1

ধারাবাহিক - শিবাংশু দে

Posted in


-অন্য মেয়েটা'কে সবাই ভিলেন কেন মনে করে? সে তো অনেক রিস্ক নিয়ে ভালোবাসতে চেয়েছিলো। অনেক বেশি আবেগ নিয়ে তার আঁকড়ে ধরা...বিয়ে করতে কী লাগে? একটা নোটিস, দু'চারশো টাকা, একটা সইকরা কাগজ...

-বড্ডো উত্তেজিত হয়ে পড়েছো... কফি খাবে? আরেকটা? 

-তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো.... 

-কে জানে... কাছে আসার জন্য দূরে যেতে হয় বোধ হয়... 

-ঐ সব শেষের কবিতা টাইপ ডায়ালগ দিও না... অসহ্য লাগে... 

-অসহ্য কী লাগে? কাকে লাগে? মানুষ'কে? বিয়ে'কে? না নিজেকে...? 

-তোমাকে... তোমার এই সো কল্ড দায়িত্ব, দায়িত্ব মার্কা মাস্টারিকে... সব বুঝে চোখ বুজে থাকার ভন্ডামি'কে...

আমি হাত নেড়ে ওয়েটার'কে ডাকি। আরেকবার কফি দিয়ে যাক। 


মেয়েটার নাম অনন্যা। ডাকনাম অবশ্যই অনু। দিল্লির মেয়ে। বয়স? কে জানে? তিরিশ পেরিয়েছে অনেকদিনই, মনে হয়। মাস্টার্স করে পাঁচ বছর বিদেশে ছিলো। পোস্ট ডক্টরাল করেছে ওখান থেকেই। চাকরিও করছে তা বেশ কিছুদিন। আমার সঙ্গে পরিচয় নন্দিনীদির বাড়ি। নন্দিনীদি এখানে খুব পরিচিত একজন মানুষ। উচ্চতম পদের সরকারি আমলা। চিত্রশিল্পী, কবি, সংগঠক। রবীন্দ্রনাথের দেড়শো বছর আসছে। তিনি সিএম'কে বলে বেশ কিছু টাকা জোগাড় করেছেন। কবির নিয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠান হবে। একটায় এপার আর ওপারের বাংলার কবিদের নিয়ে একটা সারাদিনের ওয়র্কশপ। কবির ছবি নিয়ে তিনটে সেমিনার। হায়দরাবাদের সব বাঙালি সংস্থাদের নিয়ে দু'দিনের গানের উৎসব। বড়ো প্ল্যান। একদিন অফিসে ফোন এলো । ম্যাডাম ওয়ন্টস টু স্পিক। বুঝলুম নন্দিনীদির পি এস বলছে। ইয়েস... জাস্ট হোল্ড অন। লাইনটা দিতেই প্রশ্ন করি, "কী হলো নন্দিনীদি?" 

-আজ সন্ধে'র দিকে একটু আসতে পারবে...? 

-দেখি কখন বেরোতে পারি অফিস থেকে... 

-আরে এসো এসো... গ্লেনফিডিচ খাওয়াবো... 

-কখন? 

-যে কোনও সময়... দশটা পর্যন্ত... 

-দেখছি... 

অফিস সেই লিঙ্গমপল্লি। থাকি মেহদিপটনম। সন্ধে সাড়ে সাতটায় বেরোলে একঘন্টা লেগে যায় এই ষোলো কিমি পেরোতে। আবার জুবিলি হিলসে আসা। বাড়িতে বলি, নন্দিনীদির বাড়ি হয়ে আসবো। 

-খুব দেরি কোরো না... 

-হুমম.... 


সন্ধে আটটার মধ্যে পৌঁছে যাই নন্দিনীদির বাড়ি। দরোয়ান সেলাম করে। ম্যাডাম স্টাডিমেঁ হ্যাঁয়.... 

-ঠিক হ্যাঁয়.... 

বাড়িটা মস্তো। একটু ভুলভুলাইয়া গোছের। প্রথম প্রথম দিকভুল হয়ে যেতো। এখন চেনা হয়ে গেছে। ড্রইং রুম থেকে একটু নেমে, আবার একটু উঠে নন্দিনীদির স্টাডি কাম স্টুডিও। চারদিকে ইজেলে ক্যানভাস চড়ানো। একদিকের দেওয়ালে ছাদ পর্যন্ত টানা বইয়ের আলমারি। মাঝখানের গোল টেবিলের দুদিকে দুজন বসে ধোঁয়া ওড়াচ্ছেন। একজন নন্দিনীদি, অন্যজনকে চিনি না। 

-এসো, এসো.... এবার তো সিগারেট নেভাতে হবে, তুমি তো আবার তামাকুবিরোধী সঙ্ঘের সভাপতি...

-আরে না, রিল্যাক্স... 

-ঘনশ্যাম... সাহব কে লিয়ে এক পেগ বনাও... 

-নন্দিনীদি, নিজে গাড়ি চালিয়ে এসেছি... জানেন তো... 

-আরে একটা খাও তো, তোমার কিস্যু হবেনা... 

-হয়তো হবে না, কিন্তু ... 

-অ, তোমার সেই প্রিন্সিপল.... 

-আরে না, এক হি বনানা বাবু... 

-এসো তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। এ হলো অনু, ভালো নাম অনন্যা। সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়, বায়োকেমিস্ট্রি... 

এই বলে চোখের কোণে একটু হাসেন নন্দিনীদি। 

-ভেবো না কিন্তু সত্যিই অতটা ড্রাই.... 

-দিদি, তুমি কেন অলওয়েজ এ ভাবে লেগপুল করো আমার.... 

-না রে এমনি। শিবাংশুর কথা তো তোকে আগে বলেছি 

-হাই... 

-নমস্কার 

মেয়েটা এবার সিগারেটটা অ্যাশট্রে'তে গুঁজে দেয়। মুখোমুখি ঘুরে বসে। বেশ ব্যক্তিত্ব আছে, চেহারায়... 


নন্দিনীদি তাঁর নানা প্ল্যানের ঝুড়ি খুলে বসেন। কী কী হবে। সি-এম'কে দিয়ে উদ্বোধন হবে। তার পর সারি দিয়ে এখানে ওখানে অনুষ্ঠান। আমি বলি, লোক লাগবে। তিনি বলেন, চিন্তা নেই। লোক অনেক জোগাড় হয়ে যাবে। প্ল্যানটা ফুলপ্রুফ করি আগে। সবার সঙ্গে কথা হবে। লজিস্টিকস নিয়ে তোমার কোনও চিন্তা নেই। তবে তোমার ব্রেনটা কাজে লাগাতে হবে। কী বুঝলে? 

-বুঝিনু... 

-অনু আমার সহকারী, যখন যা মনে হয় ওকে বলে দেবো... তারপর তোমরা একটা ডুয়েবল প্ল্যান বানাবে... 

-নন্দিনীদি, এ তো মস্তো প্ল্যান... জানি না সময় পাবো কি না... 

-দ্যাখো, নামটা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তোমারও দায় আছে, আমার একার নয়... 

-ডোবাইবেন দ্যাখতাসি... সাকরিটা রাখা দায় অইবো.... 

-ওকে, চাকরিটা গেলে বোলো, আরেকটা চাকরি জোগাড় হয়ে যাবে... 

অনু জিগ্যেস করে, তুমি কোথায় থাকো? 

যাঃ বাবা। মধ্যবয়স্ক একটা লোককে পরিচয় হবার আগেই 'তুমি' করে কথা বলে নাকি এরা? তবু বলে দিই। 

-অফিসটা কোথায় তোমার? 

তাও বলি, 

-আরে ওটা তো আমার বাড়ির খুব কাছে.... 

-হুমম... 

-তবে তো কন্ট্যাক্টে থাকা যাবে... 

-আপনি কি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেই থাকেন? 

-হ্যাঁ, এক নমবর গেটের কাছেই... ওটার উল্টোদিকেই তো তোমাদের অফিস... 

-হুমম... 

নন্দিনীদি বলেন, পরের শনিবার একটু তাড়াতাড়ি আমরা বসবো। তোমার তো হাফডে... 

-সে তো নামেই... দেখি কত শিগগির আসতে পারি... 

-তুমি তাহলে একটা কাজ কোরো। অফিস থেকে ফেরার সময় তোমার গাড়িতেই অনু'কে নিয়ে চলে এসো এখানে। ফেরার সময় আমার গাড়ি ওকে ছেড়ে দেবে... 

-ঠিক আছে.... 


রাতে খেতে বসে বলি, 

-বুঝলে আজ একটা সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো... 

-হলো! 'কত' সুন্দরী? 

-সে আর কী বলি? তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে... 

-নন্দিনীদিকে বলতে হবে দেখছি... 

-আর সে কী তোমার বলার অপেক্ষায় আছি নাকি? 

-শুধরোবে না কোনওদিন... 


মিটিংটা শেষ হতে হতে আড়াইটা বেজে গেলো। ফাইলপত্র গুছিয়ে নিজের কেবিনে যাচ্ছি, ফোনটা বাজছে। অচেনা নম্বর। 

-আমি ইউনিভার্সিটি এক নম্বর গেটের দিকে যাচ্ছি। ওখান থেকেই পিক আপ করে নেবে... 

-আমার মিনিট পনেরো লাগবে। আরাম সে আসুন... 

কাগজপত্র গুছিয়ে, সিস্টেমস বন্ধ করে, পার্কিং থেকে গাড়ি বার করে, পৌঁছোতে একটু সময় লাগলো। দূর থেকে দেখি যথাস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এদিক ওদিক দেখছে, একটু অস্থির ভাবসাব। পাশে গিয়ে গাড়িটা থামাই। ভিতরে উঁকি মেরে ভিতরে এসে বসে। 

-দেরি হলো কিন্তু... 

-বললুম তো, একটু দেরি হবে 

-আমি একটু স্মোক করবো, আপত্তি নেই তো... 

আমি জানালার কাচগুলো নামিয়ে দিলুম, 

-একটা প্রশ্ন করেছি... 

-উত্তর দিলুম তো... 

-শুনতে পাইনি... 

-না শোনাই ভালো... 

আর কিছু না বলে সে ধোঁয়ায় ডুবতে চায়। 


গাছি'বাওলি ক্রসিং পেরিয়েছি, ফোনটা আবার বেজে উঠলো। নন্দিনীদির ফোন। 

-শিবাংশু, একটা আর্জেন্ট মিটিঙে ফেঁসে গেছি। ঘন্টা দুয়েক লাগবে। তোমরা কী আসছো? তবে বাড়িতে বোসো... আমি বলে দিচ্ছি... 

-নন্দিনীদি, রিল্যাক্স। আপনি মিটিং সেরে আসুন। আমরা ছটা নাগাদ পৌঁছে যাবো... 

-ওকে... 

অনু'কে বলি, নন্দিনীদি ছটার আগে আসতে পারবেন না। ওঁর বাড়িতে বসবেন কি? 

- অ্যাজ ইউ লাইক... 

গাড়ি ততক্ষণে দর্গাহের মোড় পৌঁছে গেছে। বাঁদিকে ঘুরিয়ে নিই। এখান থেকে জুবিলি হিলস পাহাড়ের মতো চড়াই রাস্তা। ডানদিকটায় হুইস্পার ভ্যালি ক্লাব। ভারি সুন্দর জায়গাটা। সন্ধের পর ওটার পুলসাইড আবহ প্রাণ জুড়োনো। প্রায় নিস্তব্ধ আলো আঁধার। কখনও গরম লাগে না। চুপ করে বসে শুধু শীতল জিন এন লাইম। হায়দরাবাদের তাবৎ বৃহৎ রুইকাৎলারা এখন এই জায়গাটায় থাকেন। বঞ্জারা হিলসের গ্ল্যামার হাইজ্যাক করে নিয়েছে জুবিলি হিলস। পাহাড়ে উঠে যাবার পর ডানদিকের ছবির মতো উপত্যকাটির নাম সাইলেন্ট ভ্যালি। 

-টাবু'র বাড়ি দেখেছেন? 

-না তো, এখানেই থাকে নাকি? 

-হুমম, চলুন দেখি ওখানে নাগার্জুন'কে দেখতে পাওয়া যায় নাকি... 

-আচ্ছা, তুমি আমাকে এখনও আপনি করে কথা বলছো মনে হচ্ছে... 

-ঠিকই মনে হচ্ছে.. 

-কেন? 

-একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকে আপনি বলতেই আমি স্বস্তি বোধ করি.. 

-নন্দিনীদি ঠিকই বলেছিলো। 

সরব স্বগতোক্তি করে সে ... 

জানতে চাই না নন্দিনীদি কী বলেছিলেন। দুজনেই চুপ করে থাকি। একটু পরে বলে, 

-ইউ আর রিয়ালি ডিসেপটিভ... নট অ্যান ইজিগো'ইং পার্সন... বেশ হার্ড নাট... 

-ইজ ইট আ কমপ্লিমেন্ট? দেন আই অ্যাকসেপ্ট...

দু'জনেই হেসে উঠি। অনু'র ভিতরের ধোঁয়াটা মনে হচ্ছে একটু কেটেছে। 

-দ্যাখো আমি কাউকেই আপনি বলতে পারি না। আর তুমি যদি আপনি আজ্ঞে চালিয়ে যাও, তবে তো মুশকিল... 

-বিধান রায় কি তোমার আত্মীয় হ'ন .. 

-হু ইজ হি? 

-পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী

-ইউ মীন বি সি রয় 

-আজ্ঞে... 

-কেন? 

তিনি শুনেছি কখনও কাউকে 'আপনি' করে কথা বলেননি। ইনক্লুডিং জবাহরলাল নেহরু... 

-ডোন্ট বি সার্কাস্টিক... 

-ওকে, আপনি বন্ধ করছি... 


রোড নম্বর ছত্রিশ ধরে জুবিলি হিলস চেক গেট পেরিয়ে যাই। 

-এদিকে কোথায় যাচ্ছো? 

-ব্যারিস্টা, যাবে? 

-হুমম, যাওয়া যায়... 

ততক্ষণে বন্জারা হিলস একনমবর রোডে শনিবার বিকেলের ভিড় শুরু হয়ে গেছে। সিটি সেন্টারে গাড়ি রেখে ব্যারিস্টায় গিয়ে বসি। প্রথম কফিটা আসে। অনু আবার একটা সিগারেট ধরায়। 

আমি বলি, তুমি শীর্ষেন্দু পড়েছো? 

-হ্যাঁ, সব লেখা...কেন? 

-কেন পড়েছো? কী ভালো লাগে ওঁর লেখার... 

-চরিত্রগুলো... দারুণ 

-ছেলে না মেয়ে... 

-বলা মুশকিল... 

-আমি বলি? 

-নিশ্চয়... 

-শীর্ষেন্দু শুধু মেয়েদের চরিত্রই সৃষ্টি করেছেন, ছেলেরা সব প্রপের রোলে... 

-এইভাবে ভাবিনি তো... 

-ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো... আরেকটা ব্যাপারও বলি শীর্ষেন্দুকে কি তোমার কাকুমণি মনে হয়েছে? 

-না তো, কেন? 

-ওঁর লেখায় সবাই কেন পাল্টিঘর দেখেই প্রেমে পড়ে? 

এইবার উচ্ছল হাসিতে ঝরে পড়ে সে। 

-ঠিকই তো... 

-এবার একটা কথা বলি? 

-হুমম... 

- জ্ঞান দেওয়া খুব খারাপ ব্যাপার। তবু বলি যদি এই নেশাটা একটু কমাতে... জানি প্রথমদিনই কারুর সঙ্গে এসব কথা বলতে নেই... তবু মনে হলো। কিছু মনে কোরো না... সরি ... 

-আমি জানি। জানো এতটা ডিপেনডেন্ট ছিলাম না। ওদেশ থেকে ফেরার পর এমন হয়ে গেছি... 

-ওদেশ আবার কী দোষ করলো? 

-না ওদেশের কোনও দোষ নেই, ইটস মাই প্রবলেম...

চুপ করে যায়, একেবারে। 


হঠাৎ দেখি নীলা আর সঞ্জয় এগিয়ে আসছে আমাদের টেবিলের দিকে। নীলা গান গায় আমাদের সঙ্গে। সঞ্জয়ও আমাদের বন্ধু। 

-আরে এখানে কী করছেন? 

-দেখতেই পাচ্ছেন, ফক্সট্রট নাচছি... 

সঞ্জয় হাসিতে ফেটে পড়ে, 

-তোমায় বলেছি না, শিবাংশু'র সঙ্গে ভেবে কথা বলবে... 

-আহা, সব সময় শুধু লেগপুল করতেই আছেন আপনি... 

নীলার চোখ অনু'র দিকে... 

-এ হলো অনু, আর এঁরা নীলা, সঞ্জয়, আমার বন্ধু... 

-হাই... 

সঞ্জয়ের সপ্রশ্ন চোখ। ইশারা করি, পরে হবে...বুঝে যায়। 

আর ঘন্টা খানেকের মধ্যে অন্ততঃ বিশ-তিরিশ জন লোক জেনে যাবে। নিউ রিলিজ, ‘ব্যারিস্টায় বাড়াবাড়ি...’ 


এখানে এপ্রিলের মধ্যে বেশ গরম পড়ে যায়। কিন্তু সূর্য ডুবলেই এক আধ বার দমকা হাওয়া। সন্ধে নামলে হলকাফুলকা হাওয়াবাজি, জুড়িয়ে দেওয়া। আমাদের দেশঘরে এখন ফুটপাথে সারিসারি কলাপাতায় বেলফুল আর জুঁইয়ের গোড়েমালায় জল ছড়ানো। দিনশেষের সৌরভসফর, বাড়ি ফেরার পথে। বাঙালিনীর অলকে ঝরে পড়া ফুলের একটি দল আর চোখে পড়ে না। তারা আজ অতীত, অপরিচিত। কিন্তু দক্ষিণে অলককুসুম বালিকা থেকে বৃদ্ধা সবার অলংকার। বসন্তমুখারি যেন, পুষ্পপ্যাশনের বহতা রুটমার্চ। 


নন্দিনীদির মস্তো প্ল্যান। স্বয়ং সি এম বলেছেন, অর্থাভাব হবে না, এগিয়ে যাও। তেলুগু মানুষের কাছে কবি'কে নিয়ে আসতে হবে। তিনি নিজে উদ্বোধন করবেন সেই উদযাপন। উনকোটি খবর নিয়ে অনু দুবেলা ফোন করে। যতটা ফোনে হয়ে যায়, ভালো কথা। কিন্তু দিন দিন শেষ হয়ে হইলো না শেষ গোছের সংলাপ বেড়ে চলে। অস্বস্তি? তা একটু হয় তো। সব সপ্তাহান্তে নন্দিনীদির বাড়ি যাবার ফুরসত পাই না। গানের অনুষ্ঠানের মহলা শুরু হয়ে গেছে। সেই লিঙ্গমপল্লি থেকে সন্ধে সাড়ে সাতটায় অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছোতে একঘন্টা। তৎক্ষণাৎ স্নান করে, গাড়ির ডিকিতে হারমোনি চড়িয়ে শহরের একেবারে অন্যপ্রান্তে সেকন্দ্রাবাদে পৌঁছোতে ন'টা বেজে যায়। তার পর মহলা, আড্ডা, গুলতানি। সবগুলো'ই জরুরি। এর মধ্যে ফোন এলো অনু'র। 

-তোমাদের অনুষ্ঠানে আমাকে কবিতা রেসিটেশন করতে হবে। নন্দিনী'দি বলছে তোমার কাছে ট্রেনিং নিতে। কখন সময় পাবে? 

-বোঝো? তুমি বাংলা কবিতা পড়ো? 

-না, না, আমাদের কি আর সেই রাইট আছে? 

-আরে না, দিল্লির লোক... বল্লে বল্লে টাইপ ব্যাপার স্যাপার...তারপর আবার বিলিতি কানেকশনও আছে ... 

-বেশ, আমি বলে দেবো... আমার দ্বারা হবে না... 

-দাঁড়াও দেখি... 

-না, না, কোনও দরকার নেই...বুঝতে পেরেছি... 

-ওফ... এ তো দেখি মুলায়ম সিংয়ের মতো সেন্স অফ হিউমার হয়ে গেছে... 

-বাই 

ফোন কেটে দেয়। 


ঘন্টা দুয়েক পরে মোবাইলে নন্দিনী'দির নম্বর। 

-বলুন.. 

- তোমাদের অনুষ্ঠানে গ্রন্থনার একটা দায়িত্ব অনু'কে দিয়েছি। ওকে একটু ট্রেনিং দিতে হবে তোমাকে... 

-হুমম, আমাকে ফোন করেছিলো ... 

-তাই! আমাকে এখুনি বললো ওর দ্বারা হবে না। হাফ পঞ্জাবি, বাংলা জানে না, এসব হাবিজাবি...কী বললো তোমাকে? 

-ও রকমই কিছু একটা? 

- না, না, ওকে একটু ট্রেন করে দাও। মেয়েটা কিন্তু খুব শার্প... আর নিজেই আমাকে বারবার বলে পার্টিসিপেট করতে চাইছিলো... এখন আবার উল্টোপাল্টা বলছে... 

-ঠিক আছে দেখছি... 

বাবুজি ধীরে চলনা, এত বাড়াবাড়ি ভালো নয়। নিজেকেই বলি। যাকগে, একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলুম। 

উত্তর নেই। আবার একটা। 

তারও উত্তর নেই। এবার একটা ফোন করতেই হয়। তা ফোন ধরিলেন, 

- হ্যালো... 

- জব উস জুলফ কি বাত চলি... 

-মানে?

- ঢলতে ঢলতে রাত ঢলি... 

-হোয়াট আ স্টুপিডিটি... 

- কোন কবিতা? 

-কবিতা? কার কবিতা? 

-খাতির ঘজনভি... 

-হু ইজ হি? 

-এই ঘজলটার শ্যায়র... 

-তো... 

-আমি এখন শুনছি, গানটা... ঈশ্বরের গলায়... 

-কী শুরু করেছো? 

-মেহদি হাসান...প্রায় পাগল হয়ে গেছি... 

-তা আমি কী করতে পারি? 

-কিস্যু না, একটু বাংলা কবিতা শুনিয়ে আমাকে সুস্থ করে তোলো.. 

-দ্যাটস দ্য পয়েন্ট.... সরি, আই কান্ট হেল্প 

-দেশবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে মোহতির্মা ... আপকি শান লোগোঁ কে জুবান পে হোগি... 

-ওসব বাঙালিদের গিয়ে বলো... 

-বলছি তো, এখন তো বলছিই... 

-নো, মেরি সির্ফ বল্লে বল্লে বিজনেস... 

-রহুয়া, তনি মুলায়জা ফরমায়া জায়.. 

-এটা কোন ভাষা? 

- মাথাটা ভোজপুরি, ল্যাজটা উর্দু... 

-ওফফ... 

-শম্মা কা অঞ্জাম ন পুছ, পরওয়ানে কে সাথ জলি... 

-মানে? 

-ঢলতে ঢলতে রাত ঢলি... 

-মা-আ-আ-নে-এ-এ? 

-সরি...

পুনর্মুদ্রিত
ক্রমশ

1 comment:

  1. ইন্টারেস্টিং। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

    ReplyDelete