সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়
করোনারূপী অতিমারী মনুষ্যজাতীর ‘একান্ত নিজস্ব’ রাজ্যপাটে আঘাত হেনেছে অতি বিক্রমে, সন্দেহ নেই। আমাদের স্বেচ্ছাচারের নির্বিঘ্ন অধিকারে ব্যাঘাত ঘটিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষাটাই মনে হয় দিয়ে যাচ্ছে করোনা।
খুব ছোটোবেলায় মনে আছে, একবার ছেলেমানুষী অতিস্পর্ধায় অতি ক্ষীণতোয়া এক পাহাড়ি ঝোরার গতিপথ রোধ করার চেষ্টা করেছিলাম তার চলার পথের উপর বসে পড়ে। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে তখন নাচতে নাচতে অপ্রত্যাশিত অতর্কিত বাধাটার পাশ কাটিয়ে আমাকে জীবনের এক চরম শিক্ষা দিয়ে অবলীলায় এগিয়ে গিয়েছিলো নিজের গন্তব্যে।
আসলে তাইই হয়। জীবনপ্রবাহ থেমে থাকে না। পথ করে নেয়। নতুন পথ। আমরাও নেবো করে নতুন পথ। নিচ্ছিও। শিখছি অনেক কিছু। মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক ফেলে আসা পুরনো সুঅভ্যাস। যেমন, আমার অবস্থাপন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত বাবার ব্যবস্থাপনায় ছোটোবেলায় আমরা কখনও একসঙ্গে দুটো ডিম খাইনি। বলতেন - খাওয়াই যায়, কিন্তু প্রয়োজন আছে কিনা, সেটাই আসল বিবেচ্য। অনেকের মতোই আমারও মনে পড়ে যাচ্ছে, আধখানা ডিম খাওয়ার সেইসব ভোরের কাঁচা আলোর মতন নরম দিনগুলির গল্পগাথা।
এত ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি একটাই কারণে। বিশ্বের এই দারুণ অসুখের দিনেও ‘খাদ্যরসিক বাঙালি’ নিজের জাতিবৈশিষ্ট অক্ষুণ্ণ রাখার গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রোজ রোজ কাঁড়ি কাঁড়ি বাজার করে দারুণ দারুণ সব পদ রান্না করে ছবি তুলে রেসিপিসহ সেই ছবি পোস্ট করছেন স্যোশাল মিডিয়ায়… তাতে ৯৮৭ রিঅ্যাকশন্স, ৫৬৪ কমেন্টস আর ৮২ শেয়ার! একাধারে অসাংবিধানিক ও অত্যন্ত অমানবিক। অসাংবিধানিক বলছি, তার কারণ নিজের শখ আহ্লাদ পূরণের জন্য নির্জন বাসের নির্দেশ একটা খেলো ছুতোয় অমান্য করে সামগ্রিকভাবে সমাজের ক্ষতি করার অধিকার সংবিধান আমাদের দেয়নি। আর অমানবিক তো বটেই। যে দেশের কোটি কোটি মানুষ এমনিতেই অর্ধভুক্ত, অভুক্ত থাকে, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে তো আরও কথাই নেই, সেই দেশের সম্পন্ন মানুষের এই নির্লজ্জ ‘দেখো কত ভালো আছি’ প্রদর্শন শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায়ও। অনেকেই বলবেন, আমরা কাউকে বারণ করেছি নাকি? ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কিছু নেই বুঝি? … বলতেই পারেন। বলুনও। আমি তর্ক করি না। বাস্তবে পরিস্থিতি যে চতুর্থ শ্রেণির সরল অংকের মতো সহজ নয়, মুখে মানতে মানে লাগলেও, সে কথা আপনি আমি সকলেই জানি। মূল প্রশ্নটা ওই - খাওয়াই যায়, কিন্তু প্রয়োজন আছে কিনা, সেটাই আসল বিবেচ্য!
বিজ্ঞাপনটি দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৬ জুন, ১৯৪৫। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত বৃটিশ ভারত। আজ আবার প্রসঙ্গিক। [সূত্র - ইন্টারনেট] |
মিতব্যয়ী হওয়ার যে অভ্যাস বহুকাল পূর্বে ছিন্ন বস্ত্রের মতো ত্যাগ করেছিলাম আমরা, তাকে আবার রপ্ত করতে হবে অনতিবিলম্বেই। মনে পড়ে যায়, ক্লাসে বসে খাতা ফোল্ড করে লিখলে আমাদের স্কুলের ইংরিজি দিদিমণি প্রতিমাদি যত্ন করে খাতাটা খুলে দিয়ে বলতেন- খাতা ভাঁজ করে লিখো না, ভাঁজ করে লিখলে ডান দিকে অনেকটা জায়গা নষ্ট হয়। ভাবা যায়? মিতব্যয়ীতার এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কি হতে পারে! অরণ্যের সে পুরনো প্রবাদ তো সেই কবেই ভুলেছি আমরা – ওয়েস্ট নট ওয়ান্ট নট!
জানি, বিলাসিতা একটি অভ্যাস; বলা সহজ, কিন্তু বর্জন করা অতি শক্ত কাজ। তবুও উপায় নেই। এবারে সত্যিই দুরূহ কাজেই নিজের কঠিন পরিচয় দিতে হবে। সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক নীতিপ্রকরণে, ব্যবহারবিজ্ঞানের প্রচলন ভাবনায়, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিন্যাসে, সমাজনৈতিক প্রণালী প্রণয়নে আসতে চলেছে আমূল পরিবর্তন। টোটাল সিস্টেম রিবুট। এই নিভৃতিযাপনের দিনগুলিতে বেসিকগুলো রেখে দিয়ে অপ্রয়োজনীয় স্টোরড মেমারি ডিলিট করে নিজেকে একটা কোর প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে ফেলার মস্ত সুযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি যাই হোক, অ্যাডাপ্ট করতে বেগ পেতে হবে না হয়তো। আমরা তখন প্রস্তুত পুরোমাত্রায়।
এবারের ঋতবাক সংখ্যায় নিয়মিত বিভাগগুলি তো রয়েছেই, আরও রয়েছে বিশ্বের ২৯টি শহর থেকে পাঠানো সেখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ। লেখকদের নিজেদের কলমে। প্রায় অসম্পাদিত। [বিভাগ – someপ্রতীক]। এই সংখ্যায় শুরু হলো নতুন বিভাগ ‘ইতিহাসের কথা ইতিহাসের কাহিনি’, লেখনী ধরেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অভীক মুখোপাধ্যায়। অভিনন্দন, অভীকবাবু।
এবারে এ পর্যন্তই...
এবারে এ পর্যন্তই...
নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন
শুভেচ্ছা নিরন্তর
0 comments: