প্রচ্ছদ নিবন্ধ : শ্রীশুভ্র
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
বহুগামিতা ও পুরুষতন্ত্র!
শ্রীশুভ্র
আমাদের ধনতান্ত্রিক ভোগবাদী দুনিয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ক্রমেই পেতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি! তাই প্রাপ্তির কোটা পুরোপুরি পুরণ না হলেই মনের মধ্যে জমে ওঠা ক্ষোভের বিক্ষুব্ধ বাষ্প, অসহিষ্ণু করে তোলে আমাদের! সেই অসহিষ্ণুতার অস্থিরতায় খেয়ালই থাকে না যে, আমার দেওয়ার কোটায় আর একজনের অপ্রাপ্তির ব্যাথা বেদনা রয়ে গেল কিনা! ফলে পারস্পরিক এই অসহিষ্ণুতার মল্লযুদ্ধে দাম্পত্যের ফাটল ক্রমেই প্রশস্ত হতে থাকে! তবু সমাজ সংসারের ঘেরাটোপে ভাঙ্গা সম্পর্ক নিয়েই নরনারী তাদের জীবন ধারণ করে চলে! মনের গহন গভীর অন্তরে তবু রয়ে যায় প্রেম! তবু এক হৃদয়ের প্রীতির আকাঙ্খা চেতন অবচেতনের দ্বন্দ্ববিধুর সংবর্তে স্বপ্ন বোনে মনের অজান্তে!
আর সেই দমবন্ধ পরিবেশে হঠাৎ যদি খোলা হাওয়ার টাটকা ছোঁয়া নিয়ে এসে উপস্থিত হয় কোনো নতুন সম্পর্কের হাতছানি, মন হয়তো প্রথমেই পা বাড়ায় না, শরীর হয়তো বিবেক বুদ্ধির নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে পারে না নিজেকে; তবু কিছু ভালোলাগার টুকরো টুকরো ক্ষণিক মুহূর্ত্ত শরীর মনের অন্ধগলিতে বিদ্যুৎচমকের মতো শিহরণ তুলে যায়! শিহরিত সেই সব মুহূর্ত্তের ভালোলাগাগুলো বুনে বুনে গড়ে উঠতে পারে ভালোবাসার নতুন একটি সাঁকো! হয়তো তা মজবুত নয়, হয়তো অজানা আশঙ্কা, বিবেকবোধের পিছুটান, নতুন মানুষটি সম্বন্ধে আশা নিরাশার দ্বন্দ্বদোদুল দোলাচল, অনেকটাই নড়বড়ে করে রাখে ভালোবাসার সেই সাঁকোর ভিত্তি- তবু দাম্পত্যের ফাটলের ফাঁকে ঝুলতে থাকে সেই সাঁকো!
একটু গভীর ভাবে তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, সবকিছু বাদ দিলেও দিনের শেষে আমরা একটু আদরের প্রত্যাশী! আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো এই আদরটিই যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়! দাম্পত্যের অভ্যাসে সেই আদরের ঐশ্বর্য্যটুকুই যেন একটু একটু করে ক্ষয় হতে থাকে! প্রথমে কেউই টের পাই না! কিন্তু যখন টের পাই, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, আদরের অনেকটা ঐশ্বর্য্যই ক্ষয় হয়ে গিয়েছে কখন! খেয়াল হয়নি আমাদের! খেয়াল হয়, যখন দুজনের মধ্যে কোনো একজনের জীবনে আদরের নতুন ঐশ্বর্য্য নতুন ছবি আঁকতে থাকে সম্পর্কের নতুন বিন্যাসে! সমাজ সংসার যে বিন্যাসকে নাক কুঁচকে বলবে বহুগামিতা! বহুগামিতার প্রধান স্তম্ভই কিন্তু আদরের ঐ উষ্ণতা!
বহুগামিতা মানুষেরই সহজাত প্রবৃত্তি, নাকি তাবৎ জীবকুলেরই সহজাত প্রবৃত্তি; সেটা অবশ্য বলতে পারবেন জীব বিজ্ঞানীরাই। আমরা যারা সাধারণ দিন আনি দিন খাই গোছের মানুষ, কিংবা মাসিক কারবারি, তারা অবশ্য বহুগামিতাকে সমাজ সংসার আইন আদালত চক্ষুলজ্জার দায়ে এড়িয়ে চলতেই অভ্যস্ত! সেটা যতটা না নীতিগত আদর্শের কারণে, তার থেকেও বেশি উপায়হীনতার কারণেই। কিন্তু যাদের উপায় অনন্ত! সমাজের তথাকথিত অভিজাত শ্রেণীর জীবকুল! সিনেমার হিরো হিরোইন সুপারস্টার মার্কা আইকনিক ফিগার? তাদের লাইফস্টাইলে একটু আধটু বহুগামিতার টাচ না থাকলে লাইমলাইটে থাকার সামান্য অসুবিধেই বুঝি ঘটে! বহুগামিতার গুজব- যে সুপারস্টারকে ঘিরে যত বেশি, তার জনপ্রিয়তার টি আর পি যেন ততই উর্দ্ধগতির হয়! অর্থাৎ সাধারণ জনগণের অবদমিত আকাঙ্খা প্রিয় স্টারদের ঘিরে কিছুটা তৃপ্ত হয়! বস্তুত আমাদের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মধ্যেই বহুগামিতার প্রতি একটি চোরা আবেগ সামাজিক সুবোধ পরিচয়ের আড়ালে সুপ্ত থেকেই যায়!
এই যে সামাজিক সুবোধ পরিচয়, আমরা অধিকাংশ মানুষই এইটির অধীনে নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে ভালোবাসি। তাই আমরা সাধু! কিন্তু সামাজিক সাংসারিক বেড়াজালের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে একটু আধটু সাহসী, কিছুটা শরমহীন হতে পারলেই আমাদের অবদমিত আবেগের যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে না তা নয়। তবে সবটাই পর্দার আড়ালে, লুকোচুরির সেন্টের মৌতাতে! কিন্তু কেন এই লুকোচুরি? সামাজিক বিধিনিষেধের ঘেরাটপের জন্যেই তো? তা বিধিনিষেধ থাকলেই লুকোচুরিরই বা কি দরকার? বিধিনিষেধের লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেলে লোপাট করলেই তো হয়! না! তা যে হয় না সেটা আমরা সবাই মানি। ঐ বিধিনিষেধটুকু না থাকলে আমাদের নিজেদেরই বিপদ! বিপদ কারণ, আমার প্রিয় মানুষটিও তো তখন সেই সুযোগটি নিতে দ্বিধা নাও করতে পারেন। অর্থাৎ নিজের জন্যে বহুগামিতার মৌতাতটুকু আমাদের অধিকাংশেরই আকাঙ্খার চোঁয়া ঢেকুড়ে জায়মান থাকলেও সেইটি আমাদের প্রিয়জনেদের ক্ষেত্রেও থাকবে- এইটি আমরা ভাবতেও পারি না! এ যেন নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা!
তাই আমাদের সমাজ সংসারে বহুগামিতাকে আমরা অনৈতিকতার তকমায় মুড়ে রেখে নিশ্চিন্তে নিদ্রা দিতে পছন্দ করি! আর মনের সঙ্গোপনে স্বপ্নের আলোছায়ায় তাকে লালন করি! এই যে দ্বিচারিতা এইটিই আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট! বিশেষতঃ বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর। বস্তুত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা আগারও খেতে যেমন ভালোবাসি, তেমনই গোড়ারও কুড়োতে ভালোবাসি, তবে লোকচোক্ষুর অন্তরালেই! সেটাই আমাদের স্বভাব ধর্ম। কিন্তু এইখানেই আরও একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের, একটু যদি বিষয়ের গভীরে যেতে চাই। বহুগামিতার প্রতি এই যে সহজাত আকর্ষণ, এইটি কি নারী পুরুষ নির্বিশেষেই? আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সংসারে সামাজিক ভাবে নারী পুরুষের অবস্থানগত ফারাকটা কি আকাশ পাতাল নয়? পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় আবিশ্ব সকল দেশেই পতিতালয়গুলি কি এই বহুগামীতারই চর্চাকেন্দ্র নয়? কিন্তু এইগুলিতে কাদের ভীড়, সে কথা আমরা সবাই জানি। তবে তো একথাই বলা যায়, বহুগামিতা মানুষের নয়, শুধুমাত্র এবং শুধুই পুরুষেরই সহজাত প্রবৃত্তি! নারীর বহুগামিতাকে প্রশ্রয় দেবার জন্যে তো আর পতিতালয় নয়! যদিও বিতর্কের নেশায় কেউ কেউ এই বলে কূটতর্ক জুড়ে দিতে পারেন যে, পতিতালয়ের যৌনকর্মীরা কি বহুগামী নয়? তারা কি প্রতিদিন একটিই খদ্দেরের সাথে ব্যাবসা করে চলে? তা তো নয়? তাহলে! তাহলেই তো কথাটা উঠছে, পতিতালয়গুলি যাদের দাক্ষিণ্যে রমরমিয়ে চলে, সেই পুরুষসম্প্রদায়ের অধিকাংশেরই ঘরসংসারে দাম্পত্য ভালোবাসার সুখী গৃহকোণ থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রবৃত্তির অভিমুখ পতিতালয়মুখী হলেও, অধিকাংশ যৌনকর্মীরই কোনো সুখী দাম্পত্য গৃহকোণ থাকে না। থাকলে পতিতালয়গুলি ফাঁকা পড়ে থাকতো! তাই আমাদের সমাজ সংসারে বহুগামিতা পুরুষেরই একটি রোগ! যাকে আমরা প্রবৃত্তি বলে দোষারোপের পরিসরটিকে কিছুটা হালকা করতে চাইছি! আবার অনেকে একথাও বলবেন, সভ্যতার ঊষালগ্নে সমাজ তো বহুগামিই ছিল! ছিল, কিন্তু সেটা কি কোনো সমাজ ব্যবস্থা ছিল আদৌ? না কি সমাজ সংসার গড়ে উঠেছিল বহুগামিতাকে পরিহার করার হাত ধরেই!
আর এইখানেই ইতিহাস আমাদেরকে আরও একটি ভয়াবহ সত্যের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়! বহুগামিতাকে পরিহার করার জন্যেই কি সমাজ সংসার গড়ে উঠেছিল? নাকি নারীকে পুরুষের অধীনে তার নিয়ন্ত্রণে বেঁধে ফেলার জন্যেই এবং সম্পত্তির ভোগসত্ত্ব পুরুষের এক্তিয়ারে ধরে রাখার জন্যেই সমাজ সংসার গড়ে উঠেছিল! অর্থাৎ বাহুবলে বলীয়ান পুরুষ তার সম্পত্তি ভোগবাদের ধারণায় নারীকেও একই সূত্রে বেঁধে ফেলার লক্ষ্যেই কি বহুগামিতার বিরুদ্ধে সমাজ সংসার গড়ে তোলেনি? তবে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে, নারীকে বহুগামিতা থেকে আটকাতেই অন্যান্য সম্পত্তির মতোই তাকে নিজের এক্তিয়ারে বেঁধে ফেলার জন্যেই পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজ সংসারের উৎপত্তি! আর তাই বহুগামিতার বিরুদ্ধে এত বিধিনিষেধের কড়াকড়ি।
সবটাই নারীকে নিজের অধীনে বেঁধে রাখার জন্যই। তাই বহুবিবাহ পুরুষের ক্ষেত্রে আজও কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায়ে প্রচলিত থাকলেও নারীর ক্ষেত্রে কোনো কালেই তা স্বীকৃত ছিল না! যারা এই প্রসঙ্গে দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামীর দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাইবেন, তাদের সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে, সেই ঘটনা দ্রৌপদীর ইচ্ছাধীনে ঘটেনি! অর্থাৎ আমরা পুরুষরা বহু মহিলাতে আসক্ত হলেও সেটা চলে যায়, কিন্তু আমার গৃহলক্ষ্মী যেন দ্বিতীয় কোনো পুরুষের স্বপ্নও না দেখেন! দেখলেই পাপ! এই যে পাপ পূণ্যের ধারণা সেটাও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীকে অবদমিত রাখার কৌশল মাত্র! কিন্তু নারী! নারী কি পুরুষের মতোই বহুগামী? প্রকৃতি নারীকে যেমন দুহাত ভরে উজাড় করে সাজিয়ে দিয়েছে, ঠিক তেমনই নারীকে মতৃত্বের লক্ষণ রেখায় আবদ্ধ করে রেখেছে স্নেহ মায়া মমতার সৌকর্যে। পুরুষের গর্ভধারণ করতে হয় না বলেই তার পক্ষে বহুগামিতা যতটা রমণীয়, নারীর পক্ষে ততটাই অসুবিধেজনক। নারী তাই সহজাত ভাবেই একটি সুখী গৃহকোণের স্বপ্নেই বিভোর থাকতে ভালোবাসে আজীবন, সেখানেই তার নিশ্চিন্তি! এই নিশ্চয়তা, বিশেষতঃ আমাদের মতো অনুন্নত দেশে, যেখানে নারীকে স্বামীর খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্যে নির্ভর করতে হয়, নারী জীবনের প্রধানতম বিষয়! নারী তাই আত্মরক্ষার তাগিদেই বহুগামী হয়ে উঠতে পারে না সহজাত ভাবেই। আবার সেই আত্মরক্ষার তাগিদেই অবস্থাবৈগুণ্যে তাকে বাসা বাঁধতে হয় পতিতালয়েও!
অর্থাৎ এইখানে অর্থনৈতিক স্বঅভিভাবকত্বের বিষয়টিই নারীর জীবনে প্রধানতম বিচার্য বিষয়! তাই সবাই অপর্ণা সেন বা তসলিমা নাসরীন হয়ে উঠতে পারেন না! আর তখনই বিতর্কবাদীরা নড়েচড়ে বসবেন! তবে তো এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজেই নারীরও বহুগামী হয়ে উঠতে বাধা নেই! আলোচনার শুরুতেই সেকথার উত্তর দেওয়া আছে! সমাজের অভিজাত শ্রেণীর পক্ষে যা সহজ শোভনীয়, সাধারণ জনজীবনে, সেইটিই চূড়ান্ত কঠিন ও সামাজিক লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না কি? তাই বাস্তবতার ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পেলে আমরা অনুধাবন করতে পারি আমাদের সমাজ সংসারে নারী পুরুষের অবস্থানগত বৈষম্য কতটা গভীর! এবং সেই বৈষম্যের হাত ধরেই নারী পুরুষের মানসিকতার পরিসরেও আকাশ পাতাল তফাৎ! তফাৎ তাদের সহজাত প্রবৃত্তিতেও! তাই বহুগামীতা পুরুষেরই সহজাত প্রবৃত্তি, নারীর নয়। অন্তত পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজ ব্যবস্থার প্রতিদিনের বাস্তবতার পরিসরে!
কিন্তু বহুগামিতা কি শুধুই ঐ আদরের উষ্ণতা যেকথা দিয়ে শুরু করে ছিলাম আমরা! এবং যে আদরের কথা উঠছে, সে কতটা শারীরীক আর কতটাই বা মানসিক! সেই আদরের প্রয়োজন কি পুরুষের জীবনেই বেশিমাত্রায় প্রয়োজন নারীর তুলনায়? প্রশ্নগুলি আমাদের সমাজবাস্তবতার প্রেক্ষিতে বেশ জটিল বলেই মনে হয়! প্রসঙ্গত প্রেম ভালোবাসা আদর, যৌনতৃপ্তি নারী পুরুষ সকলেরই জন্য সমান প্রয়োজন! লিঙ্গভেদে তার যে কোনো তারতম্য হয় না, সে কথা যেন আমরা কেউই অস্বীকার না করি! কিন্তু পুরুষতন্ত্র তার সংকীর্ণ স্বার্থজালে নারী ও পুরুষের জন্যে সামাজিক রীতি নীতির পার্থক্যের সুস্পষ্ট বিভাজন তৈরী করে রেখেছে! তার রূপরেখা দেশ কাল সমাজ ধর্মের প্রেক্ষিতে যতই ভিন্ন হোক না কেন! আর সেই বিভাজনের হাত ধরেই, আজও যৌনকর্মী বলতে সাধারণ ভাবেই নারীকেই বোঝায়! পৃথিবীর সকল দেশেই বেশ্যালয় থাকলেও, কোনো দেশেই পুরুষ যৌনকর্মীদের বেশ্যালয় গড়ে ওঠেনি! যদিও সাম্প্রতিক কালে পুরুষ যৌনকর্মীর সংখ্যাও ধীর গতিতে হলেও ক্রমবর্ধমান! এই চিত্রটি অন্তত কি উন্নত, কি অনুন্নত সকল দেশেই কম বেশি সমধর্মী। অর্থাৎ সেই সত্যই ঘুরে ফিরে আবারও ফিরে আসে, বহুগামিতার ক্ষেত্রটি পুরুষের জন্যে যতটা উন্মুক্ত, নারীর জন্যে তার সিকি ভাগও নয়! কিন্তু বহুগামিতা যদি আদরের উষ্ণতারই অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হয় তাহলে তো তা নারীর জন্যেও সমান ভাবেই প্রযোজ্য! এমনকি তা যদি যৌনতৃপ্তির রাজপথও হয় তবুও তা নারী পুরুষ উভয়েরই জন্য সমান সত্য হওয়ারই তো কথা! কিন্তু সমাজবাস্তবতার চিত্র তো ভিন্ন কথাই বলে! আর বলে যে, সেকথা আমরা পূর্বেই আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি! আর এইখানেই শারীরীক কারণেই নারী পুরুষের থেকে অধিক রক্ষণশীল! যৌনতৃপ্তির একদিকে যেমন শরীর মনের উল্লাস থাকে, নারীর পক্ষে অপরদিকে ঠিক তেমনই রয়ে যায় অনাকাঙ্খিত মাতৃত্বের ঝুঁকি! যদিও বিজ্ঞানের হাত ধরে আজ সেই অসুবিধে অনেকটাই অপসৃত! কিন্তু কোনোকালেই পুরুষের পক্ষে এই ঝুঁকিটা না থাকার কারণেই বহগামিতা তার কাছে সহজাত একটি প্রবৃত্তি, যে কথা আমারা পূর্বেই উল্লেখ করেছি! দুঃখের বিষয় ঠিক এই কারণেই; পুরুষের এই বহুগামিতা প্রবৃত্তির প্রয়োজন মেটাতেই পৃথিবীর আদি ব্যাবসা বলতে নারীর দেহব্যাবসাকেই বোঝায়! এমনকি অনেকেই মনে করেন, এই ব্যাবসাটি আজও টিকে আছে বলেই; ঘরে ঘরে নারীরা তুলনামূলক ভাবে অধিকতর সুরক্ষিত! অর্থাৎ দুর্দমনীয় পৌরুষের এই বহুগামিতা আদতেই সমাজস্বীকৃত প্রথমাবধি! আর তখনই এই কথাও যেন সত্য হয়ে ওঠে যে বহুগামিতা মূলতই যৌনতৃপ্তি জাত একটি শারীরীক প্রক্রিয়া মাত্র! যে তৃপ্তির অধিকার সামাজিক ভাবেই পুরুষতন্ত্রে পুরুষের জন্যেই স্বীকৃত! কোনো নারী যদি সেই অধিকারের বলয়ে পা রাখতে প্রয়াসী হয়, তখনই সমাজে গেল গেল রব ওঠে! তখনই আমরা বহুগামিতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠি! এইভাবেই পুরুষতন্ত্র নারীর মাতৃত্বের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহুগামিতাকে পুরুষের জন্যেই সুরক্ষিত রেখেছে আবহমান কালব্যাপি।
বহুগামীতা কি কেবল ই পুরুষের সহজাত ধর্ম ? বিবরতন বিগ্যান কিন্তু তা বলেনা ! বংশ বৃধির তাগিদেই পুরুষ বহুগামী হয় আর সেই বংশকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদেই নারীও বহুগামী হয় !
ReplyDelete