ধারাবাহিক - সুবল দত্ত
Posted in ধারাবাহিক
ধারাবাহিক
প্রতিস্রোত
সুবল দত্ত
॥১৭॥
কাজু পাতার ছায়া ভিন্ন ঘাস মাঠ/ এসো এসো মুখোশ পরি পরদেশী সাজি
পেরো
সূর্য যখন ওই বিশাল উঁচু বর্ণদাতা গাছের মাথায়, তখন পেরোর দৈনন্দিন শরীরচর্চা শেষ হয়। ছাতিম গাছে ফি বছরে যখন পুরন্ত যৌবন আসে সবুজ তুষার ফুলে ঢেকে যায়, ঠিক তেমনিই এই বিশাল বোঙা গাছটি ব্রকলির মতন থোকা থোকা পুষ্পগুচ্ছে ভরে আছে। পাতাহীন গাছভর্তি ফুলে শিশিরবিন্দুর মতো চটচটে রসে রোদ পড়েছে। মনে হচ্ছে হীরকবৃক্ষ। নাড়া দিলে এখুনি ঝরে পড়বে হাজার হাজার হীরের টুকরো ধন। পেরো মাঠে ঘাসের উপর শুয়ে দেখতে থাকে,দেখতেই থাকে তন্ময় হয়ে। আবেগে শ্রদ্ধায় চোখে জল উপচে পড়ে। এই বৃক্ষ তার নব কলেবরের জন্মদাতা। তার অছ্যুত অভিশাপগ্রস্ত প্রজাতির মুক্তির বিশল্যকরণী। হীরের তো এক বস্তুমূল্য হয়, এ তো অফুরন্ত ধন। কালো বিষণ্ণতাময় লাঞ্ছিত জীবনবৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অমোঘ আশীর্বাদ এই গাছ থেকে পাওয়া ওষধি। একি হীরের চেয়ে লক্ষগুণ দামী নয়?
প্রকৃতির কেন যে আক্রোশ ওদেরই জনজাতির উপর। ভেবে কূল পায়না পেরো। কোল মুণ্ডারি ভাইদের নিমতেল পুষ্ট চকচকে কষ্টিপাথরের মতন নিরোগা গতর আমাদের খেড়িয়া শবর ভাইদের কারোর নয়। অথচ আমরাও তো অরণ্য সন্তান? অরণ্যের অফুরন্ত সৌন্দর্যের মাঝে আমরাও তো বাস করি। এমনকি প্রকৃতির গোপনতম অমৃত নির্যাস আমরা যতটা আহরণ করি কোনো মানব গোষ্ঠী তা পায়না। তবে কেন আমাদের দেহ খসখসে ধুসর কালো রোগগ্রস্ত? শুধু তাই নয়। আমাদের উপরেই শহুরে গোরা চামড়ার মানুষদের যত ঘৃণা আর তাচ্ছিল্য। শুধু ঘৃণা নয়, তার সঙ্গে হিংস্রতা আর শোষনের লোভ। আমারই কেন ওদের ধ্বংসসুখের শিকার? পেরোর চোয়াল শক্ত হয়। হাত মুঠো করে চোখের সামনে তুলে ধরে। মনের মধ্যে সেই পুরোনো বিদ্রোহের সুর গুনগুনিয়ে ওঠে। কিন্তু একটু পরেই হাত শিথিল হয়ে ঝুলে পড়ে। নাঃ এখন সেই আগের মতো গোয়ার্তুমি নয়। এখন বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। যে দৈবিক পরিবর্তন প্রকৃতি আমাকে দিয়েছে, চেহারার আমূল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়কর ভাবে মানসিক স্থিরতা ও বুদ্ধির বিকাশ আমার মধ্যে এসেছে,এ একেবারেই অন্যের কাছে অবিশ্বসনীয়। কিন্তু প্রকৃতির এযে এক গোপন নির্দেশ একথা আমি স্পষ্ট বুঝে গেছি। আমার জনজাতির উপর বিদ্বেষপ্রহার থেকে রক্ষার জন্যে এই একমাত্র সুযোগ।
মাথার দিক থেকে অস্পষ্ট পরিচিত পায়ের আওয়াজে উঠে বসে পেরো। জোঁহা। দুহাতে ধরা একটা বড় পদ্মপাতা।
পেরোর সামনে হাঠু মুড়ে বসতেই ও দেখলো পাতার উপরে সাজানো রয়েছে পাঁচটা বুনোকলা,তালশাঁস,বনখেজুর কয়েকটা কাজুফল,জলে ভিজিয়ে রাখা গম, কয়েকটা কেশর(পুকুরে পাকের ভিতরে থাকা শেকড়ের ডুমো গাঁঠ,ছাল ছাড়ানো) এবং একটা পাতার দোনাতে পদ্মমধু। জোঁহা একটু ঝুঁকে পেরোর সামনে পদ্মপাতা ঘাসের উপর রাখতেই পেরোর নজর পড়লো তার বুকের গভীর খাঁজে। তখুনি তাকে অস্থির করা একটা পুরোনো ছবি ঝাঁ করে চোখের সামনে ভেসে উঠলো। জেরেকা মা হওয়া সত্ত্বেও তার বুকের দুধ পান করতে পায়নি পেরো। সে অমৃত কেমন? পেরো জানতে পায়নি কখনো। যখন পেরো সাত বছরের তখন মাত্র একবছরের জন্য জেরেকাকে কাছে পেয়েছিল। তখন দু তরফেই লজ্জা একটা বাধা হয়েছিল। কিন্তু লজ্জার সঙ্গে একটা অসম্পূর্ণতা ও ক্ষোভ পেরোকে কুরে কুরে খেত। মাঝে মাঝেই শুনত সমু জন্মামাত্র মা হারিয়েছে তাই শিশুকাল থেকেই সে জেরেকার বুকের দুধ পান করে বড় হয়েছে। আর যখন পেরোর জন্ম হওয়ামাত্র জেরেকা হাওয়ালাতে দীর্ঘ দিনের জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেল। হার্ডকোর টেরোরিস্ট বলে প্রতিপক্ষ সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল ওকে ফাঁসিয়ে দিল। তাই বিন্দুমাত্র বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলনা তার। গোরাচাঁদ পেরোকে মায়ের মতো লালনপালন করেছে। কিন্তু অবুঝ পেরোর মনে ছোটো থেকে বিদ্রোহ শিকড় গেড়েছে। জেরেকাকে ছোটোবেলা থেকেই পেরো অভিমান ভরে বিরূপ নজরে দেখতে থাকলেও জেরেকার মাতৃস্তন তার হৃদয়ে ছবির মতো সেঁটে রয়েছে। তাই এই ছবি যখনি পরত পরত তার মনে ভেসে উঠতো তখন চুড়ান্ত অসহিষ্ণুতায় পেরো উন্মাদ হয়ে যেত। খুঁজতো শিকার শত্রু। বেরিয়ে পড়ত মদের সন্ধানে। মদ ও কাঁচা ইঁদুর মাংস। এইভাবে নুয়ে থাকা জোঁহার বুকে এখন জেরেকার সেই সময়কার ছবি ভেসে উঠেছে। এখন তার মনে আর সেরকম আলোড়ন নেই। কিন্তু জেরেকাকে হারানোর আবেগ বুকের ভিতর হুহু করে উঠছে।এখানে আসার আগে জেরেকাকে মা হিসেবে ফিরে পেয়েছিল। তারপর। আর কি সে বেঁচে আছে? জেরেকা যে মা। তার অস্তিত্বহীনতা থেকে একবিন্দু অস্তিত্ব হয়ে জেরেকার গর্ভে এসেছিল। এরকম ভাবনা তো কখনো হয়নি তার? জেরেককে কেমন করে ভুলে ছিল সে? এই অনুভব যেন হাহাকার হয়ে গলাঠেলে উঠে আসছে চোখে। এমন তো কখনো হয়নি? জোঁহা তার নাম ধরে ডাকতেই পেরো চোখ ছলছল করে ওর দিকে থাকতেই জোঁহা সঙ্গে সঙ্গে পেরোর মুখ দুহাতে ধরে ঠোঁট বাড়িয়ে চোখের জল শুষে নিল।নিজস্ব খেড়িয়া ভাষায় বলল,- কি হলো পেরো?
-জেরেকা। আমার মা। আমার মাকে মনে পড়ে গেল।
-তুমিই তো বলেছ তোমার মা তো ছিলেন প্রতিবাদী বিদ্রোহী। তুমিই তো বলেছ ওরা তোমার মাকে ওরা খতম করে দিয়েছে। তুমি বদলা নেবে না? তবে কেন এত চোখের জল ফেল পেরো? ওঠো, উঠে দাঁড়াও। মুণ্ডারিদের মতো হাত উঠিয়ে চিত্কার করে বল, উলগুলান!!
পেরো জোঁহার দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়েই ছিল। চোখ নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল। -আমি জানি জোঁংংহা। আমার রক্তে আছে সংগ্রাম। আমার খেড়িয়া শবর গোলগো ভুনিয়া সান্ডি গিদি নাগো ঢেলকি ভাইয়েরা বর্ণ বৈষম্যের শিকার। কালো আদিম মানুষ জেনে জঙ্গল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে উদ্বাস্তু করে দেবার একটা চক্রান্ত চলছে। তার বিরুদ্ধেই তো আমার উলগুলান। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তিনটি বিশাল মারণ শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে। আধুনিক অস্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনী আর তার সঙ্গে বিদেশী সৈন্যবাহিনী। আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি। তার সঙ্গে খনি মাফিয়ারা। এই তিন শক্তির সঙ্গে আমরা দু চারটে কাড়বাঁশ ও ভালা নিয়ে কি করব? আমি এখন ধামসা বাজিয়ে যদি সবাইকে ডাকি তো ওরা ঘর ছেড়ে আমাদের গোপন জঙ্গল ঘেরা ময়দানে এসে হাজির হয়ে যাবে।
পেরো জোঁহার কাঁধে হাত রেখে ওকে কাছে টেনে নিলো। খুব নরম স্বরে বলল,-আগে আমি জানোয়ারের মতো ছিলাম। সেই পেরো এখন সেই ভুলটাই করতো। জেহাদের নামে আত্মঘাতী হতো। তারসঙ্গে পৃথিবীর আদিম জনগোষ্ঠী কয়েকটি শেষ হয়ে যেত। কিন্তু জোঁহা তুমি সেই পেরোকে বদলে দিয়েছ। তার এখন পবিত্র পুনর্জন্ম হয়েছে। এখন তাকে ধীর স্থির ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দাও। আমার পিতা মাতা গুরু যিনি,সেই গোরাচাঁদ আমার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি বেঁচে আছেন। তিনি আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন,তখন তো নিতে পারিনি। এখন তাঁর শেখানো বিদ্যা মনে পড়ছে। সেগুলো পালন করার সময় হয়েছে। আর আছো তুমি।
জোঁহা পেরোকে জড়িয়ে ধরল।-তুমি সত্যিই মহান পেরো। আমাদের গৌরব। তবে তোমার এই পরিবর্তনের জন্যে এই পবিত্র মাটি ও এই পবিত্র বোঙাগাছকে প্রণাম কর। আর আমাদের গুনিনদের শ্রদ্ধা কর। ওদের ওষুধের এমন গুণ, মানুষের চরিত্র বদলে দেয়। এখানের কেউই মিথ্যে কথা বলেনা। কেউ কারোর ক্ষতি চায়না। এমনকি এখান থেকে কেউ বাইরের জগতে যেতে চায় না। যদি যায়ও তো তাকে এখানের কথা ভুলে যাওয়ার ওষুধ খাইয়ে পাঠানো হয়। না হলে এই পবিত্র বোঙাগাছটির অস্তিত্ব সংকটে এসে যাবে। আর একটা কথা। কেউ যদি আমাদের এখানে এসে তার সংকটের কথা বলে তখন হাজার অসুবিধে থাকলেও আমাদের বয়স্ক গুরুজনেরা ঘন ঘন আলোচনায় বসে তা মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। আমি যে এখানে এসেছি তা ওনাদের আদেশে। আমি তোমার মনে ভালোবাসা জাগিয়েছি তা ওনাদের অনুমতিতে। তোমার খাবারে ওষুধ মেশাই যাতে তোমার মধ্যে শুভ চিন্তা জাগে। আর শুনলে আশ্চর্য হবে, তোমাদের ওখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে সব খবর নেওয়ার জন্যে একজনকে রোজ পাঠানো হয়।
পেরো খুব আশ্চর্য হয়ে উদগ্রীব কন্ঠে বলল,-সত্যিই? কি? কি খবর এনেছে? কি খবর পেয়েছে জানতে?
-এইযে, যে বিদেশীরা এসেছে সৈন্য মহড়ার জন্যে, ওরা তোমাদের শত্রু নয়। ওরা মিত্র। আর তোমাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে সেনাদের মধ্যেও খুব একটা ইচ্ছে নেই। নিজেদের চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা। একথা ঝর্ণার ধারে তোমাদের একটা বস্তিতে কয়েকটা সৈনিকের সঙ্গে একজন বয়স্ক মানুষের কথায় বোঝা গেল। তাছাড়া মাঝেমাঝেই সাহেব সৈনিক গ্রামগুলোতে ঘুরে বেড়ায় আর সবার সঙ্গে হাত মেলায়।
-আহ। জোঁহা,তুমি যে আমার কি উপকার করলে তুমি ভাবতেই পারোনা। আমি কি যে করি তোমার জন্যে।
-কিছু করতে হবেনা। তুমি এখন এই খাবারগুলো খাও। আর আমি চুপ করে বসে দেখি।
অদ্ভুত বিরল অমৃতময় খাদ্য। পেরো যেমন যেমন খেতে লাগলো শরীরে বলের সঞ্চার হতে লাগল। খাওয়া শেষ হতে না হতেই ওরা দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে চারপাঁচ জন প্রায় দৌড়েই ওদের কাছে আসছে। কাছে আসতেই দেখে ওদের মধ্যে মুখিয়া ও দুজন সলাহকার (পরামর্শদাতা) রয়েছেন। একরকম হাঁফাতে হাঁফাতেই ওরা যা বলল তাতে বোঝা গেল এখান থেকে যে চর পাঠানো হয়েছিল খবর এনেছে যে সেনাদল সব অরণ্যবস্তিতেই আজ দুপুরের মধ্যেই কামানের গোলা ফেলবে। ওরা সকাল থেকেই ছোটো ছোটো বোমা ফেলে ভয় দেখিয়ে বস্তির ঝোপড়ি থেকে সবাইকে বাইরে বের করতে চাইছে। বস্তি খালি করতে চাইছে। এদিকে সমস্ত জঙ্গল এলাকার বস্তি থেকে সবাই ধামসা বাজিয়ে পরস্পরকে জানান দিচ্ছে যেন সবাইদলনেতার নির্দেশ মতো কাজ করে। ধামসার বোল বলছে দুধ ঝর্ণার জল যেখান থেকে গড়িয়ে পড়ছে অনেক নিচে একটা বিশাল খাদে,সেই বিশাল খাদ শুরু হওয়ার ঠিক আগে পাহাড় প্রমাণ চ্যাটালো পাথরের পিছনে সবাই সূর্য মাথার উপর থাকতে থাকতেই যেন চলে যায়। এই ম্যাসেজের উত্তরে প্রত্যুত্তরে সব বস্তি থেকেই ধামসা বাজিয়ে এতে সম্মতি জানাচ্ছে।
পেরো নির্বাক হয়ে মুখ নিচু করে বসে রইল। চারদিকে নিস্তব্ধতা। মৌনতা ভেঙে মুখিয়া বলল,-তোমাদের দলনেতা কে? -আমি। পেরোর জবাব।
-তুমি তো এখানে। তোমার অবর্তমানে কে?
-কেউ নেই।
-তোমার আগে কে ছিল?
-আমার মা। কিন্তু সে বেঁচে আছে কি না তা তো জানিনা? একটু চুপকরে থেকে পেরো হঠাত্ সোজা টানটান হয়ে উঠে দাঁড়াল। যারই আদেশে এই ধামসা সংবাদ সে নিশ্চয় আমাদের জন। সে আমাদের রক্ষা করতে চায়। এই ধামসা সংকেত শুধু আমরাই বুঝতে পারি। সেনাদের ক্ষমতা নেই এই সংবাদ বোঝার। তাই ওই গুপ্ত সুরক্ষিত জায়গার কথা সেনারা কখনোই জানতে পারবে না যদি না গুপ্তচর পিছনে লাগে। দলনেতার আজ্ঞা বিনা এই ধামসার বোল কেউ ওঠাতে পারে না। নিশ্চয় এই আদেশ ভগবান সিংবোঙা নিজে কিংবা তাঁর পাঠানো দেবতা দিয়েছেন। কারণ, আমি যা প্রার্থনা করেছি আমি যেমনটি চাইছি তেমনিই হচ্ছে। ভগবান সিংবোঙা আমাদের সহায়। আপনাদের কাছে আমার একান্ত প্রার্থনা আমার গোষ্ঠী ভাইদের কয়েকদিনের জন্যে যদি এখানে স্থান দেন তবে খুব উপকার হয়।
-তুমি যা চাইছ আমরা সব বুঝতে পারছি। আমরা নিশ্চয় তোমাদের সবাইকে এখানে নিয়ে আসব। এখুনি আমরা লোক পাঠাচ্ছি দুধ ঝর্ণার ধারে। সেখানে ও ধামসা বাজিয়ে এমন এক জায়গায় সবাইকে আসতে বলবে যাতে সেনা গুপ্তচর জানতে পারবেনা সবাই কোথায় গেছে। সেখান থেকে খাদের পাশে বড়ো কালা পাথরের পিছনে গুপ্ত সুড়ঙ্গ দিয়ে সবাইকে নিয়ে আসবে। তুমি চিন্তা করো না। বোঙা গাছ তোমাদের সবাইকে ভালো রাখুক।
0 comments: