মুক্ত গদ্য : বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
Posted in মুক্তগদ্য
মুক্ত গদ্য
কুড়ি কুড়ি বছরের পার
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
অনেকদিন পর অগ্নিদার সাথে দেখা হল রাস্তায়। বছর কুড়ি হবে বা আরও বেশি। কথা হলনা কিছুই। তার চলার ছন্দে ব্যস্ততার নির্ভূল দিনলিপি। বুঝতে পেরেছিলাম তাই গতিরোধ করিনি। কেমন আছো অগ্নিদা? কি করছো এখন? চেহারা ভেঙ্গে গেছে কেন? কাঁধে সেই ঝোলা ব্যাগ কোথায় হারিয়ে গেছে? এইসব অনেক প্রশ্ন ছিল আমার। জানা হয়নি কিছুই।
একসময় আমাদের পাড়ায় থাকত অগ্নিদা। ভাড়াবাড়ি। তক্তাপোষ বা খাট কিছুই ছিলনা সে বাড়িতে। বইয়ের স্তুপের উপর বিছানা পেতে আনন্দে জীবনযাপন। সমাজবদলের কথা বলত হৃদয় থেকে। বাতাসে উড়ে বেড়াত স্বপ্নমাখা আদর্শ। ভালোবাসায় মমতায় বুকপকেটে যত্নে সাজিয়ে রাখতাম সেইসব কথাবার্তা। অগ্নিদাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতাম। ঈশ্বরর মতো। ওর স্বপ্নময় চোখদুটির দিকে তাকিয়ে থাকতাম বিস্ময়ে, মুগ্ধতায়।
সেদিন অগ্নিবর্ণ মুখার্জীই ছিল আমাদের আদর্শ-ধ্রুবতারা। কারও রক্তের দরকার, অগ্নিদা হাজির। পয়সার অভাবে কোনও মেধাবী ছাত্রের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অগ্নিদা তখন গৌরী সেন - আমাকে বলিস নি কেন? আমি কি মরে গেছি? টাকাপয়সায় কিছুই হয়না, মেধাই তো আসল সম্পদ রে --- বলে নিজের সঞ্চয় শেষ করে দিয়েছে নির্বিকারে। কেউ অনাহারে আছে শুনলে অগ্নিদা ফায়ার- এরা কি জানেনা, আমি এদের পরিবারেরই একজন ।
অগ্নিদার বাড়িতে সচ্ছলতা ছিলনা কোনকালে। দুটো ছেলে দুটো মেয়ে চিররুগ্ন স্ত্রী, অথর্ব বাবা আর অন্ধ মা – এই নিয়ে ভরন্ত সংসার। তবু স্বপ্ন আর সংকল্পের দৃঢ়তা দেখেছি তাদের চোখে।
কতবার বলেছি-দাদা একটু ভেবেচিন্তে, ছেলেদের ভবিষ্যৎ, মেয়েদের বিয়ে…
কথা শুনে অগ্নিদা হেসেছে অলৌকিক হাসি - সে এখন দেরি আছে, ততদিনে সমাজতন্ত্র নিয়ে আসব, তুই দেখে নিস, বিপ্লব, ঠিক সেদিন আসছেই.. উজ্জ্বলতায় আরও সুন্দর হয়ে যেত অগ্নিদার চোখ।
কুড়ি বছরে অনেককিছু বদলে যায়। হাওয়া বাতাস স্রোত।
অগ্নিদার চোখে কি এখনও স্বপ্নের দাগ লেগে আছে - আমার দেখা হয়নি কিছুই।
0 comments: