সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
এই সম্পাদকীয় যখন লিখছি, বাইরে তখন তুমুল ঝঞ্ঝা-বৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হওয়া সাইক্লোন - উম্পান ১৩০ কিমি/ঘন্টা বেগে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শহরের উপরে। উন্মত্তা পৃথ্বী যেন প্রবল অসন্তোষে মাথা ঝাঁকিয়ে চলেছেন অবিশ্রান্ত। অতিমারীর দাপট কোথাও কমেছে, এমন নিশ্চিত খবর এখনও নেই। তারই মধ্যে গত একমাসে ভারত তথা বাংলা সংস্কৃতি জগতে একের পর এক নক্ষত্র পতন।
২৩ শে এপ্রিল ২০২০, ৭৫ বছর বয়সে চলে গেলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ঊষা গাঙ্গুলী। তিনি ১৯৭৬ সালে ‘রঙ্গকর্মী’ থিয়েটার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অভিনীত নাটকগুলির মধ্যে মহাভোজ, রুদালি, কোর্ট মার্শাল ইত্যাদি নাটক বিশেষ উল্লেখযোগ্য। একটা যুগের অবসান, নিঃসন্দেহে।
আশ্চর্য সমাপতন! এর ঠিক ক'দিন পরেই, ২৯শে এপ্রিল ২০২০, ৫৩ বছর বয়সে চলে গেলেন ভারতীয় তথা বিশ্ব সিনেমা জগতের অন্যতম বলিষ্ঠ আর এক অভিনেতা, ইরফান খান। আমাদের আরও অনেক অভিনয় পাওয়ার ছিলো খানসাহেবের কাছ থেকে। অনেক বড়ো বড়ো ভারতীয় অভিনেতা যেখানে পিছিয়ে পড়েছেন, ইরফান খান সেই ভাষার বাধা অতিক্রম করে বিশ্বের দরবারে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। চুটিয়ে অভিনয় করেছেন বলিউড, হলিউড, তেলেগু, ব্রিটিশ ফিল্মে। জাতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, ৪ বার ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার,
২০১১ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছেন ইরফান।
পরের দিন, অর্থাৎ ৩০শে এপ্রিল ২০২০, চলে গেলেন ঋষি কাপুর - বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা ১৯৭০ [মেরা নাম জোকার], জাতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ১৯৭৪ [ববি]। তিনিই সম্ভবত ছিলেন দি মোস্ট ন্যাচারাল অ্যাকটর অফ কাপুর ফ্যামিলি। ইন্দ্রপতন অবশ্যই।
ওই দিনই ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন চুনী গোস্বামী। একই সঙ্গে
জাতীয় ফুটবল দলে ও রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটে বাঙলার অধিনায়কত্ব করেছেন। এমন প্রতিভা শতাব্দীতেও আসবে বলে মনে হয় না।
এই চলমান মৃত্যু মিছিলে ১৪ই মে যোগ দিলেন বাংলা সাহিত্য জগতের আরও দুই মহারথী। ১৯৯০ সাহিত্য অকাদেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত [তিস্তাপারের বৃত্তান্ত] ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক দেবেশ রায় এবং ভারতে আনন্দ পুরষ্কার[১৯৯৩,২০১৭], রবীন্দ্রভারতী ডিলিট[২০০৫], কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – জগত্তারিনী পদক[২০১৮], বাঙলাদেশে - বাঙলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার[১৯৭০], একুশে পদক[১৯৮৫], স্বাধীনতা পুরষ্কার[২০১৫], জাতীয় অধ্যাপক[২০১৮] সম্মানে অভিহিত মহা নক্ষত্র আনিসুজ্জমান।
মৃত্যু মিছিল, তবুও জীবনও তো প্রবাহমান। ঝড়ের দাপটে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে ক্রমাগত। যদিও একথা মানতেই হবে, অতিমারীর কারণে লকডাউন না হলে এই সাইক্লোনে অবশ্যম্ভাবীভাবে আরও অনেক প্রাণ যেতো। যে নেয়, সে কিছু দিয়েও যায়! কোরোনা নিচ্ছে যেমন অনেক, ক'টা প্রাণ বাঁচিয়েও গেলো হয়তো।
জীবন আছে, তাই মৃত্যুও আছে। নাট্যমঞ্চ তো খালি থাকতে পারে না! আর তাই অভিনয় চলতেই থাকে, আর এই সঙ্গে জীবনও...
জীবন আছে, তাই মৃত্যুও আছে। নাট্যমঞ্চ তো খালি থাকতে পারে না! আর তাই অভিনয় চলতেই থাকে, আর এই সঙ্গে জীবনও...
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন
শুভেচ্ছা নিরন্তর...
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteমৃত্যু মিছিল, তবুও জীবন প্রবাহমান। এরই মধ্যে স্বাগত জানাই 'ঋতবাক'এর এই আয়োজনকে! 'ঋতবাক' ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমার ব্যক্তিগত ধন্যবাদ !
ReplyDeleteখুব ভালো পড়লাম
ReplyDelete