অণুগল্প - বন্দনা মিত্র
Posted in অণুগল্প
অণুগল্প
কষ্ট
বন্দনা মিত্র
উদ্যত শিশ্নের মতো এক সারি তীক্ষ্ণ ঋজু পর্বত শিখর আকাশের যোনিচ্ছেদ বিদ্ধ করে সরল সটান।
আকাশের জানুদেশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কুমারী শোণিত, পাহাড়ের পুরুষ শরীর কুমারী রক্ত মেখে তৃপ্ত হয়।
আর কষ্টে মরে যেতে যেতে দাঁত চেপে আর্তনাদ গিলে নেওয়া হাওয়া চুপিচুপি এই নিষিদ্ধ গল্পটা বলে যায়, যারা শুনতে পায় তাদের কাছে। মেয়েটি শোনে।
এইসব সময়ে মেয়েটির তলপেটে খুব ব্যথা করে, ওক ওঠে, ভীষণ আতঙ্কে নিজেকে বন্ধ করে রাখতে চায় ঘরের সীমানায়। আবছা মনে পড়ে নার্সারি স্কুলে শীতের ছুটি, বাবার বসের বাড়ি পার্টি, হৈ চৈ, কাচের বোতল থেকে গলায় ঢেলে আঙ্কেলরা সবাই কি খাচ্ছে, কি সুন্দর মিষ্টি গন্ধ! বাচ্ছারা চাইলে দিচ্ছে না, বলছে “তোমাদের খেতে নেই, অরেঞ্জ জ্যুস খাও।”
সিনহা আঙ্কেল চুপিচুপি বলেছে ওই মিষ্টি শরবতটা ওকে একা খাওয়াবে, এখন নয়, একটা মজার খেলার পরে, ছাদে গিয়ে খেলতে হবে খেলাটা।
তারপর সব কেমন অন্ধকার, স্বপ্নের মতো - ছাদের ওপর আবছায়া একটা ঘর, সিনহা আঙ্কেলের আঠালো, ঘাম ঘাম, ঝাঁঝ ঝাঁঝ সুন্দর গন্ধ, দম আটকানো ওজনের ভার, ড্রাকুলার মতো ধারালো দাঁত, আর ঐ জায়গাটায় কি কষ্ট, কি রক্ত - বন্ধ হয় না কিছুতেই। মনে পড়ে সেই নতুন গোলাপী সিল্কের ফ্রক, ছেঁড়া লেস, মায়ের কান্না, বাবার সাবধানী, সতর্ক স্বর – “চুপ চুপ, আমাদের কম্পানীর ডিরেক্টর – জানাজানি হলে চাকরি চলে যাবে”। আর কিছু মনে নেই, জানতে চাইলে মা বলে “ ও কিছুনা, তুই রোদ লেগে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলিস, চোট লেগেছিল”।
ফ্রকটা তারপর কি যে হল কে জানে – আর কখনও পরেনি তো !
মধুচন্দ্রিমা যাপনে আসা তরুণ স্বামীটি বুঝতেই পারে না বউ কেন সহ্য করতে পারেনা তার প্রিয় ব্রুট পারফিউম, পরতে চায় না তার কিনে দেওয়া নেট বসানো গোলাপী সিল্কের নাইটি। আর সবচেয়ে আশ্চর্য দার্জিলিং এ এসেও কেন দেখতে যেতে চায় না সানরাইজ!
0 comments: