0

গল্প - তপন চক্রবর্তী

Posted in

ইদানীং আমার শরীর ভাল যাচ্ছে না। অল্প জ্বর আর সর্দি। রাতে খাবারের পর বারান্দায় এসে বসলাম। পুরনো কলকাতার এই পাড়ায় প্রমটারদের দৌরাত্ম এখন শুরু হয়নি। দক্ষিণের আকাশ পুরটাই আছে এখনও। এই বারান্দার অনেক স্মৃতি। বিয়ের পরে পরেই এই বাড়ীতে চলে আসি। আমি আর সুধা। কত রাত কাটিয়েছি দুজনে এই বারান্দায়! দক্ষিণের হাওয়া, প্রচুর গাছপালা, নির্জনতা – এই বাড়ীটা প্রথম দিন থেকেই আমাদের ভাল লেগেছে। 

আমাদের একমাত্র মেয়ে পিউ বিয়ের পর অনেক দূরে চলে গিয়েছে। কলকাতায় আসতেই পারেনা। মাস দুয়েক আগে সব কাজ ফেলে এসেছিল একবার। তারপর থেকে প্রত্যেক দিনই ফোনে কথা হয়।আজ ফোন করেনি – কি জানি, আমাদের নাতনীকে নিয়ে কোন সমস্যা কি না!নাতনী ‘অটিজম্‌” এর শিকার।কষ্ট লাগে।আমার সমস্ত সুবিধা অসুবিধার কথা সুধা জানে।বিয়ের পর থেকে গত পঞ্চাশ বছর জীবন যুদ্ধে সে আমার পাশে সব সময়। চাকরীর খারাপ দিনগুলির কথা মনে পড়ে। সুধা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। কষ্ট স্বীকার করেছে আমার সঙ্গে।আপাত রুক্ষ। কিন্তু অন্তরে ভীষণ কোমল। এ আমি বুঝতে পারি। বিশেষ করে আমার বার্ধক্যের এই দিন গুলিতে। 

রাত কত হ’ল খেয়াল নেই। কখন সুধা এসে দাঁড়িয়েছে বারান্দায় – টের পাইনি। ‘এত বয়স হ’ল তোমার, সাধারণ বুদ্ধিটাও হ’ল না! হায় কপাল! অসুস্থ শরীরে বারান্দায় ঠাণ্ডা হাওয়াতে বসে আছ? যাও, শুতে যাও। চাদর গায়ে দিয়ে শোবে।’ বিছানায় যেতে যেতে শুনি সুধা বলে চলেছে – ‘যা ঘুমের ছিরি তোমার! চাদরটা গায়ে থাকলেই হয়’। 

দুশ্চিন্তার মধ্যে ঘুম হ’লনা ঠিক মতন। মেয়ের কথা মনে পড়ছে বার বার। কি বিপদে পড়ল, কে জানে। গত দু মাসে একদিনও বাদ যায়নি – প্রত্যেক দিন টেলিফোনে কথা হয়েছে, সব কিছুর খোঁজ খবর নিয়েছে। আজ টেলিফোন করলো না কেন? 

সকালে চায়ের টেবিলে মেয়ের টেলিফোন – ‘কাল একটুকুও সময় পাইনি, বাবা, তোমাদের নাতনীকে নিয়ে মেডিকেল চেক্‌আপ এ গিয়েছিলাম। সারাদিন লেগে গেল। তোমার জন্যে চিন্তা হচ্ছিলো। তোমার শরীর এখন কেমন? জ্বর কি এখনো আছে? ওষুধপত্র ঠিক মতন খাচ্ছ তো? গত দুমাস থেকে আমার যত দুশ্চিন্তা তোমার জন্যে।জানো বাবা, মা বেঁচে থাকলে আমার তো কোনও চিন্তাই হ’তো না। মা তোমাকে যে ভাবে যত্ন-আত্তি ক’রতো, তোমার সব ব্যপারে খেয়াল রাখতো সে তো আমি দেখেছি ছোটবেলা থেকেই – পিউ কথা বলেই চলেছে। আমি শুনছি। শুধু বলিনি যে তোর মা এখনো আমার দেখ্‌ভাল করে। সব ব্যাপারে খেয়াল তার – কাল রাতেও এসেছিল।

0 comments: