প্রবন্ধ - সোমব্রত সরকার
Posted in প্রবন্ধ
৩
চর্যাপদের ভাষায় যে দু-রকম অর্থের কথা প্রথমেই বলেছিলাম, সেই লৌকিক ও গূঢ় অর্থময়তার মধ্যে আসলে যা রয়েছে, তার হল, বাউলের দ্বৈত সত্তা বা যুগল দ্যোতকের প্রতিরূপ।
কমল কুলিশ মাঝেঁ ভইঅ মিঅলী ৷
সমতাজোত্রঁ জলিঅ চণ্ডালী॥
ডাহ ডোম্বি ঘরে লাগেনি আগি ৷
সসহর লই ষিঞ্চহুঁ পাণী॥
ণউ খরজালা ধূম ন দিশই ৷
মেরু শিখর লই গঅণ পইসই॥
কমল ও কুলিশকে আমরা অনায়াসেই এখআনে দ্বৈতসত্তা ধরতে পারি। যৌন-র আভিধানিক ব্যাখ্যা রাখতে পারি— কমল ও কুলিশ হল নারী-পুরুষের সম্বন্ধীয় যৌনতা। নারী ও পুরুষ দুজনেই মিলিত হল। অর্থাৎ রতিক্রিয়াতে মগ্ন হল। যাদের সমতা-মিলনে চণ্ডালী জ্বলে উঠল। জ্বলে যাওয়া চণ্ডালীর রূপটা আসলে কী? আমরা তো বলব, চণ্ডালী হল গিয়ে কাম। নারী ও পুরুষের যুগল মিলনে কামই জ্বলে উঠছে। যদিও সাধকগণ কমলের মানে করেছেন প্রজ্ঞা আর কুলিশ হচ্ছে উপায়। আর এই একত্রমিলনে বোধিচিত্ত জ্বলে উঠছে। চণ্ডলী হল বোধিচিত্ত। যাকে আমরা কামচিত্ত বলছি। অনুভূতির জাগরতাও তো এক ধরনের উত্তেজনা? নয় কি?
ডোম্বিকে প্রকৃতিদোষ বলছেন সিদ্ধাচার্যরা। কামও তো এক ধরনের প্রকৃতির দোষ। যা জেগে ওঠে। ধরা পড়ে এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। কাম নিয়ন্ত্রণের বাহ্য লক্ষণগুলো কি নেই আমাদের ভাষার প্রথম প্রামাণ্য এই পুথির ভাষায়? বাউলের সাধনপদের বিষয়বস্তু খানিক হলেও এক নয় কি এদের সঙ্গে? যৌনতার উন্মোচিত রূপের রূপস্থ দশার ভাষাযোজনা, চিত্রকল্পের অভেদে এসব প্রশ্নচিহ্নই আমরা উসকে তুলছি। ভাবনাকে আখ্যাত পর্যায়ের সাযুজ্যে প্রতিরূপ দিতে চাইছি। চর্যার ভাবপ্রবাহের সাধন কেন্দ্রিকতাকেই ক্রিয়াশীল করতে চাইছি সাধনে অনিবার্য যুগল শরীর সাধনার সাহজিক সব আচরণে। যে আচরণ যৌনতার সৃজিত পুষ্পান্বিত ইমেজকে তুলে ধরছে তত্ত্ব-সাধনার বা অরূপ-উপলব্ধির কবিমানসের সচেষ্ট কবির ভূমিকায়। সাধন পদ তাই হয়ে উঠছে কাব্যমূল্যের একেকটি আখর। সেই আখরে পূর্ণরসোপভোগে শরীর প্রক্ষিপ্ত শরীরী ভাষাকে সাজিয়ে রাখছে দেহতত্ত্বের অভিযাজনায়। দেহ রসিকমানসে রেখাপাত করছে রসাভাসের ওঠা-পড়ায়।
দেহতত্ত্বের মধ্যে দেহগত অবতরণ বা উত্তরণ থাকবে না কিছুই, তা কি কখনও হয়? আমরা দৃষ্টিকে আরও একটু স্বচ্ছ করে নিতে বলছি। কোনও তত্ত্বকে, মতকে সামনে এনে একেবারে আলোচনা করতে চাইছি না। আমরা আমাদের সাহিত্য মূল্যের ক্রম-পরম্পরার মধ্যে একটি সহজাত, স্বাভাবিক, অনিবার্য উপাদান বা উপকরণের রূপস্থ ভাষাকেই খোঁজবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রিপুর সক্রিয়তার গভীর সব চিন্তাজনিত অভিনিবেশকে তত্ত্বমুক্তির প্রতিনিধি করে যৌনতার বসন্ত বাচক রক্ত দিতে চাইছি শিল্প-সম্মতাকেই অতি-সক্রিয় করে রেখে। প্রবৃত্তিগত দোষকে সৌন্দর্যের আলোকে ছড়িয়ে দিতে চাইছি। আদরসকেই শিল্পবিন্দুর আলোতেই দেখাতে চাইছি। এসবের জন্যই প্রামাণ্যতাকেই আমরা প্রথমে পাশে নিয়েছি। সেই প্রামাণ্যেরি আরও কিছু নিদর্শন এখানে পেশ করি।
তিঅড্ডা চাপী জোইণি দে অঙ্কবালী ৷
কমলকুলিশ ঘাণ্টে করহূঁ বিআলী॥
যোইণি তঁই বিনু খনাহিঁ না জীবমি ৷
তো মুহু চুম্বী কমল রস পীবসি॥
খেপহূঁ জোইণি লেপ ন জায় ৷
মণিকূলে বহিআ ওড়িআণে সমাঅ॥
সাসু ঘরেঁ খালি কোঞ্চা তাল্ ৷
চান্দসুজ বেণি পখা হাল॥
ভণই গুডরী অম্ হে কুন্দরে ধীরা ৷
নরঅ নারী মাঝেঁ উভিল চীরা॥
পদটিতে আমরা কিন্তু দেখি যৌন-যোগাচারের প্রাধান্য। যোগ কথাটির সঙ্গে দেহগত এক অবয়ব অবশ্যই সামনে এসে পড়ে। যোগের অর্থ হল মিলন বা সম্বন্ধ। যোগ সাধন-কর্মেরই ক্রিয়া-কৌশল। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে যে যৌন-যোগাচার এক সময়ে প্রাধান্য পেয়েছিল পদটিতে সেটাই আমরা দেখতে পাই। বৌদ্ধতন্ত্রে পদ্মকে যোনি এবং বজ্রকে লিঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। একে এক অর্থে যুগল রূপের প্রতীক হিসেবেও ধরতে পারি। এখানে দেখতে পাচ্ছি সাধিকা/যোগিনী সাধককে/যোগীকে আলিঙ্গন করে বসেছেন। এরপরই পদ্ম ও বজ্রের মিলন ঘটছে অর্থাৎ যোনিদ্বারে লিঙ্গের প্রবেশ ঘটেছে। কমল-কুলিশকে এর আগেও সম্বন্ধীয় যৌনতার প্রতীক হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছি। বলেছি কমল হল নারী, কুলিশ পুরুষ। এখন আরও স্পষ্ট করে দিলাম। কমল হল নারীর যোনি। যা অনেকটা পদ্মের পাপড়িরই অবয়ব। লোকাচারে ব্যবহৃত পানপাতা ও ফুলের পাপড়িকেও এখানে মনে রাখা যেতে পারে। কুলিশ হল পুরুষাঙ্গ। যার বজ্রের মতনই ওজস্বী তেজ। নরম আর গরমের একত্রীকরণেই তো প্রেম তেতে ওঠে। কাম জাগ্রত হয়। পদটিতে তারই ইঙ্গিত রয়েছে। কুন্দরযোগের কথা এখানে বলা হয়েছে— ভণই গুডরী অম্ হে কুন্দরে ধীরা। কুন্দরযোগ হল নারী-পুরুষের যৌনমিলনমূলক যোগ। যা অনেকটা হঠযোগেরই নামান্তর। সাধারণের মিলন এভাবে হয়ে ওঠে না। কেন না কুন্দর-যোগের মিলনে ললনা, রসনা ও অবধূতী— এই তিন নাড়িকে জাগ্রত রাখতে হয়। পদটিতে যোগিনীর সাধককে আলিঙ্গন করার পরই সাধক কিন্তু সাধন সঙ্গিনীকে বলছেল, যোইণি এঁই বিণু খনহিঁ ন জীবমি।— যোগিনি তোকে ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচব না। তো মুহু চুম্বী কমলরস পীবমি॥— তোর মুখে চুমু খেয়ে পদ্মমধুর স্বাদ পাই। এই দুই পঙ্ক্তির পঙ্ ক্তির আশেপাশে তত্ত্ব-রূপকের বেড়াজাল আছে ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যে প্রেমানুভূতির ভঙ্গিবৈচিত্র্য। প্রেম কি শরীর ছাড়া কখনও হয়? সম্বন্ধীয় প্রেমে যৌনতার এক স্মার্তরূপ থাকেই। ভালবাসার মধ্যে শরীর জড়িয়ে থাকে। অনেকেই কল্পিত ভালবাসার কথা বলে থাকেন। চর্চিত ইংরেজি শব্দটি আর ইচ্ছে করেই এখানে ব্যবহার করলাম না। কিন্তু প্রিয়মুখ/প্রিয়ামুখ স্মরণে কখনও কি একবারের জন্যেও মুখের উদ্দীপিত ভাঁজে চুমু খেতে ইচ্ছে করে না? যা যোগীর করেছে, করবেই। কেন না এা তো শাশ্বত প্রবৃত্তি। মহাজন পদকর্তারা তাকে কীভাবে অস্বীকার করবেন! যৌনতার দ্বৈত-ভাবদ্যোতক প্রতিরূপে বিধৃত প্রবৃত্তির যে পটভূমি, তাকেও পদকর্তারা কাব্যসৃষ্টির নিয়ামক করে তুলেছিলেন। সেই মূলীভূত উত্সকেই, প্রবৃত্তির জাগর রূপকে আমরা এবার দেখতে পাব উল্লেখিত পদটিতে।
দুলি দুলি পিটা ধরণ ন জাই ৷
রুখের তেন্তলি কুম্ভীরে খাঅ॥
আঙ্গণ ঘরপণ সুণ ভো বিআতী ৷
কানেট চৌরি নিল অধরাতী॥
সসুরা নিদ গেল বহুড়ী জাগঅ ৷
কানেট চোরে হিল কা গই মাগঅ॥
দিবসই বহুড়ী কাউই জরে ভাঅ ৷
রাতি ভইলে কামরু জাঅ॥
আইসন চর্যা কুক্কুরীপাত্রঁ গাইউ ৷
কোড়ি মঝেঁ একু হিঅহিঁ সমাইউ॥
দেখতে পাচ্ছি এখানে মাদি কাছিমকে দোহন করা হচ্ছে আর তার এত দুধ যা পাত্রে ধরে রাখা যাচ্ছে না। মাদি কাছিম এখানে আমরা তো মানব স্ত্রী-রূপেরই প্রতীক। না কি? আর তাকে যিনি দোহন করছেন এবং দোহন করে দুধ পাত্রে রাখতে পারছেন না প্রতুলতার কারণেই, তিনি নিঃসন্দেহেই পুরুষ। কেন না যোগ-সাধনায় সাধন-সঙ্গিনী অনিবার্য। সেখানে বিপরীত ক্রমের ধারাটিই প্রযোজ্য। মাদি কাছিমকে দোহনের রূপটিকে আমরা এভাবে ভাবতে পারি না যে, মাদি কাছিম হল স্তন, যা পেষণে/মর্দনে (স্থূল অর্থে টেপায়) পুরুষটি উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছেন না! নারীটিরও এত উত্তেজনা, যা পুরুষটির পক্ষেও সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। সেই উত্তেজনাকেই পাত্রে দুধ ধরে না রাখতে পারার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ পুরুষটি নিজেকে আর নারীটিকে কারওকেই সামলাতে পারছেন না। দুজনেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছেন আর সেই নিয়ন্ত্রণহীনতা এমনই, যে গাছের তেঁতুল কুমীরে খেয়ে যাচ্ছে। যা আদতে কখনওই সম্ভবপর নয় কোনওভাবেই। গাছকে এখানে আমরা শরীরের সঙ্গে তুলনা টানতেই পারি। প্রশ্ন, কোন শরীর? নারী শরীর ভাবতে কি খুব অসুবিধায় পড়ব আমরা? গাছকে যে নারী শরীর ভাবতে পারি তবে তাতে আবার তেঁতুল ফলেছে— পুরুষ গাছ তো আর ফল ধরতে পারে না! না কি? তেঁতুল সহজিয়া মতেও করা হেছে বক্রগামী বোধিচিত্ত। মানে কী এর? বক্রগামী বোধিচিত্তকে বলি যদি কামচিত্ত স্বরূপের কোনও প্রবৃত্তি? খুব কি ভুল বলব? আর কুমীর? অবশ্যই পুরুষ। যা নারীদেহকে খুবলে খাচ্ছে। অর্থাৎ নারী শরীরকে জাগ্রত করছে। সেজন্যই গাছটিতে তেঁতুল ফলেছে। মানে হল নারীটিও কামাসক্তা হয়ে পড়েছে। এভাবে ব্যাখ্যায় অনেকেই একমত হবেন না জানি। বিপরীতক্রম থাকতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক ও অনিবার্য। কাম এখানে পরিশুদ্ধ, নির্মল, নির্বিকল্প রূপেই রয়েছে সাধনার প্রয়োজনগত কারণে। সম্ভোগকে এখানে সাধন-মার্গের মহাসুখের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের শাস্ত্রও কিন্তু বলছে যখন-তখন সম্ভোগ নিষিদ্ধ। তিথিযোগের সম্ভোগের নানা গুণাগুণ রয়েছে। যেমন— আয়ুবৃদ্ধি, ধনবৃদ্ধি, মেধাসম্পন্ন সন্তানের আগমন বার্তা, ইত্যাদি। শাস্ত্রে অষ্টমী, চতুর্দশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা ও সংক্রান্তিতে সম্ভোগ একেবারেই নিষেধ।
আলোচ্য পদটিতে সম্ভোগচিহ্নও কিন্তু স্পষ্ট। চোর কী এখানে? আমাদের মতে চোর হল পুরুষের জাগ্রত কামসত্তা। যা কানেট চুরি করে নিচ্ছে। কানেট বা দুল অবশ্যই স্ত্রী-চিহ্ন। মানে স্ত্রীকেও জাগ্রত করে নিচ্ছেন পুরুষ। বধূটির ঘুমন্ত অবস্থাতেই কানেট চুরি যাচ্ছে। এভাবে কি ভাবতে পারি না— পুরুষের প্রবৃত্তিই নারীর ঘুম চুরি করে নিচ্ছে? কানেট এখানে তো হতেই পারে ঘুমন্ত নারীর কাম। যাকে পুরুষটিই জাগিয়ে নিচ্ছেন। বলা ভালো, পুরুষটি নারীর ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগে তাঁকে জাগিয়ে আসন্ন শৈথিল্যে উত্তেজনার কম্পমান ছায়া দিয়ে কামকে চুপিসাড়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বা চুরি করে নিচ্ছেন নিজের রূপস্থ শরীরের আনন্দ ঘোষণায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি এরপরই বধূটি কাকের ভয়ে ভীত হচ্ছে। কাককেও তো অনায়াসে পুরুষের কামসত্তা হিসেবে দেখতে পারি। এরপরই কিন্তু মহাসুখ জেগে উঠছে।
মিলনের আনন্দ বা অনুভূতি স্বর্গীয়। কোন সেই মিলন? সহজিয়া সাধক মহামিলনও বলেন। এর মানে হল তন্ত্রমতের মিলন। বাউল সাধকরাও কিন্তু যুগল মিলনের কথা বলে থাকেন। সেখানে চার প্রকার সাধকের সমাবেশ আমরা দেখে থাকি। স্থূল সাধক অর্থাৎ গুরুর কাছে সবেমাত্র দীক্ষা নিয়ে শিক্ষাপর্ব শুরু করেছেন। প্রবর্ত সাধক অর্থাৎ গুরুর কাছ থেকে তিনি বিবিধ শ্বাসের কাজ, দমের কাজ রপ্ত করে নিয়েছেন। স্থূল ও প্রবর্তটি সাধকের প্রথম পর্যায়ের স্তর হিসেবে দেখা যেতেই পারে। মানে স্থূল শরীর ভেদ হয় গুরুর মৌখিক নানা উপদেশে। প্রবর্ত স্তরে গুরু শেখান দম আর নানা শ্বাসের কাজ। আসন রপ্ত হয়। শরীর চার বর্জ্য পদার্থ— মল, মূত্র, বীর্য, রজের ব্যবহার সম্পর্কে গুরু শিষ্যকে ছায়া-ছায়া এক আধিপত্য দিয়ে বসেন তাঁরই মুখের ভাষায়। সে সবের ব্যবহার সম্পর্কে বলেন। মল গায়ে মাখা, মূত্র পানের নানা কারণ জানান। নামিত এই চারচন্দ্রকে কীভাবে দেহের মধ্যেই ফিরিয়ে আনতে হবে বর্জ্য হিসেবে বেরিয়ে গেলেও— সে সম্পর্কে বদ্ধমূল ভাবদ্যোতক অরূপ-সাধনাকে উপস্থাপিত করেন শিষ্যর সম্মুখে। দেহকে ব্রহ্মাণ্ড রূপক-এ প্রতিস্থাপন ঘটিয়ে সেই দেহে কীভাবে পরিভ্রমণ করতে হবে আর এই দেহ-ব্রহ্মাণ্ডকে আলোকিত তাত্পর্যে নিয়ে যেতে পারলেই হবে তাঁদের নক্ষত্র-খচিত তত্ত্বপ্রাণতার পরমেশ্বর দর্শন— আলোকিত সমন্বয়ে বিলীন হয়ে যাওয়া— এই সবই গুরু প্রর্ত স্তরে শিষ্যকে মূল্যবান অনুরুক্তি দিয়ে ব্যপ্ত করেন। সাধক স্তরে চলতে থাকে তারই সাধনা। আর প্রবর্তে সঙ্গিনী সহ দেহ-মিলনে সাধক বীর্যের গতিকে উল্টোমুখে ঠেলে তুলে সিদ্ধ দশাতেই পৌঁছে যান। এই পদ্ধতিকে তাঁরা বলেন, উল্টাস্রোতে নৌকো বাওয়া। বীর্যের ঊর্ধ্বগতি তাঁদের নিজস্ব অভিসার বিন্দুধারণ। আর সাধারণ মিলনের বীর্যপাতকে তাঁরা বিন্দুপতন হিসেবে জীবনচেতনার বিপরীত মার্গে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
স্বর্গ কথাটির অর্থ দেবলোক বলেই আমরা জানি। পার্থিব শরীর যখন আর বিশ্বাসজনিত কারণে থাকছেই না তখন সেই অপার্থিব আনন্দলাভকে স্বর্গীয় বলতে অবশ্য আমাদের মতে দোষ নেই কোনও। স্বর্গ ব্যাপারিও তো একটি অনুভূতিকেন্দ্রিক ধারণা। নয় কি?
যোনিপথে লিঙ্গের প্রবেশের পরই আসছে মহাসুখ। চর্যার সমস্ত পদগুলোতেই এই প্রক্রিয়ার কম-বেশি বর্ণনা আছে। সমস্ত বর্ণনার মধ্যেই আছে দেহ বা শোষিত কাম চেতনার দেহতত্ত্ব। সহজ সাধনার আধারই তো হল দেহ। সুতরাং দেহের সামগ্রিক অধিবাসকেই আমরা মৌনতার রূপ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। আর সেই রূপেরই ধ্বংস-চেতনার অচরিতার্থ বোধের ছায়া বা রূপান্তর নিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলার দেহ-সাধনা বা সহজ-সাধনা— এমন আলোকসম্ভব স্বীয় দর্শন সব রয়েছে এলাকার মানুষ-জনেদের। যেখানে অনেক প্রতীক-বাচক আধারে রয়েছে স্বকীয়া বা পরকীয়ার কথা। পরকীয়ার অর্থ রূপকে অপর সম্বন্ধীয়ের আদল দিতেই পারি আমরা। তাহলে দাঁড়ালো এই: যে প্রেমপাত্রী, পরনারী বা প্রেমপত্র, পরপুরুষ কোনওভাবেই কখনও একে অপরের জন্য নয়। অর্থাৎ কি না যা সিদ্ধ, সহজাত সম্পর্কের রূপ নয় কোনও। বৈধ বা স্বীকৃতির স্থান নেই কোনও এসব সম্পর্কের সুসংহত মনীষায়। তাই একে এক অর্থে অবৈধ বলা যেতেই পারে। আর এই রসানন্দের পরকীয়া অনেক দেহসাধনারই বিশিষ্ট আচরণ।
যে পদটির কথা আমরা এতক্ষণ ধরে যৌনতার প্রহর গণনার আলোকের প্রসঙ্গক্রমে এনেছি, সেই পদটিতেও অবৈধতার দেহাধার যৌনতাকে রূপান্তরিত করছে পরকীয়ার নীতি দর্শনে। যার জন্যই বধূটি দিনের বেলা কাক ডাকলে ভয় পাচ্ছেন। কাককে পুরুষ প্রতীক বলেছি আমরা। অবৈধ সম্পর্কের পুরুষ তাই আসছে রাতের বেলা। শ্বশুরমশাই ঘুমিয়ে গেলেই। এতে আরও-ই পরিষ্কার যে বধূটির স্বামী বাড়িতে নেই।
এরকমই আরেকটি অবৈধ প্রেমের প্রসঙ্গত পদের কথা বলি এখন, যেটাতে বিবাহিত নারীর ব্যভিচার নেই, আছে কেবল অনূঢ়া কন্যার বহু পুরুষের সঙ্গে আসঙ্গলিপ্সা।
নগর বাহিরেঁ ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ ৷
ছোই ছোই জাহা সো বাহ্ম নাড়িআ॥
আলো ডোম্বি তোত্র সম করিব ম সাঙ্গ ৷
নিঘিণ কাহ্ন কাপালি জোই লাগ॥
এক সো পদমা চৌসট্ ঠী পাখুড়ী ৷
তহিঁ চড়ি নাচঅ ডোম্বি বাপুড়ী॥
হা লো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে ৷
আইসসি জাসি ডোম্বি কাহরি নাবেঁ॥
তান্তি বিকণঅ ডোম্বি অবর না চঙ্গেড়া ৷
তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়এড়া॥
তু লো ডোম্বি হাঁউ কপালী ৷
তোহোর অন্তরে মোত্র খলিল হাড়েরি মালি॥
দেখতে পাচ্ছি নগরের বাইরে ডোম্বি/ডোমনী কুঁড়ঘর বেঁধে থাকছেন। ঘরের পাশ দিয়ে রোজই ব্রাহ্মণ যাচ্ছেন। ব্রাহ্মণ কাহ্ন কাপালিক। তাঁর ডোম্বির সঙ্গ করতে ইচ্ছে জেগেছে। ডোম্বি গৃহে একা থাকেন। মানে ধরে নিতে পারি তিনি অনূঢ়া। কাহ্নর ইচ্ছেকে এরপরই দেখই ডোম্বি মর্যাদা দিচ্ছেন। কাহ্ন আর ডোম্বি একসঙ্গে নাচছেন। মানে তো ধরেই নিতে পারি দুজনেই সম্ভোগসুখে রত রয়েছেন। চৌসট্ ঠী পাখুড়ী/চৌষট্টি পাপড়ির পদ্মতে চড়ে কাহ্ন কাপালিক ও ডোম্বি নাচ করছেন। পাপড়িকে নারীর যোনির সাদৃশ্যগত একটা ব্যাপারের সঙ্গে ইতিপূর্বেই তুলনা টেনেছি। চৌষট্টি পাপড়িকে যোনি হিসেবেই দেখছি। চূড়ান্ত সম্ভোগের জন্য যোনি তার পাপড়িসম ঢাকনা উন্মুক্ত করে নিচ্ছে। যদিও সাধকগণের মতে, চৌষট্টি দল হল একটি নির্মাণ চক্র। যেখানে নৈরাত্মার অতীন্দ্রিয় স্বরূপ রচিত হয়। অর্থাৎ ধ্যানমার্গে নাভিকমলে বোধিচিত্তের জাগরণ ঘটে। এখন নাভিকে নয়, যোনিকে চৌষট্টি পাপড়ির পদ্ম ধরছি। এতে বিতর্ক আসতে পারে। তা হোক। বলছি চৌষট্টি পাপড়ির পদ্ম হয়ে উঠছে ডোম্বির যোনি। কারণ সেখানে কাহ্নর লিঙ্গ প্রবেশ করে গেছে। এই মিলনের সময় যোনি পদ্মের মতো বিকশিত হয়ে পড়ছে। যোনি লিঙ্গের চাপে প্রসারিত হচ্ছে। দুই সত্তা এক হয়ে উঠছে। সহজ-চিত্ত জেগে উঠছে। সহজচিত্তের সাধারণ নামটি হল করুণা। চারটি বজ্রযোগের মাধ্যমে চার প্রকার করুণার প্রকাশ ঘটে সাধক/সিদ্ধাচার্যের শরীরে। নির্মাণকার্যে অর্থাৎ শরীরের গাঠনিক নানা সব যোগ-বিভঙ্গের স্ফূরিত করুণা হল, উপেক্ষাত্মক করুণা। অর্থাৎ সুখে-দুঃখে সমান উদাসীনতা। সম্ভোগকায়ের/শরীরের স্ফূরিত করুণা হচ্ছে, মুদিত করুণা। অপরের সুখে সুখবোধ এর ধর্ম। ধর্মকায়ের/ধর্ম বিকাশের স্ফূরিত করুণা হল, মৈত্রী-ভাবনাময় করুণা। অর্থাৎ সমস্ত সত্ত্বের কুশল কামনা করা। সহজ-কায়ের করুণা হল, মহাকরুণা। তাই মহাসুখ। তূরীয় অবস্থায় যে সুখ তা মহাসুখ। অর্থাৎ বৌদ্ধ-তন্ত্র মতে ‘ক’ রূপ সুখকে প্রচোদিত করে যে জ্ঞানবজ্র, তা-ই করুণা লক্ষণ। বলতে পারি কথিত সেই মহাসুখ আসছে এখানে যুগল দেহসাধনার একাত্ম তন্ময়তার মধ্যে দিয়ে। মিলনের পর তাই দেখি কাহ্ন কাপালিক ডোমনীকে জিজ্ঞাসা করছেন, ডোম্বি কার নায়ে/ নৌকোয় তুই আসিস যাস। —হা লো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে।/ আইসসি জাসি ডোম্বি কাহবি নাঁবে। নাওকে সাধক শরীর হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। বলতে পারি, সঙ্গিনীকে সাধক জিজ্ঞাসা করছেন যে, আর কার-কার সাধন-সঙ্গিনী হয়েছেন তিনি। আবার এভাবেও ভাবা যেতে পারে ডোম্বি যেহেতু অনূঢ়া আমাদের দৃষ্টিকোণে— অনূঢ়া ডোম্বির বহু পুরুষের আসঙ্গলিপ্সা রয়েছে সেজন্যই তাঁর অন্য অপর অনেকের নায়েই বিচরণ। নাওকে পুরুষ শরীররের স্থিতাবস্থা রূপে আনতে পারি। এ-ও বলতে পারি, অন্য অনেকের নৌকো চেপেও ডোম্বি রোমাঞ্চিত যৌনতার উপযুক্ত স্থানে যেতে চাইছেন। যেখানে যৌনতাকে উপভোগ্য শারীরিক সমস্যানুভূতিতে তিনি রূপান্তরিত করে নিতে পারেন আর এই নায়ে বিচরণ সৃজিত মননের দীপালোক চিত্রল মগ্ধতার উত্তরাধিকার তো নয়ই— কারণ, নৌকাই ছিল সেই কালপ্রেক্ষিতে একমাত্র যানপথ।
আরও একটি পদের কথা বলব, যেখানে আরও স্পষ্ট যৌন-মিলনের বর্ণনা রয়েছে। যৌনতার যথেষ্ট আক্ষেপও কিন্তু রয়েছে চর্যার বেশ কয়েকটি পদে। স্পষ্ট যৌন মিলনের পদটির রস-সিদ্ধির গূঢ় রহস্যকে ব্যাখ্যা করবার আগে যৌন আক্ষেপের পদের কিছু লাইন তুলে ধরি। আমরা যৌনতাকে কখনও কেবল প্রখর দীপ্তি দিতে চাইছি না। যেটা দেখাতে চাইছি, যৌনতা কীভাবে ভাবনারই রেখাঙ্কিত নানা আবেগে রসোচ্ছ্বাসিত কবিতা-আবেগের সূক্ষ্ম-গভীর তন্ময়তাকে অনুভববেদ্য, সার্থক সৃজনী ক্ষমতার অব্যাহত শিল্প-সিদ্ধি ঘটাতে পারছে। যৌনতা হয়ে উঠছে শিল্পের রূপাধারে পূর্ণোপলব্ধির সহায়ক। এভাবেই তার রূপ-অনুরূপ-প্রতিরূপে রসোত্কর্ষের সহায়ক সুপ্রযুক্ত সাধন চিন্তাধারায় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে কাব্যে নিবিড় পরিচয়ে। সেই প্রতিবিম্বিত পূর্বাভাসে শ্লেষ, লাঞ্ছনা, মাতৃত্বের আকুল দশাও যৌনতাকে শ্রেয়বোধ দিয়ে পীড়িত করছে। যৌনতা সেখানে আক্ষেপোক্তির সীমা ছাড়িয়ে নারীর সু্ন্দর, স্নিগ্ধ, উচ্চ ও পবিত্র মাতৃত্বের রূপান্তরের জন্য সক্রিয় হয়ে আছে।
হাঁড নিরসী খমণ ভাতারি ৷
(আমি আশাহীন, আমার ভাতার উদাসীন) ৷
মোহোর বিগোতন কহন ন জাই॥
(আমার দুঃখ বলা যায় না)॥
এখানে স্পষ্ট হয়ে গেছে য়ে, স্বামীটি বউটির প্রতি উদাসীন। তাঁর অনুধাবনীয় যৌনক্ষুধার কথা নারীটি আজ মা-কে বলছেন। বউটি স্বামীর এই অবহেলার কথা মনের দুঃখে মা-কে বলছেন।
ফেটলিউ গো মাত্র অন্তউড়ি চাহি ৷
(আতুর দেখে মাগো আমি প্রসব করলাম) ৷
জা এথু চাহাম গো এথু নাহি ৷
(যাকে গর্ভে বহন করলাম সে থাকল না) ৷
পহিল বিআণ মোর বাসনয়ূড়া ৷
(এটা আমার প্রথম বিয়নো, বাসনার পুটলি) ৷
নাড়ি বিআরন্তে সেবা বায়ূড়া॥
(নাড়ি কাটলেই সে হাওয়া)॥
মা-কে বধূটি বলছেন, এরপরও ভাতার উদাসীন। নতুন প্রসবের জন্য করণীয় কর্তব্য করছেন না। এখানে করণীয় কর্তব্যে কিন্তু যৌনতার সঙ্গে এসে মাতৃত্বের অমোঘতাও মিশছে।
এবার স্পষ্ট যৌন-মিলনের যে পদটির কথা বলেছিলাম, সেদিকে দৃষ্টি ফেরাব।
উঁঞ্চা উঁঞ্চা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী ৷
মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গিবত গুঞ্জরী মালী ৷
উমত সবরো পাগল শধরো মা কর গুলী গুহাড়া তোহৌরী ৷
নিঅ ঘরিণী নামে সহজ সুন্দরী ৷
নানা তরুবর মৌলিল রে গঅণত লাগেনি ডালী ৷
একেলী সবরী এ বণ হিণ্ডই কর্ণ্ণ কুণ্ডলবজ্রধারী ৷
তিঅধাউ খাট পড়িলা সবরো মহাসুহে সেজি ছাইলী ৷
সবরো ভূজঙ্গ ণইরামণি দারী পেক্ষ্ম রাতি পোহাইলী ৷
হিঅ তাঁবোলা মহাসুখে কাপুর খাই ৷
সুন নিরামণি কণ্ঠে লইআ মহাসুখে রাতি পোহাই ৷
গুরুবাক পুঞ্চআ বিন্ধ ণিঅ মণে বাণে ৷
একে সরসন্ধাণেঁ বিন্ধহ বিন্ধহ পরম নিবাণেঁ ৷
উমত সরবো গরুআ রোষে ৷
গিরিবরসিহর সন্ধি পইসন্তে সবরো লোড়িব কইসেঁ॥
পদটির প্রথমেই রয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়ে শবরী বালিকার রবসবাসের কথা। অবিবাহিত সেই নারীর পরনে ময়ূরের পুচ্ছ, গলায় গুঞ্জার মালা। শবর উন্মত্ত। বলতে হবে না শবরীকেই দেখে। শবর প্রেমিক নৈরামণি (শবরী) প্রেমিকা। মিলনের কারণেই খাট পাতা হল। এরপর মহাসুখ জাগছে। যদিও সহজিয়া সাধকেরা ব্যাখ্যা অন্য। এই মহাসুখে কোনও ভোগসম্বন্ধ নেই। অথচ আশ্চর্য, নারী রয়েছে— কিন্তু ভোগহীনতায় মিলনলীলা চলছে। অবশ্য এটা সম্প্রদায়গত বিশ্বাস। কিন্তু তাতে কী? এই মিলনলীলায় কি একেবারেই যৌনতার ভাষ্যের রচিত রূপ উঠে আসছে না? আমাদের সহজাত প্রবৃত্তিকে, নিবৃত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে চর্যাপদ। কিন্তু অস্বীকারের জায়গা নেই নিবৃত্তির মধ্যে, প্রবৃত্তি তো রয়েছে। যে প্রবৃত্তি, নিবৃত্তির ভাষ্যরূপই রচনা করছে। কিন্তু কোন ভাষ্যরূপ? যৌন বিধিনিষেধের ভাষ্যরূপ। তাকে আমরা যৌনতার ভাষ্যরূপ বলে মানতে কি পারি না? পারি। যৌনতা এখানে কেবল সম্ভোগ নয়। যৌনতা এখানে এক শিক্ষার কৌশল। কামের সঙ্গে খেয়াল রাখার মতো বিষয় কলা যুক্ত হয়ে পড়ে। কেন পড়ে? অবশ্যই আমাদের ঐতিহ্যের কামসূত্রকে মাথায় নিয়েই। যেখানে কাম এক পদ্ধতিগত দীর্ঘ সূত্রাবলী। যা এসেছে সব নারী-পুরুষের যৌথ শারীরিক অভিযোজনের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই। যা প্রতিবিম্বিত সৌন্দর্যের কাব্যোপলব্ধির মতোই ছোট ছোট রূপাধার। সেজন্যই কামের সঙ্গে কলাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কলা নৈপুণ্যরসের উত্কৃষ্ট দিশারী। কামের উত্তেজিত অস্তিত্বকে কলার প্রতীক-এ, উপমায়, রূপে দুর্মর করে সাজিয়ে অনুভূত বিশূন্যতার মধ্যেই চলে যাওয়া হল কামকলা। তার জন্যই সূত্রের আধারিত আপতিক শারীর-বিজ্ঞান। যাকে আবিষ্কারের নেশায় নিহিতার্থ কামনার আগুনে রহস্যঘন ইন্দ্রিয়রসে ভিজিয়ে নেওয়া হয়েছে। চর্যাপদের কাম সাধনগত প্রক্রিয়ার সূত্রাবলী। যা এসেছে সাধনাকে গতি দিতে। মান্য বিশ্বাসের সিদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এসেছে এই কাম। ইন্দ্রিয়গুলোকে বিকশিত ও বিস্তৃত হতে না দিয়ে দমনের স্থাপনা-চাতুর্যে বিবর্তন ও পরিণতির চেহারাকে দেখে নিতে চাইছে সহজ সাধনা। আর সেই অনড়তার প্রতীকে-রূপে, কাম অঙ্গাভরণ যৌনতাকে বাঙ্ময় ও চিত্রল করে সাজিয়ে দিচ্ছে সাধনার দৃঢ় সব প্রভাবক পরম্পরায়।
চলবে
0 comments: