undefined
undefined
undefined
ছোটগল্পঃ মৌসুমী ঘোষ দাস
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
সমব্যথী
মৌসুমী ঘোষ দাস
অফিস থেকে ফিরে এসে নিপা প্রায় প্রতিদিন ফ্রেস হয়ে ব্যালকনি বরাবর এই খাটটায় এসে খবরের কাগজটা খুলে বসে। আর প্রতিদিনই চোখ চলে যায় ব্যালকনিতে উঁচুতে আটকে রাখা পরিত্যক্ত দোলনার উপর সদ্য তৈরি করা পাখির বাসাটার দিকে। কি পাখি? তার নাম জানে না নিপা। কিন্তু এই কদিন ধরে কি ভীষণ পরিশ্রম করে নিষ্ঠার সাথে বাসাটা বানিয়েছে, তা নিজের চোখে দেখেছে নিপা। কি সুন্দরভাবে একটি পাখি ঠোঁটে করে খড়কুঁটো এনে দিচ্ছে আর আর একটি পাখি নিপুন ভাবে বাসা বুনছে। সাহায্যকারী পাখিটি কি পুরুষ পাখি? না কি অন্য কোন মেয়ে পাখি? বুঝতে পারেনি নিপা। শুধু দুচোখ ভরে ওদের তৎপরতা উপভোগ করেছে।
এই কদিন ধরে লক্ষ্য করেছে, তাদের মধ্যে একটি পাখি দুদিন ধরে ওড়া-খাওয়া ভুলে বাসার ওপর বসে আছে তো বসেই আছে। নড়েও না চড়েও না। এমনকি কোন কারণে রাতে ব্যালকনিতে গিয়েও দেখেছে, পাখিটা সেই একই ভঙ্গিতে বসে আছে। নিশ্চয় ওটা মা পাখি। বোধহয় ডিমে তা দিচ্ছে।
বুকটা চিন চিন করে ওঠে নিপার। বেশ কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা মনে পরে যায় ওর। তখন সবে মাত্র একটা কিছুর আগমনকে গর্ভে অনুভব করেছিল নিপা। যখন তখন পেটে হাত রেখে কিছু একটা স্পর্শ করার সে কি আনন্দ হত! কত আশা তাকে ঘিরে! চোখ, নাক, মুখ, হাত ,পা না জানি কেমন হবে? কার মতই বা হবে? কি নাম রাখা হবে? উত্তেজনায় ঘুম ছুটে গিয়েছিল নিপার। কিন্তু সাড়ে তিন মাসের মাথায় কি যে এমন ঘটল, সব আনন্দ, উত্তেজনা শেষ হয়ে গেল নিপার জীবন থেকে। তারপর থেকে বহু চেষ্টা করে, মন্দিরে পুজা আচ্চা করে, বা ডাক্তার কবিরাজ করেও গর্ভে কোন সাড়া পায়নি আজও।
এই কটা দিন ধরে নিপার মনে আবার সেই পুরনো আনন্দ উত্তেজনাটা যেন ফিরে এসেছে। অবসর পেলে বসে বসে ভাবে পাখির বাচ্চা গুলো কবে ডিম ফুটে বেরুবে? দেখতে কেমন হবে? মা পাখিটার জন্য বড় কষ্ট হয় ওর। কবে যে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরুবে, তবে মা পাখিটা একভাবে বসে থাকা থেকে ছুটি পাবে, কিছু মুখে দিতে পারবে! তারপর আবার বাচ্চাদের জন্য খাবার খুঁটে আনা- সে অনেক কাজ করতে হবে! নিপা ঠিক করেছে, ব্যালকনিতেই ওদের জন্য খাবার ছড়িয়ে দেবে। যাতে পাখিটাকে আর কষ্ট করে খাবারের সন্ধানে বাচ্চা ফেলে দূরে যেতে না হয়।
আজও যথারীতি অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে খবরের কাগজটা নিয়ে বিছানায় বসেছে। অভ্যাসবশত চোখ গেল পাখির বাসাটার দিকে। কিন্তু একই ভঙ্গিতে বসে থাকা পাখিটা কই? বাসায় তো নেই! তবে কি এর মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়ে গেছে? মা পাখিটা কি খাবারের খোঁজে গেছে? কিছুটা আনন্দে, কিছুটা কৌতূহলবশত ছুটে গেল ব্যালকনিতে। কিন্তু এ কি! আহারে! কিভাবে যেন বাসা থেকে ডিম দুটো মাটিতে পড়ে ভেঙে গেছে! কেমন তরল ও কিছুটা কঠিন চটচটে একপ্রকার পদার্থ ছড়িয়ে আছে ডিমের আসে পাশে। বুকের ভেতর চেনা পুরনো ব্যথাটা মোচড় দিয়ে উঠল নিপার। নিজের সাথে মা পাখিটার হৃদয়-যন্ত্রণার কেমন একটা মিল খুঁজে পেল নিপা!
0 comments: