অনুবাদ সাহিত্য - সুলগ্না মুখোপাধ্যায়
Posted in অনুবাদ সাহিত্য
মৃত্যুর গান
মূল কবিতা: Todesfuge
কবি: পাউল সেলান
ভোরের বিষ দুধ আমরা পান করি সূর্যাস্তে
আমরা পান করি দুপুরে আর সকালে আমরা তাকে পান করি রাতে
আমরা পান করি আর আমরা পান করি তাকে
আমরা হাওয়ায় খুঁড়ি কবর সেখানে মানুষ শোয় না গায়ে গায়ে
একটা লোকের বাস বাড়িটায় সে সাপেদের সঙ্গে করে খেলা সে লেখে
সে লেখে যখন মার্গারেটে-এর সোনালী চুল বেয়ে সন্ধ্যা নামে
জার্মানিতে
লোকটি লেখে আর দরজার বাইরে এসে দাঁড়ায় আর তারারা চিকচিক করে সে
শিস দিয়ে ডাকে তার পোষা কুত্তার দলকে
তার ইহুদিদের ডাকে শিস দিয়ে পৃথিবীর বুকে এক কবর খনন করায়
আমাদের আদেশ করে নাচের জন্য তৈরি হতে
ভোরের বিষ দুধ তোমাকে আমরা পান করি রাতে
আমরা পান করি সকালে দুপুরে আমরা পান করি তোমাকে সন্ধ্যায়
আমরা পান করি আর আমরা পান করি তোমাকে
একটা লোকের বাস বাড়িটায় সে সাপেদের সঙ্গে খেলা করে সে লেখে
সে লেখে যখন মার্গারেটে-এর সোনালী চুল বেয়ে সন্ধ্যা নামে
জার্মানিতে
সুলামীথ তোমার ভস্ম হয়ে যাওয়া চুল আমরা হাওয়ায় খুঁড়ি কবর সেখানে মানুষ শোয় না গায়ে গায়ে
সে মর্ত্যভেদী চিৎকার করে ডাকে তোমাকে তোমাদের একজনকে অন্যরা গান গায় আর খেলে
কোমরের বেল্ট-এর লোহায় হাত রাখে সে দোলায় তাকে নীলবর্ণ তার চোখ
তোমাদের কোদাল দিয়ে আঘাত হানে তোমাদেরই তোমাকে অন্যরা খেলে চলে
নাচের জন্য
ভোরের বিষ দুধ আমরা তোমাকে পান করি রাতে
পান করি তোমাকে দুপুরে সকালে আমরা পান করি তোমাকে আমরা তোমাকে পান করি সন্ধ্যায়
আমরা পান করি আর আমরা পান করি তোমাকে
একটা লোকের বাস বাড়িটায় তোমার সোনার চুল মার্গারেটে
তোমার ভস্ম হয়ে যাওয়া চুল সুলামীথ সাপেদের সঙ্গে খেলা করে সে
সে ডাকে সুন্দরভাবে বাজায় মৃত্যুর ধ্বনিকে মৃত্যু নামক প্রভুটি
জার্মান
সে ডাকে বেহালার আওয়াজের থেকে জোরে তোমরা তারপর তোমরা ধোঁয়ার মতন হাওয়ায় যাও মিলিয়ে
তখন তোমাদের কবর মেলে মেঘের মধ্যে সেখানে মানুষ শোয় না গায়ে গায়ে
ভোরের বিষ দুধ আমরা তোমাকে পান করি রাতে
আমরা পান করি তোমাকে দুপুরে মৃত্যু নামক প্রভুটি
জার্মান
আমরা তোমাকে পান করি সন্ধ্যায় ও সকালে আমরা পান করি আর পান করি
মৃত্যু নামক প্রভুটি জার্মান নীলবর্ণ তার চোখ
সে তোমাকে গুলিবিদ্ধ করে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না সে
একটা লোকের বাস বাড়িটায় তোমার সোনালী চুল মার্গারেটে
তার পোষা কুত্তার দলকে সে দেয় লেলিয়ে আমাদের দিকে বাতাসে কবর উপহার দেয় আমাদের
সে সাপেদের সঙ্গে করে খেলা আর স্বপ্ন দেখে মৃত্যু নামক প্রভুটি
জার্মান
তোমার সোনালী চুল মার্গারেটে
তোমার ভস্ম হয়ে যাওয়া চুল সুলামীথ
কবি পরিচিতি:
১৯২০-এর ২৩-শে নভেম্বর রোমানিয়ার চেরনাউতি-তে এক ইহুদি পরিবারে জন্ম কবি পাউল সেলান-এর । জন্মের পরে তাঁর নাম রাখা হয় পাউল আনচেল। ১৯৪১ সালে নাৎসিরা এবং তাদের রোমানিয়ার প্রতিনিধিরা চেরনাউতি আক্রমণ করে ও ইহুদিদের সিনাগগ জ্বালিয়ে দেয়। ১৯৪২ সালের এক রাতে ইহুদিদের দ্বীপান্তরিত করা শুরু হয় । পল তাঁর মা-বাবাকে পরামর্শ দেন দেশ ছেড়ে চলে যেতে।ওই মাসের ২৩ তারিখে তাঁদের দ্বীপান্তরিত করা হয়। সেই সময় পল বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাবা দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যান এবং তাঁর মা-কে গুলি করে মারা হয়।
১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পল সেলান ছিলেন বুখারেস্ট -এ। ১৯৪৭-এ যখন কম্যুনিস্টরা রোমানিয়ায় ক্ষমতায় আসে, পল পালিয়ে যান প্যারিস-এ। ১৯৫২-এ কবি হিসেবে তাঁর খ্যাতির শুরু। বুয়তীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ তখন। জার্মানির গ্রুপ ৪৭-এর তিনি যান জার্মানিতে তাঁর কবিতা পড়তে। সেখানে তিনি পড়েন তাঁর কৰিতা Todesfuge (মৃত্যুর গান)। শ্রোতার মনকে নাড়া দিয়ে যায় কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প-এর ওপরে লেখা এই কবিতা। ১৯৫৮-এ পল সেলান সম্মানিত হন Bremen Literatur Preis -এ এবং ১৯৬০-এ পান Georg Buechner Preis -এ। তাঁর লেখার মধ্যে বারে বারে ফিরে এসেছে হলোকস্ট-এর ছবি। ১৯৭০ সালের বিশ-এ এপ্রিল, প্যারিস-এর সেইন নদীতে ঝাঁপ নিয়ে নিজের জীবনের অবসান ঘটান পল সেলান।
অসাধারন
ReplyDelete