0

স্মৃতির সরণী - সোনালী

Posted in



স্মৃতির সরণী


রামধনু
সোনালী


ইংরেজি মাধ্যম ইস্কুলে পুপু শিখে এলো ভিবজিয়োর। রঙ মিলিয়ে মিলিয়ে ছবি। ভি ফর ভায়োলেট, আই ফর ইন্ডিগো মানে ডিপ ব্লু, বি ফর ব্লু, জি ফর গ্রিন, ওয়াই ফোর ইয়েলো, ও ফর অরেঞ্জ, আর ফর রেড।

মা সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে বললেন দেখো, বেনীআসহকলা। বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল।

অক্ষর। শব্দ। আর মজা।

“টেইল ইন কাউ ডাঙ্গ অ্যান্ড কাউ ডাঙ্গ ইন টেইল”; বাবা মশাইয়ের অনবদ্য ভাষায় ল্যাজে গোবরে হবার ইংরেজি।

শুধু শব্দ নিয়ে খেলা করতে করতেই যে কত আনন্দ রোজকার দিনগুলোর মধ্যে ভরে দেওয়া যায়, এ যারা পুপুর ছোট বেলার ধারে কাছে না এসেছে তাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল।

শব্দ আর তাল। ছন্দ আর সুর। আর রাশি রাশি মজা।

এই সবই একখানা দশ ফুট বাই দশ ফুটের এক কামরা ভাড়া বাড়ির সব নেইদের অনায়াসে ঢেকে রাখত। সর্বদা রাজকন্যার মতো আহ্লাদে ডগমগ করে রাখত পুপুকে। ছোট দুই বছরের পুপু সকালের বিছানায় চোখ কচলাতে কচলাতে শুনত,

“সাগর সাগর সাগর নদীর জলে ডাগর ---সাগর ডাকে যদি ঝর্না হবে নদী।”

দেড় হাত মানুষ। সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি ভুঁড়ির ওপর টাইট। লাল টুকটুকে হাফ প্যান্ট। কদম ছাঁট খোঁচা খোঁচা চুল। বাবা নিজের পত্রিকার সম্পাদকীয় লিখছেন উপুড় হয়ে শুয়ে। পুপু বাবার পিঠের ওপর। খানিক পরে সে উসখুস করতেই বাবা ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ ফেরান। মেলাও দেখি।

“একা একা বসে ছাতে
পুপু খায় আলু ভাতে –”

ভালো মিল না হলে সমস্যা। তাল কাটলে বাবা বাতিল করে দেবেন। বলবেন, এত মিলল না, চিলল।

হাতে খড়ি হলো যখন, মা “বুড়ো আংলা’ বইটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

“ পপু সোনা মা বুড়ি যখ
করে কেবল বকর বক---”

তো এই সব যখের ধনের মতো দামি সম্পত্তি নিয়েই পুপু আর তার বাবা মায়ের রাজ্যপাট। সারা বছরে যে মাত্র এক বারই তারা ভাল জামা কিনতে দোকানে যায় দুর্গা পুজোর সময় তাতে কারও কোনও দুঃখ গজানোর মতো ফাঁকফোকর ছিল না।

তখন নটার সাইরেন বাজত। আওয়াজ হতো ভোঁ করে। সব বাড়িতে লোকে ঘড়ি মেলাত তার সংগে। বাবা মশাই রোজ দাড়ি কাটেন সেই সময়। অফিসের গাড়ি আসবে। হঠাৎ এক দিন গুন গুন করে বললেন, এই শোন গানটা।

“বাঁশী বাজল কোথায়?
গোকুলে তো নাইরে কানু
সে যে গেছে মথুরায়
তবে বাঁশী বাজল কোথায়?”

0 comments: