালনের বোন লিপির এখনও বিয়ে ঠিক হয়নি, ওর মতো বুদ্ধিমতী মেয়েকে কেন যে কারও পছন্দ হচ্ছে না তা কেউ বুঝতে পারছে না।


(৯) উপসংহার

হঠাৎ খুব দ্রুত ঘটনাগুলো ঘটতে শুরু করল যেন কেউ কোন অদৃশ্য ফাস্ট ফরোয়ার্ডের বোতাম অলক্ষ্য থেকে টিপে দিয়েছে। লিপিকে যারা নাকচ করেছিল তাদেরই একজন যাচাই করতে একটা ভাংচির উড়ো-চিঠি নিয়ে এল ওদের ঘরে। চিঠিতে লেখা আছে এ মেয়েকে বিয়ে করলে পস্তাতে হবে, এর স্বভাব-চরিত্র ভালো নয়। চিঠিতে হাতের লেখা দেখে সবার চক্ষুস্থির, লালনের বাবার মতো ভালমানুষও রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন। পরীক্ষা হয়ে গেছিল, কাজেই কলেজ যাওয়া বন্ধ করার উপায় নেই, কিন্তু লিপির একা বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ হয়ে গেল।

আসল চমকটা এল দিন দশ-বারো পরে। বাড়ির উঠোনের খিড়কি দরজা তালাবন্ধ থাকত, একদিন দেখা গেল উঠোনের পাঁচিল টপকে লিপি পলাতকা, কি করে পারল কে জানে। কিন্তু কোথায়, কার সঙ্গে গেল? ওর কোনও ছেলে-বন্ধু আছে বলেও কেউ কোনোদিন জানে নি, তাছাড়া কালন-লালনের কড়া নজর। সব কৌতূহলের নিরসন করল লিপির রেখে যাওয়া একটা চিঠি, লালনকে লেখা। চিঠিটা গোপনীয় হলেও আমরা ক্লাবের প্রায় সবাই পড়েছি, তাই হুবহু ছেপে দিলাম।

‘প্রিয় ছোড়দা,
কৌতুকের বশে তোদের খেলায় অংশ নিয়ে একটা নির্দোষ সরল মানুষকে দিনের পর দিন ছলনা করে গেছি। প্রথম প্রথম মজা পেতাম, উপভোগ করতাম, তারপর ধীরে ধীরে গুণাদাকে বুঝতে শুরু করলাম। বুঝতে শিখলাম নিবেদন কী জিনিস, ভালবাসা কাকে বলে, ইংরেজিতে যাকে dedication বলে তার পরিভাষা কী। দেখলাম কী অসীম বিশ্বাস আর ভরসা নিয়ে একটা অলীক স্বপ্নের পিছনে ছুটে যাচ্ছে মানুষটা বার-বার। একদিন উপলব্ধি করলাম রীণা যদি রক্তমাংসের মানবী হতো সে কি ফেরাতে পারত এত প্রেম? আমি তো জানতাম রীণা বলে সত্যিই কেউ নেই, তাই একদিন নিজের অজান্তে কখন নিজেই রীণা হয়ে গেলাম। তবে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি, তোদেরই এক বন্ধু গুণাদাকে সত্যিটা জানিয়েছে একদিন। তারপর আমাদের মধ্যে সত্যিকারের চিঠির আদান-প্রদান শুরু হয়। গুণাদা শুধুমাত্র ম্যাট্রিক পাশ হতে পারে, কিন্তু এত সুন্দর চিঠি লেখে আর রবীন্দ্রনাথ থেকে শেক্সপীয়ার- বিশ্ব-সাহিত্যের কী অগাধ জ্ঞান! 
ওরা অন্য জাত, তায় তফসিলি, জানিনা বাবা মেনে নেবেন কিনা; কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনও আপত্তি আসেনি। ওরা আমাদের থেকে অনেক অনেক বেশি বড়লোক, কোন পণও চাইবেন না, তাই তোদেরও আপত্তি করা উচিত নয়। আশা করি গুণধর তার ভালবাসাকে মর্যাদা দিতে পারবে। আমি এখন সেখানেই যাচ্ছি।
বাবা যদি মেনে নেন তাহলে তোদের সবার নিমন্ত্রণ রইল আমাদের বিয়েতে, আর সত্যি বলতে কি, শয়তান ক্লাবের মেম্বারদের ছাড়া এ বিয়ে হতো না, হতে পারে না, তাই আমরা দিন পনের অপেক্ষা করব। ইতি। 
- তোদের অবাধ্য বোন।

পুনশ্চঃ হ্যাঁ, বিয়ে ভাঙ্গার চিঠিগুলো আমারই লেখা, তোদের আশীর্বাদে নানাধরণের চিঠি লেখার ব্যাপারে আমি একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছি বলতে পারিস।


* * * *


না, লিপির বাবা আর আপত্তি করেননি, যদিও সেসব দিনে অসবর্ণ বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া খুবই কঠিন ছিল। দিন পনের পরে খুব ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হল। শয়তান-দলের মেম্বারদের প্রথম বিয়ে, তাই আমাদের ইনভলভমেন্ট ছিল চোখে পড়ার মতো। 
বাসরঘরে আমরা গুণাকে চেপে ধরলাম তার সাহায্যকারী বন্ধুটির নাম প্রকাশ করতে, যদিও তার উপরে কারও কোনও অভিযোগ অবশিষ্ট নেই এখন আর। গুণা শুধু একটা হাসি দিয়ে গেল। ঠিক সেই সময় কানুর এমন বাথরুম পেয়ে গেল যে আমাদের আর বন্ধুটির নাম আন্দাজ করতে বেগ পেতে হলো না। গুণার এই রবীন্দ্রনাথ থেকে শেক্সপীয়ার পর্যন্ত অগাধ পাণ্ডিত্যের উৎসটাও কী আর জানিনা আমরা!

হঠাৎ বাপি গুণার ভাষা নকল করে বলে উঠল- ‘হ্যাঁ রে গুণা, রীণাকে দেখছি নাই, বিহাতে উয়াকে ডাকিস নাই?’
- ‘রইক্ষা কর বাপ, আবার শান্তিনিকেতন-দীঘা-অযোধ্যাপাহাড়-কইলকাতা? ইবারকে কাশ্মীর যাব।
- ‘হুররে, কাশ্মীর! আমি সাত দিন দোকান বন্ধ রাখব।
- ‘উঁহু, সিটো হছ্যে নাই। আমরা হনুমান করব আর তোরা চাবির ভুলুক দিয়ে ভালবি? শুধু আমি আর লিপি যাব, হঁ।

- ‘হ্যাঁরে, হনুমানটা কী?’ আমি আলগোছে কানুকে জিগ্যেস করলাম।
- ‘ওয়েবস্টারের ডিকশনারিতে শব্দটা ঢোকার আগেই চুপি চুপি জানিয়ে রাখি। গুণধরী ভাষায় হনুমান মানে হানি-মুন!’

ততক্ষণে শয়তান-দল শুরু করেছে তাদের ক্লাব-অ্যান্থেম, ‘যৌবন জলতরঙ্গ রোধিবে কে? হরে মুরারে, হরে মুরারে!...’


(ভুলুক= ছিদ্র, ভালবি= দেখবি)

0 comments: