1

বইপোকার বইঘর - অনিন্দিতা মণ্ডল

Posted in

এক একটি বই পড়তে গিয়ে বারবার ফিরে ফিরে আসতে হয়। লেখক যেন একই কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে দেখছেন। সময়কাল ইতিহাস ভবিষ্যৎ সব মিলেমিশে যায়। এবারের আলোচ্য বইটির নাম দ্য হ্যান্ডমেডস টেল। লেখিকা মার্গারেট এটউড। পঁচাশি সালে লেখা বই এখনো কী নিদারুণ প্রাসঙ্গিক! গল্পটি বলছে একটি মেয়ে। যে এক অদ্ভুত রাজনৈতিক স্বৈরাচারে বন্দী। সদ্য আমেরিকায় গণতন্ত্রের পতন ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট খুন হয়েছেন। সঙ্গে কংগ্রেস সদস্যও। ক্ষমতার দখল নিয়েছে সন অব জেকব নামের একটি সংগঠন। অত্যন্ত গূঢ় রূপকের দ্বারা লেখিকা প্রতিষ্ঠা করেছেন এক চিরন্তন অত্যাচারের ইতিহাস। যা অতীত ছেড়ে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে ছেয়ে গেছে। এই সন অব জেকব সংগঠন শক্ত হাতে মেয়েদের সমস্ত অধিকার কেড়েছে। ভালোবাসার অধিকার অবধি। মেয়েরা যেন যন্ত্র। কখনো তারা সিস্টেমের নিয়ম ধরে রাখে। কখনো তারা অন্য নারীর শাস্তিবিধানের নিয়ামক হয়। এ সমস্তই ঘটে ধর্মের নামে। এরই মধ্যে দেখা যায় নারীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যবহার। উর্বর নারীকে শুধুমাত্র জননের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা বেশিরভাগ সময়ে একধরনের ডিলিরিয়ামে ভুগছে। একধরনের হ্যালুসিনেশনের শিকার হচ্ছে। তাদের অতীত স্মৃতি ধরে রাখতে অনবরত রোমন্থন চলছে। পাঠক যেন এই অদ্ভুত ছিন্ন ভিন্ন পাঠে ডুবে যেতে থাকে। অন্ধকার ঘিরে ধরে। মনুষ্যত্বের এই নিদারুণ অপমানে চেতনা যেন জড় হয়ে যেতে থাকে। আর ঠিক তখনই এটউড দেখান, এই ভীষণ তালিবান শাসনের প্রধান প্রধান নেতৃত্বও অনেক সময়ে এই ব্যবস্থাটা মেনে নিতে পারেনা। ধীরে ধীরে কঠিন নিশ্ছিদ্র শাসনে চিড় ধরে। অন্ধকার ভেদ করে আলোর রেখা দেখা যায়। এই কারণেই এই লেখাটিকে ওয়ার্ক অফ ফিকশন বলা চলে। কারণ বাস্তবে এত অদ্ভুত উত্তরণ এত চমৎকার নিষ্ক্রমণ ঘটে ওঠেনা। 
তালিবানি শাসন বলার নির্দিষ্ট কারণটি বলি। এটউড ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। তিনি অতদিন আগেই অনুভব করেছিলেন আমাদের বিশ্বের বর্তমান অতিদক্ষিণ ধর্মভিত্তিক শাসকদলগুলির প্রাধান্য। কাহিনীর মধ্যে তিনি বুনে দিয়েছেন সেই শ্বাসরুদ্ধকর দিন ও রাত্তির। 
তবু আশা জাগে। একদিন নাম খোয়ানো মেয়েগুলো আবার ফিরে পাবে অস্তিত্ব। শুধু স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসবে সাদা থলে দিয়ে ঢাকা মাথা সেইসব ছেঁড়া কাপড়ের পুতুলের মতো মৃতদেহগুলো। দেওয়ালে যাদের টাঙিয়ে রাখা হয়। সাদা থলের মধ্যে যাদের মুখ থেকে গড়িয়ে আসা রক্ত একটি সূক্ষ্ম হাসির রেখা এঁকে দেয়। যেন শাসককে বলে, তোমরা জেতোনি। জিততে পারো না। আমরা আশায় বুক বাঁধি। 
শেষে বলি, এ বই একটি অবশ্যপাঠ্য বই।

1 comment:

  1. সত্যিই অবশ্যপাঠ্য । এই আখ্যানের বয়ন দেশকালের সীমা ছাড়িয়ে যায় । আমরা চোখ কুঁচকে চারপাশে ভাল করে তাকাতে শুরু করি ।

    ReplyDelete