বইঘর - গ্রন্থকীট
Posted in বইঘর
বইঘর
বইয়ের খবর
গ্রন্থকীট
বইয়ের নাম : মন্দকথা
লেখক : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
নির্মাতা : ঋতবাক
বিনিময় মূল্য : ২৫০ টাকা
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী নামটা যে কোনও শিক্ষিত বাঙালির পরিচিত। এই নাম উচ্চারণ করলে যে নামটা মনে আসবেই সেটা হলো – মহাভারত। বাল্মিকীর রাম ও রামায়ণ তাঁর প্রথম বই হলেও, মহাভারতের টীকাকার হিসেবেই তিনি সুখ্যাত। মন্দকথা-তেও মহাভারত নিয়ে লেখা আছে। সুরগর্ভা কুন্তীর উল্লেখ আছে। বিভিন্ন রচনায় বারবার এসেছে এই মহাকাব্যের অনুষঙ্গ। কিন্তু, লেখকের অন্যান্য সব বই থেকে মন্দকথা আলাদা। সত্যি কথা বলতে, ঠিক এ রকম বই নৃসিংহপ্রসাদ এর আগে লেখেননি। এই বইতে চলিষ্ণু জীবনের নানা অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজের পাণ্ডিত্যকে মিশিয়ে এক জীবনভাষ্য রচনা করেছেন তিনি। সত্যমাপ্রিয়ম্কেই মূল্য দিয়ে এমনসব সোজা সাপটা কথা বলেছেন, যেগুলো অনেকেরই ভালো লাগবে না। তাই, এই বইয়ের নাম মন্দকথা । পরিষ্কার ভাষায় লেখক জানাচ্ছেন, ক্ষমতার রঙ সব যুগে, সব কালে এক। গণতন্ত্রই হোক বা রাজতন্ত্র, ক্ষমতাসীনের থেকে আগুন বেশি ভাল। কেননা, আগুনের কাছে গেলে আগুন ব্যক্তিবিশেষকে পোড়ায়; কিন্তু, রাজরোষের আগুনে পুড়ে ছাই হয় জ্ঞাতি-গোষ্ঠী-জনপদ : কাছেই থাকুক বা দূরে। রেফারেন্স ছাড়া সেকালেও কাজ হতো না, একালেও হয় না। রাজা, পুরোহিত, গণতান্ত্রিক নেতা বা স্বৈরাচারী একনায়ক সবাই এক সর্বগ্রাসী শয়তানের কাহিনীর চরিত্র। কোনও রকম ভান-ভণিতার তোয়াক্কা না করে লেখক মুখের ওপর বলছেন, রোজকার আটপৌরে জীবনে মিথ্যে কথা বলা একটা সিচ্যুয়েশনাল নেসেসিটি! ঈশ্বর বিশ্বাসী হয়েও সোজাসুজি বলছেন, ভগবান আমাদের নিত্যকার ভাল-মন্দের দায় নেন না। পাপ-পুণ্য-সুকৃতী-দুষ্কৃতির দায়িত্ব মানুষ এবং তার ফ্রী-উইল-এর : নাদত্তে কস্যচিত পাপং ন চৈব সুকৃতং বিভু। কথা বলছেন গো-বধ, অপশব্দ, কলহ, ম্লেচ্ছ, সহিষ্ণুতার ক্ষয়, রোল মডেল নির্মাণ, ভক্তি সব কিছু নিয়ে। আর, সব কথার শেষে, যে উপলব্ধিতে পৌঁছন লেখক তার নাম গভীর একাকীত্ব বোধ। নিজের কাজ, বিচার-বিবেচনা, শিক্ষা-সামর্থ্য – এই সব নিয়ে একা মানুষ আর তার সামনে নিরুত্তর সময় এবং মহাবিশ্ব। মাঝখানে আর কেউ নেই। কারোরই মন যোগানো কথা এই বইতে বলেননি নৃসিংহপ্রসাদ। তাই, এই বই তাঁর মন্দকথা-র সংকলন।
বইয়ের নাম : খোলা চোখে খোলা মনে
লেখক : রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য।
নির্মাতা : ঋতবাক
বিনিময় মূল্য : ২৫০ টাকা
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যকে সারা পৃথিবী বস্তুবাদী দার্শনিক হিসেবে চেনে। তবে, সারাজীবন তিনি ইংরিজি সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন। সাহিত্য, দর্শন আর ইতিহাসের জগতে তাঁর অবাধ চলাফেরা। তাঁর লেখা বইগুলোর তালিকায় ঋতবাক যোগ করল নতুন একটি নাম। খোলা চোখে খোলা মনে। অনুবাদ-কবিতা, দর্শন-ধর্ম, বাঙালি সমাজ, ভারতীয় আর পাশ্চাত্য সাহিত্য, যুক্তিবাদ ও বস্তুবাদ, আন্তর্জালে লেখালেখি – এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা প্রবন্ধের সংকলন এই বইটি। বিষ্ণু দে-র অনুবাদে ইয়েটস্, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অনূদিত লা মার্শেই,অপরাজিত -তে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহার করা ইংরিজি উপন্যাসের ঊদ্ধৃতি, তথ্যের অধিকার … এরকম নানা বিষয় নিয়ে সহজ, সরল, সুললিত গদ্যে আলোচনা করেছেন লেখক। পাণ্ডিত্য আর কৌতুকবোধ একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলেছে এই বইটিতে। এরকম গদ্য রচনা বড় বিরল। বাংলা ভাষায় এই জাতীয় বই খুব বেশি নেই।
বইয়ের নাম : চেম্বার ডায়েরি- ফিরে দেখা ও তৎসহ
লেখক : বেলাল হোসেন
নির্মাতা : ঋতবাক
বিনিময় মূল্য : ২০০ টাকা
এক স্টেশনমাস্টারের ছেলে ডাক্তার হয়ে উঠলেন। অর্জিত সাধারণ মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ আর জগতের প্রচলিত নিয়মের বাধল সংঘাত। ডাক্তারবাবুর ডায়েরির পাতা থেকে সরাসরি উঠে এল এক বই: চেম্বার ডায়েরি- ফিরে দেখা ও তৎসহ । এই বই এমন একটা বই, যেটা হাতে নিলে পাঠকের মনে হবে, তিনি ডাক্তারবাবুর চেম্বারে বসে আছেন। বাড়ি ফেরার পথে দুদণ্ড গল্পগাছা করে নিচ্ছেন তাঁর সঙ্গে। বই শুরু হয়েছে ‘ফিরে দেখা’ অংশটি দিয়ে। তারপর এসেছে ‘চেম্বার ডায়েরি’; আর সবশেষে ‘ক্যাবলাকান্ত সিরিজ।’ মানে, বইটায় তিনটে ভাগ আছে। কিন্তু, ন্যারেটিভের স্রোত একটাই। প্রথম অংশ লেখকের আঁত-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটায়। দেখা যায় বেলাল হোসেনের জীবন যাপন কেমন করে তাঁর আত্মন বা সেলফহুড্ গড়ে তোলে। এরপর কথার পালা। চেম্বারে আসা বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অনুভূতি বিনিময়ে সমৃদ্ধ হচ্ছেন ডাক্তারবাবু। পাঠককে শোনাচ্ছেন সেই কথা। আর, শেষ পর্যায়ে তিনি নিজেকে বর্তমান সমাজের মাপকাঠিতে মেপে ক্যাবলাকান্ত আখ্যা দিচ্ছেন। তার মানে, এই অংশ তাঁর মূল্যবোধের বাখান। সব জুড়ে বেলাল হোসেনের আত্মকথন। এ বইয়ের ভাষার একটাসরাসরি আবেদন, যাকে ইংরিজিতে বলে ইমিডিয়েসি, আছে : আর, তাকে বিনা মেক আপে পাঠকের দরবারে এনে হাজির করা চলতে পারে। বলা যায়, এক ভিন্ন গদ্যরীতির নমুনা তুলে দেওয়া হয়েছে পাঠকের হাতে। উচ্চ-ভ্রু সাহিত্য বলতে প্রতিষ্ঠান আমাদের যা বোঝায়, এ তা নয়। একে বলা যেতে পারে, আঁত ও কথা। আঁতমহলের কথা : লেখক যা বলছেন পাঠককে আত্মজন বলে জেনে।
বইয়ের নাম : ছড়ার ফেরিওয়ালা
রচয়িতা : বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
নির্মাতা : ঋতবাক
বিনিময় মূল্য : ১৬৫ টাকা
হরেক রকম খেলনা পাবে
মনের মতো জিনিস সবার
ফেরিওয়ালা হাঁক দিয়ে যায়,
ফুরিয়ে গেলে পাবে না আর।
চনমনে ছন্দ আর প্রাণপ্রাচুর্য ঝোলায় ভরা। হাঁক দিয়ে চলেছেন ছড়ার ফেরিওয়ালা বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকৃতি, জীবন, বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব, অদ্ভুতুড়ে জগৎ - সব কিছুর সঙ্গেই বাঙালি খোকাখুকুদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ছোটদের জন্য লেখা এই বই। তাই ছড়াকারের দায়িত্ব অনেক। সৌন্দর্যবোধ, জীবনচেতনা, সুস্থ রুচি পড়ুয়াদের মধ্যে চারিয়ে দিতে হবে, কিন্তু, গুরুমশাই সাজলে চলবে না। খেলার ছলে বলতে হবে এমন সব কথা, যা তাদের জীবনের ভিতটা পাকা করে গড়বে। শিশুর মনে রঙ ধরানো নয় তো সহজ কাজ : এই কথা বলেছিলেন বনফুল। ছড়ার ফেরিওয়ালা বইয়ে সেই কঠিন কাজটাই খুব সহজে করে ফেলেছেন কবি।
0 comments: