0

ব্যক্তিগত গদ্যঃ নারায়ণ রায়

Posted in

ব্যক্তিগত গদ্য



গরম রসগোল্লা কিম্বা একটা রেলগাড়ির মৃত্যু
নারায়ণ রায়



যে কোন মৃত্যুই দুঃখের, তবে কোন কোন মৃত্যু কেমন যেন মনটাকে নাড়া দিয়ে যায়। সম্প্রতি তেমনই একটি মৃত্যুর খবর পেলাম আজকের সংবাদ পত্রে। বধর্মান-কাটোয়া লাইট গেজ রেল লাইনটি চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। ১৯১৫ সালে-এ চালু হওয়া এই রেলপথটিকে ঠিক শতবর্ষের মাথায় বন্ধ করে দেওয়া হ'ল এবং যুগের সঙ্গে তাল রেখে এরপর এই লাইন হবে ব্রডগেজ। আর বনগাঁ কিম্বা ব্যান্ডেল লোকালের মত এখানেও চলবে বিদ্যুত চালিত ই এম ইউ কোচ। আজ কত কথা মনে পড়ে, কথায় বলে বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, আর কেড়ে নিয়েছে আবেগ...আজ মনে পড়ে ওই ট্রেন-এর সাথে আমার বাল্যকালের কত স্মৃতি কতআবেগ জড়িয়ে আছে। চোখ বুজলেই আজও যেন পরিষ্কার সব দেখতে পাই।

সে আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। বাবার চাকরি সুত্রে আমরা তাখন উত্তর চব্বিশ পরগনার একটা মহকুমা শহরে থাকতাম। আর বছরে একবার করে আমাদের গ্রামের বাড়ি-তে যেতাম। সে এক দারুন উত্তেজনা ।.. তবে সেবার আমরা যাচ্ছিলাম আমার নিজের এক জেঠতুতো দাদার বিয়েতে, তাই আনন্দ আর উত্তেজনা অন্যবারের চেয়ে চারগুন বেশী। ভোর ৪টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে পোটলা-পু্টলি গুছিয়ে নিয়ে দিনের প্রথম বাস-টিতে উঠতাম। তখন কলকাতা শহর দেখবো, দোতলা বাস-এ চাপবো এসব ভেবেই শিহরিত হওয়ার বয়স। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন এখনকার মত প্রাইভেট বাসের কলকাতা শহরের ভিতরে প্রবেশ করার অধিকার ছিলনা, ঐ বাসগুলো শ্যাম বাজার খাল ধার পযর্ন্ত আসতো আর ওখান থেকে বাবা আমাদের ট্যাক্সি করে নিয়ে যেতে চাইলেও আমরা ভাই-বোনেরা দোতলা বাসে চাপার জান্য বায়না করতাম। আমাদের মত মফঃস্বলের ছেলেদের দোতলা বাসের দোতলায় চাপার আনন্দই ছিল আলাদা। 

তখনো হাওড়া থেকে ই এম ইউ কোচ চালু হয়নি। বিশাল দৈত্যের মত দেখতে কানাডিয়ান ইঞ্জিন ভস ভস করে বাস্প ছেড়ে যাচ্ছে আর লাল রং-এর বগির থার্ড ক্লাসে চেপে শশা আর ঝাল মুড়ি খেতে খেতে আমরা বর্ধমান পৌঁছতাম। সেখানেও জানলার ধারে বসার জন্য আমাদেরর ভাই বোনেদের মধ্যে মারামারি হত। কিন্তু যে ইঞ্জিনের দিকে মুখ করে জানলার ধারে বসতো সে ভীষণ ভাবে ঠকতো..কয়লার ইঞ্জিন, ...তাই খুব ঘন ঘন কয়লার গুড়ো উড়ে এসে চোখে পড়ত...। অবশেষে রেল কাম ঝমা ঝম করতে করতে বেলা ১ টা নাগাদ আমরা বর্ধমান এসে পৌঁছতাম। সেখানে পৌঁছে আর এক প্রস্থ দৌড় দৌড়ি। ওভার ব্রিজ দিয়ে স্টেশনের একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে আবার নতুন করে ছোট লাইন এর ট্রেন-এ চাপতে হ’ত। সে এক মজার রেলগাড়ি, খুব-ই সাধারণ ছোট ছোট কাঠের তৈরি বগি আর লম্বা লম্বি ভাবে চার সারি বসার যায়গা । কাগজে কলমে টাইম টেবিল একটা আছে বটে কিন্তু ট্রেন চলে তার নিজের মর্জি অনুযায়ী। তাই বেলা দুটোয় ছাড়ার কথা থাকলেও বেলা তিনটে পযর্ন্ত আমাদের সবাইকে গলদঘর্ম করে তবে তিনি নড়তে শুরু করলেন। 

ইতিমধ্যে ভীড়ও ভালই হয়েছে, বসার জায়গাগুলো সব ভর্তি। তবে যাত্রির চেয়ে মালপত্র বেশী। ওইটুকু একটা কামরায় চতুর্দিকে যাত্রীদের লটবহরের ঠেলায় যাত্রীদের দম বন্ধ হওয়ার মতন অবস্থা। এ গাড়ির সামনে ছোটার চেয়ে পাশা পাশি হেলা দোলা যেন বড্ড বেশী। ফলে ট্রেন চলার সাথে সাথে যাত্রীরা বার বার একজন আর একজনের ঘাড়ের উপর ঢলে পড়ছে। তখন গ্রমাঞ্চলে জাতপাতের বিভাজন ভীষন ভাবে চালু ছিল। তাই মেয়েরা ওরই মধ্যে চেষ্টা করত ছোঁয়া-ছুই যতোটা সম্ভব এড়ানো যায়। কিন্তু সব চেয়ে বিরক্তিকর ওই পরিবেশে অনেকের বিড়ি ধরানো...। ওই রকম ধীর গতি-তে চলা ট্রেন এর ভীড়ের ভিতর বিড়ির ধোঁয়ায় ভর্তি কামরায় সে এক নারকীয় পরিবেশ, তার মধ্যে আমার কোলে একটা ঢাউস ব্যাগ ...। এই বেঞ্ছটাতে আমাদের পরিবারের আমি একা, সামনের সীটে আমার দিকে পিছন ফিরে আমার বাবা-মা এবং ভাই বোনেরা বসে আছে। আমার সামনের সীটে আমার মুখো মুখি দুজন বয়স্ক মহিলা মেয়ের বিয়েতে কত টাকা পণ দিতে হয়েছে তাই নিয়ে গল্পে মশগুল। কিন্তু আমার সব চেয়ে সমস্যা আমার সামনে কে একজন একটা ছাগল রেখেছে...তার-ও ঐ পরিবেশটি মোটেই ভাল লাগছ না, তাই থেকে থেকে সেও ব্যা ব্যা করে ডেকে চলেছে। বিড়ির ধোয়া আর ছাগলের গন্ধে আমার তখন অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসার মত অবস্থা। 

যাত্রীরা প্রায় সকলেই পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত। তাই ..."কিরে ভ্যাবলা কোথায় গেসলি,... আরে এটা তোর বেটা নাকি ...। কত বড় হয়ে গেছে রে ?" কিম্বা, "আরে নন্দোদা যে অনেকদিন পর দেখা হল, তা এবার আলুর ফলন কেমন ? আমাদের গাঁয়ে তো সব ধসায় মেরে দিলে" এই ধরনের আলোচনায় মুখর। চলন্ত ট্রেনের দরজায় ঠেস দেয়া এক ভদ্রলোক খুব ঘন ঘন আমার মাথার উপর রাখা মুখ বন্ধ একটা চটের থলের দিকে তাকাচ্ছে। ঠিক সেই সময় ঝুপ করে ঐ থলেটা আমার কোলে রাখা ব্যাগের উপর পড়ে আপনা থেকেই নড়া চড়া করতে লাগলো আর তাই দেখে আমি ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করে দিতেই দরজায় ঠেস দেয়া ভদ্রলোক দৌড়ে এসে আমার কোল থেকে ব্যাগটা নিয়ে খুলতেই তার ভিতর থেকে একটা জ্যান্ত মুরগি কক কক করে ডেকে উঠল। তাই দেখে কামরার সবাই হই হই করে হেসে উঠে ঐ লোক টাকে উদ্দেশ্য করে বললে, “কিরে কামাল, শেষ কালে শ্বশুর বাড়ি থেকে জ্যান্ত একটা মুরগি-ই চুরি করে নিয়ে চলে এলি?” কামাল বললো, “ছি ছি কি যে বলো, শালা দিলে তার ভাগ্নের জন্য... তাই......।” তবে তারপর সারা পথ ঐ কামালভাই থলেটা আর নিজের হাত ছাড়া করেননি। 

আর ঠিক সেই সময় আমাদের কামরায় একজন চেকার ঊঠলেন, ৩৫-৩৬ বছর বয়সের এক ভদ্রলোক, ধুতির উপর একটা কালো কোট গায়ে আর হাতে একটা সাড়াশির মত যন্ত্র। ভদ্রলোক নিজে থেকে কাউকে টিকিট চাইলেন না, গোটা কামরায় আমরা ছাড়া কেউ টিকিট দেখালোও না, বরং তিনি সবার সঙ্গে হই হই করে গল্প করতে শুরু করলেন। “আরে ভজা তোর ছেলে কেমন আছে ? কি রে কামাল তোর জামাইবাবুর সঙ্গে সেদিন বদ্দমানে দেখা হ’ল।” এদিকে আমাদের তিনটে টিকিট আমার, বাবার আর মা’র, টিকিটগুলো আমার পকেটেই ছিল, আমি সেগুলো দেখাতেই অনেকটা বিরক্ত হয়েই আমার হাত থেকে টিকিট গুলো নিয়ে পাঞ্ছ করে আমার হাতে ফেরত দেবার সময় জানতে চাইলেন আর দুজন কোথায়? আমি সামনে আঙ্গুল দেখাতেই দেখি আমার বাবা পিছন ফিরে ঐ চেকারবাবুর দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর ঐ চেকারবাবু তো একেবারে লম্ফ দিয়ে বলে উঠলেন, “আরে তিনু দা যে? আর আমার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে, বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ তোমার বেটা না কি গো ? তা অনেক বড় হয়ে গেছে ত? তা হাবলার বিয়েতে যাচ্ছ নিশ্চই...। তা বউদি কেমন আছ গো?” মা ঘাড় নেড়ে বললো, “হ্যা ভালো আছি তুমি ভালো আছো তো? প্রতিমা কেমন আছে?” বুঝলাম প্রতিমা ওই চেকারবাবুর বৌএর নাম। কিন্তু এবার ঐ চেকারবাবু সবার সামনে সেই মোক্ষম কথাটি বললেন, “তা জানো তো এই লাইনে তোমার গদাই ভাইটি আছে, তা টিকিট কাটার কি দরকার ছিল? আমি না থাকলেও আমার নাম বললেই তো যথেষ্ট। তোমাদের আশীর্বাদে এই বদ্দমান কাটোয়া লাইনে এই গদাই সামন্তকে সবাই মান্যি গন্যি করে। এখনো পযর্ন্ত একদিন গদাই না থাকলে রেলের চাকাও ঘুরবে না।“ বলে নিজের রসিকতায় নিজেই হা হা হা করে হাসতে লাগলেন। এতক্ষণে বাবা মুখ খুললেন বললেন, “তা তোর মত আর দু চারটে চেকার থাকলে এই রেলের চাকা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।” ইতিমধ্যে পরের স্টেশন এসে গেছে চেকার বাবুটি হা হা হা করে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বললেন,“তা হলে ঐ কথাই থাকল, বিয়ে বাড়ীতে দেখা হচ্ছে ।“ 

ভদ্রলোক নেমে যাওয়ার পরে জানলাম উনি আমার বাবার নিজের পিসতুতো ভাই। এবার ট্রেন স্টেশন ছেড়ে সেই যে দাঁড়াল আর নড়াচড়ার কোন লক্ষণ নেই। দুটি স্টেশনের মাঝখানে দুদিকে ধানের জমি আর মাঝে মাঝে ঝোপ ঝাড় জঙ্গল। চলন্ত ট্রেন থেকে সব সময় আসে পাশের সব কিছু খুব সুন্দর দেখতে লাগে। সবুজ ধানের ক্ষেত, কত রকমের গাছ পালা। গরমে প্রায় ১৫-২০ মিনিট কষ্ট করার পর হটাৎ লক্ষ্য করলাম লাইন থেকে একটু দূরে একটা ঝোপের ভিতর থেকে আমার সদ্য পরিচিত গদাইকাকু এক হাতে একটা লোটা আর এক হাতে ধুতির কাছা-কোছা ঠিক করতে করতে বেরচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা আমাদের স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। স্টেশনে আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য গরু কিম্বা মোষের গাড়ি আসতো, আর আমরা তাতে চেপে আমাদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছে যেতাম।

সে যুগের গ্রামের বিয়ে বাড়ির পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। সব কিছুই নিজেদের বাড়িতে পাড়ার লোকেরাই ব্যবস্থা করতেন। বৌভাতের দিন চারিদিকে আত্মীয় কুটুম লোক লশকরে ভর্তি। সকাল থেকেই পুকুরে মাছ ধরার জন্য জাল ফেলা হচ্ছে , মিষ্টি তৈরীর ভিয়েন বসেছে, উঠনে ৫/৭ জন মিলে শুধু তরকারি কেটেই যাচ্ছে। আমরা ছোটরা কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, এক সঙ্গে আমরা কত দিক সামলাবো? এই বোধ হয় সব চেয়ে বড় কাতলা মাছটা জালে ধরা পরে গেল তো, ওদিকে আবার উনোন থেকে বোঁদের কড়াই নামানো হয়ে গেল, কিম্বা গরম রসগোল্লাগুলো এত ক্ষণে নিশ্চয়ই খাওয়ার মত ঠান্ডা হয়েছে... আমরা শুধু দৌড়েই বেড়াচ্ছি। আবার তারই মধ্যে মাঝে মাঝে মহিলা মহলে আমাদের নতুন বৌদিকে দেখে আসছি। আর এক জনকে দেখলাম বিনা কাজে আমাদের চেয়েও ব্যস্ত তিনি হলেন আমার গদাইকাকু। আমাদের মত তিনিও সর্বত্র দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। আর মাছ ঠিক মত ভাজা হয়েছে কিনা, টেস্ট করে যাচ্ছেন। কখনো বিজ্ঞের মত বলছেন মাংসটা একটু নুন কম হয়েছে। গদাইকাকুর মেয়ে মিনু সঙ্গে আমার বেশ ভাব হয়ে গেল। ও নাকি একটা ঝি ঝি পোকা পুষেছে, তাকে কচি জাম পাতা খেতে দেয়। তার নাম দিয়েছে পতঙ্গিনী। বাবা মাঝে মাঝে গদাইকাকুর পিছনে লাগছে,” কিরে গদাই, আজকে তোর রেলের চাকা ঘুরবে তো?” আর আড়ালে বাবা বলছে গদাইটা এখনো সেই দশ বছরের শিশুই রয়ে গেল। আমার ঠাম্মি আমাদেরকে একটা পদ্ম পাতায় বেশ কয়েকটা গরম রসগোল্লা এনে খেতে দিল। শহরে অত সুন্দর রসগোল্লা পাওয়া যায় না। আমরা সবাই ভালো করে তাকাবার আগেই গদাই কাকু কোথা থেকে দৌড়ে এসে ছো মেরে পাতা থেকে কয়েকটা রসগোল্লা তুলে নিতে গিয়ে পুরো পাতাটাকেই উলটে দিলো মাটিতে। তাই দেখে আমাদের সে কি কান্না। ঠাম্মিও কাকুকে খুব বকলো। বাবাও বললো, “তুই কোনদিনই বড় হবি না।”

বৌভাতের পরদিন সকালে গোটা বাড়িটা কেমন যেন ছন্নছাড়া ভাব। সবার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ, জিনিস পত্র সব চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো। একে একে আত্মীয় কুটুমরা বিদায় নিচ্ছে। গদাই কাকুও তার স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে একদিন পর বিদায় নিলেন। গদাইকাকু আর কাকীমা বয়স্কদের সবাইকে প্রণাম করে বার বার ওদের বাড়িতে আমাদেরকে একবার যাওয়ার জন্য বললেন। বাবাও বার বার ওদেরকে বাবার চাকরিস্থলে আমাদের বাড়িতে যেতে বললেন। যাওয়ার সময় মিনুতো রীতিমত কেঁদেই ফেললো।

দেখতে দেখতে পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেছে। ইতি মধ্যে আমরাও বাড়িঘর করে শহরেই থেকে গেছি গ্রামের সঙ্গে তেমন আর যোগাযোগই নেই। গদাইকাকুর সঙ্গে গত পঞ্চাশ বছরে মাত্র একবার বর্ধমান শহরে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। আমার পরিচয় পেয়ে আশি বছরের বৃদ্ধ গদাই কাকু তার এই ষাট বছরের ভাইপোর হাত দুটি ধরে বলে ছিল, “একবার সবাইকে নিয়ে আমার বাড়িতে আয়, আমাদের মোংলি গাইটা এখন প্রতিদিন এক সের করে দুধ দিচ্ছে, বাড়িতে ছানা কেটে তোকে গরম রসোগোল্লা তৈরী করে খাওয়াব।” আমি বলেছিলাম, “তোমার ভাইপোর কি আর সেই বয়স আছে? এখন তেল, ঘি, মিস্টি সব খাওয়া বারন।” শুনালম কাকীমার শরীরটাও নাকি একদম ভালো যাচ্ছে না, মিনুর ছেলে গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা গেছে। মনে মনে ভাবলাম মিনুর কি এখনো সেই ঝি ঝি পোকাটা আছে? এখনো কি তাকে জামপাতা খাওয়ায়? গদাই কাকু সেদিন বেশীক্ষণ বসেননি। কারণ বর্ধমান-কাটোয়া লাইন–এ এখন অনেক ভালো ভালো বাস রুট হওয়া সত্বেও কাকা এখনো সেই ছোট লাইন এর ট্রেনেই যাতায়াত করেন, আর রাত আটটাতেই লাস্ট ট্রেন।

গিন্নীর ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। বললো আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে আমার এক ভাইপো ফোন করেছে......। ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই, অপর প্রান্ত থেকে আমার ভাইপো পুকাই উভয় পক্ষের সুসংবাদ লেনদেন করার পর বললো, কাকা তোমাকে একটা খবর জানাচ্ছি, আমাদের সেই গদাই দাদু গত কাল রাত্রে মারা গেছেন। শুনলাম ৮৬ বছরের মত বয়স হয়েছিল। দিদার শরীরটাও নাকি ভাল যাচ্ছে না। শুনেছি তোমারো তো শরীর ভালো যাচ্ছে না। তবু যদি পারো আগামী ২৪শে এপ্রিল শ্রাদ্ধের দিন একবার এসো। হটাৎ মনে পড়ল আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের গদাই কাকার সেই কথা টা। “তোমাদের আশীর্বাদে এই বদ্দমান কাটোয়া লাইনে এই গদাই সামন্তকে সবাই মান্যি গন্যি করে। এখনো পযর্ন্ত একদিন গদাই না থাকলে রেলের চাকাও ঘুরবে না...”




0 comments: