0

ছোটগল্প : মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী

Posted in


ছোটগল্প



ছড়ানো puzzle
মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী



রক্তিম এ বছরেও এসেছে আবার রডোড্রেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারি তে; শুধুই ফুলের আকর্ষন নাকি অন্য কিছুর আশায়, নিজেও বোঝেনা। গত চার বছর একই ভাবে আসে সে, এই সময়টায় ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে থাকে পাহাড়। প্রথম অবশ্য ফুলের টানেই এসেছিলো; বন্ধুদের কাছে ছবি দেখে মাথা ঘুরে গেছিলো। দ্বিতীয় বছর অন্য আকর্ষন ছিল।

"সব সময়ে ক্যামেরার চোখে না দেখে কখনও একটু নিজের চোখেও দেখো।" রিমলির কথায় তার দিকেই ক্যামেরা তাক করলো রক্তিম, তাতে চটে গিয়ে ওই বড় গাছটার পিছনে লুকোলো রিমলি। ভারী মজা পায় রক্তিম; রিমলি চটবে, ঠোঁট ফোলাবে তবেইনা আদর করার মোক্ষম সুযোগ পাবে সে। কিন্তু তার এই ধান্দা বুঝে গেছে রিমলি, তাই গাছের পিছে রক্তিম তার কাছে যেতেই একটা হাসি দিয়ে বলল 

"কি? ভেবেছিলে তো চটেছি? তোমায় আমি চিনিনা? এক্ষুনি দুষ্টুমি শুরু করতে।" কাছে টেনে নেয় রক্তিম

"খুব যেন আপত্তি থাকে এক জনের" হাসতে থাকে দুজনেই, রিমলির ছোট্ট ঠোঁট ছুঁয়ে যায় রক্তিমের ঠোঁট।


"কি ব্যাপার তোমার? এই ভাবে বেড়াতে আসার কোনো মানে হয়? একে তো এই বোরিং জঘন্য জায়গা তায় আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি ঘরে, আর তুমি কোথায় কোথায় চরে বেড়াচ্ছো সাত সকালেই" দেবলীনার কর্কশ স্বরে সকালের মিষ্টি পরিবেশ এবং রক্তিমের চিন্তা ছিন্ন ভিন্ন। দু'বছরের বিবাহীত জীবন আর তার আগের বছর পাঁচেকের মেলামেশা, তবু কেন তাল কেটে যায় কে জানে। প্রথম যেবারে এল বছর চারেক আগে, একাই এসেছিলো রক্তিম। এতো রঙের রডোড্রেনড্রন হয় তার ধারনাই ছিলো না। অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য সাথে কিছুটা রাস্তা ট্রেক করে পৌঁছতে হয়, কাজেই রক্তিমের ভালো লাগা দ্বিগুন। শতগুনে পরিনত হয় রিমলির সাথে পরিচয় হয়ে। 


বাবার অকাল প্রয়ানে কোম্পানির হাল ধরে খুব অল্প বয়সে, সাথে কাকাদের বিভিন্ন ছল চাতুরি, নিজের পড়াশোনা শেষ করা। কিছুটা হিমসিম খেয়েছিলো বৈকি প্রথম দফায়। তবে মা আর ব্যানার্জী আঙ্কলের অবদান আছে অবশ্যই তার এতো কম বয়সে এতোটা সাফল্যের পিছনে। তখন থেকেই দেবলীনার সাথে পরিচয়। কোনোদিন পছন্দ হয়না এমন মেয়ে দেবলীনা; কৃতজ্ঞতার খাতিরে তাকে সহ্য করে রক্তিম। আর সেই সুযোগের পূর্ন ব্যবহার করেছে দেবলীনা। রক্তিমের অফিসের যেকোনো পার্টিতে উগ্র পোশাকে হাজির হয়ে যেতো, বারণ শোনেনা। সর্বত্র নিজেকে রক্তিমের গার্লফ্রেন্ড হিসাবে পরিচয় দিতো। রক্তিমের মায়ের কাছেও বেশ জায়গা করে নিয়েছিলো। ব্রাহ্মনের মেয়ে হয়েও তাদের বাড়ীর বৌ হতে চায় আর ব্যানার্জী বাবুর প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা তো থেকেই যায়। 

রিমলি যদিও কাজ করতো রক্তিমের কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চে কিন্তু সামনা সামনি কোনোদিন দেখেনি তাকে, তবে তার হবু বৌ কে দেখেছিলো। আর তাই যখন স্যাঙ্কচুয়ারিতে দেখা হোলো, চিনতেও পারেনি, পাত্তাও দেয়নি প্রথমে। রক্তিমের প্রথমবার আসা তার আচার আচরনেই বুঝে গেছিলো। ফিক্ ফিক্ করে হাসছিলো রিমলি, ডাইনিংয়ে যখন রক্তিম তার বাবার সাথে আলাপ জমাচ্ছিল। একটু পরেই দুষ্টু বুদ্ধিকে কাজে লাগানো শুরু। একটা রাস্তা একটু দূর থেকে দেখলে মনেহবে সেটা ওই খানেই শেষ বুঝি, তার ওপারে হয়ত খাদ। কিন্তু তা নয়, তার ওপারে নীচে আবার কিছুটা মাটি আছে। রক্তিমকে দেখিয়ে দেখিয়ে লাফ দিলো রিমলি। দৌড়ে তাকে বাঁচাতে এসে অপ্রস্তুত হলেও মেয়েটার এমন দুষ্টুমি তে মুগ্ধ হয়েছিলো। গল্প শুরুর একটু পরেই রক্তিমের পরিচয় পেয়ে রিমলি তখন কোনদিকে পালায়। রক্তিমও শুনল রিমলি তারই অফিসে কাজ করে। 

"স্যরি স্যার স্যরি স্যার" করতে শুরু করায় রক্তিম বলেছিলো "দেখো রিমলি, আমি কিন্তু এখানে রক্তিম কর হিসাবে আসিনি, এসেছি আর পাঁচ জনের মতোই, তবে তুমি যদি এই সব শুরু করো তাহলে তো আমার পুরো ঘোরা মুলতুবি রাখতে হয়, এক্ষুনি চলে যেতে হয়। সেটা কি তুমি চাও?" 

"স্যরি স্যা__" 

"আবার?" 

"আর হবে না। তবে আপনি একা এসেছেন যে?" 

"দেখো কান্ড 'তুমি'টা 'আপনি'হয়ে গেল? আর একলা না তো, আমার সর্বক্ষনের সঙ্গী আমার ক্যামেরা আছে না?" 

"তোমার ওয়াইফ?" 

"বিয়ে তো করিনি"

"না, মানে দেবলীনা ম্যামকে নিয়ে আসোনি?" 

"তুমি চেনো?" 

"দেখেছি; আমার এক কলিগ দেখিয়ে ছিলো" 

"একটা কথা বলোতো, আমি কি কোথাও ডিক্লেয়ার করেছি যে ও আমার জি এফ বা ওকেই আমি বিয়ে করছি?" 

"না তা'ঠিক নয় তবে__" 

"তবে? সবাই বলে এই তো?" টুক টুক করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে রিমলি। 

"তোমার কাছে তাহলে সত্যিটা স্বীকার করি, ওর বাবার প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা আছে ঠিকই, আর সেখান থেকেই ওকে সহ্য করি, কিন্তু আমি সম্পূর্ন অন্য একজন কে ভালোবাসি"

"ও মা! তাহলে ওনাকে বলোনি কেন? মানে উনি যে এই ভাবে নিজেকে ইনট্রোডিউস করছেন, এরপর যখন শুনবেন যে তুমি ওনাকে বিয়ে করতে চাওনা, আহতও হবেন অপমানিতও হবেন। তোমার তো শুরুতেই বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো" 

"হয়ত তাই; বলবো এবারে শহরে ফিরেই বলবো, আসলে আমি ভেবেছিলাম ঠিক যাকে ভালোবাসি তাকে হয়ত কোনোদিন খুঁজে পাবোই না, তাই কাজ চালিয়ে নেবো। কিন্তু এখন আর তা' হয়না, কাজেই বলতে এবারে হবেই" অবাক চোখে রিমলি বোঝার চেষ্টা করে কথার মানে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এসে গেছে ওরা কটেজ থেকে। পাহাড় এখানে দারুন সুন্দর। অনেক দূর অবধি পরতে পরতে পাহাড় দেখা যায়। অনেক নীচে চকচকে সাটিনের ফিতের মতো একটা নদী। রিমলি এতোবার এসেছে যে এ'সব ওর খুব পরিচিত।

"এখানে জোরে আওয়াজ করলে একো হয় জানো?" 

"তাই? দেখিতো; রিমলিই___" গলা খুলে ডাক দিলো রক্তিম, তাকায় রিমলির দিকে এবারে তার পালা বোঝাতে চায় চোখের ভাষায়। রিমলি যেন ঠিক এই অপেক্ষাতেই ছিলো, "রক্তিমম্" সে ও চোখ বুজে অন্তর থেকে ডাক দিলো; ফিরে ফিরে এলো দুজনেরই ডাক, দুজনেই ফিল করলো ডাকের পরে কিছু একটু না বলাই রয়ে গেলো। 

শহরে ফিরলো যেন নতুন মানুষ। বাড়ীর লোকেরাও অবাক কতো যুগ পর যেন এই রক্তিমকে দেখছে তারা। তুতো ভাইদের সাথে ঘুড়ি ওড়ানো, হুল্লোর করা, বোনেদের পিছে লাগা, সবার আব্দার মেটানো, কি তার এক সময়ের নেশা পাজল্ সল্ভ করা; ফিরে এসেছে সব। অবাক হোলো দেবলীনাও; যদিও ক্রেডিট পেল সে ই, আর অস্বীকার ও করলনা, তবু নিজে বুঝল এটা তার কাজ নয়। অন্য কেউ সম্পূর্ন অন্য কেউ, খুঁজে বের করতেই হবে কে সে। খুঁজতে খুঁজতে একটা বছর কোথা দিয়ে যেন কেটেও গেল; আর রক্তিমও বারে বারে তার মা কে, দেবলীনাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে চলেছে কেন সে বিয়ে করতে চায়না দেবলীনা কে। না কোনো দোষ নেই তার কিন্তু রক্তিম কিছুতেই তাকে ভালোবেসে উঠতে পারেনি। এতোদিন ভেবেছিলো একজন কে বিয়ে করতে হবে, হোলোইবা দেবলীনা। কিন্তু আজ সে বুঝেছে আসলে সে রিমলিকে চায়। রিমলিই তার সেই স্বপ্নের ভালোবাসা। নাঃ দেবলীনা তো মানলইনা উপরন্তু মা কে ও হাত করে কেঁদে কেটে সিন ক্রিয়েট করে একাকার। রিমলি চেষ্টা করেছিলো সরে থাকার, রিজাইন ও করতে গেছিলো, রক্তিম নেয়নি ওর রেজিগ্নেশন্। সেবারে লুকিয়ে বেড়াতে এসেও ধরা পড়ে গেছিলো রিমলি। কেমন করে যেন টের পেয়ে যায় রক্তিম আর পিছে পিছে হাজির। 

"পারবে আমায় এড়িয়ে যেতে? সব ঠিক হয়ে যাবে রিম্, আমি তো জানিয়েছি, শুধু তোমার নাম টুকুই যা বলিনি। নাম বা পরিচয় জানলে হয়ত অযথা হেনস্থা হতে হবে তোমায়। জানোনা আমি পাজল্ সল্ভ করতে এক্সপার্ট? ঠিক সল্ভ করে ফেলবো।" ভরসা করে ছিলো দুজনেই। অনেকটা কাছে এসে গেছিলো, শহরে থাকতে তো অনেক চোখকে আড়াল করে দেখা করতে হত। তাতেও রক্তিম দুষ্টুমি ঠিক বজায় রাখত।

"ওই দেখ তোমার সেজ মামা; দেখে ফেললেন আমাদের, কি হবে এখন?" 

"সেজ মামা? আমার? কোনো মামাই নেই তা মেজ আর সেজ" বলে এদিক ওদিক দেখে আদুরে হাতের কিল মারত রক্তিমকে। হাত দুটো খপ্ করে নিজের বিশাল হাতে ধরে বলত রক্তিম 

"মারলে কিন্তু সাথে মার হজম করার অনুপান ও দিতে লাগে" লজ্জায় লাল হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতো রিমলি, পেরে উঠতো না রক্তিমের সাথে। মারের বদলে আদর দিতো সে, রিমলির সব ক্ষমতা হারিয়ে যেত "একটুও ভালো হচ্ছেনা কিন্তু; ইশ্ লোকে দেখলে কি বলবে? রক্তিম করের মতো নামজাদা লোক রাস্তায় বেড়িয়ে কি করছে" 

"প্রথমতঃ এখানে আমায় কেউ চেনেনা, আর যদি নিতান্ত চিনেই ফেলে ভালোই তো, আমি তাদের ডেকে বলব আমাদের ঠিক এই অবস্থায় একটা ছবি তুলে কাগজে দিয়ে দিন। কতো ইজি হয়ে যাবে সব"

পাহাড়ে এসে যেন আরোও ঘনিষ্ঠ দুজনে। বাড়ীর লোকেদেরও খুব আপত্তি হয়নি, শত হলেও ছেলেটা রক্তিম। রিমলি এখনও কাজ করে ওরই কোম্পানীতে। রোজ ভোরবেলা বেড়িয়ে পড়ত দুজনে, রক্তিমের ফটো তোলার নেশা। প্রতিটা ক্ষণকে যেন ক্যামেরা বন্দি করতে চায়। আর রিমলি দুচোখ ভরে দেখে নিজের আশ মেটায়। কখনও ফুল কুড়িয়ে চুলে গোঁজে, চুলে আর কি ছোটো করে কাটা চুল, বলতে গেলে কানের ওপরেই গোঁজে। রঙও কতো ফুলের লাল, গোলাপী, হলুদ, বেগুনী, সাদা, কমলা, এমন সব অতি পরিচিত রঙ তো আছেই, কিছু কিছু আবার পরীক্ষামূলক চাষ করা ফলে দু'তিনটে রঙের মিশ্রনও আছে। কোনো কোনো দিন ব্যুকে বানিয়ে গিফ্ট করে রক্তিমকে। বৃষ্টি নামায় একদিন একটা গাছের নীচে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিল, পাহাড়ী বৃষ্টি এতো তীক্ষ্ণ যে বিঁধতে থাকে, আড়াল নিতেই হয়। ঠান্ডা লাগছিল দুজনেরই; পরস্পরের শরীরে ওম দিয়ে দূর করতে চেয়েছিল শীত কে। কেউ দেখতে পাচ্ছেনা, কাজেই বৃষ্টির আড়ালে নরম আদর গাঢ় হয়েছিলো। নিজের গলার রঙিন মাফলার জড়িয়ে দিয়েছিলো রিমলির গলায়। না হলে ঠান্ডা লেগে বড্ড কষ্ট পায় মেয়েটা। গাছটাকে সাক্ষী রেখেছিল রিমলি, বিয়ের পর আবার আসবে তার স্বামীকে নিয়ে। রক্তিমকে দিয়েও শপথ করিয়েছিলো। আদর করতে করতে বলেছিলো রক্তিম 

"পাগলী, তুই আমার পাগলী, এটাও কোনো কথা? বেশ আমি তোর সব কথা রাখব যখন এটাও রাখলাম। আসব আসব আমার স্ত্রী কে নিয়ে আসব" চওড়া বুকের মধ্যে ভরে নিয়েছিলো তার পাগলীকে। 

পারেনি শেষ রক্ষা করতে রক্তিম। দেবলীনা জেনে যায় রিমলির পরিচয়, যাচ্ছেতাই অপমান করে অফিসের মধ্যেই, এবারে রিমলি চলেই গেল অফিস ছেড়ে; বন্ধু বান্ধব দের কেও পাশে পেলো দেবলীনা, সত্যিই  তো এতোদিন মেলামেশা, দুনিয়ায় সবাই জেনে গেছে, একটা মেয়ের মান সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা? এখন কোত্থেকে উড়ে এলো রিমলি? মা ও কিছুতেই বুঝলনা ছেলের মনের কথা। দেবলীনাই জিতে গেল; বিয়েও হয়ে গেল তাদের। হানিমুনে রক্তিম নিয়ে এসেছিলো এখানেই, কিন্তু সারাটা সময় একা একাই ঘুরেছিলো। কারণ  একটুও পছন্দ হয়নি জায়গাটা দেবলীনার। দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী তেও এখানেই। অসহ্য হয়ে গেছে দেবলীনার কাছে, সে ভেবেছিলো কৃতজ্ঞতার ব্ল্যাকমেলিং করে বুঝি জিতে নিতে পারবে রক্তিমকে, বা এতো বছর মেলামেশার বাহানায়। মন কে, যে এই ভাবে জেতা যায়না দেবলীনা, শুধু একটা নামকেই জেতা যায়। প্রথম বার না বুঝলেও এবারে ঠিকই আন্দাজ করেছে কেন এখানেই আসে রক্তিম, আর কেনই বা একটা গাছের নীচে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, একটাও ছবি তুলতে চায়না। আজ সকালে তাই ঘরে না পেয়ে রাগারাগি শুরু করল রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে। 


"হাই রক্" বহু যুগ পরে তার এই নামটা শুনে চমকে তাকালো রক্তিম। কলেজে তাকে রক্ বলেই ডাকত সবাই। তাদের কলেজে জুনিয়ার রাও নাম ধরে 'তুই' করে বলতো। রক্তিম ছোটো করে রক্ হয়েছিল কারণ  পাথরের মতো শক্ত মনের ছেলে নাকি সে। কোনো মেয়ে চেষ্টা করেও আঁচড়ও কাটতে পারবেনা। আজ এক জুনিয়ারের সামনে পড়ল রক্, ভাগ্যিস একা ছিলো, দেবলীনার খাবার কটেজে পৌঁছে এসেছিলো। কারণ সে যাবার তোড়জোড় শুরু করেছে, আর এক মুহুর্তও নাকি এখানে থাকলে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। 

"কি রে? চিনতে পারলি না?" 

"নাঃ চিনেছি, সৌরভ তো? আসলে এই নামটা এতো যুগ পর শুনলাম। এখানে যে?" সৌরভের ডাকে তার টেবিলেই এসে বসে রক্তিম। 

"আর বলিসনা এমন এক পাগলীকে বিয়ে করেছি, দুনিয়ায় সে আর কোনো জায়গা খুঁজে পেলো না মাইরি, এটা একটা হানিমুন আসার জায়গা হোলো? শালা চার মাইল ট্রেকিং? ক্ষিদেয় নাড়িভুঁড়ি হজম হয়ে যাচ্ছে।" হাসছে আর বলছে সৌরভ "অবশ্য আল্টিমেটলি ব্যাপক রোম্যান্টিক জায়গা, মনে হচ্ছে যেন আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। কি পরিমান ফুল আর কি সব কালার মাইরি। নাঃ বউটা পাগলী হয়ে ভালোই হয়েছে কি বলিস?" হাসতে হাসতে একতরফাই বলে চলে সে "আসলে মেয়েটা বড্ড ভালো রে, সে হয়ত বিয়ের পর সবাই ই বউ এর প্রশংসা করে, তবে এ সত্যিই ভালো। অনেক দিন ধরেই চিনতাম, আমার প্রচুর ক্রাশ ছিলো। এমন একটা মেয়েকেও কোনো এক অকাল কুষ্মান্ড লেঙ্গি দিয়েছে ভাবতে পারিস? অবশ্য তাতে আমারই লাভ হোলো।" 

গপগপ  করে খাচ্ছে দেখে রক্তিম বলে, 

"ও কিরে? পাগলা কুকুর তাড়া করেছে নাকি? এভাবে খাচ্ছিস?" 

"কুকুর না, পাগলী বৌ।" বলে চোখ টিপে বলে "সে নাকি এখানে কোন গাছকে কি কথা দিয়েছিল তাই এখন সেখানে যাবেন। যতো তাড়াতাড়ি পারি সেরে আসি রে, ওর ও তো নিশ্চয়ই ক্ষিদে পাচ্ছে, সবাই তো আর বলতে পারেনা। তাছাড়া ওর আবার ঠান্ডা লাগারও ধাত আছে, দেখনা সেই বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। আমি যতো দেরী লাগাবো, ওরও তো দেরী হবে না?" গলা নামিয়ে বলল "ওর আব্দার গুলো মেটাই বুঝলি? পরে সুদে আসলে তা হলে___" বলে নিজের রসিকতায় নিজেই এক চোট হো হো করে হেসে নিলো। "চলিরে" সৌরভ বেড়িয়ে গেলে দৃষ্টি দিয়ে তাকে অনুসরন করে দেখল, গলায় খুব পরিচিত রঙিন একটা মাফলার জড়িয়ে দাঁড়ানো সৌরভের স্ত্রী। গাছ কে দেওয়া কথা রাখতে এসেছে পাগলী। "স্যরি রে, এই পাজল্ টা সল্ভ করতে পারলামনা, ছড়িয়েই গেল রিম্। তুই ভালো থাকিস, সত্যিকারের ভালো, আমার মতো ভালো থাকার চেষ্টা করতে না হোক তোর" মনে মনে বলল রক্তিম। 



0 comments: