0

someপ্রতীক - পল্লববরন পাল [সংকলক]

Posted in

মুখে মাস্ক্‌ মুখবন্ধ

রীতা পাল 

করোনা আতঙ্কে এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বই প্রায় গৃহবন্দী। দক্ষিণ হাওড়ার চারতলার একটি ফ্ল্যাটে আমি ও আমার স্বামী এবং আমেরিকার শিকাগোর কাছে আমাদের একমাত্র ছেলে একইভাবে গৃহবন্দী। স্বামীর বয়স ৬২, আমি ৫৬, ছেলে ৩০। পিতৃকুল ও শ্বশুরকুলের পরবর্তী প্রজন্মের সকলেই (একজন বাদে) দেশে অথবা বিদেশে মা-বাবাদের থেকে দূরে গৃহবন্দী। আমাদের মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু যাপনের ন্যুনতম চাহিদাগুলি অর্থাৎ খাদ্য ওষুধ – এই দাবিগুলোকে তো মানসিক অবস্থার দোহাই দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। ২০ দিনের বেশি হলো বাড়িতে কাজের লোক আসা, মুদি দোকান থেকে বাড়িতে জিনিস পৌঁছে দেওয়া বন্ধ। আমাদের আবাসনে লিফট নেই। ঘরের কাজ বাইরের কাজ যথাসম্ভব ভাগাভাগি করে করার চেষ্টা করছি। স্বামীর ভাগে পড়েছে খাবারজল ফিল্টার থেকে বোতলবন্দী করা, চা তৈরি, ঘর ঝাঁট ও বাসন মাজা। আমার ভাগে বাজার, রান্না, আসবাব ঝাড়পোঁছ, ঘর মোছা, কাপড় কাচা(মেশিনে) ইত্যাদি। সব কাজ যে খুব নিয়মিত হচ্ছে, তা নয় – তবে দুজনেই আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টা মাথায় রাখতেই হচ্ছে। এদিকে ভাতে-ভাত খেতে দুজনেরই মানসিকভাবে বাধা না থাকলেও স্বাস্থ্যের কারণেই দিনের পর দিন তা খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডাল, ঝোল, তেতো রাঁধতেই হচ্ছে। কাজেই লড়াই। 

এর মধ্যে কিছু মজার পোষ্ট এলে একে অপরকে দেখিয়ে হেসে উঠছি। খবরের চ্যানেল দিনে মিনিট দশেকের বেশি দেখছি না। তত্ত্ব এবং তথ্য থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকছি। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসকে আয়ত্তে আনতে নিরলস প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। ডাক্তার নার্সরা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে কর্তব্যরত। এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের আশায় তাঁরা কেউই লালায়িত নন। যা করছেন মানবিকতার তাগিদেই করছেন। ৯ই এপ্রিল রাত ন’টায় ভারতবর্ষে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা ছিলো। ইঞ্জিনিয়াররা অসাধ্য সাধন করে তা রুখে দিয়েছেন। তাঁদের আমরা মৌখিক ধন্যবাদও দিইনি। এই অভিমানে একজন ইঞ্জিনিয়ারও তাঁর কর্তব্য থেকে সরে আসেননি। বিশ্বের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বিপাকে পড়েও দাদাগিরি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মানে আমি এটা বলছি না, এই পরিস্থিতিতেও সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। একেবারেই চলছে না। বলার কথা, বেশিরভাগ মানুষই নিজের নিজের গণ্ডির মধ্যে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এঁদের সবার সব চেষ্টাই বিফলতায় পর্যবসিত হবে, যদি আমরা সাধারণ মানুষ নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন না হই। আমাদের গৃহবন্দী থাকার সাথে সাথে নীরবতা পালনও অভ্যাস করতে হবে। পিঠ চাপড়ানোর সময় এটা নয়, সমালোচনা করে ফেসবুকে ঝড় তোলারও সময় নয় এটা। যেখানে বিজ্ঞানীরা আজ বলছেন, কোভিড থেকে বাঁচতে ৬ ফুট দূরত্ব নিরাপদ, পরের দিনই বলছেন ১৩ ফুট – সেখানে পরিসংখ্যান নিয়ে মন্তব্য করাটা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে একেবারেই বাতুলতা মাত্র। এই উপলব্ধিটা খুব জরুরি। লড়াই নিঃসন্দেহে দীর্ঘ। এবং করোনার পরের লড়াইটা আরো ভয়ংকর। আসবে মন্দা, অনাহার। কাজেই শারীরিক এবং মানসিক লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। 

গৃহবন্দী অবস্থায় আমাদের দুজনের প্রাত্যহিক লড়াইয়ের দু’একটা খণ্ড চিত্র তুলে ধরতে চাই এটা জানাতে যে, হ্যাঁ, সাধ্যমতো দুজনেই গৃহযুদ্ধকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

১। বাসন মাজতে মাজতে স্বামী হঠাৎ বলে উঠলেন– করোনায় যদি মরতেই হয়, একটাই দুঃখ থেকে যাবে – দীপ্তি নাভালকে একটা চুমু খেতে পারলাম না। করোনায় সাহস বেড়ে গেছে। করোনা আমাকেও অনেক সহনশীল করে তুলেছে, তাই বলে উঠলাম – দুঃখ রেখো না গো, এইরকমই হয় – ‘গোবর হইলো গিয়্যা গরুর নিজের জিনিস, অন্য লোকে তাই দিয়্যা ঘুঁইট্যা দ্যায়, গরু একটাও ঘুঁইট্যা দিতে পারে না’। 

২। কাজ ভাগাভাগির দিন সাতেক বেশ নিয়মেই কাটলো। আমি রাঁধছি, ও বাসন মাজছে। একদিন ওর শরীর একটু খারাপ হলো। আমি বললাম – আজ আর মাজতে হবে না। মনে আশা, আগামীকাল নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু পরদিনও ওর শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় বাসনের পরিমাণ বেড়েই চললো। তিনদিন বাদে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, বাসন না মাজলে রান্না করাও যাবে না। উনি ল্যাপটপে মগ্ন। অগত্যা নিজেই বাসন মাজা ও রান্নায় টানা ঘন্টা চারেক লড়ে গেলাম। লড়াই শেষে এসে দেখি, তখনও ল্যাপটপেই মজে আছেন। ধাঁ করে মেজাজটা টঙ্‌ হয়ে গেলো। সামনে গিয়ে বলে উঠলাম – বেশ, বেশ, আমি লড়ে যাচ্ছি সেই সকাল থেকে, আর তুমি বসে বসে...। অমনি তেড়েফুঁড়ে বলে উঠলেন –‘বসে বসে কী করছি? বলো বলো?’ গৃহযুদ্ধের সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি। মুহূর্তের মধ্যে বলে উঠলাম – কোন ভাষায় বলবো – আমার না রোদ্দুর রায়ের? 

“স্বামী যার জেলখানায়, তার মনে যেন সবসময় ফুর্তি থাকে” – নিজের লেখার সপক্ষে এর থেকে ভালো উদ্ধৃতি এই মুহূর্তে আর মাথায় এলো না। 



সংকলকের কৈফিয়ৎ 

‘লক আউট’ - শব্দটা প্রথম শুনেছিলাম গত শতাব্দীর ছ’য়ের দশকে। তখন আমি প্রাইমারি ক্লাশে। 

আমার ইশকুলে বোম পড়লো সত্তর সালে–সেই লণ্ডভণ্ড সময়েই প্রথম শুনলাম –‘লক আপ’। 

পঞ্চাশ বছর পরে আর একটা নতুন শব্দ শুনলাম –‘লক ডাউন’। 

সম্পাদিকা বলিলেন – এই করোনা নিয়ে কিছু করো না– ব্যাস, নেমে পড়তেই হলো – দেশে বিদেশে মানুষের এই লড়াই – শত্রুপক্ষ মেঘের আড়াল থেকে নিরন্তর মর্মভেদী বাণ নিক্ষেপ করেই চলেছে – এই বাণ ধর্ম মানে না, বর্ণ মানে না, জাত মানে না, এমনকি ধনী দরিদ্র ভেদাভেদও মানছে না – অতি পাজির পা ঝাড়া এই মেঘনাদ - বৈজ্ঞানিকেরা নিকুম্ভিলার ঠিকানা খুঁজতে ব্যস্ত – 

একটা সমীক্ষা –মুখে মাস্ক লাগিয়ে যার মুখবন্ধ লিখলেন রীতা পাল - তিনটি প্রশ্ন নিয়ে বন্ধুবান্ধব পরিচিত, আত্মীয়স্বজন ধরে পৌঁছে গেলাম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে – তবু সর্বত্র পৌঁছতে পারলাম কই? অনেকেই স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এলেন। কিছু মানুষের আশ্চর্য উপেক্ষাও পেলাম। আমাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করলেন বিশিষ্ট বন্ধু সুলগ্না মুখোপাধ্যায়, ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ও জার্মানী থেকে উত্তর এনে দিলেন, দুবাইয়ের চন্দ্রিমা দেব এনে দিলেন নিউজিল্যান্ডের উত্তর, বন্ধু শান্তনু ঘোষরায় আনলেন মাদ্রিদকে। ঋতবাকের আর এক পরম সুহৃদ অমিত চট্টোপাধ্যায় যোগাযোগ করিয়ে দিলেন নাইজেরিয়াকে। এদের এই নিঃস্বার্থ ভূমিকাকে ঋতবাকের তরফ থেকে কুর্ণিশ জানাই। পাঁচটি মহাদেশ একত্রিত হলো এই সমীক্ষায়। 

প্রশ্ন তিনটি ছিলো – 

১। আপনি সপরিবারে কেমন আছেন? 

২। কেমন আছে আপনার এলাকা/শহরের মানুষ? 

৩। কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে কিভাবে লড়ছে আপনার এলাকা/শহর? 

সকলেই গৃহবন্দী নিজস্ব পারিবারিক ছোট্ট পৃথিবীতে। গোটা পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি এমন বিচ্ছিন্ন পৃথিবীকে এক শিরোনামে এক মলাটে বাঁধতে চেয়েছি আমরা। এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটা সার্বিক এলোমেলো সংক্ষিপ্ত দলিলের টুকরো– যেখানে কেউ ভালো নেই, কেউ অতিকথক কেউ সংক্ষিপ্ত, কেউ তথ্যনির্ভর কেউ অতি আবেগী, কেউ গল্প কেউ কবিতা। আমরা কোনো লেখা সম্পাদনার চেষ্টা করিনি– হুবহু রেখেছি – ইচ্ছে করেই – ঐতিহাসিক তাগিদে। 

উনত্রিশটি শহরের বর্ণানুক্রমিক মালাটা ঠিকঠাক গাঁথতে পারলাম কিনা, বলবেন ঋতবাকের পাঠকরা। 


এক। অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড।
Nilabho Das, 
Age 12, Student 

We are from Auckland, New Zealand and we would say that we are doing quite well, considering the unfortunate, scary circumstances, however we are getting quite bored and missing going outside and seeing our friends. Although, we do have a lot of school work and online classes to keep us occupied for the time being. Just like everyone else, we are eagerly looking forward to the end of quarantine. 

Auckland was and still, is to a certain extent, understandably, a little bit stressed and scared about the covid 19 situation. However, in recent days, due to the influx of new information, which seems to shows the slowing down of the spread of the virus, the public seems a little more optimistic than before regarding the length of the lock down and the overall spread in New Zealand. 

New Zealand is taking similar precautions to many other countries by enforcing a four week lock down period, closed borders and increased air safety precautions. However, by implementing these actions early, they seem to be having the desired effect, leading to the flattening of the curve for New Zealand and the likelihood of lock down not being extended. 

Stay positive and safe. 

08.04.2020 



দুই অগ্‌স্‌বার্গ, জার্মানী।
Dr. Josef Bhilmayr 
Age 61. Anesthetist. 

Since last 37 years, I am working as an anesthetist in a University clinic. The clinic has 1700 beds and it is meant for 300.000 people living in Augsburg and other hamlets around this place. 

When the first news of the outbreak of COVID-19 reached us end of December 2019, we got disturbed by the pandemic outbreak and in Germany the disease made its first outbreak on 26th January 2020, due to the contact of a company with their Chinese counterparts in Wuhan. In 2017/18, an Influenza (which in German language called Grippe) took away 25.000 citizens" lives. 

After the first outbreak in Germany, we could go to programmes, like Opera, Circus (my wife and I also visited a circus in Munich during that period), but now nothing is happening. We are surrounded by nature here, but two people cannot go out together to walk even. The disease doubled by leaps and bounds in time! 

The first horror news reached me from an Italian colleague, who wrote: "This is a letter out of hell. It is like a tsunami - you can't understand if you are not in." 

I immediately realized that it is going to play havoc on us, the Germans. Till now, we, the arrogant Germans, think that we will be able to bring it under control. With our beliefs and advance medical system (with a large number of intensive beds and ventilators), we could have managed it better, better than the Chinese, the Italians, the Spanish, the French and the English. But politics is the key hindrance between the health and economy. 

The picture from Italy and Spain has opened our eyes: Coffins over coffins of people, of doctors, of nurses, of helpers from NGO sectors, of priests, nuns, who are servicing the mass, the aged people in the old-age homes are traumatic. The aged people at different homes did not even get a chance to say Good-Bye to their kins. 

The Corona is not affecting our young generations, as the old people are majorly prey to it. They are celebrating (despite social distancing), the football fans are gathering to celebrate. 

Politicians did not think of forbid the mass to celebrate Faschings(our carnival in February/March), which led to the spread of the disease in our country. People without brains were buying Mexican beer and going to movies! 

I would like to end on a note: While in France there is a shortage in supply of condoms and red wine, in Germany people are hoarding toilet rolls and packets of noodles. Psychologists in my country are failing to realize the reason behind it. 

Tomorrow I will make the third attempt to buy kitchen paper. 

Dated: 2.4. 2020 



তিন। আম্মান, জর্ডন। 
Mr. Alaa Zammar. 

During this pandemic a lot of behaviors changed on both personal and social level. 

We are now spending more time with family playing games, cooking our food, learning to cook new recipes for food that we used to like at restaurants, people in my city has variety of reactions in the compulsory home staying order, the most has committed, but some broke the order, one of the interesting scenes is the difference in people behavior at grocery shops, the first day they allowed small shops only to open and people were crazy doing panic shopping, with uncivilized way to attend shops they are fighting at the shops doors, forgot the main reason of home quarantine, which is to keep space from people to minimize the possibility of contagiousness, but later they learnt to stand up in 1 meter space queue which turned to appear like a pleasant view. 

Our government made some unexpected actions fighting Covid-19 

1- they quarantined all people arrived the airport at different hotels for 14 days. 

2- they made a committee to follow the virus were came from and how to keep it quarantined in areas that was suspicious about it. 

Hope peace goes back to our families, cities, and our whole planet. 

13.04.2020 



চার। আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। 
সিতেন ভৌমিক 
বয়স  ৬৬, স্বল্প সঞ্চয় এজেন্ট 

আমি সিতেন ভৌমিক, ভারতীয় নাগরিক, বয়স ৬৬, স্ত্রী ৬২, মা ৮৬, মাসি ৭৫। সপরিবারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এখন পর্যন্ত মুক্ত ও সুস্থ আছি। 

এক সময়ের ডাকসাইটে শিল্পশহর তকমাপ্রাপ্ত এই আসানসোল। বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার এই শহর এখন শিল্পহীন। আইনি ও বেআইনি কয়লা খনন আর বালির খাদানের ওপর এই গোটা অঞ্চলের আর্থিক স্থিতাবস্থা নির্ভরশীল। গোটা শহর (পৌর এলাকা)এ আমার সীমিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে জেনেছি যে এখন অবধি সংক্রমণের প্রত্যক্ষ ফলাফল বিশিষ্ট মানুষের সংখ্যা শূন্য। 

‘লকডাউন’ বিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারী প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল না হলেও ভূমিকা সদর্থক। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক, পোষ্টাল সহ জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ, সাফাইকর্মী সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। 

কিন্তু রেশন বিলি বন্টন ও সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে মানুষ যেন একটু বেলাগাম আচরণ করছে। এছাড়া কিছু মানুষকে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে, এটা কাম্য নয়। সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। অসংগঠিত শ্রমিক তথা দিনমজুরদের দুর্দশা তেমন কিছু চোখে পড়েনি। অবশ্য ঘরবন্দী থেকে বাইরের পৃথিবীর সম্যক উপলব্ধি করা বেশ কঠিন। 

১ এপ্রিল ২০২০। 



পাঁচ। ওয়াশিংটন ডিসি। ইউ এস এ। 
শ্যামল দাশগুপ্ত 
বয়স ৬১, কম্পিউটার কন্সালটেন্ট 

রেনে জোনস, আমার এক প্রাক্তন সহকর্মীর ফোন এসেছিল, বুধবার সকালে। ও নাকি দম বন্ধ করে বসে আছে ঘরে গত সাত দিন। জিজ্ঞেস করল, তুই তো সংখ্যার খোঁজ রাখিস, ৯-১১র ঘটনায় কতজন মারা গেছিল। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বলল, এই মুহূর্তে আমেরিকায় কোভিড ১৯এর মৃত্যু, ৯-১১কে ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু মিছিলের সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়ে রকেটের বেগে এগোচ্ছে। এরকম চললে অচিরে আমরা ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিহতের সংখ্যাকে অতিক্রম করে যাব, এই পার্থিব জগতের কোনও হিসেবের মধ্যে ফেলা যাবে না। রেনের ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর তখন ফাটা রেকর্ডের মতো বাজছিল, নস্ত্রাদামুসের ভবিষ্যৎবাণীই কি মিলতে চলেছে? মানব জাতি কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এই গ্রহ থেকে! 

ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা...... 

না, কোভিড ১৯এর মুখোমুখি দাড়িয়ে আমি ভাল নেই, আমরা ভালো নেই, আমরা কেউই ভালো নেই। শঙ্কা, সন্দেহ আমাদের মস্তিষ্কের দখল নিয়ে নিয়েছে, যে জানালা দিয়ে বাতাস ঢুকে, এই ফাগুয়ার দিনগুলি মাতিয়ে রাখত, সেই জানলা সন্তর্পণে বন্ধ করে রেখেছি, পাছে করোনা ভাইরাস ঢুকে পড়ে। 

অদ্ভুত এক আঁধার এসেছে এই পৃথিবীতে... 

আমার জায়গা ডিসি-ম্যারিল্যান্ড-ভার্জিনিয়া, করোনা আক্রান্তর সংখ্যা, এই মুহূর্তে ১০০০০ ছাড়িয়ে গেছে, সারা আমেরিকায় একদিনে ২৯০০০ জন আক্রান্ত হয়েছে। আমেরিকা ভয় পেয়েছে। এক গর্বিত, মহা পরাক্রমশালী দেশ সারা বিশ্বের সাহায্য প্রার্থনা করছে। কিছুদিন আগে অবধি যিনি একে ‘চাইনিজ ভাইরাস বলে তাচ্ছিল্য করেছিলেন, সেই ভাইরাসকে বাগে আনার জন্য তাকেই চৈনিক রাষ্ট্রপ্রধানে সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে হচ্ছে। শুধু নিউইয়র্ক শহরে, যেখানে দিনে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়, সেখানকার মেয়র মাস্কের জন্য, ভেন্টিলেটরের জন্য নতজানু হয়ে আবেদন রাখছে। 

মন্বন্তরে মরিনি আমরা... 

লড়াই জারী আছে। Love thy neighborএর তত্ত্ব শিকেয় তুলে social distancingএর চর্চা করছে আপামর মানুষ। শুক্রবারের মদির রাত, সপ্তাহান্তের ছুটি, রবিবারের মুভি, রেস্টুরেন্ট, বার -সব বন্ধ রেখে, চাপা উত্তেজনায় সবাই আশা করছে মৃত্যু মিছিল বন্ধ হয়ে যাবে, থিতু হবে এ ধরিত্রী, উজ্জ্বল একরাশ আলবাট্রস উড়ে বেড়াবে নীলাকাশে। 

৭ই এপ্রিল ২০২০। 



ছয়। ওয়েন, পেনসিলভেনিয়া, ইউ এস এ। 
নীপা রায় 
বয়স ৫২, ছোটো শিল্পদ্যোগী 

করোনা ও কল্যাণী 

সুদূর কল্যাণীর প্রচণ্ড রক্ষণশীল পরিবারের একমাত্র স্বভাবভীতু মেয়ে সিদ্ধান্ত নিল সে তার প্রাণের মানুষটির কাছে যাবেই যাবেবাবা মায়ের লাখো বারণ তাকে নিরস্ত করতে পারেনি বাবার তো একেবারে ধনুর্ভাঙা পণ। ততদিনে মা-ও সেই প্রেম কাহিনীতে ইমোশনালি ইনভলভড অগত্যা বাবাই তাঁর অবিবাহিত মেয়েকে গাঁটের পয়সা খসিয়ে উড়িয়ে দিলেন অনির্দিষ্টের পথে আমিও অচেনার আনন্দে ১৯৯৫এর ১৬ই ডিসেম্বর পাড়ি দিলাম আমেরিকার মতো একটি ধোপদুরস্ত দেশে 

আমার এই সিদ্ধান্তে ওপরওয়ালা হাসল, কি দুঃখ পেল জানিনা শুধু যেটা জানি‚ আমার আইসোলেশান বা লক ডাউন আমার জীবনে নতুন কোন শব্দযোজন নয় আজ পঁচিশ বছর ধরে আমি আইসোলেটেড সেই পঁচিশ বছর আগে আমার বাবার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মুখটা শেষবারের মতো দেখেছিলাম তারপর আমি এদেশে আসার কয়েক বছরের মধ্যেই বাবা পৃথিবী ছাড়লেন আমি আজও আমার বাবা‚ আমার দেশ থেকে আইসোলেটেড আজও আমার জীবন থেকে লকডাউন লাঘব হওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়নি

কিন্তু আজ তো আমার কথা নয় আজ বিশ্ব জুড়ে যে অণুজীবের সাথে মানব জীবের লড়াই চলছে তারই প্রভাব কতটা আমাদের আমেরিকার জীবনযাত্রায় পড়ছে সেই নিয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করতে চাই আমি পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের প্রধান শহর ফিলাডেলফিয়ার নিকটবর্তী ওয়েন নামক একটি উপশহরে থাকিএই শহরটি রাজ্যের প্রধানতম ধনীদের বাস তাই এখানকার সাধারণ যাপন-খরচ অনেকটাই বেশি 

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে পৃথিবীর সভ্য জাতির কাছে এখন আমেরিকা খুব একটা অজানা‚ অচেনা বা দূরের দেশ নয় কিন্তু বিশেষ কিছু বিষয়ে বলতে গেলে আমাকে সেই পঁচিশ বছর পেছনে যেতেই হয়

মফস্বল বাঙলা থেকে আসা সারা জীবন বাংলা মিডিয়ামে পড়া সেই আমি এসে পড়েছিলাম এত্তবড় একটা সাজানো গোছানো দেশে, যার কোথাও একফোঁটা মালিন্য নেই সর্বত্র মানুষের মিষ্টি ব্যবহার চেনা অচেনা নির্বিশেষে মুগ্ধ করেছিল ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে এখানকার মানুষদের প্রয়োজনীয় আবশ্যিকতা সহজ নিয়মের মধ্যে দিয়ে সবকিছু সহজলভ্য ছিল একটা বেসিক ইনকামের জন্যে আমাদের দেশের তুলনায় এদেশের পরিশ্রম অনেক গুণ বেশিতারপর দিনের শেষে ঘরে এসেও আপনা হাত জগন্নাথ তবুও বলব‚ সময়টাকে যদি আপন নিয়মে বেঁধে নেওয়া যায়, তাহলে এখানকার জীবনযাত্রা তুলনামূলক সহজ সেই নিয়মাবলী মেনে পথ চললেই ঠিক গন্তব্যে পৌঁছনো যায় নিয়মের বাইরে অনন্ত খাদ জীবনযাত্রা এমনভাবে সাজানো যে, নিয়মগুলো মুখস্থ করে নিলে চোখ কান বন্ধ করে চলা যায় ধনী প্রজাতিরা যে দেশটাকে নিয়ে কী খেলা খেলছে, রুপোলী পর্দার পেছনে খোকলা দেশটা যে কেমন কুৎসিতভাবে দাঁত বের করে আছে, সে বোঝার মতো বুদ্ধি এদেশের চোখ কান বন্ধ মানুষগুলোর মগজে ঢোকে না এই মহামারীতে না পড়লে আজও আমি বুঝতাম না 

আমার শহরের চারিদিক ঘিরে কোভিড - ১৯ আমার পাশের শহর ফিলাডেলফিয়াতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মৃতের সংখা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে আমার শহর ডেলাওয়ার কাউন্টির অন্তর্গত সেই এরিয়া তৃতীয় স্থানে আছে এবং আমার শহরের উত্তর-পূর্বদিকে মন্টগমারি কাউন্টি এই এরিয়া আছে দ্বিতীয় স্থানে আমার শহর এই তিন দিশার মাঝখানে অবস্থান করছে তাই যথার্থই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলতে হচ্ছে আর এরই মধ্যে আমার বাড়ির কর্তাকে কাজে যেতে হচ্ছে সোম থেকে বৃহঃস্পতিবার পর্যন্তসততই ভীত থাকি সেই কারণে এরই মধ্যে মার্চের ১২ তারিখে শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথার কারণে হাসপাতালের এমার্জেন্সি ঘুরে এসেছি আর যেহেতু আমি RA patient সেই কারণে আমার hydroxychloroquine রেগুলার বেসিসে খেতেই হয় কিন্তু জানি না এই ওষুধের সাপ্লাই আমি আর কতদিন পাবো আমার দু'মাসের স্টক আপাততঃ আছে কিন্তু তারপর? লালমুখো বাঁদর অলরেডি ইন্ডিয়ার কাছে হাত পেতেছে এই ওষুধটির জন্যে তার মানে এই ওষুধটিও বাজার থেকে উধাও এখন ক্লোরক্স ওয়াইপস‚ স্যানিটাইজার‚ মাস্ক‚ মেডিসিন‚ গ্লাভস‚ পেপার টাওয়েল‚ টয়লেট টিস্যু‚ সবকিছু বাজার থেকে দু'মাস ধরে উধাও 

এত প্রাচুর্য্যময় দেশের এই হালে আমরা একেবারেই অভ্যস্ত নইপঁচিশ বছরে এই না পাওয়ার অভ্যেসটা আমাদের ভেতর থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত এত অসহায়তা আগে কখনও অনুভব করিনি এই কথাটা একেবারে ভুলতে বসেছিলাম যে এদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা এখন একেবারে জিরো এদের আছে শুধু অস্ত্র ব্যবসা আর এ ব্যবসা বাড়বে বই কমবে না অবশ্য এই বাড় বাড়ন্ত সাধারণের কোনো উপকারে আসবে না স্ট্যাটিসটিকস বলে সাধারণের হাত ধরেই আসে দেশের সার্বিক উন্নতি 

যাক! রাজনীতি আমার চর্চা নয় শহর জুড়ে চলছে লকডাউননিত্য প্রয়োজনীয় দোকান প্রায় সবগুলোই খোলা আমি তিন সপ্তাহের ওপরে বাজারে যাইনি, তাই বাজারের ভিড় সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নই বাড়ির কর্তা টুকিটাকি আনতে প্রায়ই যায় তার কথানুযায়ী বুঝি যে মানুষ সোশ্যাল ডিসট্যান্স মেনেই চলছেদোকানে একসঙ্গে লোকের প্রবেশ নিষেধ এমনি শান্তিপূর্ণ অবস্থা ও ব্যবস্থা 

নিউ ইয়র্কে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে, তবে নতুন রোগীর সংখ্যা কমছে নিউ ইয়র্ক স্টেট‚ রিকভার্ড পেশেন্ট থেকে ব্লাড প্লাজমা নিয়ে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে শুরু করেছেএটি পুরোনো পদ্ধতি হলেও আশানুরূপ ফল পেতে পারে‚ এমনই আশা করছে সাইন্টিস্টরা 

আমাদের রাজ্য এখনও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীতে ওভারফ্লোড হয়নি| তাই মহল কিছুটা শান্ত তবে আমার শহরের তিনদিক জুড়ে করোনাভাইরাসের রমরমা তাই বুক দুরুদুরু পুরো দেশ থেকে সেফটি মেটেরিয়ালগুলো উধাও পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই আপাততঃ যতক্ষণ পর্যন্ত চীন আবার পুরো উদ্যোগ নিয়ে সাপ্লাই না দিচ্ছে 

আমি আশায় বুক বেঁধে বসে আছি "পৃথিবী আবার শান্ত হবে..." 

৮ই এপ্রিল ২০২০। 



সাত। ওয়েস্ট উইন্ডসর, নিউ জার্সি, ইউ এস এ। 
রঞ্জন চক্রবর্তী
আই টি এক্সিকিউটিভ 

দূরত্ব 

দুপুরে স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিতেই বাড়ি এসে পাঁচ বছরের জোসেফিনের কান্না থামতেই চাইল না। সমানে বায়না ধরল ওর বন্ধু অনীতার বাড়ি যাবে খেলতে। কিন্তু জোসেফিনকে ওর মা জোর গলায় বলল, 

বাড়িতে থাকো এখন। কোত্থাও যাবে না 

কেন মা? তাড়াতাড়ি ছুটি হলে তো আমরা দুজনে মিলে একসঙ্গে কত খেলি। অনীতা তো কাছেই থাকে। আমি হেঁটেই চলে যাই... 

আজ যাবে না। আজ কেন, এখন থেকে কোথাও বেরোন বন্ধ 

কেন? 

জানো না? স্কুল থেকে বলেনি যে সবাই নিজের বাড়িতে থাকবে? 

বলেছে তো! কিন্তু একটু খেলেই চলে আসব 

না। সামনের সপ্তাহ থেকে তোমাদের ক্লাস বাড়িতেই হবে। আমাদের যে ল্যাপটপ আছে তাতেই ইন্টারনেটে তোমাদের টীচার ক্লাস নেবেন 

অনেক বোঝানোর পর ওর সঙ্গে অনীতাকে ফোন করিয়ে, ওর সঙ্গে একটু কথা বলিয়ে দিতে তবে শান্ত হল জোসেফিন। যখন এও শুনল যে অনীতা, জন, রথীন, কার্লোস এরা সবাই যে যার নিজের ঘরে বন্দী, তখন বুঝল যে সত্যিই এখন বায়না করলে চলবে না। তাই নিশ্চিন্ত হল। বলল,
ঠিক আছে শনিবারে দাদু, দিদা আসবে তো? তখন ওদের সঙ্গে খুব খেলব 

দাদু, দিদা আর আসবে না এখন 

কেন? 

ওর মা এবার জোসেফিনের গালটা টিপে আদর করে বলল - 

করোনা বলে একটা সাংঘাতিক দুষ্টু শয়তান বাইরে ঘুরছে। তোমাকে স্কুল থেকে ওই জন্যই তো আমি নিয়ে চলে এলাম। আরো জানো? বাড়ি আসার আগে আমি শপ-রাইট স্টোরে বাজার করতে গিয়ে দেখলাম ওরা মাত্র কুড়িজন করে লোক ঢোকাচ্ছে একেক সময়ে, যাতে একেকজন অন্যজনের থেকে অন্তত: ছ’ফিট দূরে থাকে 

ছ’ফিট কত? 

বাবার মতো লম্বা 

অত দূরে দূরে? 

হ্যাঁ। দূরে থাকলে দুষ্টু করোনা ভাইরাসের কাছে আসার সম্ভাবনা কম। তাইতো তোমাকে বাইরে বেরোতে বারণ করলাম। আর দেখলাম কি জান তো? দোকানে দুধ, পাঁউরুটি, ডিম, টয়লেট পেপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব শেষ 

কেন? 

নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, কানেকটিকাট সব রাজ্যের গভর্ণরেরা এমার্জেন্সি ঘোষণা করেছেন। তাই সবাই আতঙ্কে আছে। ভাবছে হয়ত আর এসব কিছু পাবে না। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে তাই কিনে রাখছে 

এমার্জেন্সি কি? 

এমার্জেন্সি হলে খুব দরকারি কাজে না হলে বের হওয়া যায় না 

ও জোসেফিন কিছুটা চিন্তায় কিছুটা ভয়ে ওর মা’র কাছে ঘেঁষে বসে মা’র গলা জড়িয়ে ধরে বলল - 

তুমি আমাকে যা দেবে আমি সব খেয়ে নেব। একদম বায়না করব না 

ওর মা এলিজাবেথ হেসে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলল - 

এই তো আমার লক্ষ্মী মেয়ে 

জোসেফিন স্কুল থেকে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরেই ওর বাবা ডেভিড নিউ-ইয়র্কের অফিস থেকে ফিরে এল। এসে বলল - 

আমাকে এবার থেকে বাড়ি থেকেই কাজ করতে হবে। অফিস বিল্ডিং প্রায় বন্ধ 

ডেভিডকে এক গ্লাস জল দিয়ে জোসেফিনের মা বলল - 

কি হবে বলত? টিভিতে তো একটাও ভাল খবর নেই। ইতালিতে কত লোক মারা যাচ্ছে! ওয়েস্ট উইন্ডসরেও শুনছি অনেকে অসুস্থ 

কথা বলতে বলতে এলিজাবেথ ভাবছিল তিরিশ হাজার লোকের নিউ জার্সি রাজ্যর এই শহর ওয়েস্ট উইন্ডসরে এই সেদিন অবধি সবই ঠিক ঠাক চলছিল। টিভিতে, খবরের কাগজে, ইন্টারনেটে দেখছিল করোনা নামের এক ভয়াবহ ভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। বিশেষত: চীন, জাপান, ইতালি, কোরিয়ায় বহু লোক মারা যাচ্ছে। কিন্ত তখনও আমেরিকাতে ব্যাপারটা এত কঠিন এবং হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে ভাবেনি। সেই সব খবর শুনে একটু আধটু সাবধানতা যে মানছিল না তা নয়। সে তো সবসময়ই মানতে হয়। এর মধ্যে সবাই তৈরী হচ্ছিল এপ্রিলে জোসেফিনের দাদু, দিদার পঞ্চাশ বছর বিবাহবার্ষিকী পালন করার জন্য। এলিজাবেথের ভাই থাকত নিউ-ইয়র্ক রাজ্যের অনেক ওপরের দিকের রাজধানী শহর অ্যালবানীতে। ওরাও জানিয়ে দিল যে, ওদের আর আসা হবে না। সবার বাড়ি থেকে বেরোন বন্ধ। 

জোসেফিনকে অসম্ভব ভালবাসে ওর দাদু, দিদা। ওঁরা ওদের বাড়ির কাছেই পাশের শহর ল’রেন্সভিল-এ থাকেন। প্রতি শনি, রবিবার নিয়ম করে জোসেফিনের সঙ্গে দেখা করে খেলে যান ওর দাদু, দিদা। সেই সময়টা জোসেফিনের সবথেকে প্রিয় মনে হয়। 

ক’টা দিন কাটিয়ে শনিবার সকাল দশটায় জোসেফিন এসে দাঁড়িয়েছিল ওদের বাড়ির সামনের দিকের কাঁচের জানালাটার পাশে। মন খারাপ করে। জানত যে দাদু, দিদা আর এখন আসবে না। ওর মা বলেছে কমপক্ষে এক, দু মাস। আরো বেশিও হতে পারে। যবে দুষ্টু করোনা শেষ হয়ে যাবে, তবে। তবুও ওর মনে হচ্ছিল যেন দাদু , দিদার একটা গন্ধ ছড়িয়ে আছে এই জানালাটার কাছে। ওদের হাতের স্পর্শ যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল জোসেফিনের গাল। হঠাৎ একটা গাড়ি ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই ও যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারল না। ওর চোখ, মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। চিৎকার করে মাকে বাবাকে ডেকে বলল 

দেখ দেখ দাদু, দিদা এসেছে 

এলিজাবেথ জানালার দিকে হেঁটে আসতে আসতে অবিশ্বাসের সুরে একরকম বকেই বলল – 

কি হচ্ছে কি? সরে এস জানালা থেকে। কেউ আসেনি 

না, দেখ দাদু, দিদা এসেছে। সত্যিই! দরজাটা খুলে দাও 

ও মা, সত্যিই তো 

এলিজাবেথ কিছুটা অবিশ্বাসের ঘোরে জানালার কাছে আসতে দেখল ওর বাবা ইশারা করে দরজা খুলতে বারণ করছেন। ওর দাদুর হাতে ধরা রয়েছে একটা কাগজ। তাতে কিছুটা কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা “We love you very much” - “আমরা তোমাদের খুব ভালবাসি”। পাশে একটা কাঁচা হাতের আঁকা হার্ট চিহ্ন। ওঁরা গৃহবন্দী হয়ে যাবার আগে একবার জোসেফিন আর ওঁদের পরিবারকে দেখে যেতে এলেন। জোসেফিন ওদের দেখে এতক্ষণ লাফাচ্ছিল কিন্তু থমকে গেল। লেখাটা পড়তে পেরে হয়ত এর গুরুত্বটা আন্দাজ করতে পেরেছিল। এই দু, তিন দিনে যা ঘটে গেল তার কিছুটা ওর ছোট্ট মনে আঁচ করতে পেরে ও যেন হঠাৎই বড় হয়ে উঠল। ওর দাদু জানালার ওপারে এসে দাঁড়িয়ে কাঁচের ওপর হাত রাখলেন। দিদাও হাত রাখলেন। জোসেফিন আর ওর মা দুজনেই এসে ওদের হাতদুটো রাখল কাঁচের ওপর। আদর করে হাত বুলোল আস্তে আস্তে। মোটেও খসখস লাগল না আর। মসৃণ কাঁচের ওপর দুজনেরই হাত রাখা একে অন্যের ওপর। মাঝখানে ব্যবধান শুধু এই কাঁচের। যা সামাজিক দূরত্বের অঙ্গীকার হিসেবে দূরে সরিয়ে রাখল প্রিয় নাতনির স্পর্শ - কিন্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকল হাতের মুঠোয় ধরে রাখা গভীর ভালবাসা, হৃদয়ের বন্ধন। 

৭ই এপ্রিল ২০২০।


আট। কলকাতা, ভারত। 
Twisham Singh. 
Age-21, Student. 

The city of joy is still adapting to the drastic measures taken by the government to stop the multiplication of Covid-19. All schools and colleges have been closed for nearly a month now. Malls, movie theatres and major local shops have also been sealed off. Local transportation services like taxis, buses, trains and metros have also been put on hold due to the lock down. The government hospitals have made significant new changes to fight against the wide spread of the virus. Various hotspots have been identified throughout the state and the city. Most of the shops in these hotspots are restricted from opening and people are strictly prohibited from going outside, even in case of medical emergency locals are requested to take the assistance of the local police. My locality i.e Bhawanipore has been recognized at a hotspot. 

Considering all odds my family of four is doing quite well. Both I and my brother are doing online classes from home, since the inception of the pandemic. My mother has started watching plenty of movies and T.V series on various online streaming applications, along with working from home rigorously. I have found my piece of mind in watching movies, reading books and listening to music. Life has become a long lasting and unexpected vacation at our own home. The only member of the family who goes out of the house without any restraint is our cat, Scar. I miss going outside and meeting my friends but I still consider myself to be more fortunate than most. 

The Union and the state government are trying their level best to secure healthy life for the uninfected and curing the diagnosed patients, at the same time. Maximum utilization of man power is being made to spread out the Do’s and Don’ts for the present situation. Essential food and other commodities are distributed amongst the economically weaker section of the society. The streets are deserted, except for the constant rallying of police patrolling jeeps. Medical assistance is being offered for without any charge in many areas of the city. 

In conclusion I think, we must act as responsible citizens and fight against the spread of Covid-19. Stay home, keep our hands clean and restrict going outdoors. 

07.04.2020 



নয়। চট্টগ্রাম, বাঙলাদেশ।
খালেদ হামিদী 
বয়স ৫৫, কবি, প্রকাশন অধিকর্তা, স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম 

আলবেয়ার কামুর দ্য প্লেগ উপন্যাসের ডাঃ রিওকে মনে পড়ছে। তৎকালীন ফরাসী উপনিবেশ আলজেরিয়ার ওরাও শহরে দায়িত্ব পালনরত রিও রোগটির প্রাদুর্ভাববিরোধী যুদ্ধে সংশপ্তকের ভূমিকায় নিরত থেকে জয়ী হন। তাঁর এই বিজয় মহৎ মানবপ্রেমীর। কিন্ত সেই সাফল্য নীরব অশ্রুপাতের শব্দে মর্মে বেজে ওঠে আজও। কেননা ওই শহর প্লেগ আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই হাসপাতালে থাকা তাঁর সহধর্মিণী প্লেগমুক্তির ক্ষণে প্রয়াত হন। এদিকে আমি এখনো রিওর তুলনায় অনেক ভাগ্যবানরূপে, সপরিবারে, আমাদের শহর চট্টগ্রামে ভালো আছি। 

দুদিন আগে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে ষাটোর্ধ্ব বয়সের একজন করোনাক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। তাঁর বাড়ি আমার বসবাসের এলাকাতেই, তবে অন্য সড়কে। সরকারিভাবে রাস্তায় জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটিয়ে নতুন করে তাই পুরো এলাকা আবার লকডাউন করা হয়। তাছাড়া ধাপে ধাপে ‘সাধারণ ছুটি’র মেয়াদও বাড়িয়ে চলেছে সরকার। রাষ্ট্র ও জনগণের এই সতর্কাবস্থায় নিজের অনুভূতি ধরে রাখার প্রয়াস পাই “সঙ্গরোধের বিরল নিয়মে” নামের কবিতায়: 

যে কোনো জরায় ঢের পরে মরি আজও আমি তোর চেয়ে। 
তথাপি আমাকে হেয় জ্ঞানে তুই দেখাস নিজেরই সাপ? 
কথ্য ঢঙের এমন ভাবনা হঠাৎ থমকে যায় 
বাতাসে যখন জ্যান্ত মরণ অদেখা সাঁতারে ছোটে। 
অণুজীবখানা বিভেদবিরোধী প্রাণসংহারী বলে 
কুমারী আমার সত্তায় কেন জননী আবির্ভূত! 
চাই বিস্মৃত হতে বিচিত্র অমানুষিকতা তোর 
সঙ্গরোধের বিরল নিয়মে যে-ক্ষণে পৃথিবী ফাঁকা। 
অথচ কাছিম সমুদ্র থেকে কূলে ওঠে ঝাঁক বেঁধে; 
কী আশ্চর্য, ডলফিন নাচে কক্সবাজারের তীরে। 
ধরিত্রী তবে বুক খুলে চায় কি আমার বিপরীতে, 
জানার আগেই খেলিছে কি কেউ জীবাণুঅস্ত্রক্রীড়া? 
প্রশ্ন বিষয়ে তোয়াক্কাহীন ঘুঘু, ফিঙে গায় গান। 
রোম উজাড়েও নিরোর বাদ্য হয় না ছত্রখান! 

৭ই এপ্রিল ২০২০ 



দশ। টরন্টো,কানাডা। 
সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য 
বয়স ৬১, অবসরপ্রাপ্ত কম্পিউটার কন্সালটেন্ট। 

দেখতে দেখতে প্রায় বছর বারো হয়ে গেলো টরন্টোতে। আস্তে আস্তে কলকাতার পরে টরন্টোই দ্বিতীয় নিজের শহর হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার জন্য। গত শীতের অনেকটাই কলকাতায় কাটিয়ে এসে ভাবলাম কয়েক মাস টরন্টোতে কাটিয়ে আবার এপ্রিল-মে মাসে কলকাতায় গিয়ে বাবা মার সাথে কিছু দিন থাকবো। মেয়েরা ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে গেছে, তাই এখন আমার ওপর নির্ভরতা অনেক কম ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সময়টা টরন্টো বেশ সুন্দরভাবে শীতের রুক্ষতা থেকে সবুজের শ্যমলিমার দিকে এগোয় এবং তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে জ্যাকেটবিহীন অবস্থায় যেতে থাকে। 

হঠাৎ একেবারে বজ্রঘাত - লকডাউন, লকডাউন এবং লকডাউন -. বিনামেঘে ঠিক নয়; কারণ মেঘদের অবজ্ঞা করেই বোধহয় এই সাংঘাতিক অবস্থা। 

আমার দুই মেয়ে পড়ছে University of Guelph এবং University of Torontoতে। একজন Post Graduate, আরেকজন Undergrad. আমাদের বাড়ির দুটো ঘর আপাতত একটা University of Guelph আর একটা University of Toronto। ওদের সমস্ত ক্লাশগুলো এখন অনলাইন এবং সব পরীক্ষা অনলাইন। ওদের term শেষ হবে এপ্রিল শেষে। এখন দুজনের ফাইন্যাল পরীক্ষার টেনশন চলছে সারাদিন বাড়ির মধ্যে। সমস্যা হচ্ছে এদের কোনো outlet এরও কোনো উপায় নেই এই লকডাউনের মধ্যে। আর আমরা মানে আমার বউ আর আমি সিনেমার পর সিনেমা দেখে চলেছি। 

টরন্টো সত্যিই বেশ বহু সংস্কৃতির মিলন শহর - এমনিতে যে খুব ধনীদের শহর, তা নয়; কিন্তু যথেষ্ট উদ্যোগী চরিত্রের - টরন্টো ডাউনটাউন থেকে দক্ষিণে বিশাল অন্টারিও লেক - যার পাশে রীতিমতো বীচ আছে, যেখানে গ্রীষ্মে বীচ ভলিবল পর্যন্ত খেলা হয়। শহরের উত্তর দিকে যাওয়ার জন্য একটা বড় হাইওয়ে, যার নাম ডন ভ্যালি পার্কওয়ে। চমৎকার হাইওয়ে, কিন্তু সেটাতে এতই গাড়ি ঠাসাঠাসি থাকে যে, লোকে তাকে বলে ডন ভ্যালি পার্কিংলট্‌। এমনকি এক ঘন্টা অব্দি আটকে থেকেছি মাত্র পনেরো কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে। শনিবার, রবিবার, কাজের দিন, সর্বক্ষণ জ্যাম আর জ্যাম। সেই রাস্তা দিয়ে লকডাউনের মধ্যে একদিন যেতে হয়েছিল – ওই জায়গাটা পার হয়ে গেলাম - কিছু বুঝতেই পারলাম না। সমস্ত টরন্টো শহরটা হঠাৎ যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। প্রথমে স্কুল, কলেজ, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলগুলো বন্ধ হয়েছিল, এখন পার্ক ইত্যাদিও বন্ধ । 

কানাডা সরকারের একটা জিনিস দেখছি - প্রধানমন্ত্রী রোজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। বহু সরকারি প্যাকেজ ঘোষণা করছেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যই মূলত। তাছাড়া, যে সব কানাডিয়রা বিদেশে আটকে আছেন তাদের আনার ব্যবস্থা চলছে, ইত্যাদি। মোটামুটিভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় আর আঞ্চলিক প্রশাসনগুলো ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হলেও এই বিপদে মোটামুটি একত্রিতভাবে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। 

তবে সব ছাপিয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত একটা অসহায়তা যা জীবনে কখনো সহ্য করতে হয়নি! সত্যিই জীবনে অনেক বিপদে পড়েছি অনেক লড়েছি, জিতেছি, হেরেছি কিন্তু এত অসহায় অবস্থায় কখনোই পড়িনি, যেখানে প্রথমত, কিছুই করা যাবে না, দ্বিতীয়ত, কবে যে এটা শেষ হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শুধুই সুদিনের অপেক্ষা আর অপেক্ষা । 

৪ঠা এপ্রিল ২০২০। 



এগারো। দিনহাটা, কোচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। 
বিপুল আচার্য 
বয়স ৫০, সরকারি আধিকারিক 

তোর কাছে আজও রূপান্তরের যাবতীয় বর্ণমালাগুলো শিখে নিতে মন চাইছে মানবী। ভাস্কর্যের ছায়াপথে হয়তো খুব শীঘ্রই দেখা হয়ে যাবে তোর সঙ্গে। ভালো না থাকলেই তোর কথা বার বার মনে পড়ে।  আজ আমারা একটুও ভালো নেই রে। আমার একমাত্র মেয়েটির মন ভীষণ রকম খারাপ। বাবা-মার বয়স হয়েছে। আমার শহর দিনহাটা কাঁদছে - কাঁদছে শহরের নির্ভেজাল নিরুত্তাপ মানুষগুলো। তবু সংগ্রামে পিছপা নয় রে আমার শহর দিনহাটা। 

তুই তো মুক্ত আকাশকে ভালবেসে কবেই চলে গেলি। অসহায়তার সাতকাহন আজও আমাদের জীবন জুড়ে। কত অসহায় হলে এই রূপ, এই শিল্প আমাদের প্রচণ্ডভাবে অসহায় বানিয়ে দেয়, এখন আর তা তুই বুঝবি না। ভাস্কর্যের পৃথিবীতে আজ যে অসুখ তার নিরাময় দূর অস্ত। আমরা বেলেল্লাপনায় মেতে উঠতে কসুর করিনি। জানিস তো, রাজনীতি জাত পাত ধর্ম এসব আমরা ভালোই রপ্ত করেছি। 

হ্যাঁরে হ্যাঁ, এক পর্বে লকডাউন আর এক পর্বে তাকে ভঙ্গ করার নানা ফন্দি-ফিকির। বলেছিলাম না আমার শহর কাঁদছে। কাঁদছে গোপনে কত দিন-আনি দিন-খাওয়ার মানুষজন। অবশ্যই কিছু মানুষ মানুষের জন্যে কিছু করার আনন্দে মশগুল। তাদের হাত ধরেই পেটে দুমুঠো অন্নের সংস্থান। কিংবা ওষুধপত্তর। মানুষের মধ্যেই যে ঈশ্বর লুকিয়ে থাকে, এই অসহায় সময় তা বুঝিয়ে দেয়। আবার দেখ দারুণ আনন্দে মেতে আছে দ্বিতীয় পক্ষও। অন্যের কথা ওরা কেন ভাববে বল্। এতেই না ওদের শান্তি। শান্তির দেশে যেতে এত তোড়জোড়। আচ্ছা, ওরা তো না হয় একদিন এভাবেই পৌঁছে যাবে শান্তির দেশে এই নামীদামী অসুখকে সাক্ষী করে; কিন্তু ওদের সংসার, ওদের বৌ-বাচ্চা, মা-বাবা ওরাও যে ওর সাথী হবে বেলাঅবেলায় সেকথা ওরা ভুলে গেছে? 

পুলিশ কি সুন্দর কাজ করছে, প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে করোনা'র বিরুদ্ধে, আরও কতজন কত নিরলসভাবে। আচ্ছা বলতো মানবী, এর থেকে আমরা কী সত্যিই উত্তীর্ণ হবো না! ছাত্র তো খারাপ ছিলাম না আমরা, তুই তো জানিস! কিন্তু এই কঠিন পরীক্ষা থেকে উত্তরণের কোন্ পথ তুই বাতলে দিবি, বলতো? আমরা অসীমের ব্যপ্তিতে নিমজ্জিত হতে চলেছি -দিন দিন বাড়ছে আমাদের সঞ্চারণ। আমরা তো প্রশাসনের বাইরের জগতের কেউ নই, তাদের নিরলস শ্রমের মর্যাদা দিতে সচেষ্ট হই। হ্যাঁ, আমরা কঠিন পদক্ষেপ লকডাউনকে আরও বেশী করে মান্যতা দেই! তুই তো দেখছিস এত মৃত্যু, এত অভাবনীয়তা - অথচ দেখ শ্মশান ফাঁকা। 

উদ্ভব-বিকাশ ও সংহার নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে তোর লেকচারটা আজও বড় প্রাসঙ্গিক মানবী। সত্যিই আমারা সবাইকে বড় পীড়িটা দিতে কসুর করি না। আমাদের হৃদয় স্নেহ -মমতায় পরিপূর্ণ, আমরা আতিথেয়তা খুব ভালো জানি। আমরা আগে যেমন ছিলাম, আজও আছি, পরেও থাকবো। দেখা হবে আমাদের অনেকের সাথেই। মানবী, তুই কিন্তু এবারে অবশ্যই রূপান্তরের যাবতীয় বর্ণমালাগুলো শিখিয়ে দিবি। তবে একটা কথা, আমরা কিন্তু লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাব - যতদূর যাওয়া যায়। আমরা হার মানতে রাজি নই। হার মানা আমাদের মগজে নেই। ঝক্কি সামলানোর মানসিকতা আমাদের খুব শক্ত। তাই বলছি - যদি সব ঠিকঠাক পথে এগোয় তবে আমরা মরার আগেই মরবো না। দেখিস-- আমরা করবো জয় একদিন। 

৭ই এপ্রিল ২০২০। 



বারো। দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। 
চন্দ্রিমা দেব 
বয়স ৪৬, গৃহকর্ত্রী

করোনা মোকাবিলার উদ্দেশ্যে আজ তিনদিন হলো দুবাইতে পুরোপুরি লকডাউন শুরু হয়েছে। আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা তিন। আমি গৃহবধূ, আমার একমাত্র মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে, আমার স্বামী একজন প্রকৌশলী, একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাথে যুক্ত। "করোনা" আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তার আবহে ঘিরে রেখেছে । 

প্রিয়জনদের থেকে অনেক দূরে, আমরা প্রতিমুহূর্তে এই ভয়ঙ্কর শত্রুর হাত থেকে নিষ্কৃতির প্রার্থনা করে চলেছি। 

স্কুল , কলেজ, ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে, তারপর ধাপে ধাপে শপিং মলের উন্মুক্ত থাকার সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হলো। গত দুই সপ্তাহ ধরে শুধু মাত্র খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ, ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ করার নির্দেশ এলো। গত সপ্তাহে সন্ধ্যা ৮ টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা অবধি কারফিউ জারী করা হলো জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু প্রথম দিকে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন ১৫-২০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও হঠাৎ সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এখন প্রতিদিন প্রায় ২৫০-২৯০ জন আক্রান্তের সংখ্যা জানা যাচ্ছে। প্রথম দিকে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের সকলেরই সাম্প্রতিককালে বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে। 

যে সমস্ত এলাকা থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেই এলাকাগুলি বিচ্যুত করে রাখা হয়েছে ও সেই অঞ্চলের প্রতিটা বাড়ি, দোকান জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। সরকার এখন অনেক বেশি সক্রিয়তার সাথে আক্রান্তদের ও জীবাণু বাহকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তাই প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

গত শনিবার রাতে ১৪ দিনের জন্য লক ডাউন ঘোষণা করা হলো. বর্তমানে বিমানবন্দর, মেট্রো, বাস, ট্রাম সবই নিষ্ক্রিয়, শুধুমাত্র ট্যাক্সি চলছে কিন্তু খুব সীমিত। রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে, একমাত্র ওষুধ বা খাবার কেনা ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ। 

দুবাই পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত, কোলাহলমুখর শহর। আজ পুরো শহর যেন নিস্তব্ধ হয়ে শুধু প্রহর গুনে চলেছে, আর এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে সর্ব শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করছে। 

আমরা আশা করবো, একদিন সব যুদ্ধ থেমে যাবে, পৃথিবী আবার কোলাহলমুখর হয়ে উঠবে।এক সদ্যস্নাত, দূষণহীন, আলোকোজ্জ্বল সকাল আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। 

৭ই এপ্রিল ২০২০ 



তেরো। নয়ডা, দিল্লি, ভারত। 
প্রদীপ চন্দ 
বয়স ৬৪, চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার 

সেই ২২ মার্চ থেকে নয়ডাতে বন্দি। শুরু হয়েছিল এক দিনের জনতা কার্ফু --- তারপর কেটে গেছে ১৭টা দিন করোনা বন্দিত্বের মধ্যে। প্রথম দু’চার দিন একটু অস্বস্তি- প্রতিদিনের রোজনামচায় পরিবর্তনে। তারপর--- আস্তে আস্তে সয়ে গেছে। আমরা মিয়াঁ বিবি শহরের এক কোণে, আর সন্তানরা তাদের নিজেদের জায়গায় পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে। 

প্রাথমিক অস্বস্তি কেটে যাবার পর শুরু হলো কি ভাবে কাটানো যায় এই বন্দি দিনগুলোকে আনন্দের সাথে। ঘরের কাজের লোকগুলো তো আগেই বিদায় নিয়েছে – শুরু হলো ঘরের কাজের শেয়ার— প্রথম বুঝলাম ঘরের কাজ কতটা পরিশ্রম সাপেক্ষ, কতটা সময় লাগে ঘরকে প্রতিদিন বাসযোগ্য করে রাখার জন্যে।-- শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে কিছু অনলাইন কোর্স পড়ান শুরু করলাম --- ফাঁকে ফাঁকে হোয়াটস্যাপ – নেটওয়ার্ক সারফিং---- তারপরেও অফুরন্ত সময়। দুজনে মিলে দেখতে শুরু করলাম ইউ-টিউবে ছোট সিনেমা—এক আশ্চর্য জগত খুলে গেল--- ভাবতে পারিনি কত ভাবনা সম্পৃক্ত ছোট ফিল্ম তৈরী হচ্ছে আজকের দিনে। এখন ডুবে গেছি ছোট ফিল্ম-এর দুনিয়ায়। বেশ কেটে যাচ্ছে সময়। মাঝে মাঝে মনে হয় একটু বাইরে বেড়িয়ে এলে ভাল লাগত—বন্ধুদের সাথে এক কাপ চায়ের আড্ডা ---। তবে এও জানি এই বন্দিত্বের পিছনে অনেক বড় যুদ্ধ। না হয় কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেব এই যুদ্ধটাকে জয় করার জন্য। 

শহরের মানুষ প্রথম কয়েক দিন ছুটির মেজাজ—তারপর ছটফট ছটফট – সুযোগ পেলেই বন্ধন থেকে পালানোর চেষ্টা – রাস্তায় কাতারে কাতারে লোক পালাচ্ছে অন্ন, আশ্রয়ের সন্ধানে – এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। আমাদের কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কিছু করতে পারছি না –-- তারপর, চারদিকে নিশ্চুপ--- শান্ত। সবাই বুঝতে শিখেছে যুদ্ধটা জয় করতে হবে। মানুষ কম চাহিদার মধ্যে বাঁচতে শিখছে---- স্বল্প পরিসরে স্বপ্ন দেখতে শিখছে – হারিয়ে যাওয়া প্রতিভার আবার নতুন করে চর্চা শুরু--- হারিয়ে যাওয়া লুডোর ঘুটি রাস্তা পেয়ে ঢুকে পড়েছে মোবাইলের স্ক্রিনে। 

কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই একটাই --- মেহের আলির “তফাত যাও- তফাত যাও”। এখন আমাদের চারপাশে রাস্তাগুলি ফাঁকা – মাঝে মাঝে কিছু পুলিশের গাড়ির সাইরেন নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে দিচ্ছে। কোন চুরি ছিনতাই হচ্ছে না, সোসাইটিতে মাঝরাত পেরিয়ে ব্যচেলার পার্টির আওয়াজ নেই --- পার্কে বাচ্চাদের কলকলানি নেই---। করোনা সংক্রমণ নিজের নিয়মে এখনও বেড়ে চলেছে--- তবে মনে হয় আর কিছুদিন বাদে দাঁড়িয়ে যাবে --- আমরা যে ঘরে ঢুকে পড়েছি – করোনা বাইরের দরজায় আর কতদিন কড়া নাড়বে?--- 

১০ই এপ্রিল ২০২০। 



চোদ্দো। প্রিন্সটন, ইউ এস এ। 
মুংলু ব্যানার্জী 

গত তিন সপ্তাহ ধরে ঘরে বসে আছি জমানো খাবার এখন প্রায় শেষ হতে চলেছে তাই অনেক চিন্তা আর দুশ্চিন্তা করে বাজার করতে বেরতেই হল আমাদের এই ছোট শহর প্রিন্সটনে ইতস্ততঃ কয়েকটা গাড়ী আর বিক্ষিপ্ত দু-একজন লোক ছাড়া শহরের প্রধান রাস্তা NassauStreet প্রায় পরিত্যক্ত প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ঐতিহাসিক NassauHall-এর সামনের লন, যা এইসময়ে ছাত্র-ছাত্রী আর অধ্যাপকদের যাতায়াতে ব্যস্ত থাকতো, এখন একেবারে খালিঅবারিত মূল প্রবেশদ্বারটা যেন দাঁড়িয়ে আছে তাদের ফেরার অপেক্ষায় 

স্কুল-কলেজের মত যেখানে সম্ভব অফিসের কাজ-কর্মও চলছে বাড়ী থেকে, কম্পুটারের মাধ্যমে আবশ্যকীয় ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ রেস্তোরাঁ খোলা, তবে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, শুধু Takeoutগ্রোসারীর দোকানে গুণে গুণে লোক ঢুকতে দিচ্ছে যাতে অতিরিক্ত ভীড় না হয়ে পড়ে। যাতে পরস্পরের থেকে ছ’ফুট দূরত্ব মেনে চলা যায় 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে লোকের মনে আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা আর ভয় বিভিন্ন জায়গায় করোনা পরীক্ষার শিবির খুলেছে হসপিটালগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে ক্রমাগত 

তবুও বসন্ত এসেছে ম্যাগনোলিয়া আর চেরীগাছগুলো ঢেকে আছে রঙিন ফুলে শীতঘুমের শেষে জেগে ওঠা কাঠবেড়ালীর ক্ষুধার্ত ব্যস্ততা আর আকাশ বেয়ে ঘরে ফেরা উড়ন্ত হাঁসের ঝাঁক মনে হল প্রকৃতি এক হাতে মৃত্যু বিলোচ্ছেন আর অন্য হাতে জীবন

৫ই এপ্রিল ২০২০। 



পনেরো। বাহ্‌রিন। 
Shuvendu Bakshi 
Age 52, Architect, Project Manager 

Bahrain is a small country with a population of 1.5 million. A total of around 750 Covid 19 cases till date makes the the probability of contamination very high. But the government has acted very prudently in restricting the spread and simultaneously ensuring that the ramifications on economy and life of general citizens is kept to a minimum. 

It’s not a complete lock down. The educational institutions, malls, beaches, public gatherings, clubs etc have all closed or stopped functioning. The restaurants and shops etc are allowing only take-always or home deliveries. The daily-need shops, banks, hospitals are open, public transport is functioning. People are practicing social distancing and hygiene norms. Overall, activity has slowed down but is not at a standstill. Although borders are closed and regular flights are stopped, the government has taken very good measures to ensure that there is no shortage of essential items. 

The current restrictions in Bahrain are valid till 9th April - we are yet to hear any changes on the decision. 

Personally, it’s a time to introspect and analyze - to reset our priorities! It’s a time to slow down, to understand Nature and give it its own space. It’s time to shift to new ways of living, to get rid of old habits. 

I hope that the world will come out of this pandemic very soon - leaving not only the skies and the earth, but also the minds of the people more clean, clear transparent. 

7th April 2020 



ষোলো। ব্যাঙ্গালোর, ভারত। 
শুভম চৌধুরী 
বয়স ৩২, সিনিয়ার ম্যানেজার, রিস্ক এনালিটিক্স, এইচএসবিসি। 

১। সপরিবারে কেমন আছি? 

ব্যাঙ্গালোরে যেখানে থাকি সেখানে ছোটোখাটো অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় জিনিস প্রায় সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। লকডাউনের মধ্যেও প্রশাসনের প্রাণপণ চেষ্টায় অনলাইন ফুড ডেলিভারি, সবজি, মাছ, মাংসর আপাতত কোনো রকম অভাব নেই। তবে কতদিন থাকবে, জানি না। 

২। শহরের মানুষ কেমন আছে ? 

পরিস্থিতিটা তো আর স্বাভাবিক নয়। এই অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যেও যথাসম্ভব ভালো থাকার ও রাখার চেষ্টাটা সর্বাত্মক। অন্তত আমার নিজের এলাকার মানুষ খুব একটা কষ্টে আছে বলে এখনো মনে হয়নি। তবে পুরো শহরের খবর জানা তো সম্ভব নয়। 

৩। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই? 

ব্যাঙ্গালোরে গত কয়েক দিনে রোগের প্রকোপ সে ভাবে বাড়েনি। যা শুনছি বড় রাস্তায় সেভাবে কেউ গাড়ি বার করেনি। এখানে যেহেতু অনলাইন সব কিছু খুব সহজে পাওয়া যায়, তাই বাজারে ভিড় করার দরকার হয় না। এর মধ্যেও কি লোকে আড্ডা মারছে না চায়ের দোকানে? সেটাও দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মোটের ওপর শহর সচেতন। 

৮ই এপ্রিল ২০২০ 



সতেরো। বুয়েনর্স এয়র্স, আর্জেন্টিনা। 
Carla Natalia 
Age 35 years 

I was working in Switzerland. With the situation becoming grave due to the spread of COVID-19, I wanted to come to Berlin and stay there for a while. Suddenly the Swiss government closed its borders and I got stuck in Looren, Switzerland, at my workplace. My Italian passport also did not help me to find some solutions, as the Foreign was already closed down their operations by that time. I was clueless. Then an Edelweiss aircraft brought me back to my country of origin, Buenos Aires. This aircraft was coming to Argentina to airlift their citizens back home. No sooner did I land in my city, I was forced to go into a quarantine in a hotel room. I am still there since last four days, waiting for the test to be done. I have no contact with the outer-world and even cannot see the hotel staff around this place. The food is left every time in front of the door of my room. Never imagined such a situation. 

2nd April, 2020 



আঠেরো। মাদ্রিদ, স্পেন। 
Sourav Ghosh Roy 
Age 30, Research scholar 

The lock down to contain the Corona virus spread in Spain came into effect on the 11th of March, however only for educational institutions. It was meant to be in effect for only 2 weeks. Many, including those in the government, did not understand the quantum of danger lives were in yet. Certain local media outlets claim that health workers had been warning the Pedro Sanchez led government from as early as mid-February, but their opinions and concerns were disregarded. 

Figure 1 Madrid residents flee to Costa de Sol and Valencia among other places in midst of the Covid-19 lock down 

However, in just a couple of days the number of reported cases started sky-rocketing. The number of fatalities increased and the government ultimately declared an indefinite state of emergency on the 16th of March. Suddenly everyone’s lives had changed overnight. The restaurants, bars and nightclubs, which are a big part of the Spanish lifestyle, were forced to shut doors. There was chaos at the supermarkets and some highways got lock jammed with people trying to travel back to their cities. 

Figure 2 Panic buying left supermarket shelves empty 

As an Indian student who had only recently moved to the country, I was worried at this point. Even as I contemplated my next step, the Indian Embassy reached out to me and other Indian students in Spain. We were assured of our safety here and were constantly updated about the situation in Spain as well as in India. In these difficult times the steps taken by the embassy assured me that I wasn’t alone in this unknown country. Embassy representatives constantly kept in touch with the student community through whatsapp groups, zoom calls and also distributed free masks and essential groceries to the Indian student community. The local newspaper also reported how the Indian government has agreed to send essential medicines to Spain, for which Spaniards have a lot of gratitude towards the Indian community. 

In the meanwhile, the chaotic situation in Spain began to settle down. The roads have become eerily deserted. Nobody is allowed to leave home without a valid purpose which could be a quick grocery run to the nearest supermarket, visit to the hospitals/pharmacy or visit to a dependent who is unwell. The Spanish spirit of socializing however continues from people’s balconies or windows at 8 PM every day when people come out to show gratitude to the essential workers by clapping hands and cheering “Viva España” 

The statistics have shown improvement in the last one week. Hopefully the situation will be contained soon. The Spaniards are looking forward to returning to their regular lives but the transition will be gradual. Until then we shall clap from our windows and respond to cheers of Viva España. 

 08.04.2020 



উনিশ। মাসকাট, ওমান। 
অজন্তা দাশ 
বয়স ৬২, গৃহকর্ত্রী 

১। আপনি সপরিবারে কেমন আছেন? 

যুদ্ধই বটে। করোনা----আপাত নিরীহ এই শব্দের মধ্যে মারণবীজ লুকিয়ে আছে সেকথা কদিন আগেও লোকে মানতে চাইতো না। এখন পরিস্হিতি সঙ্গীন। করোনার মরণ কামড় এড়াতে মরীয়া আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে যুদ্ধে নেমেছি। জিততে আমাদের হবেই। 

মাস্কাট---আরব সাগরের তীরে সুন্দর এই শহরটি ওমান-এর রাজধানী। বিগত ৩৬ বছর এখানেই বসবাস। বড়ো নিয়মনিষ্ঠ, পরিচ্ছন্ন সাজানো শহর। নিরাপদে, আনন্দে ছিলাম। হঠাৎ ভগ্নদূতের মতো করোনার আগমন। লক ডাউন ঘোষণা। প্রশাসনিক তৎপরতায় মানুষ গৃহবন্দী। মেলামেশা বন্ধ রাখলে রোগ সংক্রমনের আশংকা কমে যাবে। তাই সতর্কতা। তবে অসুবিধে নেই বিশেষ। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দোকানগুলোতে মজুত। বাধ্য হয়ে সবাই বাড়িতে বেশি সময় কাটাচ্ছি। আমরা তিনজন গল্প করে, টিভি দেখে, বই পড়ে দিব্যি আছি। বন্ধুবান্ধবদের সংগে ফোনে খবরাখবর চলছে। বহুদিন মুখ দেখাদেখি নেই। অতি সম্প্রতি কলকাতায় পরিবারে দুর্যোগ। আকাশপথ বন্ধ, যাওয়া গেল না। মনঃকষ্টে রয়েছি। 

২। কেমন আছে আপনার শহরের মানুষ? 

শহরের লোকজন ভালোই আছে। রাস্তায় গাড়ি কম, ভীড় নেই কোথাও। লক ডাউন চলছে। সংবাদপত্র প্রকাশ বন্ধ। অফিসে ৩০% হাজিরা। পালা করে যাচ্ছে সবাই। যানবাহন বন্ধ। কাজকর্ম খুবই কম। আক্রান্ত এলাকায় নিম্ন আয়ের লোকেরা ভারী বিপদে। সেইসব নাগরিকদের ঘরে ঘরে ২১ রকম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ, ব্যবসায়িরা দান করছে। সবরকম সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ। স্কুল কলেজ ছুটি। রেস্তোরাঁ, হোটেল, সেলুন, ছোট দোকান সবের ঝাঁপ টানা। হোটেলে কোয়ারান্টাইনে রাখা হচ্ছে। সবাই প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলছে। অসন্তোষ নেই। সাধারণ মানুষ কাজে বেরোলে মুখোশ এবং দস্তানা পরে যাচ্ছে। দুজন পাশাপাশি রাস্তায় হাঁটছে না। সমস্ত জরুরি পরিষেবা চালু। 

৩। কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে কিভাবে লড়ছে আপনার শহর? 

প্রশাসনের বজ্র আঁটুনি তারিফযোগ্য, ফসকা গেরো নেই কোথাও। প্রথম থেকে শক্ত হাতে হাল ধরার জন্য আক্রান্তর সংখ্যা বিপদজনক ভাবে বাড়েনি। মৃত মাত্র ২। আক্রান্ত জেলাগুলি অন্য জেলা থেকে আলাদা করা হচ্ছে। সেই জেলা থেকে বেরোতে ঢুকতে পুলিশের অনুমতি আবশ্যিক। রাস্তায় পুলিশ ও সেনা সদা সতর্ক পাহারায়। সুপার মার্কেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, ঢুকতেই একজোড়া ডিসপোজেবল দস্তানা এগিয়ে দিচ্ছে। ট্রলি নির্বিষকরণ চলছে। জিনিসপত্রও বাদ যাচ্ছে না। সর্বদা ফোনে নাগরিকদের কাছে নির্দেশ যাচ্ছে। সমস্ত গণ পরিবহন বন্ধ, বিমানবন্দরও। মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বারা তালা বন্ধ। উল্লেখযোগ্য, মধ্য প্রাচ্যে ওমান একমাত্র দেশ যেখানে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বারা সবাকার একত্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ক্রমান্বয়ে পেট্রোলিয়ামের মূল্য হ্রাস মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনীতি টলমল। বেতন হ্রাস চলছে। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ওমানিদের বিশেষ বিমানে করে ঘরে ফেরানো হচ্ছে। সরকার চায় না তারা বিদেশ বিভূঁইয়ে বিপদে পড়ুক। সর্ব ধর্ম সম্মেলনের কাতর প্রার্থনা -- ধ্বংস হোক এ মারণ রোগ, এ যুদ্ধে জয়ী হবে মানুষ, রোগমুক্ত নির্মল পৃথিবী স্বাগত। 

৮ই এপ্রিল ২০২০ 



কুড়ি। মুম্বাই, ভারত। 
অপরূপ সেনগুপ্ত 
বয়স ৫৫, Entrepreneur, Philanthropist, Teacher 

সকাল বেলা টিং টং বেল বাজলো। খুব সকাল নয়। সাড়ে ন’টা। আমি তখন গভীর ঘুমে। ‘করোনার’ কারণে, করুণাময়ী রাত দিন এক করে দিয়েছেন। কখন খাচ্ছি কখন শুচ্ছি, তার ঠিক নেই। ভীতু বাঙালির মতো খেয়ে শুয়ে আনন্দেই আছি। 

“কাঁচরা স্যার” - পরিপাটি ইউনিফর্ম পরা ছেলেটি বললো। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “আপ লোগো কা কাম চালু হ্যায় কেয়া?” “হাঁ স্যার, সাফাই তো করনা পড়েগা না; Essential Service।” পরিষ্কার উচ্চারণ, লেখাপড়া জানে। বয়স বোধহয় ২০ বা ২১। House Keeping সার্ভিস তার মানে আবার চালু। এটাই মুম্বাই - বন্দী যুবক কিন্তু ফন্দি না করে সৎ ভাবে বাড়ি বাড়ি ময়লা কালেক্ট করছে। ল্যাদ খাওয়া বাঙালি আমি, বললাম “কাল সে বেল মৎ বাজানা, হাম রাত কো সামান বাহার রাখ দেঙ্গে, আপ লে কে যানা”। ছেলেটি হেসে বললো, “চলেগা। এই ‘চলেগা’ হলো মুম্বাইতে প্রচলিত একটা phrase, যেটা এক কথায় বোঝানো মুশকিল। Absolutely, sure, yes, with pleasure-কে যদি পজিটিভ ফোর্স দিয়ে মেশানো যায় তবে এটার কাছাকাছি যাওয়া যায়। 

কলকাতা থেকে যখন প্রথম এই শহরে এসেছিলাম তখন শুনেছিলাম এই শব্দটা। কলকাতার ছেলে - “ভাবছি”; “দেখছি” শুনে শুনে অভ্যস্ত কানে হঠাৎ মনে হয়েছিল - এটা কি মারাঠী “চলবে না”? কারণ ভোর চারটের সময় মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে আর আমি, দাঁড়িয়ে থাকা এক ফিয়াট ট্যাক্সি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম - এয়ারপোর্ট? 

আমাকে দেখে বললো “চলেগা, জেব মে পায়সা হায়না”। তার মানে পয়সা থাকলে মুম্বাইতে ট্যাক্সি চড়া যাবে। “No Refusal” লেখার দরকার নেই। 

বারোটা নাগাদ আমার ড্রাইভার প্রশান্ত এলো, আলু পেঁয়াজ, চাল, আদা, কাঁচা লঙ্কা, ম্যাগি, ইত্যাদি - মানে একটা মিনি ‘Corona সারভাইভাল কিট’ নিয়ে হাজির। “কেয়া হাল হ্যায় প্রশান্ত, বাহারমে”? 

“Sir সব Watt লাগ্ গিয়া। পুরা Strict, সব কুছ বান্দ। এটাও একটা মুম্বাই expression। কাছা খোলা, বিপদে পড়া, পশ্চাৎ দেশে বংশ দণ্ডকে একটা ভয়াবহ মিশ্রণ করলে এই Wattএর মানে বেরোয়। ছ’ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে এই অন্নের সংস্থান করা মারাঠী মানুষটি যখন জিনিসগুলো মাটিতে রাখলো, তখন ওর উজ্জ্বল চোখের হাসি দেখে আমার Watt লেগে গেলো। আমার অবস্থার কারণে নয়, আমার বাহনের অনবদ্য প্রতিজ্ঞা যেন আজ বিরাট Wattএর আলো। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়াররা বোধহয় আলোকে Watt হিসাবেই ভাবে। আজ সুকেতু মেহতার সেই বইয়ের মলাটে লেখা, মুম্বাই শহরকে দুই কথায় প্রকাশ করা শব্দ - Maximum City-তে গৃহবন্দী হয়ে বসে আছি। শূন্যতার মধ্যে চারিদিকে সবই পূর্ণ। মুম্বাই তোমার পুণ্য হোক। 

৮ই এপ্রিল ২০২০ 



একুশ। রচেস্টার হিলস্‌, মিশিগান, ইউ এস এ। 
শকুন্তলা চৌধুরী 
বয়স ৫৭, পিএইচডি, ইকোনোমেট্রিক্স, তথ্য বিজ্ঞানী 

‘কোলাহল তো বারণ হলো’...আমার রাজ্য মিশিগান আর আমার শহর রচেষ্টার হিল্স্ গত ২৩শে মার্চ মাঝরাত্রি থেকে গৃহবন্দী, রাজ্যপাল গ্রেচেন হুইটমারের ঘোষিত বিজ্ঞপ্তির প্রভাবে। সব দৌড় গতি হারিয়েছে...শহরে নেমেছে এক অদ্ভুত ছমছমে শান্তি! 

রাস্তায় গাড়ী নেই বললেই চলে, লোকও নেই। নির্মেঘ স্বচ্ছ আকাশে আর নাতিশীতোষ্ণ রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় কিন্তু একটুও ছাপ নেই কোনো মহাদুর্যোগের! হরিণেরা অবাধে ঘুরছে পেছনের বাগানে - গাছের পাতাগুলো মুড়িয়ে খেয়ে গেলেও কেউ এখন Deer-repellent ছড়িয়ে দিচ্ছে না। আমাদের পাড়ার মাঠে সেদিন নাকি দুটো Turkey খেলা করছিলো, কেউ তাদের ধরতে আসেনি। হঠাৎ সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী হয়ে গেছে। কিম্বা মানুষ নিজের শক্তির হাস্যকর সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে থমকে দাঁড়িয়েছে। হাইওয়েগুলো বুকের ভার নামিয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছে - গাড়ী নেই। প্রকৃতি নিঃশ্বাস নিচ্ছে নিশ্চিন্তে - ধোঁওয়া নেই। আর ঘরে বন্দী মানুষের ‘এবার কথা কানে কানে’, অতি মৃদুস্বরে - যেন নিজের অস্তিত্বটাকেই লুকিয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয় ‘করোনা’ নামক অদৃশ্য এক ভয়ঙ্কর শত্রুর দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে। পৃথিবী চলছে - তবে মানুষের নিয়মে নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছায়। অসহায় মানুষ শুধু তাকিয়ে দেখছে। 

অথচ একমাস আগেও বসন্ত আসার তোড়জোড় চলছিল পুরোদমে - spring breakএ কোথায় বেড়াতে যাওয়া হবে থেকে শুরু করে Tulipএর bulb কিনে কবে মাটিতে বসাতে হবে, তার পুরো পরিকল্পনা ছিলো ছকে বাঁধা। International Business tripএ যাওয়া যাবে কিনা, এই নিয়ে অফিসে চলছিলো আলোচনা। মাত্র ১৫ দিন আগে মন্দিরের চত্বরে আবিরে গুলালে হোলিখেলা হলো রবিবারের দুপুরে। আর এখন? অফিসের কাজ বাড়ীতে, সব যাতায়াত বন্ধ, শপিং মল বন্ধ, রেস্তোঁরা বন্ধ। কে যেন মন্ত্রবলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে শহরটাকে - কোন্ রাজপুত্র এসে কবে যাদুকাঠি ছুঁইয়ে তাকে জাগিয়ে তুলবে, এখন শুধু তার অপেক্ষা! আমার ‘আমেরিকান’ মেয়েরা বলছে - “শুধু একটা vegetable curry হলেই dinner হয়ে যাবে, মা”; আর বাবার সঙ্গে বসে list তৈরী করছে যে রাজ্যে আর ক’টা পরিবারকে খাবার পাঠাতে হবে! 

১০ই মার্চ প্রথম মিশিগানে একজন করোনা রুগীকে সনাক্ত করা হয়। আর আজ, ৩রা এপ্রিল সকালে, মিশিগানে আক্রান্ত করোনা রুগীর সংখ্যা প্রায় ১০,৭৯০ - মৃতের সংখ্যা ৪১৭। ডাক্তারদের মতে মিশিগান এখনো ‘চূড়া’য় পৌঁছয়নি, আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা বাড়তে পারে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ অবধি – কিন্তু লকডাউনের কারণে বাড়ার হার কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘মোটাউন’ ডেট্রয়েটের তিনটি বৃহৎ কোম্পানী সম্পূর্ণ বন্ধ - কারখানায় গাড়ী তৈরী হচ্ছে না General Motors (GM), Ford বা Chrysler (FCA) এর। সম্প্রতি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেই কারখানাগুলোতে তৈরী হচ্ছে জীবনদায়ী ‘ভেন্টিলেটর মেশিন’, যাতে প্রতিটি গুরুতর অসুস্থ রুগীকে ‘breathing support’ দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করা যায়। হাসপাতালগুলো ভরা, তাই ডেট্রয়েট নদীর ধারের সুবিশাল ঐতিহাসিক convention center Cobo Hall (TCF Center) পরিণত হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালে। দরজা বন্ধ করেছে উচ্চমানের বিলাসবহুল দ্রব্যের দোকানে ভরা নামী শপিং মল ‘Somerset Collection’। 

১০ই মার্চ, করোনার প্রথম ঘটনা নথীবদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিশিগানের রাজ্য সরকার ‘জরুরী অবস্থা’ জারী করে এবং ১২ ক্লাস অবধি সব স্কুল বন্ধ করে দ্যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই University of Michigan এবং Michigan State University ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে ‘virtual class’এর বন্দোবস্ত করে এবং তাদের campus ছাড়ার আদেশ দ্যায়। কিন্তু রোগ ততদিনে ‘শিকল-প্রতিক্রিয়া’য় ছড়িয়ে পড়েছে। ‘নির্ধারিত’ (confirmed) রোগীর চেয়ে ‘লক্ষণবিহীন’ (asymptomatic) রোগী তখন সংখ্যায় বেশী - তাদের শুধু লক্ষণটুকু ফুটে ওঠার অপেক্ষা, কিন্তু তারা সংক্রামক। ১৬ই মার্চ, রাজ্যপালের বিজ্ঞপ্তির পর, রাজ্যের রেস্তোঁরা এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক বাণিজ্য ও অনুষ্ঠান পার্শ্বত বন্ধ হলেও কিছু কোম্পানী তাদের কাজ জারী রেখেছিলো। ২৪শে মার্চ থেকে কার্যত রাজ্যের সর্বত্র লকডাউন শুরু হয়। Michigan Army National Guard ডাকা হয় রাজ্যে জিনিষপত্রের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে, রাজ্যসরকার $125 million দান করে করোনা ভাইরাস ত্রাণ তহবিলে। লক্ষণীয় এই যে ১০ থেকে ৩০শে মার্চ অবধি করোনার বৃদ্ধির হার যেমন আশঙ্কাজনক, ঠিক তেমনই কিন্তু আশাজনক আক্রান্ত রুগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটা - মিশিগানে মৃতের হার ৪% এরও নীচে। এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে মিশিগানের ডাক্তার ও সেবাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে। University of Michiganএর হাসপাতালের ডাক্তার, সেবাকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীরা করোনার সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে যুদ্ধ করে যাচ্ছে - অনেকেই টানা ৩৬ ঘন্টা কাজ করছে, মাঝে শুধু ১৮ ঘন্টার বিশ্রাম। Drive through testingএর ব্যবস্থাও করেছে এই হাসপাতাল, যাতে সংক্রমণ না ছড়াতে পারে। এদের গবেষণাকেন্দ্রে ডাক্তার আর ছাত্ররা মিলে দিনরাত চোখ রেখেছে ভাইরাসটির ওপর, করে যাচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে Henry Ford, Beaumont এবং আরো সব হাসপাতাল। লোকের আতঙ্ক দূর করার জন্যে এবং যে কোনো সাধারণ জ্বরকে ‘করোনা’ ভেবে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে নিজেকে সংক্রামিত হতে না দেওয়ার জন্যে, এই হাসপাতালগুলো “Online Self-testing” এর ব্যবস্থাও রেখেছে। 

রাজপুত্র যে কবে আসবে সে তো জানা নেই - কিন্তু ঈশ্বরের দূত হয়ে যারা এই ভয়ঙ্কর সময়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নেমেছে, সেই সব সেনাপতিদের সেলাম। এমন এক গুহাপথে ঢুকে তারা যুদ্ধ করছে যার অন্যমুখের আলো এখনো দেখা যায়নি - কিন্তু ‘আলো আছে’ এই বিশ্বাসে তারা নিজেদের প্রাণ গচ্ছিত রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আপদকালীন বাহিনী আর ট্রাকচালকেরাও - পৌঁছে দিতে হবে সাহায্য, পৌঁছে দিতে হবে খাবার। বয়স্ক নাগরিকদের দায়িত্ব নিয়েছে কমবয়সীরা - কারণ online delivery পাওয়া কঠিন হচ্ছে, পৌঁছতেও দেরী হচ্ছে। তার সঙ্গে আছে WFABT-র মতো সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ডেট্রয়েটের সেইসব পাড়ায় যেখানে কাজ বন্ধ হলে রুটিও বন্ধ হয়ে যায়। বেকারভাতা পৌঁছনোর আগেও যে থাকে কটা দিন, আর কটা ক্ষুধার্ত মুখ! হ্যাঁ, এদেশেও! 

দৈনিক রুজিতে কাজ করা মজুর ছাড়াও, বিপন্ন আজ small business ownerরা, বিপন্ন সব চাকুরীজীবি, বিপন্ন General Motors এর মতো large business - কাজ বন্ধ, ক্রেতা নেই...’ অর্থনৈতিক মন্দা’র (economic recession) ছায়া চতুর্দিকে! প্রাচুর্য আর অপচয়ের এই দেশে কেউ আর এখন এক কণা খাবার নষ্ট করছে না, কেউ খাচ্ছে না অপরিমিত। আজ খাবার থাকলেও, কাল কি হবে জানা নেই। ব্যাঙ্কের জমা টাকা খুব একটা আশ্বাস দিতে পারছে না। কেউ নিশ্চিন্ত নয়, কেউ নয় সুরক্ষিত। 

বেকারভাতা এবং নাগরিকদের সবরকম আর্থিক সাহায্যের জন্যে বরাদ্দ হয়েছে কোটি কোটি ডলার, সব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক সাহায্য নিয়ে, প্রতিটি মানুষ নতজানু হয়ে প্রার্থনারত একে অপরের জন্যে - আজ মনে পড়েছে যে প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে সে নিজেও নিরাপদ নয়! আজ মনে পড়েছে যে ঈশ্বরের এই সৃষ্টিতে আমাদের সবার রাজা হওয়ার কথা ছিলো, অথবা সবার প্রজা - পৃথিবী কারুর একার ভোগ্যা নয়! বস্তি থেকে রাজপ্রাসাদ, মন্দির থেকে চার্চ - কোন্ এক অদৃশ্য সুতোয় যেন সবাই বাঁধা পড়ে গেছে একসাথে। চাকরি আর ব্যবসা যদি অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ থাকে, উৎপাদন আর দেশের অর্থনীতি হয় অনিশ্চিত - তবে কি সরকারী নিয়ন্ত্রণ এবং কোষাগারই হবে ধনী-দরিদ্র সবার পরিত্রাতা? এই ধনতান্ত্রিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের দেশেও? ঈশ্বরের তৈরী এই সাম্যবাদ কি পৃথিবী আগে কোনদিন দেখেছে? 

না, পৃথিবীর এখন গভীর গভীরতর অসুখ নয় – 

পৃথিবী এখন সুস্থ হবে...

‘এই পথে আলো জ্বেলে - এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে!’ 

৬ই এপ্রিল ২০২০। 



বাইশ। লাগোস, নাইজেরিয়া। 
Kaushik Saha 
53 years, General Manager, Construction Management 

The Corona scare started quite late in Nigeria with the first infection being recorded on 27th February 2020. Thereafter, the Government was awakened from its slumber and were seen to be dithering in taking stringent steps to contain the spread of the virus. As the global scare aggravated, the Federal Government finally swung into action as late as 29th March when the H.E Muhammadu Buhari, President of the Federal Republic of Nigeria in his nation-wide address declared a lock down from 11:00 PM of 30th March 2020 in three states of Nigeria viz Lagos, Ogun & Abuja. 

All non-essential offices and construction sites have been closed down and only manufacture, distribution and sale of essential FMCG goods and services, petrol stations, supermarkets and seaports are allowed. There is very limited vehicular traffic and the army has been deployed in sensitive areas. 

We are also locked up and working from our homes w.e.f 25th March as our Management had taken early cognizance of the situation and had decided to take adequate precautions to ensure the safety of all employees especially the expats. We are interacting regularly on Zoom with our colleagues and the management. Luckily the house-staff are staying in the same campus and hence are attending to daily chores. Except restrictions on movement, everything else is normal. 

Food is available as supermarkets are open from 10 am to 5 pm. Public transport is totally prohibited. Though the Government declares distribution of relief in cash and kind to the poor and daily wage earners in the locked down areas of the states, there are reports of unruly mobs vandalizing and looting grocery and electronic shops. In effect, the relief seems to be only on paper and not much credible proof is seen on the ground. 

12th April 2020 



তেইশ। লিমবুর্গ, বেলজিয়াম। 
লিপিকা ভট্টাচার্য 
বয়স ৫৬, সৃজনশীল শিল্পী 

বেলজিয়ামের লিমবুর্গ প্রদেশে আমার বসবাস। সবুজে ঘেরা শান্ত ছন্দবদ্ধ জীবনে করোনার অতর্কিত আবির্ভাবে ঘটে গেল অভাবিত ছন্দপতন। প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করার জন্য সর্বত্র মানুষের ভিড়, জিনিষপত্রের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি এবং টেলিভিশনের পর্দায় “করোনা সংবাদ”এর প্রতি চক্ষুস্থির গৃহবন্দী ভয়ার্ত মুখ ---এই হল আমাদের বর্তমান জীবনের প্রতিচ্ছবি। 

আজ অবধি এদেশে করোনা-আক্রান্ত ও প্রাণহানির উর্ধমুখী সংখ্যা যথাক্রমে ২১০০০ এবং ২০০০, আয়তনে ছোট দেশটিতে যা ভয়াবহ! মূলত মারা গেছেন বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধরা, তৎসহ স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সদের মৃত্যুও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমার দেশ ভারতবর্ষেও সংক্রামিত হয়েছে ‘করোনা’ - যেখানে রয়েছে আমার আপনজনেরা... বিশ্বের প্রায় প্রতিটি পরিবারই আজ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি! তাই ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ এবং ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’ বাক্যদুটি আজ যেন পারস্পরিক বৈপরীত্য ভুলে হাতধরাধরি করে গৃহবন্দীত্বের আড়ালে খোঁজে নিরাপত্তা....অপরদিকে এক মর্মান্তিক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন ২০২০-র জীবিত মানুষেরা! 

আক্রান্ত দেশগুলির দৃশ্যপট থেকে পূর্বাভাস পেয়ে দেশবাসীকে দ্রুত গৃহবন্দী করে সংক্রমণ রুখে দেবার তাৎক্ষণিক সরকারী প্রয়াস ও তৎপরতা এদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের জন্য ছিল অত্যন্ত সহায়ক ও ইতিবাচক ; শুধু আইন প্রণয়ন নয়, তার প্রয়োগও ছিল দৃষ্টান্তমূলক। অকারণে পথেঘাটে ঘুরলেই চার হাজার ইউরো জরিমানা অথবা কারাবাসের পুরস্কার ঘোষণা করে পথঘাট জনমানবশূন্য করতে সরকারকে একটুও বেগ পেতে হয়নি। পরবর্তী ধাপে দ্রুতবেগে জনসংখ্যার অনুপাতে রোগশয্যার আয়োজন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা এমনকি মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য বৃহৎ আকারের ফ্রিজার প্রস্তুতি, গণশেষকৃত্য---সরকারী প্রয়াসে প্রতিটি পর্যায়ই আয়োজিত হতে থাকল ‘আক্রান্ত-চিকিৎসা-মৃত্যু বা সুস্থতা’ -র মতো ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি, সমান্তরালভাবে!! 

এদেশে জনসংখ্যা কম তাই হয়ত এদেশে যা সম্ভব, ভারতবর্ষে তা’ প্রয়োগ করা কঠিন, তবু আমার ভারতীয় মন একটাই প্রশ্ন করে বারবার—আজকের এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও কি আমরা শপথ নিতে পারি না রামমন্দির-এর দেয় অর্থে পর্যাপ্ত হাসপাতাল প্রস্তুতির? সেটাই তো রামমন্দির-এর আদর্শ বাস্তবায়ন হতো! 

যে কোনও যুদ্ধের একটি ‘পরবর্তী-প্রভাব’ থেকে যায়। বিশ্বযুদ্ধের পর প্রযুক্তি-বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়েছিল। আজকের এই করোনায়ুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে বিজ্ঞানের বিশ্বব্যাপী’ গবেষণাভিত্তিক বিপ্লব ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে একথা অনস্বীকার্য। আশা রাখি, যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে মানবসভ্যতা দ্রুত ফিরে পাবে করোনামুক্ত পৃথিবী... বিবর্তিত হ’তে হ’তে এগিয়ে যাবে উত্তরণের পথে! 

৭ ই এপ্রিল, ২০২০ 



চব্বিশ। লন্ডন, ব্রিটেন। 
দীপ্ত প্রতিম মল্লিক 
বয়স ৬০, চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার 

আমার করোনা ডাইরি 

আজকের কথা 
কিছু লেখার আগে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা “ইউরোপের উদ্দেশে” কবিতার কটা লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে - 
“অনেক খাটুনি, অনেক লড়াই করার শেষে 
চারিদিকে ক্রমে ফুলের বাগান তোমাদের দেশে; 
এদেশে যুদ্ধ, মহামারী, ভুখা জ্বলে হাড়ে হাড়ে - 
অগ্নিবর্ষী গ্রীষ্মের মাঠে তাই ঘুম কাড়ে 
বেপরোয়া প্রাণ; জমে দিকে দিকে আজ লাখে লাখ - 
তোমাদের দেশে মে মাস; এখানে ঝড়ো বৈশাখ।।” 

ইউরোপে এসে সদাই মনে হতো এ যেন এক ফুলের বাগান, সদাই আনন্দ আর হাসি। কবি সুকান্তর কবিতা সার্থক। কিন্তু আজ সেই হাসি মলিন, ফুলের বাগান যেন মরতে বসেছে – এখানেও যেন ঝোড়ো বৈশাখ হানা দিয়েছে। কিভাবে? আজ সে কথাই লিখতে বসেছি। 

ডিসেম্বর ২০১৯ - শান্ত পৃথিবী 
সেদিনটা হলো ২০ই ডিসেম্বর ২০১৯। বহুদিনকার অপূর্ণ সাধ মেটাতে চলেছি। যাচ্ছি অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। থাকি ইউরোপের ব্রিটেনে, আরো বিশদভাবে বললে লন্ডনে। লন্ডন থেকে প্রথমে যাবো সিডনী- লম্বা পথ – পথে হংকং-এ প্লেন পালটাতে হয়। লন্ডন থেকে দশ ঘন্টার প্লেন জার্নির পর হংকং-এ অপেক্ষা করছি, কখন ছাড়বে পরবর্তী প্লেন- হংকং-সিডনীর। তখনই শুনতে পেলাম এক জরুরী ঘোষণা, “এক নতুন ধরনের নিউমোনিয়া হানা দিয়েছে চীনে - তাই সব যাত্রীদের সিডনীতে পরীক্ষা করা হবে থার্মাল স্ক্র্যানার দিয়ে - কারুর জ্বর থাকলে তাকে আটকে দেওয়া হবে।” 

সেই শুরু। তখনও আমরা জানি না এই অদ্ভুত রোগ হচ্ছে কোভিড ১৯ ভাইরাসের অবদান - যার পোষাকি নাম করোনা। সিডনীতে জোর চেকিং হলো, একটু চিন্তায় ছিলাম কেননা দু রাত প্রায় জেগে আর শরীরে ধকল তো কম হয়নি - কিন্তু না, জ্বর ট্বর কিছু নেই- ২৪ ঘন্টা জার্নির পরেও আমরা দিব্যি সুস্থ। 

জানুয়ারী ২০২০ - চীনে শুরু হলো করোনার দাপট 
জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে ফিরে এলাম লন্ডন। মন আনন্দে ভরপুর। এক অজানা মহাদেশ দেখে এলাম, তার ওপর সামনে অর্থাৎ এপ্রিলে বেড়াতে যাবো আর এক লম্বা পাড়ি- আমার বহুদিনকার স্বপ্ন চীন দেশে। তাই ধীরে ধীরে শুরু করছি তার প্রস্তুতি। 

কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক। দেখতে দেখতে জানুয়ারীর মাঝামাঝি এসে গেলো। ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে যে, সেই  নতুন ভাইরাস অর্থাৎ করোনা চীনের উহান শহরে থাবা বসিয়েছে। তিন চার হাজার লোক আক্রান্ত। শুধু তাই নয়, দিন দিন এই বজ্রমুষ্ঠি হচ্ছে আরো জোরদার। 

দিন এগিয়ে চলে। ইতিমধ্যে চীনে ব্যাপক ভাবে ছড়াচ্ছে করোনা। হাজার হাজার লোক আক্রান্ত। বেশ বোঝা যাচ্ছে এপ্রিলে চীন যাওয়া ক্রমেই দুরাশার দিকে এগুচ্ছে। 

জানুয়ারীর শেষ দিকে ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানিজেশন একে অতিমারী (মহামারীর আরো এক কাঠি ওপরে) ঘোষণা করতে পৃথিবীর অনেক দেশের টনক নড়ল। জানুয়ারীর শেষে বড়ো এয়ারলাইনস যেমন ব্রিটিশ এয়ার, কেএলএম, লুফথানসা ইত্যাদি তাদের সব ডায়রেক্ট ফ্লাইট বন্ধ করলো চীনের। কিন্তু অন্যান্য জায়গার ফ্লাইট কিন্তু যেমন ছিলো, রইলো তেমনই। ফলে কেউ যদি দুবাই বা হংকং হয়ে ব্রিটেন আসে, তার কোনো বাধা ছিলো না। সবাই বলছে এটা চীনের প্রবলেম, আমাদের কিছু হবে না- আমরা অনেক দূরে নিরাপদে থাকবো। হায় রে, বিধাতা তখন অলক্ষ্যে হাসছিলেন। 

১১ই ফ্রেব্রুয়ারী ২০২০ 
চীনে এখন প্রায় চল্লিশ হাজার লোক করোনায় আক্রান্ত। ডায়মন্ড প্রিন্সেস বলে একটি ক্রুজকে আটকে রাখা হয়েছে জাপানে, ওখানে নাকি করোনায় কেউ মারা গিয়েছেন। চীন ছাড়াও এখন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ইত্যাদি আশেপাশের দেশেও ছড়িয়ে গিয়েছে করোনা। আমাদের জীবন যাত্রার কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি। দিব্যি খাচ্ছি দাচ্ছি, অফিস, যাচ্ছি, বাজার দোকান করছি আর গুলতানি মারছি করোনা নিয়ে। সবাই মিলে মাঝে মাঝে অভিশম্পাত করছি চীনকে – ব্যাটারা অখাদ্য কুখাদ্য খায়, তাই এই শাস্তি ভগবানের- আমরা ঠিক আছি ও থাকবো। 

উড়ান কিন্তু দিব্যি চলছে শুধু মাত্র চীন ও আশে পাশের দু একটি জায়গা ছাড়া। আর ইউরোপের নিজেদের মধ্যে উড়ান বন্ধ করার প্রশ্ন ওঠে না - ওটাই যে ইউরোপের লাইফ লাইন। বার বার সবাই বলছে ইউরোপ চীন নয়- এখানে কিছু হতে পারে না। তা ছাড়া আমাদের মেডিক্যাল সিস্টেম অনেক উন্নত - কাজেই কোনো ভয় নেই। ভয় পেয়ে পুরো ইউরোপের আর্থিক ক্ষতি করতে সবাই নারাজ। 

২২শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ 
গোটা ইউরোপে চলছে স্কুল হলিডে, যার পোষাকি নাম “টার্ম ব্রেক”। সাধারণত এই সময় দলে দলে লোকেরা, বাচ্চারা চলে যায় উত্তর ইটালিতে বা ফ্রান্সে - উদ্দেশ্য স্কিয়িং। আলপ্স পাহাড়ের জমা বরফে স্কিয়িং করার মজাই যে আলাদা। আচমকা আজ খবর পাওয়া গেলো তিনজন প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে ফ্রান্স থেকে ফিরেছে – ডাক্তারদের কেমন যেন সন্দেহ হলো, পরীক্ষা করে দেখা গেলো ডাক্তারের সন্দেহই ঠিক - এটা করোনা। সেই প্রথম করোনার প্রবেশ ইটালিতে। তা হবে না-ই বা কেন? অজস্র লোক চীন, কোরিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে এখানে এসেছে ছুটি কাটাতে, বেড়াতে। তবে কি এ রোগ এতটাই ছোঁয়াচে? 

২৫ শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ 
টার্ম ব্রেকের পর স্ত্রী কন্যা ভারত থেকে এলো। শুনে আশ্চর্য হলাম যে লন্ডন হিথরো এয়ারপোর্টে কোনো চেকিং নেই। যারা আসছে, তারা দিব্যি ই-গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। জ্বর ট্বর চেক তো দূরের কথা - কেউ জিজ্ঞাসাও করছে না কোথা থেকে আসছো। অনেকে খুব খুশী - বললো এই হলো দেশ - ব্যাক্তি স্বাধীনতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 
ইতিমধ্যে ধীরে ধীরে মালুম হচ্ছে উড়ান বন্ধ না করার ফল। ইটালিতে, বিশেষ করে উত্তর ইটালিতে হাজার হাজার লোক করোনার বলি হচ্ছে প্রতিদিন। আমরা এখন অবাক হচ্ছি ব্রিটেন কেন তাদের সব দরজা খোলা রেখেছে। ইটালিতে আজ শ’তিনেক লোক আক্রান্ত, কিন্তু ইটালির থেকে সব উড়ান এখনো চালু। শুধু লন্ডন কেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যে যোগাযোগ ব্যবস্থা, তা কোনোটাই বিচ্ছিন্ন হয়নি। তবে কি করোনা ইউরোপে ছড়িয়ে যাবে? ইতিমধ্যে চীনে আক্রান্তর সংখ্যা ৬৭,০০০ ছুঁয়েছে, মৃত আড়াই হাজার। অতএব চীন ট্রিপ ক্যানসেল করার যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিলাম। আমার এয়ারলাইন্স কে এল এম বললো যে রিফান্ড দেওয়া হবে - তবে কতটা সেটা বিবেচনাধীন। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ লাগবে সিদ্ধান্ত নিতে। 

২৯ শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ 
ইটালীতে করোনা আক্রান্ত আজ হাজার ছাড়ালো। যার ফলে গোটা পৃথিবীর শেয়ার বাজারে নামলো ব্যাপক ধস। এক ধাক্কায় সারা জীবনের পেনশন প্রায় এক চতুর্থাংশ কমে গেলো। কমলো আরো অনেক কিছুই, কিন্তু মনে হচ্ছে আগে তো প্রাণটা বাঁচুক। 

কিন্তু আমরা আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি কেন ইটালির সাথে উড়ান যোগাযোগ আমরা রেখেছি। হয়ত বা সেটা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির ভয়ে। কিন্তু ক্রমে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে ইটালীর সাথে বর্ডার দেশগুলিতে অর্থাৎ ফ্রান্স, জার্মানি, সুইটজারল্যান্ডে। ব্রিটেনে এখন অসম্ভব জোর দেওয়া হচ্ছে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার ওপর। কিন্তু এয়ারপোর্টগুলো এখনো বিন্দাস। 

৪ ঠা মার্চ ২০২০ 
না, এখানেও করোনার প্রবেশ ঘটেছে। আজ ১১৫ জন শুধু ব্রিটেনে আক্রান্ত। ভাবছি কেন যোগাযোগ বন্ধ হচ্ছে না ইটালির সাথে বা অন্য দেশের সাথে। রোগ যে ক্রমে ইটালি ছেড়ে অন্যন্য দেশে ঢুকছে। ইতিমধ্যে স্পেনেও জাঁকিয়ে থাবা বসিয়েছে করোনা। 

অফিসে সাধারণত ট্রেনে যাতায়াত করি। আজ থেকে সেটা বন্ধ করে শুরু করলাম গাড়ি নিয়ে যাতায়াত, যাতে অপরের সাথে ছোঁয়াছুঁয়িটা কমে। আমরা কি একশো বছর পিছিয়ে যাচ্ছি? সবাইকে অচ্ছুত করে সরিয়ে দিচ্ছি? 

অফিসে পৌছে প্রথম কাজ হচ্ছে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। তারপর টয়লেট গেলে বা কফি শপ গেলে বার বার হাত ধোয়া তো আছেই। কফি শপে দেখলাম ক্যাশ আর নিচ্ছে না - কন্টাক্টলেস পেমেন্ট শুধু চলবে। আগে নিজের কাপ নিয়ে গেলে ডিসকাউন্ট পাওয়া যেতো, সেটাও বন্ধ - টেক-এ্যাওয়ে কাপে নাও - নিজের কাপ চলবে না। মোদ্দা কথা কোনো ছোঁয়াছুঁয়ি চলবে না। দুনিয়া কি পালটে যাচ্ছে? অফিসে মিটিং বন্ধ করা হলো - প্রয়োজন হলে টেলি-মিটিং করো। কাউকে কিছু বলার থাকলে, দু’মিটার দূরে দাঁড়িয়ে বোঝাও। 

দোকানপত্র এখনও খোলা। ট্রেন, আন্ডারগ্রাউন্ড রেল, প্লেন চলছে। কিন্তু এভাবে কি আমরা বাঁচতে পারবো? সরকার বলছে আমরা এখনো বন্ধ করার স্টেজে আসিনি, কেননা একবার বন্ধ হলে সেটা তিন থেকে ছ মাস চলবে - তাই আমরা সব অপেক্ষা করছি সঠিক সময়ের জন্য। একদম খাঁটি কথা, কিন্তু মন যে মানতে চায় না! 

১০ ই মার্চ ২০২০ 
সামগ্রিকভাবে বিচার করলে বলতে পারি ইউরোপে পরিস্থিতি ক্রমে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইটালিতে এখন দশ হাজারের ওপর করোনা আক্রান্ত। প্রতিবেশী দেশ স্পেন, জার্মানিতে হাজারের ওপর আর এখানে প্রায় চারশো। অসম্ভব গতিতে এগিয়ে চলেছে করোনা –  যেন একশো মিটারের রেস চলছে অলিম্পিকের। 

অবশেষে এখানে টনক নড়লো। ইটালির সমস্ত প্লেন আজ থেকে বন্ধ হলো। কিন্তু বার বার মনে হচ্ছে একটু দেরি হয়ে গেলো না? 

এই চারশো করোনা কেসের মধ্যে অর্ধেক হচ্ছে লন্ডনের। লন্ডনে একবার যখন ঢুকেছে - ছড়াতে কতক্ষণ? যেখানে হাজার হাজার যাত্রী রোজ গা ঠেকাঠেকি করে যায় - অফিস, স্কুল, কলেজ ও ব্যাবসার কাজে - এ ছাড়া আছে অজস্র টুরিষ্ট, যারা আসছে পৃথিবীর নানান দেশ থেকে - সেখানে আটকাবার রাস্তা কি? স্কুল, কলেজ, অফিস কেন বন্ধ হচ্ছে না? এর মধ্যে ভালো খবর - কিছু ভালো কোম্পানী (যেমন ভোদাফোন- যেখানে আমার মেয়ে কর্মরত) ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করে দিয়েছে। ফলে অল্প সংখ্যক লোক অন্ততঃ বেঁচে গেলো আপাতত। 

১৭ ই মার্চ ২০২০ 
আমরা যেন এক মৃত্যু মিছিল দেখতে পাচ্ছি ইটালিতে, স্পেনে, ফ্রান্সে – অজস্র লোক রোজ মারা যাচ্ছেন। কি অদ্ভুত এই রোগ – জি পি সিরিজে বেড়ে চলেছে তো চলেছেই। ইটালিতে এখন নতুন রুগীর সংখ্যা প্রতিদিন তিন হাজারের ওপর। আমাদের এখানে এখনো অতটা নয় - রোজ দুশোর ওপর। কিন্তু কটা লোকের টেষ্ট হচ্ছে সেটা সন্দেহ! এখানে বলছে জ্বর বা একটানা শুকনো কাশি হলে নিজেকে ঘরে বন্দী রাখো সাত দিন। তারপরও যদি তীব্রতা বাড়ে বা শ্বাসপ্রশ্বাসে ঘাটতি পড়ে, তখন হেলথ সার্ভিসকে ফোন করো, তবেই হবে পরীক্ষা। আসলে করোনা হয়েছে কিনা যে টেস্ট কিটে বোঝা যায় - সেটা অপ্রতুল। সরকার থেকে বার বার বারণ করা হচ্ছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরুতে। আর বেরুলেও দু’মিটার দূরত্ব রাখতে আর বারবার হাত ধুতে ইত্যাদি। বেশ বুঝতে পারছি যে কোনোদিন এখানেও লক ডাউন হতে পারে। তাই আজ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ ঘরে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছি। চাল, ডাল, তেল, নুন, চিনি, আটা, ময়দা - যা পাওয়া যায়, সাথে কিছু সব্জী, যা বেশ কিছু দিন থাকে। বাজারে প্যারাসিটামল দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে কেননা একবার করোনা হলে জ্বর কমাবার একমাত্র সম্বল এই প্যারাসিটামল। বিভিন্ন দোকান ঘুরে শেষ সম্বল বেশ কিছু প্যারাসিটামল জোগাড় করে ফেললাম। আসলে ব্রেক্সিটের ফলে ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বর্ডার বন্ধ, তাই ব্রিটেনে হয় না এমন জিনিসপত্র ক্রমে দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে এখানে। 

২০ ই মার্চ ২০২০ 
অবশেষে সরকার আজ থেকে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিলো। এটা একটা বড়ো পদক্ষেপ - কেননা ইতিমধ্যে এখানে প্রায় আটশো জন আক্রান্ত। বিকালবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন সমস্ত স্কুল কলেজ তো বন্ধই – তার সাথে বন্ধ হলো সমস্ত সোশ্যাল মিটিংয়ের জায়গা, রেস্টুরেন্ট, পাব। সরকার ঐ সব ক্ষেত্রের কর্মচারীদের জন্য ঘোষণা করলেন আশি ভাগ মাইনে, আড়াই হাজার পাউন্ড পর্যন্ত। অত্যন্ত বলিষ্ঠ এক পদক্ষেপ। সব বন্ধ থাকা মানে বিরাট আর্থিক ক্ষতি - বিশেষ করে সদ্য ব্রেক্সিটের পর এখন ছিলো উঠে দাঁড়াবার সময়। কিন্তু প্রাণ তো আগে বাঁচুক। এখন ব্রিটেনে সংখ্যাটা প্রায় ৮০০, ইটালিতে ৫০,০০০। 

২৩ শে মার্চ ২০২০ 
আজ থেকে ব্রিটেনে লক ডাউন ঘোষণা করা হলো। অফিস, কাছারী, দোকান, বাজার সব বন্ধ। একমাত্র সুপার মার্কেট, ওষুধের দোকান, অতি প্রয়োজনীয় কিছু সার্ভিস - যেমন রেল, স্বাস্থ্য, পুলিশ ইত্যাদি কিছু জায়গা ছাড়া সব বন্ধ। টিউব রেল ও ন্যাশনাল রেল চলবে, কিন্তু কম সংখ্যাতে। যে সব এসেনসিয়াল সার্ভিসের কর্মীরা আছেন, তাদের বাচ্চাদের দেখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হলো। প্রচুর আর্থিক ছা্‌ড়, ইন্টারেস্ট কম করা ইত্যাদি ছাড়াও করোনার জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ হলো। আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা রইলো সরকারের প্রতি। 

ইতিমধ্যে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। করোনা আক্রান্ত এখানে হাজার ছুঁই ছুঁই, ইটালি ৬০,০০০ - এখন দেখছি আমেরিকাতেও ছড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। 

৩০ শে মার্চ ২০২০- 
ফিরে আসি আজকের কথায় 

“একদিন একরাত করেছি প্রেমের সাথে খেলা 
এক রাত একদিন করেছি মৃত্যুকে অবহেলা। 
এক দিন এক রাত তারপর প্রেম গেছে চলে 
সবাই চলিয়া যায় সকলের যেতে হয় বলে।”- জীবনানন্দ দাস। 

আজ দশদিন হলো বাড়ীতে বন্দী। একবারও বাইরে বেরইনি। যদিও সরকার বলেছে দিনে একবার বাজার-দোকান করতে বা ব্যায়াম করার জন্য বাইরে যেতে পারো; কিন্তু বিনা কারণে বেরলে ফাইন, এমনকি জেলও হতে পারে। কিন্তু তার জন্য নয়, নিজেকে, নিজের পরিবারকে আর সর্বোপরি দেশকে বাঁচানোর জন্য ফ্ল্যাটের চৌহদ্দিরে বাইরে যাওয়া নেই। আমি নয়, সবাই এই নির্দেশ মানছে - অক্ষরে অক্ষরে। এখানেই ব্রিটেনের জয়জয়কার - নিয়ম মেনে চলাটা এখানে নিয়ম। এই সংযত বন্দী জীবনে মাঝে মাঝেই হতাশা এসে গ্রাস করে – কিন্তু না - আর মাত্র কটা মাস - এই কথা ভেবে মন রাখি শক্ত। ওয়ার্ক ফ্রম হোম, টিভি ও বিভিন্ন এ্যাপ যেমন হইচই, আমাজন, নেটফ্লিক্স এরাই এখন সঙ্গী, এরা মনে অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আছে গল্পের বই ও ফোন। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ লোক করোনা আক্রান্ত হয়েছে বা হয়েছিলো। ব্রিটেনে সংখ্যাটা কুড়ি হাজার ছাড়িয়েছে - এখন এখানে রোজই দুই থেকে তিন হাজার নতুন রুগী আসছে। অজস্র নতুন হাসপাতাল খোলা হয়েছে কিন্তু এখনো প্রয়োজনের তুলনায় তা সীমিত। শুনছি এই সপ্তাহের পর অজস্র করোনা টেস্ট কিট আসছে। আর যাই হোক, আমরা ইটালি যেন না হই, যেখানে এক লাখ লোক ধুঁকছে আর এগারো হাজার লোক মৃত। এ রোগে মরলে পরিবারের কেউ ডেডবডিও পাবে না - পাছে অন্যদের সংক্রামিত হয়। তাই রোগের বিরুদ্ধে অজস্র পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে - সরকারের পক্ষে, আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে, কিন্তু সময়ই বলবে আমাদের কি পরিণতি। আপাতত দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে চলা - এ আমাদের সবার বাঁচার লড়াই শুধু নয়, এ হলো গোটা পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। 

৩০ শে মার্চ , ২০২০ 



পঁচিশ। শিকাগো, ইউ এস এ। 
রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায় 
স্কুল শিক্ষয়িত্রী 

শিকাগোর স্থানীয় কাগজ The Chicago Tribune .তাতে হেডলাইন দেখলাম, 'The Sun Is Out Chicagoans In.' বেশ আশ্চর্য ব্যাপার সত্যি। মেঘ হাওয়া আর বরফের এই রাজ্যে সূর্যের আলো ঝলমল একটি দিন মানে উৎসবের দিন। শিকাগোবাসীদের জন্য প্রকৃতির বিরল উপহার। এমন দিনে ঘরে থাকাই দায়। লেক মিশিগানের ঝকঝকে নীল যেন হ্যামিলিনের বাঁশি। হাতছানি দিয়ে ঘরের বাইরে সে টেনে নিয়ে যায় মানুষকে। জলের ধারে হাসি খেলা আর হৈ হুল্লোড়ের মরশুম এটা। 

কিন্তু মহামারী আক্রান্ত শহরে আজ বাস্তব কিছু অন্যরকম। মানুষ গৃহবন্দী। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা নয়, তা ঠিক করার স্বাধীনতা তাদের হারিয়ে গেছে প্রায় মাসখানেক হল। এক অজানা চরিত্রের অণুজীবের আক্রমণ স্বাভাবিক জীবনযাপন পর্যুদস্ত। বন্ধ স্কুল কলেজ। রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, লাইব্রেরি, ব্যায়ামখানাও খোলা নেই আর। দিন চলছে। বেশীরভাগ বাড়ীতে এক চিত্র -খোলা ল্যাপটপের সামনে চাকুরিজীবী মা, বাবা। ছেলেমেয়েরা কখনো বা বৈদ্যুতিন পর্দার সামনে , কখনো বা একা একাই ছুটছে, খেলছে বা চালাচ্ছে সাইকেল (স্থানীয় লোকেরা বলে বাইক) . উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে রাত। পরিসংখ্যান বলছে এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ নাগাদ এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছবে। তাই এ কদিন বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। 

আশার কথা শিকাগোবাসী সচেতন হয়েছে। সংবরণ করেছে শীতঘুমের শেষে গায়ে বসন্ত রোদের সোনার কাঠি ছোঁয়ানোর ইচ্ছে। দোকান বাজারে খাবার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। নিয়ম মেনে ছফুট দূরত্বে লাইনে দাঁড়াচ্ছে লোকজন। হাসপাতাল ও ডাক্তারদের অফিসে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে পুরো মাত্রায়। সাধ্য মতো কাজ করে চলেছেন সব পেশার মানুষেরা। লড়াই চলছে। মহামারীর মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন সকলে। ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছে তোলা আছে শিকেয়। সমষ্টির কল্যাণ কিসে সে ভাবনা প্রাধান্য পাচ্ছে ধীরে ধীরে। মনে আশা এ দুঃসময় কেটে যাবে একদিন। কেমন আছি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলি, খারাপ আছি - এ অভিযোগ নেই। সুস্থ শরীরে বেঁচে আছি - এই তো অনেক। নাই বা হল উৎসব, অনুষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা! আমার নিঃসঙ্গ হাঁটাপথ ধরে চলতে চলতে ভাবি একদিন দেখা হবে তোমায় আমায়। দেখা হবে 'অন্য গানের ভোরে।' আবার খোলা হবে ইচ্ছে খাতা। ভাবী প্রজন্মকে গল্প বলব আমরা। মহামারী তখন বেঁচে থাকবে শুধু স্মৃতিতে। 

৮ই এপ্রিল ২০২০। 



ছাব্বিশ। সাও পাওলো, ব্রাজিল। 
Simone Homem de Mello 
Age 40 years, Author 

I live in Sao Paolo(Brazil) and work as an author, a literary translator director of a Centre for Research in Translations. This centre is a wing of the Literature Museum, funded by the government. Since Sao Paolo is the epicentre of the Pandemic in Brasil, all museums are closed, since last two weeks and my home has become my work station. Quite interestingly, the quarantine did not help people to lead a quiet, secluded life. On the contrary, people immediately switched over to online classes, official work, lectures by professors, virtual cultural programmes, yoga and sports training and even meeting friends. Apps like Google Meet, Zoom, Telegram, WhatsApp are in huge demand now. It would have been worthwhile, if people had secluded themselves from hullabaloo and introspected the time. But the concept of capitalism does not know the meaning of 'delay'. 

2.04.2020 



সাতাশ। সিঙ্গাপুর। 
Anup Kar Choudhury 
Age 63, Chartered Engineer 

How are we doing during this period? 

We are family of three. 
I am working from home. Singapore Government instructed all companies to work from home effective 7 April. Till last week I was going to office on alternate dates (office staffs were arranged in two groups). 

My Wife: Full time home maker. She is going to markets to purchase all food stuffs for daily consumption plus other house-hold requirements. We are habituated to take home cooked foods even during normal time. Occasional visit to restaurant for a change is totally stopped now. Part time maid is not available in Singapore. One must hire full time residential maid. Since we don’t have that, her time is fully occupied with household works with some assistance from me and my son. 

My son: He is also working from home. He is concurrently studying his Masters. His classes are on weekend and fully on-line now including exams. 

How are Singaporeans? 

The scenario is changing rapidly. Schools (primary and secondary) were open till yesterday. From today (7 April) all schools switched over to on-line teaching. Colleges made this switch over (on-line teaching) since last couple of weeks. 

Couple of weeks back Government issued Orange Alert (due to Covid 19). People got panicked and there were long ques in markets and medicine shops. Items on super demand were dry food stuffs (rice, oil, eggs, noodles to name a few), fruits, hand sanitizers, masks, anti-bacterial sprays, toilet napkins etc. 

In general situation is gloomy. Despite of good contact tracing, quarantine monitoring, number of infected people are increasing. Scary part is off late number of unlinked infected people increasing quickly which prompted government to escalate to next level of preventive actions which is effective from today (7th April). 

I want to share experiences of two victims about their tell-tale signs prior to get confirmed that they are infected. This is simple check which we all can do on daily basis. Hope this would be helpful. 

https://www.channelnewsasia.com/news/singapore/covid19-singapore-couple-uk-ncid-mild-symptoms-12606966 

https://www.straitstimes.com/singapore/health/coronavirus-i-feel-extremely-lucky-to-be-here-says-pr-with-covid-19-in-sgh 

How is Singapore fighting against Covit 19? 

As mentioned above, Government has taken drastic step which is effective from 7 April. Even construction works are all stopped. 20,000 workers are quarantined in their dormitory. Exclusions – essential services which include wet markets, superstores, medicine shops, hawker centres (for food), eateries, Train and Bus services. People are advised to stay home, not to loitering or gossiping outside. Even visiting elderly people including aged parents are discouraged because they are vulnerable. Exercising in neighbourhood parks are allowed. 

Government has given all citizens normal masks, reusable masks, hand sanitizers (one time). Each Singaporean above 19 years age, will get S$600/- as interim help. In additions there are some other reliefs announced by Government for individual. 

At corporate level also, Government has given tax reliefs, rental reliefs and some aids to SMEs etc. 

I am attaching below a link from local newspaper which gives in detail what can be done during this period. 

https://www.straitstimes.com/singapore/a-new-normal 

I also take this opportunity to attach recorded live broadcast of Singapore PM delivered on 3rd April at 4.00 pm. 

https://www.youtube.com/watch?v=adA6_PnIUuA 

In Conclusion: 

As responsible citizen, we should do our part with due diligence - Stay at home. Things are not at all normal as we perceive presently. 

Lessons learnt from other parts of the world – China, Italy, Spain, US etc. All of them took it lightly initially and paid (and still paying) a heavy price. 

07.04.2020 



আঠাশ। সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। 
Prosenjit Basu 
Age 61, Chartered Engineer 

Question. 1 
We are living in Australia and doing fine. Some family members working from home and others working out of home. 

However, myself my family and everyone else in the country I live are passing through a dangerous time. I forgot to add the world which is in peril too. My son says this is one in 100 year event. But this is 21 st century. Cannot accept that the world was not prepared for this calamity. 

Question 2 

We live in New South Wales, one of the largest states in Australia. Right now total number of cases is nearing 4800 in Australia alone. In NSW it’s 2182. In total 230000 people have been tested, 20 fatalities, mainly older people and number of people in ICU much less than other countries. Our graph has slightly flattened but winter is just one month away so we don’t know to what extent the virus will spread.

Don’t know what to say but having following this event from the beginning and after the treachery of China that is now exposed I am trying my best to find out how we can get out of this mess. 

We are suffering because of a unholy nexus between capitalism and communism (supposed to be extinct). 

I am blaming both the west and china 

Statistics from Australia show there should not be cause of terrible alarm but this virus is so contagious and dangerous that everyone in their innermost mind is probably not normal.We are following govt instructions: 

• Wash hands for 20 secs with soap thoroughly and frequently 

• Maintain social distance of 1.5 metres 

• Only go out of home for essential activities. 

Many people in this city honestly responded to the government appeal except many idiots in the northern, eastern, CBD and far northern suburbs. The virus spread because of them partying and madly socializing. They put the entire country at risk. The govt acted slowly. But now police & army has been given special powers. 

Hopefully things improve but majority of the people are more worried about economy than the virus. 

Question 3 

As I explained before, majority of the people are obeying orders. Many older people are facing problems because extremely selfish people are stockpiling foods from supermarkets. There is no shortage of food by the way. Now the big grocery chains have limited per person the number of particular items they can buy. 

People are confined to their homes with their closest ones, only going out for essential activities. About 30000 employees are working from home as thousands of offices are made vacant. Thanks to digital revolution the digital economy is alive and well. 

Marriages are taking place with only 5 attendees including the bride & groom. Others are hooked up on to a cloud service that relays live the marriage ceremony. Visitors who otherwise would be going to the ceremony are sitting in front of their computers and watching. 

Thousands of businesses have collapsed. It’s like a heart attack. Everything was going on fine. Then suddenly from Wuhan arrived this “death made in China”. 

China did not share information with WHO, allowed the virus to spread and then let 5 million of Chinese leave Wuhan at a time when many of them were infected. These people spread throughout the world and the rest is known. 

In 1970 the USA in order to counter Soviet Union began an unholy love affair with China after Mao’s cultural revolution failed and China was finished. Richard Nixon & Henry Kissinger started the infamous ping pong diplomacy. That is China whose military history was awful. They were smashed by Japan, British humiliated them in Hong Kong and in 1969 the Soviets hit them so hard that Mao got a big lesson. Once upon a time Stalin’s servant who got a bit clever. In late 1970’s Vietnam smashed them. 

China’s military success was against innocent Lamas of Tibet who were fighting with sticks. 

Of course India cannot forget the whipping they got from China mainly because at that time India was ruled by a demoralised female who name is Nehru. 

So this china, a new China under Mao gradually became the source of billion dollar business for multinational companies. China was producing and still produce cheapest products in the world thanks to the dictatorial system under which many peace loving Chinese still suffer. Major cities in the West gradually lost business to China. Unemployment rose but US share market boomed. Democratic morality was the backbone principle on which Cold War was fought but now thrown into the bin. The West was happy to see a wealthy China for their own benefit. 

For many years now many countries in the developed world are in debt while china prospered. And when China should have contributed they failed. WHO was not informed in the beginning when a new virus, COVID 19 hit Wuhan. The rest is history. 

We don’t know when this virus will be kind to us and leave us alone. May be we should respect it and stay away like social distancing and follow government instructions. 

When things (do not know when) become normal the world will seek an answer from China and should. 

01.04.2020 



উনত্রিশ। হায়দ্রাবাদ, ভারত। 
ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্ত্তী 
বয়স ৬১, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার 

যুদ্ধটা অবশেষে হায়দ্রাবাদে শুরু হয়েই গেল।
বিশ্বায়নের যুগে শুধু রোম শহরটাই পুড়বে তা তো হয় না, তার আঁচ তো সারা বিশ্ববাসীর গায়েই লাগবে, এটা বাস্তব। তাই শতকরা হিসেবে ভারতীয় অভিবাসীর প্রায় এক তৃতীয়াংশই যখন তেলেগু, তখন করোনা যে তেলেঙ্গানা রাজ্যকে ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে বিবেচনা করবে, সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই। 

করোনা ভাইরাসে প্ৰথম মৃত্যুর পর তেলেঙ্গানা সরকার নড়েচড়ে বসেছে ঠিকই তবে পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাল্প হবার ফলে আশানুরূপ ফল যে পাওয়া যাচ্ছে না, সেটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। 

তবে সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালগুলোকে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালকে জরুরিকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সরকারের তরফ থেকে ক্রমাগত প্রচার চালানো হচ্ছে করোনা রোগ প্রতিরোধের জন্য কী করা উচিৎ এবং উচিৎ নয় - সেই বিষয়ের ওপর। মাইক হাতে পুলিশ, করপোরেশন, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী সবাই এই কাজে নেমে পড়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর যাতে কোনো অভাব না ঘটে এবং সেটা নিয়ে যাতে কালোবাজারি না হয় সেইজন্য  মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে ট্রাক ভর্তি করে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়মিতভাবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

প্রয়োজনে হেল্প লাইনে কল করে এই ব্যবস্থার সুযোগ বহুতলবাসীরাও নিতে পারছেন। এই প্রচেষ্টা আশানুরূপ ফল দিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় শাক-সব্জী এখনও পর্যন্ত শুধু সহজলভ্য - তাই নয়, দামও নাগালের বাইরে যায়নি। 

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ধর্মীয় প্রার্থনাগৃহগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। 

মাইগ্রান্ট ওয়ার্কারদের জন্য আইসোলেসন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে যেখানে স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়মিতভাবে প্রশাসনকে সাহায্য করে চলেছেন। 

এছাড়া সরকারি অর্থ সাহায্য এবং দু-বেলা রান্না করা খাবার ব্যবস্থা দিনমজুরদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। 

সকাল ছটা থেকে সকাল দশটা পর্য্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাকি সব দোকান বাজার বন্ধ থাকার আদেশ জারি করা হয়েছে। 

এই সকল নির্দেশ এবং আদেশ কড়াভাবে মেনে চলার জন্য সরকারি প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় 24x7 কাজ করে চলেছে। কোথাও কোনও নির্দেশ ভঙ্গের নিদর্শন পেলেই পুলিশ বাহিনী লাঠি ব্যবহারে পিছপা হচ্ছে না। 

সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী কড়াভাবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রেস কনফারেন্স করে বলে দিয়েছেন যে, তেলেঙ্গানা সরকার তার সকল শক্তি নিয়ে করোনা যুদ্ধে সামিল হয়েছে। এই যুদ্ধে যাঁরা সরকারি গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ অমান্য করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনে shoot at sight আদেশ জারি করার কথা বিবেচনা করতে দ্বিধা করবে না। 

এই সকল প্রচেষ্টার মাধ্যমে তেলেঙ্গানা সরকার শক্ত হাতে করোনা ভাইরাসরূপী মহিষাসুরের শিং দুটি সরাসরি ধরে তাকে জব্দ করার লড়াইটা জারি রেখেছেন - সম্রাট নিরোর মতো যন্ত্র সঙ্গীত চর্চায় নিজেদেরকে মগ্ন রাখেনি। 

৫ই এপ্রিল ২০২০। 



সংকলন-সহায়তায় – 
সুলগ্না মুখোপাধ্যায়, অমিত কুমার চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা দেব, শান্তনু ঘোষরায়, অভীক চৌধুরী।

0 comments: