ধারাবাহিক - প্রিয়াঙ্কা চ্যাটার্জী
Posted in ধারাবাহিক
পর্ব- ৪
সহদেব কুমারকে নিয়ে রাজ্যে উপস্থিত হলেন। কুমার অর্ধচেতন, তাঁর গায়ে প্রবল উত্তাপ। মহাদেবীর সেবা ও যত্নের কোনও ত্রুটি রইল না। সহদেব দেখলেন, কুমারের হস্তে এক সুন্দর অঙ্গুরীয়, অঙ্গুরীয়র মধ্যে রক্ত বর্ণের আকর্ষণীয় মণি। এই অঙ্গুরীয় আগে তিনি দেখেননি। চেতনা পাবার পর থেকেই কুমারের ব্যবহারের অস্বাভাবিক পরিবর্তন সকলের চোখে পড়ে। শান্ত স্বভাবের কুমার যেন বড্ড অশান্ত।
পিতার পত্র উপস্থিত সহদেবের কাছে। তিনি পরিস্থিতি বর্ণনা করে পিতাকে গোপনে সংবাদ পাঠিয়ে ছিলেন।
---"প্রিয় সহদেব,
তোমার পত্রে তুমি যা বর্ণনা করেছ, তা যদি সঠিক হয়, সম্মুখে ঘোর বিপদ। এ বিপদ শুধু কুমারের নয়, সমগ্র আর্যাবর্তের, মানবকুলের। উপায় কি আমারও অজানা। তবে তুমি বৌদ্ধ মঠে গিয়ে ওনাদের আচার্য উপগুপ্তর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।
আশীর্বাদক
পিতা।"
সহদেব পিতার কথামতো বৌদ্ধ বিহারে গেলে জানতে পারেন আচার্য অনুপস্থিত। তিনি মগধে যাবার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন ।
রাত্রিবেলা, সহদেব অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন কক্ষ সংলগ্ন অলিন্দে। হঠাৎ কুমার প্রচণ্ড চিন্তিত মুখে তার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,
--- আমি এখানে কিভাবে সহদেব?
সহদেব বিস্মিত হন কুমারের এ হেন আচরণে। কুমার সবিস্তারে তাকে বললেন সেই দিনের কাহিনী। হঠাৎ সহদেব লক্ষ্য করেন কুমারের হাতে সেই অঙ্গুরীয় অনুপস্থিত। সহদেব প্রশ্ন করলেই , প্রচণ্ড অবাক হয়ে বলেন
--সেরূপ কোনও অঙ্গুরীয় তো আমি ব্যবহার করিনি। ঠিক সে সময়ে এক অবগুণ্ঠিত দাসী এসে বলেন
---কুমার আপনার অঙ্গুরীয়, মহাদেবী চিন্তিত, তাই আপনি কেমন আছেন, আমায় জেনে আসতে বললেন।
সহদেব দেখেন সেই অঙ্গুরীয়, কপালে আবারও ভ্রুকুটি, কুমারের এ হেন আচরণের কারণ? তিনি কি ভুলে যাচ্ছেন, নাকি অসুখের প্রভাব?
সুস্থ হবার পরে এক প্রাতে পক্ষীর বাহ্য কুমারের গায়ে পড়তেই, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে বধ করতে উদ্যত হন। মহাদেবীর চোখে ঘোর বিস্ময়। এ কোন কুমার? সহদেবের চোখেও ধরা পড়েছে এই পরিবর্তন।
সহদেব দূতীর নিকট অকস্মাৎ সংবাদ পান, তার পিতা তাঁকে স্মরণ করেছেন। অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়। সেইদিন যাত্রা করেন মগধের উদ্দেশ্যে। মগধ যাবার পরে তার পিতা তাকে জানান সম্রাট অসুস্থ। এমতাবস্থায় কুমার অশোকের প্রয়োজন মগধে।
সম্রাটের কক্ষেই এক গোপন সভার আয়োজন হয়। মহামাত্য বিরূপাক্ষ ও রাধাগুপ্ত উপস্থিত হয়েছেন। রাজজ্যোতিষী সুবল এসেছেন।
মহামাত্য বিরূপাক্ষ বললেন
--সম্রাট এই শরীরে কি প্রয়োজন এই সভার?
--জীবিত থাকতেই সুসীমের রাজ্যাভিষেক করতে ইচ্ছুক। রাজজ্যোতিষী আপনার গণনা কি বলে?
সুবল:
--মহারাজ সুসীমের মধ্যে রাজচক্রবর্তী লক্ষণ অনুপস্থিত। সিংহাসন তার জীবনে অভিশাপ স্বরূপ। অপর কুমার বীতশোক ধর্ম নিয়ে মত্ত। তীষ্ণ এখনও বালক। তাই কুমার অশোক এই সিংহাসনের উপযুক্ত। মগধ তিনি শাসন করবেন। এ ভবিতব্য।
--না ঐ দাসীপুত্র সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবে না।
চিৎকার করে মহারাজ বলে ওঠেন।
রাধাগুপ্ত বললেন
--মহারাজ শান্ত হন। সেই দাসীপুত্র আপনার সন্তান।
--রাধাগুপ্ত স্তব্ধ হও। সেই দাসী তোমার ভগিনী। তাই কি এই পক্ষপাতিত্ব?
--মহারাজ সেই দাসী আমার পিতার ক্ষেত্রজ সন্তান। তার মাতা, মাতৃস্নেহে আমায় লালিত করেছেন। এ সর্বজনবিদিত। তাই সে আমার প্রাণাধিক প্রিয় ভগিনী। কুমার অশোক ও সহদেব দুজনেই পুত্রসম আমার নিকট। ভুলে যাবেন না, আপনিও একদা সেই দাসীর প্রেমাসক্ত ছিলেন। কিন্তু এক্ষণ বাদানুবাদের নয়। সুসীম বিলাসী, অত্যাচারী, শাসনকৌশল তার অজানা। সে কিরূপে এত বৃহৎ সাম্রাজ্যভার গ্রহণ করবে? দেশের কথা চিন্তা করেই বলছি অশোক উপযুক্ত। আপনি যত তাকে রাজকার্য দিয়ে দূরে সরিয়েছেন, সে তত রাজকার্যের উপযোগী হয়েছে। রাজ্যপরিচালনের সমস্ত গুণ তার মধ্যে বিদ্যমান। তাই সে যোগ্য।
এরপরেই সম্রাটের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। কুমার অশোক সেই সংবাদ পেয়ে যাত্রা করেন মগধে। পৌঁছানো মাত্র সংবাদ আসে সম্রাট বিন্দুসার প্রয়াত। কুমারের মুখে খেলে যায় নিষ্ঠুর হাসি। যুবরাজ হিসেবে সুসীম নির্বাচিত হয়েছেন। সুসীম বিলাসপ্রিয়, ও অত্যাচারী হবার জন্য সকলের অপ্রিয় ছিলেন। সুসীম রাজ্যাভিষেকের পূর্বেই যুবরাজ হবার আনন্দে শুরু করে প্রমোদ ক্রীড়া। সাম্রাজ্যে দিকে দিকে বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। করদ রাজ্যগুলি রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে। এসময় সুসীম কুমার অশোককে আদেশ দেন বিদ্রোহ দমনের জন্য।
ক্রোধান্বিত হয়ে অশোক ভাবতে থাকেন কি করণীয়। এসময় রাধাগুপ্ত ও অন্যান্য আমাত্যের সাহচর্যে বিশেষতঃ রাধাগুপ্তের সহায়তায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অশোক। সেনানীদের নিকট কুমার জনপ্রিয় হবার সুবাদে সেই প্রতিরোধ গড়তে বেগ পেতে হয়নি।
পরাক্রমশালী অশোকের ভয়ে ভীত সুসীম পালিয়ে যায় প্রাগজ্যোতিষপুরে। মগধের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন সম্রাট অশোক। এক ভ্রাতা বীতাশোক প্রবজ্যা গ্রহণ করেন। অপর ভ্রাতা তীষ্ণ শাসনকার্য পরিচালনের জন্য তক্ষশীলা যাত্রা করেন। সহদেব প্রধান উপদেষ্টা পদের দায়ভার গ্রহণ করেন।
চন্ডাশোকের ইতিবৃত্ত
ReplyDeleteআমি সত্যি আপ্লুত
Deleteখুব ভালো গল্প, চরিত্রগুলো খুবই জীবন্ত হয়ে উঠেছে নিখুঁত বর্ণনার গুনে...
ReplyDeleteThank u
Deleteখুব সুন্দর
ReplyDeleteThank u
Delete