0

অণুগল্প - হিমাংশু চৌধুরী

Posted in


অণুগল্প


ক্ষিদে
হিমাংশু চৌধুরী 


স্টেশন চত্বরে হাজার মানুষের ভিড় থাকলেও ঠিক চোখেচোখে কথা হয়ে যায়। কোমড়ের মোচড়ে, চোখের ইশারায়, ভুরুর নাচনে, আর তুলে ধরা আঙুলের সংখ্যায় যে বলছে আর যে শুনছে- দুজনেই বুঝে যায় যা বোঝার।

সামনের জন হাঁটা মারে তারপরে। একটু এদিক ওদিক দেখে জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা চেটে নিয়ে পিছনের জনও। জন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে সোজা চলে যায় তারা, জল কেটে বেরিয়ে যাওয়া ছিপ নৌকার মতো, কোন ঘাট বা আঘাটায় গিয়ে যাত্রা শেষ।

অন্ধকার গলির শেষমাথায় একটা ছোট লজ। আলো আঁধারি রিসেপশনে চলতা ওঠা প্লাইউডের টেবিলের পিছনে বসে থাকা নিস্পৃহ টাকমাথা দেখেও না দেখার ভাণ করে, তবে, অবহেলায় ফেলে যাওয়া নোটদুটো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে নিতে দেরী করেনা। নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠে ছাদের উপর ছোট ছোট ঘর পাশাপাশি। কাঠের পার্টিশন। দরজার পিছনে তিনটে হুক। চাইনিজ সি এফ এল ল্যাম্পের সাদা কিন্তু আবছা আলো অন্ধকারটাকেই যেন আরও ঘন করে তুলেছে। একটা টুলের উপর প্লাস্টিকের জলের জাগ। কোণের দিকে একটা দু'ফুট বাই দু'ফুট জায়গা ঘিরে রাখা, ভিতরে এক বালতি জল, একটা হাতল ভাঙা প্লাস্টিকের মগ। তক্তপোষের উপর তেলচিটে বিছানায় অজস্র ছোপ ঢাকা পড়ে আছে সস্তা রঙিন ফুলেল চাদরে। তার উপরে টাইম বাঁধা আদিম খেলা।

কেউ কোনও কথা বলে না, কিছু চাপা শীৎকার ধ্বনি শুধু শোনা যায়। কাজ শেষ হয়। ক্ষিদে মিটলে ছেড়ে রাখা প্যান্টের হিপপকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে টাকা গুণে দিয়ে পুরুষটি বিদেয় হয়। একটু তাড়াতাড়ি পা চালালে নটা বারোর ক্যানিং এখনও পাবে।

নারীটি ধীরে সুস্থে ওঠে। তার জন্য সারারাত পড়ে আছে। তাঁতের মাকুর মতো স্টেশনচত্বর আর এই লজ করতে হবে। কাল সকালে আবার সব গুছিয়ে নিয়ে লক্ষ্মীমন্ত বৌয়ের মতো যেন নার্সিংহোমে আয়ার ডিউটি করে বাড়ি ফেরা। রান্না বান্না। স্কুলে পড়া মেয়েটা বাড়িতে শাশুড়ির কাছে আছে।

পাশের ঘরেও দরজা খোলার আওয়াজ হয়। একটা পায়ের শব্দ নেমে যায় সিঁড়ি দিয়ে। তারপরে আর কোন শব্দ নেই, শুধু দূরাগত কোলাহল, বাসট্রামের চলাচলের অনিবার্য আওয়াজ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো শোনা যায়, অথচ শোনা হয়না। নীরবতা ভেঙে মেয়েটা প্রশ্ন করে, "মালতী, খেয়িচিস? না হলে চল কিছু পেটে দিয়ে আসি এইবেলা। ক্ষিদে পেয়েছে।"

0 comments: