3

ধারাবাহিক - শিবাংশু দে

Posted in



২. 


সন্ধেবেলার এসি গার্ডের মোড়। আটটা বাজে। ওয়ান ওয়ে দিয়ে লকড়ি কা পুল। ফ্লাই ওভার পেরিয়ে মেহদি ফাংশন হলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত দূর তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিধানে শাড়ি? অ্যায় হুস্ন বেপরওহা তুঝে...! এটুকুই মনে এলো। 

-ইশে, দেখো বলা উচিত না, আগমার্কা প্রৌঢ় বিবাহিত বাঙালি আমি... তোমাকে ফাস কেলাস লাগছে দেখতে... 

-আমিও বিবাহিত... 

ওহ আচ্ছা, তবে আমার রিস্কটা একটু কম হয়ে গেলো কী...? ছোটোদের দুনিয়াটা ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারি না.. 

-আমি ছোটো নই, কমপ্লিটেড থার্টি ফাইভ... 

-বাহ, ব্রেশ... 

-তোমার কৌতুহল এত কম কেন? 

-মানে? 

-কখনও কিছু জানতে চাও না... 

-কী দরকার... সব কিছু জানতে নেই। পৃথিবীটা খুব ছোটো হয়ে যায়। হারিয়ে যাবার সব জায়গা ফুরিয়ে যায়...মুদ্দতেঁ গুজরি, ফির উওহ ঠিকানা ইয়াদ হ্যাঁয়। জীবনটা এরকমই থাক...শুনেছো শ্যেয়রটা? 

-হুমম, হসরত মোহানি... 

-প্রশ্নটার উত্তরে প্রথম এই নামটা কেউ বললো। সবাই বলে ঘুলাম আলি...যাকগে, তোমাকে কয়েকটা কবিতা বেছে দেবো। পুরো কবিতাগুলো পড়া হবে না, দু'চার স্তবক, গানের মাঝে মাঝে, যেমন হয়... 

- ঠিক আছে, একটু দেখিয়ে দেবে.. 

-তুমি একটা গাড়ি কিনে নাও, হায়দরাবাদে সোমস্কৃতি করতে গেলে নিজের বাহন লাগে, নয়তো বহুত পরেশানি... 

-আমার গাড়ি আছে তো... 

-কোথায়? 

-এখানেই... 

-তবে? 

-ইচ্ছে করেই আনিনি। তোমার লিফট দিতে কি খুব অসুবিধে হচ্ছে? 

-অবকে ভি উওহ দূর রহেঁ 

অবকে ভি বরসাত চলি... 

-বুঝলাম না.. 

-ঢলতে ঢলতে রাত ঢলি... 

-এই গানটায় পেয়েছে নাকি তোমাকে আজ... 

-গান থেকে গান্ধর্বী, সব্বাই আজ পেয়ে বসেছে... জায়েঁ তো জায়েঁ কঁহা? 

-আর ইউ ফিলিং আনকম্ফর্টেবল...? 

-কেন? 

-ফর মী... 


গাড়ি চালাবার সময় শুধু সামনের দিকেই তাকাতে হয়। 

- এই কবিতাটা তোমাকে দেবো, পড়ার জন্য ... বড়ো প্রিয় হে আমার... 

-কোন কবিতাটা? 

-কেন অবেলায়, ডেকেছো খেলায়, সারা হয়ে এলো দিন... 


বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেলো সেদিন। মহলা দিতে প্রায় পুরো ব্রিগেড হাজির। তবু নিশ্চিন্ত, হাইটেক সিটি যাবার চড়নদার পাওয়া গেলো একজন। অনু'কে তাদের সঙ্গেই পাঠিয়ে দিলুম। বাড়ি এসে দেখি সঙ্গিনী অপেক্ষা করছেন, না খেয়ে। খেতে বসে তিনি জিগালেন, 

-কেমন চলছে রিহার্সাল? 

-দেশের অবস্থা খুব খারাপ... 

-জানি, শর্মিলা ফোন করেছিলো... 

শর্মিলা আমাদের গানের দলের অধিকারী মশাই। খুব ভালো গান গায়। আর আমার চরিত্ররক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় দিদিমণির দায়িত্ব নিয়েছে। 

-কী বললো...? 

-তোমার নতুন মিউজের খবর কী? 

-বললুম তো, দেশের অবস্থা খুব খারাপ... 

-সাবধানে থেকো, বিজয়া'কে সামলানো সব কা বস কি বাত নহিঁ.... 

-হুমম, ঠিকই বলেছো... হয়তো কাল সকালে ঘুম ভেঙে দেখলুম সান ইসিদ্রো পৌঁছে গেছি... 

-শর্মিলা খুব কনসার্নড, বললো, তুমি কী করে ছেড়ে দাও শিবাংশুদা'কে এভাবে...? বয়সটা ভালো নয়... 

-তুমি কী বললে? 

-একই কথা, কোথায় আর যাবে...? 
 

নন্দিনীদি কবি'কে নিবেদিত একটা মেগা কবিতা উৎসবের আয়োজন করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এপার আর ওপার বাংলার অন্ততঃ কুড়ি জন কবি আসছেন। সঙ্গে কিছু স্থানীয় কবিও থাকবেন নিয়ম মতো। আমাকে বললেন, তুমি সভা পরিচালনা করো। আমি রাজি নই। অতজন অতিথি আসবেন। সেজেগুজে স্টেজে উঠে ঘুরে বেড়ালে গদ্যময় কাজগুলো কে করবে। নন্দিনীদিকে আরো বলি, কবিরা একটু সুন্দরী সান্নিধ্য পছন্দ করেন। অনু'কে লাগিয়ে দিন। সভার শোভা বর্ধন করবে, কবিরাও 'অনু'প্রেরিত হয়ে থাকবে। 

-কেন, তুমিও তো পদ্য করো। তোমার কি সান্নিধ্যের প্রয়োজন নেই? 

-আমার? জানেনই তো ওটাই আমার অক্সিজেন... ওরকম এক আধ ঘন্টায় আমার কী হবে? 

-বেশ, তবে বাংলা কবিতা সম্বন্ধে অনু খুব একটা ওয়াকিফ নয় বোধহয়... একটু তৈরি করে নিও... 

-কোথা থেকে শুরু করি...কে জানে? 


বাংলা কবিতার আবহে জন্ম, কম্মো, বেড়ে ওঠা। কিন্তু কীভাবে কবিতা পড়তে হয়, তার ক্র্যাফট, তার আত্মা, ত্বক, হাওয়ায় ভাসা চুল, দিনশেষের পোড়া রুটি, কোনও কিছুই আমার মুঠোর মধ্যে আসেনি। পড়তেই শিখিনি, আবার লেখা। চালাকিটা কিন্তু খুব শিখেছি। লাগসই কোটেশন দেওয়া, জিজ্ঞাসু জনতাকে চমকে দেওয়ার ভেল্কিবাজি, সবই কিন্তু মুঠোর মধ্যে। উনি 'কবিতা' করেন জাতীয় মন্তব্য বা কটাক্ষ শুনতে পাই মাঝেমাঝেই। কিন্তু কোনও সৎ মানুষের কাছে কবিতাকে স্তরে স্তরে উন্মোচন করার ধৃষ্টতা করার সময় বেশ গ্লানি অনুভব করি। কিন্তু লোকে তো জানে.... 

-আজ বিকেলের দিকে ক্লাস শেষ হলে একটা মিসড কল দিও। কথা আছে.... 

ত্বরিত উত্তর এলো, 

-হোয়াই মিসড, কথা বলা বারণ হয়েছে কি? 

-নাহ, তবে ফোন কোরো... 

ঠিক পাঁচটার সময় ফোন এলো... 

-আমি বাসস্ট্যান্ডের শেডে দাঁড়িয়ে আছি, আসতে পারবে? 

-আসছি, পাঁচ মিনিট... 

কয়েকটা কবিতার বই গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কয়েকটি প্রিয়তম কবিতার বই। ভালোমন্দ জানি না। যে পড়ে সে স্থির করে, ভালো লাগলো না অন্য কিছু। দূর থেকে দেখি শেডের বেঞ্চিতে একা বসে আছে। নাহ, স্মোক করছে না। 

-দেরি হলো কি? 

-নাহ, ঠিক আছে... 

-একা একা বসে আছো... ধোঁয়া নেই কেন? 

এবার মুখ ঘুরিয়ে তাকায় সোজা চোখের দিকে, 

-খোঁচাচ্ছো... তুমি কী জানো কিছু...? কিসের আগুন, কেন ধোঁয়া...? 

-নাহ জানি না, কী দরকার? শুধু এইটুকু জানি ভিতরের আগুন নিভে গেলেই বাইরের আগুন ধার করতে হয়... 

-তোমার দুনিয়াটা খুব থিওরিটিক্যাল, লেসড উইথ মিস্টিক রোম্যান্টিসিজম, ট্যু জাজমেন্টাল... 

-ঝগড়া করবে...? 

-এই বইগুলো কী? 

-তোমার জন্য, মানে তোমার পড়ার জন্য... বাংলা কবিতার বই.... 

-সত্যি... 

-হমম... 

-আমরা কোথায় বসবো? 

-এখানে অবশ্যই নয়... 

-তবে চলো... 

-আরে, আমার মেলা কাজ আছে। এখন বসতে পারবো না.... তুমি নিয়ে যাও, পড়ো, তারপর কথা হবে... 

-তবে বইগুলো তুমিই নিয়ে যাও... যখন সময় পাবে তখনই কথা হবে.. 

-আরে না... তুমি পড়ো আগে... 

-আমি একা একা কবিতা পড়ি না... 

-তোমার দুনিয়াটা খুব থিওরিটিক্যাল, লেসড উইথ স্টুপিড রোম্যান্টিসিজম... রিল্যাক্স ...হ্যাঁ, এই বইগুলো আমার কাছে হোলি স্ক্রিপচারের মতো... প্লিজ বী রেসপেক্টফুল... 

এর থেকে রূঢ় হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। 

- সরি, রাগ কোরো না... আমার যে কী হয়ে যায়.. বুঝতে পারি না.... আমি আজ সারা রাত পড়বো মন দিয়ে... সব কবিতা... কবে আবার আসবে? 

-দেখি... আগে পড়ো তো, তারপর.... 


একজন বড়ো লেখকের বই প্রোমো আছে, তাজ কৃষ্ণা'য়। কেউ একটা আমন্ত্রণপত্র দিয়ে গেলো। সঙ্গিনীকে বলি, যাবে নাকি? তিনি রাজি। সন্ধেবেলা গিয়ে দেখি হায়দরাবাদের পেজ-থ্রি সব হাজির। বেশ কিছু চেনা মুখ এদিক ওদিক। জমিয়ে বসি। নানা আলিম লোকজন নানা উমদা কথাবাত্তা পেশ করে যাচ্ছেন। লেখক নিজেও কিছু বললেন। তার পর বইটি থেকে কিছু গদ্যপাঠ করবেন টাবু। তিনি এলেন, পড়লেনও ভালো। তবে তারকার জ্যোতি তো ভক্তের চোখে। পলকের মধ্যে শ্রোতার দল ভক্ত হয়ে গেলেন। সঙ্গিনী জনান্তিকে শুধোলেন, নাগার্জুন এসেছে নাকি? বলি, 

-তাকে দেখতে পেলে পায়ের ধুলো নিয়ে আসবো একটু... 

-হুমম, তোমার স্বপ্নের পৃথিবী... 

-আলবাৎ, একদিকে অমলা, অন্যদিকে টাবু... কী শান্তিপূর্ণ প্রেমময় সহাবস্থান... আহা... 

-দেখছি তো, জিভে জল এসে গেছে একেবারে... 

-ছিঃ, এরকম একটা সড়কছাপ উপমা দিও না... 

বলো, হৃদয়ের একুল ওকুল দুকুল ভেসে যায়.... হায়.... 

-বুঝি না কী করে টাবু'র মতো একজন মানুষ, যার জীবনে যা কিছু চাওয়ার, সব আছে... সে কী করে এমন আদার উওম্যান হয়ে মানিয়ে নিতে পারে...? 

-হোরেশিও, এমন বহু কিছু আছে, যা তুমি জানো না...জানতে চেয়ো না... 

-হুমম, না জানাই ভালো। আরো ভালো যদি সেটা তুমি আমাকে না জানাও... 

-তওবা তওবা, মেরা কো'ই মজাল হ্যাঁয়... 


অনুষ্ঠান শেষ হলো। বেরোবার সময় দেখি হলের পিছনের দরজার পাশে, একটু দূরে, অনু এদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। দেখতে পেয়ে হাত নাড়ার আগেই সে ত্বরিত দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে তাকে আর দেখতে পাই না। মনে পড়লো, ফোন করেছিলো দুপুরদিকে, সন্ধেবেলা ফ্রি আছি কি না। 
 

..ইশারা তোমার বাতাসে বাতাসে ভেসে 
ঘুরে ঘুরে যেত মোর বাতায়নে এসে, 
কখনো আমের নবমুকুলের বেশে, 
কভু নবমেঘভারে। 

জানতুম আসবে, এলো শেষ পর্যন্ত। পরদিনই অনু'র ফোন। সেদিন আবার শনিবার। বিকেলে গানের রিহার্সাল। 

-তুমি আজ কখন বেরোতে পারবে? 

-দেখছি, কেন? 

-আমি তোমার দেওয়া বইগুলো সব পড়েছি। কয়েকটা কবিতা নিয়ে একটু কথা বলবো। তোমার একটু সময় হবে? 

-হুমম... তবে কাল তুমি আমাদের দেখে পালিয়ে গেলে কেন? 

-পালিয়ে যাবো কেন? তোমরা ব্যস্ত ছিলে... বিরক্ত করলাম না... একটা কথা, বৌদি'কে দেখতে খুব মিষ্টি... 

-'বৌদি?' আমাকে কি তুমি 'দাদা' বলতে শুরু করেছো? গুড, পজিটিভ ডেভলপমেন্ট... কাকা'ও বলতে পারো... 

-নাহ, ওসব কিচ্ছু বলবো না... 

-তবে? 

-আমার যা ইচ্ছে বলবো, যেভাবে ইচ্ছে বলবো, যখন ইচ্ছে বলবো... 

-হাঁপিয়ে যাবে যে, আস্তে ... 

-তুমি কখন আসবে? 

-দেখছি, জানাবো.... 
 

....অযাত্রা-পথে যাত্রী যাহারা চলে 
নিষ্ফল আয়োজনে? 
কাজ ভোলাবারে ফেরো বারে বারে 
কাজের কক্ষ-কোণে। 

জানতে চাইনি, কিন্তু নন্দিনীদি অনু'র সম্বন্ধে কিছু কথা আমাকে বলেছিলেন। দিল্লির একটি অবাঙালি ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিলো, নিজের ইচ্ছেয়। ছেলেটি সম্বন্ধে নেতিবাচী কিছু কথা সে বলেনি খোলাখুলি। ওর সহজাত সম্ভ্রমবোধটা তীব্র। দু'জনের পরস্পর কল্পনার অঙ্কগুলো মেলেনি নিশ্চয়। কিন্তু ওরা এখনও বিবাহিত। তিনি অনুমান করেন সম্পর্কের মধ্যে হয়তো কোনও তৃতীয় ব্যক্তির ছায়াও এসেছিলো কখনও। 

ভাবি, যদি তাই হয়, তবে তো অনু ব্যতিক্রম নয়। সেও কি 'অন্য' মেয়েটিকে নিজের অসম্মান মনে করে? অথচ একবার আমাকে তর্কের খাতিরে বলেছিলো অন্য মেয়েটার সম্পর্কের টান অনেক বেশি ইনটেন্স, অনেক বেশি ঝুঁকি নেয় সে। সে কেন ভিলেন হবে? সে তো দেয়ও অনেক কিছু। তবু তার স্বীকৃতিটা অধরা কেন থেকে যাবে চিরকাল? তার মূল্যটা নীরবে বুঝলেও কেউ সোচ্চার হয় না কোনওদিন? জীবনে তার স্পেসটা ব্যতিক্রম নয়, ন্যায়তঃ প্রাপ্য। 

সেটা কি অনুর শুধু কলেজ ডিবেট ছিলো? বুঝতে পারি না। আসলে বাইরে থেকে যেমনই লাগুক না কেন, অনু পুরোপুরি বাঙালি মেয়ে। কতগুলো মডেলে বিশ্বাস করে, যেটা অন্য মানসিকতায়, অন্য আবহে বেমানান। কিন্তু সে অসম্ভব জেদি, তাই ভালনারেবল। স্ট্র্যাটেজিক আপোসে বিশ্বাস করে না। ভালো চাকরি ছেড়ে সে বিদেশ থেকে ফিরে এলো, ছেলেটি এলো না। বোঝা যায় না, এই মূহুর্তে তাদের সম্পর্কটি ঠিক কী? ওর বাবা-মা দিল্লিতেই থাকেন। তাঁরা চান অনু সেখানেই থাকুক। কিন্তু তার কাছে দিল্লি শ্বাসরোধী লাগে। সহ্য করতে পারে না। এতদূরে প্রায় পালিয়ে এসেছে। হয়তো আবার পালিয়ে যাবে। নিজের থেকে। 


নন্দিনীদি বলেছিলেন, 

-জানি না তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তোমায় অসুবিধেয় ফেললাম কি না.... তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো আমি কী বলতে চাইছি....? 

-হুমম... 

-আমি লক্ষ্য করছি অনু তোমার উপর ইমোশন্যালি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়ছে... ব্যাপারটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে... 

-আমি বাড়িতে বলেছি... ঐ জায়গাটা আমার খুব স্ট্রং... আপনি তো জানেন... 

-জানি, তবে একটা অনুরোধ... বিরক্ত হওয়া হয়তো স্বাভাবিক... তুমি অনু'র প্রতি কখনও খুব রুড হয়ো না... মেয়েটা খুব গুণী, কষ্টে থাকে... 

-চেষ্টা করবো নন্দিনীদি... 
 

বস'কে বলি, একটু তাড়াতাড়ি বেরোবো। ভদ্রলোক জানেন আমার এই সব ব্যস্ততার কথা। বিকেল নামার আগেই ফোন করি অনু'কে। ইউনি শপিং সেন্টারের পিছনে যে দুটো বিশাল অর্জুন গাছ, তার নীচে সবুজ বেঞ্চি, আর ঝরাপাতার কার্পেট, সেইখানে চলে আসতে বলি। জায়গাটা আমার খুব ভালো লাগে। 

নেভা রোদের আলোর মতো সে আসে...বিষণ্ণ, নির্লিপ্ত তার পা ফেলা, পা তোলা। 

-কী ব্যাপার... সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের গন্ধ হাওয়ার পরে... 

- আমি সত্যিই খুব ক্লান্ত... অসম্ভব ক্লান্ত... 

-'আট বছর আগের একদিন' মুখস্ত করেছো নাকি? 

-ঐ কবিতাটা আমার বহুদিন ধরেই মুখস্ত... 

-কও কী মক্কেল? তয় যে লোকে কয় তুমি কবিতা পড়ো না... 

-আমাকে নিয়ে সবাই নিজের নিজের মতো ভাবে... আমার কথা... যাকগে, বোর হয়ে যাবে.... 

-কোন কোন কবিতা নিয়ে ভাবছো...? 

-সত্যি কথা বলি? 

-নিশ্চয়... 

-তোমার দেওয়া সব বইগুলো'ই আমার নিজের কাছে আছে...সব কবিতা.... পড়েছি বহুবার... 

কিছু বলি না.... চুপ করে থাকি... 

-শুধু তোমার সঙ্গে আড্ডা দেবো বলে আমি তোমাকে কিছু আগে বলিনি....অনেক ভেবেছি.... আমার এরকম করা উচিত কি না। তোমার সাজানো সাম্রাজ্যে এক চিলতে জায়গা কোথাও... না, আমি তোমার ...ধ্যুৎ, কী সব বলছি...পাগল ভাবছো... তাই না? 

-না, ভাবছি না... 

-সত্যি? 

-সত্যি... 

-আমাকে ছুঁয়ে বলো... 

হাতটা বাড়িয়ে দেয়। আমি তার হাতের দিকে চেয়ে থাকি। গৌরী, মসৃণ ত্বক, নিটোল আঙুল, নির্ভর, নির্ভার, নিঃশর্ত... তাকিয়েই থাকি অপলকে। এই হাত ছুঁয়ে আমি কি কোনও পাপ করতে পারি...? 

দু'তিনটি অনিঃশেষ মুহূর্ত এভাবেই নিস্পন্দ, নিস্পলক। বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি আবার একা একা তার নিজের কাছে ফিরে যায়... ধীরে.... 

-তোমার আঙুলগুলো সুন্দর, খুব সুন্দর... 

এইবার অনু হেসে ওঠে। ঝরনার মতো, বোন'চায়না বাসন ভেঙে পড়ার মতো, ওফেলিয়া'র কান্নার মতো শব্দ পাই আমি, পেতে থাকি, জানি না কতক্ষণ....

3 comments:

  1. একটি কথার দ্বিধাথরথর চুড়ে ---

    ReplyDelete
  2. কথাটি তো এখনও বাকি আছে .. :-)

    ReplyDelete
  3. মনে হল সিনেমা দেখছি। দারুণ জমে উঠেছে।

    ReplyDelete