প্রবন্ধ : পিয়ালী বসু
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
বিবাহের উৎস সন্ধানে
পিয়ালী বসু
বিবাহ শব্দটাই একটা বিতর্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে, পাড়ার চায়ের দোকানে, কলেজ ক্যান্টিনে, কফি হাউসে, এমনকি নিভৃতে প্রেম করতে করতেও এই বিষয়টি নিয়ে অনায়াসেই বেশ বিতর্ক তৈরি হয়ে পড়ে।
বহুল চর্চিত এই বিষয়টির উৎস সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই ইতিহাসের প্রসঙ্গ এসে পড়ে, বলা যেতে পারে অ্যাংলো স্যাক্সন জনগোষ্ঠীই প্রথম এই বিষয়ের অবতারণা করে, তাও আবার ৪,৩৫০ বছর আগে ।
Stephanie Coontz এর (Marriage: A History বইটির লেখিকা ) উক্তি অনুযায়ী জানা যায় মূলত ব্যাবসার উদ্দেশ্যেই অ্যাংলো স্যাক্সন জনগোষ্ঠী এই বিবাহের প্রথম ব্যাবহার শুরু করে । তারপরে অবশ্য অবধারিত ভাবে এসে পড়ে নারীকে একান্তই নিজের সম্পদ ভাবার সেই একচেটিয়া পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, অর্থাৎ ৩০ জনের জন্য একজন নারী নয়, একজনের জন্যই একজন নারী ! তাই বিবাহ ! তাই একসাথে সারাজীবন পাশে থাকার অঙ্গীকার !
একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিবাহ ব্যাপারটায় প্রধান দুই অংশ গ্রহণকারী / কারিণী দের প্রায় কোন মতামতই ছিল না, প্রেম এর অস্তিত্ব ছিলই না সেই বিয়েতে, ছিল রাজনৈতিক এবং বৈষয়িক চিন্তা ! Decretum Gratiani বইটি আমাদের এও জানায় যে, বিবাহে সেসময়ে পাত্রীর প্রায় কোন প্রত্যক্ষ ভূমিকাই ছিলোনা, সমস্ত রকমের মতামত নিতেন পরিবারের অন্যান্য বয়জ্যেষ্ঠরা সদস্যরা, বিশেষত পাত্রীর বাবা।
আমরা যে সময়ের কথা আলোচনা করছি সেসময়ে রোম্যান ক্যাথলিক চার্চের হাতেই ছিল সর্বাধিক ক্ষমতা , তারাই প্রথম স্থির করে পুরোহিত স্থানীয় কারোর মন্ত্র পাঠের মাধ্যমেই বিবাহ তার আইনি মর্যাদা পাবে (বিবাহ রেজিস্ট্রি ভুক্ত করার প্রচলন আরও অনেক পরে কার্যকরী হয়), ১৫৬৩ সালে ট্রেন্ট কাউন্সিলে ইশ্বর কে সাক্ষী রেখে যে বিবাহ সম্পন্ন হয়, তা পরবর্তী কালে ক্যানন আইনেও নথিভুক্ত হয় ।
আস্তে আস্তে বিবাহ পদ্ধতিটির মধ্যে সুক্ষ ভাবে জায়গা করে নেয় ধর্ম । ক্যাথলিক চার্চ শেখায় কি ভাবে নারীর সম্মান রক্ষা করতে হয়, শেখায় ডিভোর্স পাপ !
হিন্দু বিবাহ
"যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম"
ধর্ম, অর্থ, কাম, ও মোক্ষ , এই চারটি কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যেই হিন্দু বিবাহের প্রচলন হয় বলে জানা যায়। ইতিহাস আমাদের জানায় হিন্দু বিবাহ প্রধানত অষ্ট প্রকার, অর্থাৎ আট রকমের বিবাহের বিবরণ পাওয়া যায় ।
ব্রাহ্ম বিবাহ
দৈব বিবাহ
প্রজাপত্য বিবাহ
গান্ধর্ব বিবাহ
অসুর বিবাহ
আরশো বিবাহ
রাক্ষস বিবাহ
পৈশাচ বিবাহ
রীতিমত জন্ম কুণ্ডলী মিলিয়ে বিবাহ হত হিন্দুদের (এখনও হয় তবে সংখ্যাটা অনেকটাই কম )। পাঁজি দেখে শুভ দিন নির্ধারণ করতেন পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা, এবং সেই বিয়েতে পাত্রী বা পাত্রের ভুমিকা ছিল বেশ নগন্যই ।
লাল রঙ হিন্দুদের কাছে শুভত্বের প্রতীক, তাই বিবাহে পাত্রীর পরনে থাকতো লাল শাড়ি (প্রথম দিকে তাঁত এর শাড়ি , পরবর্তী কালে বেনারসি , বালুচরি , কাঞ্জিভরম আরও কত কি ), ব্রাহ্মণ পুরহিতের মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে সম্পন্ন হত বিবাহ, পাত্রী তথা স্ত্রী র সিঁথিতে সিঁদুর দানের মাধ্যমেই বিবাহ তার মর্যাদা রক্ষা করতো ।
খ্রিস্টান বিবাহ
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়, Protestant ও catholic, খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী বিবাহ বিষয়ে রোমানদের পথ অনুসরণ করে , তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয় চার্চে ফাদার বা পাদ্রী কে সামনে রেখে বাইবেলের মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে । খ্রিস্টান দের কাছে সাদা রঙ পবিত্র তার প্রতীক, তাই সাদা রঙের গাউনে পাত্রী কে ও সাদা সুট এ পাত্র কে সজ্জিত করা হয় ।
আসলে বিবাহ ব্যাপারটা হল একসাথে সারাজীবন থাকার আইনি অঙ্গীকার ।
ইসলামীয় বিবাহ
মুসলমান বা ইসলামীয় গোষ্ঠীর কাছে নিকাহ সবচেয়ে পবিত্র ঘটনা, তাদের চোখে বিবাহ একটা legal contract যেখানে পাত্রী তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে তার জীবন সঙ্গী নির্বাচিত করেন, অর্থাৎ এক্ষেত্রে নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় ।
বিবাহ অর্থে সারাজীবনের নর্ম সহচরী বা কর্ম সহচর ! ইসলামীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ডিভোর্স খুব জনপ্রিয় না হলেও অচল নয় , Nikāḥ al-Mutʿah নামক temporary বিবাহের কথাও জানা যায়, যা মূলত শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ অবশ্যই জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কিন্তু তা কখনোই বাধ্যতামুলক নয়, পুরুষ এবং নারী উভয়েরই একা জীবন কাটানর স্বাধীনতা আছে । বিবাহে পাত্রীর “কবুল হায়” এই উক্তির প্রাধান্য সর্বাধিক ! তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিকাহ সম্ভব নয় । মৌলবি কে সাক্ষী রেখে তাঁর মন্ত্রে মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় নিকাহ।
It's never being to old to hold hands,
একা আসা একাই যাওয়া, তবুও মাঝের সময়টা কাটানোর জন্য সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজা ! সামাজিক আমরা একা থাকতে বড়ই ভয় পাই, তাইতো বিবাহ, তাইতো মাঝের সাঁকোটা একসাথে পার হওয়ার জন্য একসাথে থাকার অঙ্গীকার !
আমার কিন্তু বেশ কিছু অসঙ্গত চোখে পড়ল। প্রথমতঃ আরশো বলে কোন শব্দ নেই। কথাটা আরশ এবং তার মানে সিঙ্ঘাসন। বর্তমান ঐতিহাসিক রা যেখানে ঋগবেদের সময় কাল কে ই ৫০০০ বছর আগে ব্লছেন সেখানে ৪৩৫০ বছর আগেই বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান টি তৈরী হয়েছিল কিনা আমার বেশ সন্দেহ আছে ! প্রজাপত্য বিবাহ এখনো চালু আছে। গান্ধর্ব বিবাহ রুপ পালটে লিভ-টুগেদারের রুপ নিয়েছে। পৈশাচ বিবাহ মানে ধর্শন !! তখনো ছিল, এখনো আছে ! বরং হিন্দু-বিবাহের আরো দু'টি সংজোযন ঘটেছে। একটি স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট এবং আর একটি হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট !
ReplyDelete' এমনকি নিভৃতে প্রেম করতে করতেও এই বিষয়টি নিয়ে অনায়াসেই বেশ বিতর্ক তৈরি হয়ে পড়ে। ' thanks for sharing.
ReplyDelete