0

ছোটগল্প : তন্ময় গুপ্ত

Posted in


ছোটগল্প



সম্পর্ক
তন্ময় গুপ্ত



[দৃশ্য-১] 

দাদা...আ...আ - বিনয় কে দেখে বিজয়ের গলা দিয়ে আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। বিনয় চমকে উঠে স্কুটার থামিয়ে বিজয়ের কাছে আসে। মেজ ভাইয়ের পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করে, কি হয়েছে রে? 

বিজয় কিছু বলেনা। শুধু দু চোখের কোনে জল চিকচিক করে ওঠে। অস্ফুটে বলে ওঠে,  পচা-কালু আবার......

বিনয় বলে- বস্‌তো পিছনে, দেখি জানোয়ার গুলোকে একবার।

বিজয় বিনয়ের স্কুটারের পিছনে উঠে বসে। সেই মুহূর্তে দুই ভাই ভুলে যায় যে ওরা আর একসাথে থাকেনা। ভুলে যায় ওরা বছর খানেক আগে লাঠালাঠি করেছে। ভুলে যায় বড়ছেলে আজ বাড়িছাড়া । আলাদা হয়েছে বৌ কে নিয়ে।



[দৃশ্য-২]

বিরাজ বলে- সেকি রে মেজদা ? আমি এখানে একটা বাড়িতে একা থাকব কি করে? তোদের ছেড়ে কি আমি কখনো থেকেছি? আর একটু পর তোরা চলে যাবি ভাবলেই কান্না পাচ্ছে

বিজয় বলে- বড়দা কে দেখে শিক্ষা হলোনা? সারাজীবন যাতে কাঁদতে না হয় তাই এ কদিন একটু কেঁদে নে ...

লক্ষ্মী ভাই আমার। আমরা তো কাছেই রইলাম। যখন ইচ্ছা হবে চলে যাবি।

ছোট ভাই কে জোর করে আলাদা থাকতে অভ্যস্ত করায় বিজয়।



[দৃশ্য-৩]

মহাষষ্ঠী। বোধন এর ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে। সন্তানদের মঙ্গল কামনায় সুপ্রভা দেবী সারাদিন উপোষ ছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় এখন ফল মিষ্টি খেয়ে উপোষ ভাঙ্গতে বসেছেন।

বিজয় বলে- কি হলো মা? খাও! দেখো তো কালাকাঁদ টা কেমন বানিয়েছে। সত্যদা তো জোর করে এতগুলো গছিয়ে দিল। আবার বলে- তোমাদের বাড়ীতে কালাকাঁদ কুড়ি পিসের নিচে যায় না। বোঝো কাণ্ড !

সুপ্রভা আনমনে ভাবেন। সত্য তো ঠিকই বলেছে, সে একাই পাঁচ- ছটা কালাকাঁদ খেত। মিষ্টিগুলোর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে চলে সুপ্রভাদেবীর হৃদয়। মুখে উঠতে চায় না। পাগলাটে বড় ছেলেটার মুখ মনে পড়ে।

বাইরে স্কুটার থামার শব্দ। উৎকর্ণ হয়ে তাকান।

ঝড়ের গতিতে বিনয় বেশ জোরে জোরে বলতে বলতে ঘরে ঢোকে- স্কুটার হারামজাদা আর খারাপ হওয়ার জায়গা পেল না। ঢুকতে চাই না, তাও...। আবার সব বলবে ছুতো । বয়ে গেছে... মা এর সামনে এসে দাঁড়ায়। একদম ছোট্টবেলার মতো হাঁ করে।

সুপ্রভা একগাল হেসে বলেন-বিনু! বাবা এসেছিস! নে বাবা, খা! ...দুটো কালাকাঁদ একসাথে মুখে পুরে দেন।

বিনয় নিঃশব্দে মিষ্টি খেতে থাকে। দু গাল বেয়ে গরম ফোঁটায় কান্না গড়াতে থাকে। মোছার চেষ্টাও করেনা। শুধু হাতের প্যাকেট টা মা’র কাছে রেখে বলে, শাড়ি। ইচ্ছে হলে পরো না হলে ফেলে দিও। একটা মিষ্টির হাঁড়ি নামিয়ে রাখে। বলে গরম পানতুয়া। তুমি খেও না আবার। বলেই ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রভাদেবী মনেমনে হাসেন। বিজয়টা গরম পানতুয়া খেতে বড্ড ভালোবাসে।

0 comments: