ছোটগল্প : ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
পারমিতা ...
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আকাঙ্ক্ষা,পারমিতা দুই বোন । দুজনের বয়েসের ব্যবধান মাত্র এক বছর। দুই বোনই এক ইংলিশ মিডিয়াম কোএড্ স্কুলে পড়ে । স্কুলবাস আসে সকাল ৭.৩০ টার সময় । শীতে কুঁকড়ে দুজনে বিছানা থেকে ওঠে সকাল ৬.৩০ টার সময়। সটান বাথরুমে ঢুকে নিত্যকর্ম সেরে বেরুনোর সময় ৭.০০ টা বেজে পাঁচ কি দশ মিনিট । তারপর খাওয়া সেরে বাসের জন্য অপেক্ষা । আরম্ভ হয় সারা দিনের জমে থাকা কিছু গল্প আর বয় ফ্রেন্ডদের নিয়ে কিছু ছুঁক ছুঁকুনির কথা । যাকে বলে চুলবুলি লেড়কি, হিন্দিতে । উপায় নেই যুগের টানে এরকমটা হবেই । মানুষের কিছু জেনেটিক আর একুয়ার্ড ক্যারেক্টার থাকে । কোন কোন সময় একুয়ার্ড ক্যারেক্টারটা বেশি মাত্রায় প্রকাশিত হয় । সেগুলো ভাল হতে পারে, আবার খারাপ ও হতে পারে । যদি খারাপের দিকে যায় তবে সর্বনাশ। সামাজিক দিক থেকে ভয়ঙ্কর ও হতে পারে। যা বাবা মা ভাই বোনের মাথা ব্যথার কারণ হয়। ধরা যাক, সেইরকম ক্যারেক্টারেরই মেয়ে পারমিতা । আকাঙ্ক্ষা একটু আলাদা ও পড়াশুনোর গল্প বেশি করে বন্ধুদের সঙ্গে । কিছু প্রবলেমের কথা যা হয়তো সলভ হচ্ছেনা, বা অন্য কিছু । ও পড়াশুনোতে ভাল । ক্লাসে বরাবর ফার্স্ট হয়। পারমিতা ঠিক তার উল্টো। ও বলে, টিভি প্রোগ্রাম, শাহরুখ্ সলমন হৃত্তিক আর বাংলার দেব ছাড়া ভাবতেই পারিনা । ক্লাস বাঙ্ক করে সিনেমা যাওয়ার এক্সাইটমেন্টই আলাদা । । টিচারকে এফ বি তে জন্মদিনে গিফট পাঠানো । ‘লিটিল হনি’ বলে বয় ফ্রেন্ড কে চুমু খাওয়া । এসবে থ্রীল আছে, বল! -কথাগুলো বলে দম নেয় । ওর দিদি এসব শুনেও শোনেনা ।
এরমধ্যে আকাঙ্ক্ষা সি বি এস সি তে ৯৮% নাম্বার রেখে পাস করেছে । কলেজে সাইন্স নিয়ে পড়ছে । সেদিন আকাঙ্ক্ষা খবরের কাগজে খবরটা পড়ে আতঙ্কিত হয়, কারণ ও প্রত্যেক দিন বাসে কলেজ যায় ফেরে, প্রায় রাত ৭ টার পর । খবরটা এই রকম :-“সকাল দশটায় ওদের কলেজের কাছাকাছি এক এলাকায় চলন্ত বাসের ভিতরেই এক তরুণীর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিল জনা চারেক মদ্যপ যুবক । উপায় না দেখে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দিয়ে নেমে ছুটতে ছুটতে কলেজে পৌঁছলেন ওই তরুণী। জনা কয়েক সহপাঠীকে কোনও মতে ঘটনাটা জানিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারালেন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কলেজের ছেলেদের প্রচেষ্টায় ।
এই শহরের বুকে দিনের বেলায় আরও এক বার এই ঘটনা, শহরের রাস্তায়
মহিলাদের নিরাপত্তার অভাবটাকেই ফের বেআবরু করে দিল। দিল্লির বাসে তরুণীকে গণ-ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, সে প্রতিবাদে গলা মিলিয়েছে আমাদের শহরও । কিন্তু তার পাশাপাশি এই শহরের বাস এবং রাস্তাই বা আলাদা কিসের, এ প্রশ্নটাও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে ।
কাকে বলবে? বোন তো পাত্তা দেয়না। বলে, তোর বয় ফ্রেন্ড থাকলে ওই তোকে প্রটেক্ট করবে । দিদি তুই ভারি আন-স্মার্ট আর ভীতু । মা'কে বললে বলবেন আর পাঁচটা মেয়েদের মতন তুমি হতে চেষ্টা কর । এসব কথা মনের ভেতর রেখে গুমরচ্ছিল আকাঙ্ক্ষা । ও কি সত্যি আর পাঁচটা মেয়ের মতন নয় ? তবে ওর পড়াশুনো কি বৃথা ! মনের মধ্যে তোলপাড় করে সব প্রশ্ন । আয়নার সামনে নিজেকে দেখে । ভরা যৌবনে মেয়েদের যা সৌন্দর্যের বিকাশ হয় ওর ক্ষেত্রে সেরকম কিছু পরিপ্রকাশ পায়নি। খুব সাদা মাটা মেয়ে । সাজতে জানেনা বললেই চলে । এতো সাধারণ মেয়ে আজকাল খুব একটা চোখে পড়েনা।
পরমিতা ঠিক উল্টো। প্রসাধণের সামগ্রী কেনার চেয়ে গিফট বেশি পায়। বয়ফ্রেন্ডের অভাব নেই । পারমিতা কে দেখতে সুন্দর এবং চোখ ধাঁধাঁনো চেহার । কস্মেটিক্স এর বাহারে ভুরু ভুরে গন্ধ । ছেলেদের মন ভোলানো চেহারা । এখন থেকেই ডেঁপো । পডাশুনোয় অষ্টরম্ভা । কোনমতে পাস করে । টুকলি করতে ওস্তাদ্ বোধহয় । কিন্তু বুদ্ধি প্রখর । ছেলেদের মাথায় টুপি পরাতে ওস্তাদ । আগেই বলেছি আকাংক্ষা ক্লাসে ফার্স্ট হয় । রিপোর্ট কার্ডে সই করার সময় বাপি আকাংক্ষাকে খুব উৎসাহ দিয়ে বলেন, ১২ ক্লাসে সাইন্সে র্যাঙ্ক রাখতেই হবে । এখন থেকে আই.আই.টির এন্ট্রান্সের জন্য তৈরি হও । তোমাকে খড়গপুর আই.আই.টিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পডাবো । ভাল রেসাল্ট করলে জি.আর.ই দিয়ে আমেরিকা পাঠাবো। বি.টেক্ এর পর হয় গেট্ দাও, নয় ক্যাট্ দাও । যদি এগুলো না দাও তবে ভাল রেসাল্ট করলে জি.আর. ইটা দেবে । এখন থেকে তৈরি হও আমেরিকা যাওয়ার জন্য ।
পারমিতা ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে যায় । বাপী জানেন ওর রেসাল্টের ব্যাপার ।
বাপী বলেন, মেয়েদের পড়াশুনা যে কত প্রয়োজন, তা এখন থেকে না বুঝলে
পরে আর সময় থাকবেনা, মা । পড়াশুনোতে মন দাও । মেয়েদের রূপ যৌবন
গুণ তিনটে দিয়ে বিচার করার সময় রূপ যৌবন দুটোই কিন্তু বয়স আধিক্যে ফুরিয়ে যায় মা; থাকে শুধু গুণটা । ওটাই শেষ জীবনের ভরসা । তোমার বন্ধুদের জিজ্ঞাসা কর ; ওরা কি ক্লাসে লাস্ট বেঞ্চে বসা মেয়েকে ভাল বলবে ! বাপীর টাকা মধু দাদার ভাঁড় নয়, যে অফুরন্ত থাকবে । চিরদিন তো আমি আর তোমার মা থাকবেন না । যাও মাকে দিয়ে সই করাও । ওঁচা মেয়েদের আমি পছন্দ করিনা । তোমার তো সব বায়না শুনি, তবুও তোমার এতো অধঃপতন কেন? লজ্জা করেনা ? দিদিকে দেখে শেখো । বাপীর কথা শুনে ওর চোখে জল আসে । চোখে জল নিয়ে বলে, পরের বার ভাল করব । গড প্রমিস, বাপি । এবারের মত সই করে দাও ! থাক, আর গড্ কে টেনো না ! তিনি তোমাকে অহোরাত্র দেখছেন। তোমার প্রাইভেট ট্যুটার এর প্রয়োজন হলে রাখো । কিন্তু রেসাল্ট ভাল হওয়া চাই।
মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আঁচল ঠিক করতে করতে বলেন, রাম রাম, প্রাইভেট টিউটর ? রক্ষে করো ! আরেক ফ্যাসাদ বাঁধাবে । ও যা পড়ছে পড়ুক । না পড়লে হেঁসেল ঠেলবে! আমার সময় কোথায় ওকে দেখার ?
এটাতো কথা নয় । তুমি না দেখলে কে দেখবে ? বাপী বলেন।
কেন ওর দিদির কাছে বসে পড়তে পারেনা ?
দেখ সুমি (মায়ের নাম সুমিতা, বাপী ‘সুমি’ বলে ডাকেন) তোমার মেয়েদের
প্রতি দায়িত্ব বোধ না থাকলে ওরা কি করবে ভবিষ্যতে? মা’র নজর মেয়েদের দিকে বেশি থাকা উচিৎ । নাহলে পরে পস্তাবে ।
কেন? আমার একার দায়িত্ব কেন? তোমার মেয়ে নয় ওরা ? তোমার কোন দায়িত্ব নেই !
‘দায়িত্ব’ শব্দটা খুব জোর দিয়ে বিদ্রূপের সঙ্গে উচ্চারণ করলেন সুমিতা দেবী ।
আহ্ ! আমি কি তাই বলছি ! বোঝ না কেন? আর সেরকম বুঝলে চাকরি ছেড়ে দাও । তুমি তো সখের জন্য চাকরী কর ! ওটার কি কিছু প্রয়োজন আছে? মেয়েরা মানুষ না হলে, ওই চাকরী থাকার চেয়ে না থাকা ভাল !
কি ? আমি স্যাক্রিফাইস্ করবো আর উনি প্রাইভেট সেক্রেটারি কে নিয়ে ট্যুরে যাবেন ; আজ মুম্বাই, কাল দিল্লী, পরশু সিঙ্গাপুর । অফিস ছাড়া বাড়ির হাল কি হচ্ছে, বুঝেছ কখন ! বাহ ! সুন্দর !! চমৎকার সল্যুশন । পারবো না চাকরী ছাড়তে !! ও মেয়ের এমনিতেই বারোটা বেজে গিয়েছে ।
দ্যাখো যা জানোনা, সে বিষয় নিয়ে কথা বোলোনা। আমার চাকরীটা খাটুনির আর দায়িত্ব সম্পন্ন কাজ । তুমি ভাল করে যান সেটা । ওটা ঊল বোনার চাকরী নয় যে মেয়েরা পাস করলো কি না করলো মাস গেলে জমা খাতায় মাইনে ঢুকে যাবে গুঁতো মেরে । চাকরী ? আর চাকরী দেখিওনা !! মেয়েদের সামনে কি করে কথা বলতে হয়, সেটাই তো শিখলে না? যত্তো সব । বাবা গাড়ীর চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন গজ্ গজ্ করতে করতে । মা বাপির কথা কাটা কাটির মধ্যে পারোমিতা মাকে দিয়ে টুক করে সই করিয়ে নেয় । মা অজান্তে সই করে দেন । কিছুটা নিশ্চিন্ত এবারের মতন।
এবার পড়াশুনাটা করতে হবে মন দিয়ে। মোবাইলে কল আসে সুমিতের । সুইচ্ অফ করে দেয় । না আর সুমিতের সঙ্গে যাবেনা সে । শেষে কিনা হেঁসেল ঠেলতে হবে ! ম্যা গো !! মাথাটা টন টন করছে । দিদিকে দেখ ? খুব খুশী আমাকে বাপী বকেছেন বলে ।
#
ঈশ্বর প্রেমিক প্রেমিকাকে একি ছাঁচে বানান না । কিছু তারতম্য থাকে ।আদর্শ শব্দটি অভিধান থেকে মুছে গিয়েছে । সিটি সেন্টারে ওরকম অনেক যুগলই ঘুরে বেড়ান । আমি একটা ঘটনার কথা বলি । সেদিন রাজার হাট দিয়ে ফিরছিলাম আমার কারে । তখন বাজে রাত ১১ টা । হঠাৎ আমাদের কারটাকে দুটো বাইক, সম্ভবতঃ হিরো মোটর্সের লেটেস্ট মডেল, নামটা বলতে পারছিনা , যাইহোগ বাইকে দুই প্রেমী জুগল যাচ্ছেন । পিলিওনে যে মেয়েটি ছিলো সে বসে নেই, ফুট রেস্টে দাঁড়িয়ে । বিদ্যুৎ গতিতে বাইক দুটি আমাদের ক্রস করে বেরিয়ে যায় । যদি এতোটুকু অসাবধান হয়, মৃত্যু সুনিস্চিৎ । এটা কি স্টান্ট, না কি আমি বুঝলাম না । এদের মা বাবা এদের কি শিক্ষা দিয়েছে? অবিশ্যি মা বাবা কে দোষ দিয়ে কাজ নেই ওনারা কি যানেন? আমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম ও বোলল, আপ নয়া হ্যায়, সাব । এ তো হামেশা দেখনেকো মিলতা হ্যায় । মনে মনে ভাবলাম আমরা কতো গ্রাম্য, এরা কতো সভ্য । এই যদি সভ্যতা হয়, তবে হে ঈশ্বর, আমাকে গেঁয়ো করেই রাখো! সে দিন থেকে আমি আর কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করিনা । কান মুলছি নাক মুলছি আর না । নিজের মেয়েদের কথা ভাবছি ! পরোমার কি হবে ? ওর কি ভবিষ্যৎ ? আমার সময় নেই এনার্জি ও নেই । সুমি তার স্কুল আর বান্ধবীদের নিয়ে ব্যাস্ত । পার্টীর জন্য আজ ধারনা, তো কাল বন্ধ । ছারখার হয়ে গেল এই দেশটা এসবের জন্য । সর্ব শিক্ষা অভিজানের লেকচার দেয় সুমি আর নিজের মেয়ে গোল্লায় যাচ্ছে । কি মা'রে বাবা । কিছু বলার উপায় নেই আমার । মেয়েটা উচ্ছ্বন্নে যাচ্ছে ।
দেখেও কিছু বলার উপায় নেই । আমি নিরুপায়। আমার কোম্পানির সার্ভিস । একটু এদিক ওদিক হলে সর্বনাশ । কাকে বোঝাব ? কথাটা উল্লেখ করলাম এইজন্য যে হামেশা নাকি এরকম হয় । আমরা তো দেখতে অভ্যস্ত নই, তাই বোধ হয় আমার দৃষ্টিকটু লাগলো । মানুষ সহজ ভাবে নিচ্ছে। আমি বোধহয় গেঁয়ো হয়ে গেলাম বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে। আমার বন্ধুরা বলে তুই এইসব নিয়ে ভাবিস না। ও সব মডার্ন ছেলেমেয়ে। মনে মনে ভাবি আমার তো দুটো মেয়ে আছে ! তাদের মধ্যে ছোটটাই মাথা ব্যাথার কারণ হচ্ছে ।
আমি তো দেখছি আকাঙ্খার মতন মেয়েরাই বিপদে পড়ে, কারণ ওরা নিজেদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়না। পড়াশুনাতে এত ব্যস্ত থাকে যে, ওদের অন্য দিকে মন যায় না। তার সুযোগ নেয় অসামাজিক ব্যক্তি। তাই বলি জুডো ক্যারাটেটা মেয়েদের জানা নিতান্ত জরুরি । ওদের বন্ধু হাতে গোনা হয় আর ছেলে বন্ধু থাকলেও তারা পাত্তা পায় না এদের কাছে। কিন্তু পারোমিতা ! তার বন্ধু ’শয়ে ’শয়ে । বাপী লেটেস্ট এপেলের আই ফোন সিঙ্গাপুর থেকে কিনে এনেছেন, একটা মা আরেকটা পারোমিতার জন্যে । বাপি কি জানেন মেয়ের কীর্তি ! বলেন রেসাল্ট ভাল হওয়া চাই কিন্তু । আইফোন দিতে আপত্তি নেই।
‘কচু’ রেসাল্ট না ছাই । মা বলেন । ওই মেয়ে গোল্লায় গেছে ।
এম.এম .এস এ ছবি পাঠান মেসেজ বক্স এ জোক লাভ এস .এম। .এস সব ভর্তি । কে দেখবে? দেখার সময় কার আছে । বাপি সকাল থেকে বেরিয়ে যান ফেরেন রাতে। মা স্কুল টিচার অন্যকে জ্ঞান বিতরণে ব্যস্ত নিজের মেয়েকে দেখার সময় কোই ? সোসিয়াল সার্ভিস করে ক্লান্ত । স্কুল থেকে এসে এতোই ক্লান্ত যে মেয়ে কি পোডলো কি খেলো দেখার সময় নেই । টিভি, সিনেমার ম্যাগাজিন,তারপর খাওয়া ,ঘুম । ঘরে রান্না বান্না করতে হয়্না কারন রাঁধুনী আছেন । ২৪ ঘণ্টার কাজের লোক আছেন। মঞ্জু মাসি ।
ঘরে গার্জেন বলতে ঠাকুমা তাঁর তো বয়েস ৭৯+ অতএব তিনি কি করবেন? ঠাকুরপুজো তেই তাঁর সময় কাটে । ছেলে,বৌ,নাত্নীদের জন্য সব পুজো । ওনার ঘরে কেউ যায়না । কখনো কখনো বাবা যান আর মঞ্জু মাসী খাবার দিতে যায় । পারোমিতা কে একদম দেখতে পারেন না ঠাকুমা । বলেন শুভ( শুভজিত বাবার নাম) গোল্লায় যাচ্ছে তোর মেয়ে । মেয়ের ডানা গজিয়েছে । এখন থেকে দ্যাখ নাহলে ওই মেয়ে ভোগাবে তোকে । আমি বলে রাখলাম শুভ ।
আমি কতোক্ষণ থাকি মা ? আপনি বলুন ? আমার সময় কোথায় ?
তবুও তোর শাসন প্রয়োজন । ওকে মোবাইল কেন দিলি ? ওই অলক্ষুণে মোবাইল ই ওর উচ্ছৃঙ্খলতার কারন । আমাকে ত হুটা হুট্ করে দেয় ।
আপনি শাসন করুন মা । আমি কতক্ষণ ই বা থাকি ? একটু শান্তি না হলে আমার কি ভাল লাগে ? ওইসব শুনতে ভাল লাগে না। সমত্ত মেয়েদের মা শাসন করবেন না বাবা কি পারে? না মানায় ! আপনি বলুন! শুভ এক নিশ্বাসে কথাগুল বলে হাঁফ্ ছাডলো ।
সব ই অদৃষ্ট বাবা । হ্যাঁরে মঙ্গল বার দিন একটু সময় করে দক্ষিণেশ্বর নিয়ে চল না বাবা। কতদিন মায়ের মুখটা দেখিনি। আহা মা সদয় হলে তোর কোন দুঃখ থাকবেনা।
মঙ্গলবার ! আচ্ছা দেখছি ! টেবলেট পিসিটা তে কি দেখে বললো, মা একদম ভোরে আপনাকে নিয়ে যাব ।
আমিতো সেই ভোর ৪ টেতে উঠি তুই উঠতে পারবিতো ?
হ্যাঁ মা পারবো ।
##
আকাংক্ষা স্কুল থেকে বাসে ফিরছিল বেলা তখন ৪ টে । রাস্তাতে হট্টগোল আর জ্যাম্ দেখে আঁতকে ওঠে । ৪.৩০ এর সময় রাস্তা ফাঁকা হয় ।
ছাত্র ছাত্রী এবং অধ্যাপকদের নিরাপত্তার দাবিতে দুপুর দেড়টা থেকে ঘণ্টা তিনেক রাস্তা অবরোধ করেন কলেজের শতাধিক ছাত্রছাত্রী। তাতে হাজির ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। সকলেরই অভিযোগ, সন্ধ্যার পর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর পর প্রায় রোজ দুষ্কৃতীদের অসভ্যতা ও কটূক্তির মুখে পড়তে হয় তাঁদের। সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেরোলে রীতিমতো ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। ‘আর মোমবাতি নয়, এবার কিছু করে দেখানোর সময়’, অবরোধে দাবি তোলেন ছাত্রীরা।
কোমল হৃদয়ের শান্ত মেয়ে ‘আকাংক্ষা’ তার মনে এই সব গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে । অনেক প্রশ্ন আলোডন করে বুকের মধ্যে । কেন এই অসভ্য মানুষগুলো প্রশ্রয় পায় ! আর কেনইবা মেয়েদের নিরাপত্তা থাকবেনা এই শহরে ? প্রশাসন কি নীরব? এরকম অনেক প্রশ্ন ।
বাপীকে কিছুই বলা যায়না এ বিষয় । মা’ ! তিনি তো ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। ঠাকুমা ! তিনি ই বা কি করবেন? তবে কাকে বলবে সে ? বোন ! ও শুনলে হাসবে । মজা পাবে ।
বাডীতে ফিরে একটা ডাইরিতে আজকের ঘটনা সম্পর্কে লিখে রাখল। বাপীর কথাগুল মনে রেখে খুব মন দিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি করতে লাগলো । ম্যাথ্, ফিজিক্স্, কেমিস্ট্রি সব বিষয় গুল ভাল করে রিভিশন দিয়ে রাখলো। গত দশ বছরের সমস্ত প্রশ্ন র উত্তর শেষ করে ফেলেছে ।খাতা ভর্তি অঙ্ক আর ফিসিক্স্ এর প্রব্লেম সলভ্ করে রেখেছে । ইংলিস্ টা আরেকটু রিভিসন করতে হবে । এইরকম ভাবছিল ...।
মা বললেন, হ্যাঁরে পারু কোই ? ৭ টা বেজে গেল মেয়েটা কোথায় যায়? তোর সঙ্গে আসেনি?
এতোগুল প্রশ্নের উত্তর কি দেবে ভেবে পেলনা । আমি জানিনা ...
জানিসনা মানে ?
বারে আমি স্কুল সেরে বাড়ি ফিরে এলাম । এমনিতেই আমাদের এক্সট্রা ক্লাস হচ্ছে । আমি কি করে জানবো ওর কথা ?
তুমি তোমাকে ছাড়া আর কোন কিচ্ছু জানোনা মা ! বাপের আহ্লাদি মেয়ে ! বোনটা কোথায় গেল খোঁজ নিবিনা একটু ! জানি তুমি দিগ্গজ মেয়ে , তা বলে বোনটার কোন খোঁজ খবর নেবে না?
সরি মা ভুল হয়ে গিয়েছে । আমাকে ভুল বুঝ না।
সুমিতা মোবাইলে নম্বর ডায়াল করতে লাগলেন ... এই অর্পিতা শোন ভাই তোর বর কে একটু বলনারে ... আমার ছোট মেয়ে পারমিতা যে তোর ছেলের বার্থ ডে পার্টি তে নেচেছিল মনে আছে ... হ্যাঁ !... ও এখন পর্য্যন্ত আসেনি রে । কি করি বল তো?... ইনি দিল্লী গেছেন ফিরবেন কালকে । এলেই ত আমার ওপর হম্বি তম্বি করবেন। আমার হয়েছে যত জ্বালা...।
দাঁড়া চিন্তা করিসনা ...। আমি একটু পরে তোকে খবর দিচ্ছি।
রাত ৯ টার সময় পুলিসের জিপ্ এল । এটাকি সুভজিৎ ব্যানার্জীর বাড়ি ?
ভয়ে তটস্থ সব্বাই । হ্যাঁ ...। কি হয়েছে ?
দেখুন চিনতে পারেন কিনা ?
আমার বুক টা দুরু দুরু করতে লাগলো । মা গিয়ে যা দ্যাখেন । হতভম্ব হয়ে যান । পুলিসের জীপের পেছনে দুটি ছেলে মেয়ে । তার মধ্যে একটি চেনা। সে আমাদের পরমা ...পারমিতা.... । অন্যটিকে চিনিনা ।...
Darun laglo.
ReplyDeleteDhonyobad Avik Babu
DeleteDarun laglo.
ReplyDeleteOpurbo...
ReplyDeleteDhonyobad Soma Devi .
DeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteashadharon lekha ekebare ontor chuye gelo..
ReplyDeleteDhonyobad Mainak Chakraborty .
Delete