0

গল্প - শঙ্করী প্রসূন ভট্টাচার্য

Posted in



















রাত প্রায় দুটো। ঘুম আসছে না। বারান্দায় বসে আছি, কোন সাড়াশব্দ নেই। শুধু একটা ছোঁড়া রাস্তায় বসে বিভিন্ন বেসুরে ‘বসে আছি পথ চেয়ে’ এই একটা লাইন গেয়ে চলেছে। বিরক্ত হতে হতে হঠাৎ আমিও গুনগুন করে গেয়ে উঠলাম ‘বসে আছি পথ চেয়ে’।

আর সঙ্গে সঙ্গে দেখি বছর পঁয়ত্রিশের এক বেশ ধোপদুরস্ত ধুতি পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে বসে আছেন। বললেন, “আপনি একা একা পথ চেয়ে বসে আছেন তাই সঙ্গ দিতে এলাম।” বুঝলাম এ একটা ভদ্রভূত; ওই যেমন ভদ্রলোক হয় আর কি!

আমি বললাম, “দেখুন একটু দূরে বসা ভালো নয় কি? এই ভাইরাস টাইরাস সমস্যা আর কি!”

ও বলল, “কেন তীর্থ বলেনি যে ভূতেদের ভাইরাস হয় না?”

আমি বললাম, “তা বলেছে; তবুও...”

ও বলল, “দেখুন, আমাদের তো সেল নেই, আর আমরা হাঁচিও না।

“তাহলে তীর্থর কথা মেনেনিই, কি বলেন?”

ও বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আরে জানেন তো, আপনাদের মধ্যে ওই তীর্থ একটু বেশি পড়াশোনা করে।”

আমি বললাম, “তা জানি, ও বানান ভুল টুল ধরে আর মাঝেমধ্যে একটু নখ ও ঘষাঘষি করে।”

“যাক গে যখন ভয় নেই, তখন আমরা একটু অন্য কথাবার্তা বলি কি বলেন?”

“আচ্ছা, আপনাদের রাজা টাজা এখনো আছে আর তারা বর টর দেয়?”
বললেন, “দেখুন সত্যযুগে কোন বর টরের বালাই ছিলোনা; মানুষ ভালোমানুষ ছিল বরের দরকার ছিলো না। যা ছিল তাতে খুশি থাকতো, ত্রেতা যুগে দেবতারা বর দিতে শুরু করলেন, কিন্তু অনেক তপস্যা টপস্যা করতে হতো, আর দেবতারা বরের সঙ্গে একটা লেজুড় জুড়ে দিতো, যেটা দিয়ে পরে নিকেশ করা যেত। দ্বাপর যুগে, মুনিঋষিরা বর দিতে শুরু করলো, আর ওরা আবার মেয়েদের বেশি বর দিতো, একটু বেশি সেবা করলো বা ওই নৌকোয় নদী পার করে দিলো, এই রকম আর কি, সঙ্গে কোন লেজুড় নেই। আর কলি যুগে ভূতেরা(অপদেবতা) বর দেয়। তবে শুধু আমাদের মধ্যে রাজাই দিতে পারে।
আমি বললাম, “ঠিক বলেছেন কদিন আগে ফেলুকে বর দিয়েছন আর ও ওই নিয়ে একটা গান ও লিখেছে।”
“ধুর মশাই, আমাদের রাজা ফেলু টেলুকে বর টর দেন না, অপাত্রে দান করেন না।”
আমি বললাম, “না না, ওর নাম সুমিত, ও আবার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার।”
ও বললো, “হ্যাঁ তাহলে দিতে পারে।”
আমি বললাম, “আচ্ছা বলতে পারেন, এখন এ রকম সমস্যা কতদিন চলবে?”
ও বলল, “দেখুন যখন কেউ কিছু মন ভরে চায়, তখন তাই পায়। মানুষ সমাজকে ক্রমশ টেকনোলজি দিয়ে একটা ঘরের মধ্যে আনতে চেয়েছিলো, ঘরে বসে মোবাইলে আর ইন্টারনেট দিয়ে টাকার আদানপ্রদান করবে, ট্রেন প্লেনে এর টিকিট কাটবে, বাবা মার সাথে স্কাইপে মুলাকাত করবে, বন্ধুদের সাথে whatsapp আর ফোনে গল্প করবে, টি ভি আর মোবাইলে খেলাধুলা করবে। তাই তো পেয়েছো, তাতে ও সমস্যা। তোমরা কিছুতেই খুশী হও না। এই জন্যই রাজামশাই বর টর দিতে চান না। খুশি হতে জানতে হয়, বুঝলে? যেমন গুপী বাঘা হয়েছিল।”
বলেই যেমন এসেছিলো, তেমনি হঠাৎ ভ্যানিশ হয়ে গেলো।
বুঝলাম, না আরো কিছুদিন এইভাবেই কাটাতে হবে।
যাই চোখে মুখে জল দিয়ে শুয়ে পড়ি।
আচ্ছা, এটার নাম 'একটি ভৌতিক কথোপকথন'
দিলে কেমন হয়? ভূতের সঙ্গে কথোপকথন বা যে কথোপকথনের
কোন মাথামুণ্ডু নেই!

0 comments: