3

ছোটগল্প - উত্তম বিশ্বাস

Posted in


ছোটগল্প


জলংগীর ফেরিঘাট আর নীলকণ্ঠ পাখির গল্প 
উত্তম বিশ্বাস


কথাটা এইভাবে রাষ্ট্র হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি পুলু। বাবা কোর্ট থেকে সবে ফিরেছেন। মোহিতের মুখপানে একবার তাকিয়েই সব বুঝতে পারে হরিদাসী। এখন কিছু তো একটা তাকে বলতেই হয়, “জলংগীর মাঝি-মল্লাগুলোরও বড্ড ঠোঁট পাতলা! নালিশ করবি যখন লায়ে তুললিই বা কোন আক্কেলে? পয়সা তো আর চার আনা কম নিসনি!” কিন্তু না, হরিদাসীর সুতো ভেজানো কথাতেও যেন কিছুতেই মোহিত কুমারের মনকে টলানো গেল না! তিনি বাঘ্র গর্জন দিতে দিতে এগিয়ে এলেন, “চাটুজ্জ্যে বাড়ির ছেলে হয়ে এসব! জলংগী ঝাঁপিয়ে ছোলা চুরি করতে গেছো কিনা মুসলমান জোলাদের ক্ষেতে? এ বাড়ির গাধাদেরও বোধহয় এতটা ছোলার লোভ নেই!” 
“আহা! থাক না মোহিত! বাছাটি আমার ঠাণ্ডায় ঠকঠকিয়ে কাঁপছে! এখনই ঘরে তুলে যদি হাতে পায়ে সেঁক না দিই, নিমোনিয়া হয়ে যাবে যে!” 
“তুমি থামো পিসি! তোমাদের আস্কারাতেই ওরা আজ এদ্দুর! সমুকেও আজ বাইরে খালি গায়ে দাঁড় করিয়ে রাখব! কোথায় সে?” 
সিংহের পা নিয়ে দাদু সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে নীচে নেমে এলেন। গড়গড়ার ধোঁয়াটুকু মোচড়ানো গোঁফের ওপর উড়িয়ে ভারী গলায় বললেন, “হরিদাসীকে ধমক দিয়ে লাভ নেই মোহিত। তুমি যাও, আমি দেখছি, কী শাস্তি পুলুকে দেওয়া যায়!” 
দাদুর মুখে শাস্তির কথা শুনেই পুলুর ভেতরটা খানিকটা হলেও হালকা হয়ে গেল। দাদু এলে বাবা আর কথা বলেন না। এটা এ বাড়ির পরম্পরা। এতক্ষণ সে দরদরিয়ে ঘামছিল; এখন সে একটু একটু কাঁপুনি অনুভব করতে লাগল। পুলু জানে, “দাদুর শাস্তি মানেই তো লাইব্রেরি ঘরে ঢুকিয়ে মোটা মোটা বিদেশি বই পড়তে বলবে! এই তো! তা নাহয় পড়লাম! কিন্তু লাল্টু, নরেন, কালু- এরা যে বলল নীলকণ্ঠ পাখির ছানা ধরে দেবে! এদের জন্যেই তো শুধু শুধু ছোলাচোর হিসাবে ধরা খেয়ে গেলাম! জলংগীর কালো জলে ছায়া ফেলে কত পাখি উড়ে যায় সকাল সন্ধ্যায়। শীতে আসে বালিহাঁস। কিন্তু নীলকণ্ঠ পাখিরা কোথায় থাকে?”- এসব ভাবার অবকাশ দাদু দিতেই চায় না। মেঝের ওপর বাঁধানো বইগুলো পাকা তালের মতো ঢুপ ঢুপ করে পড়তে লাগল। পুলু একটার পর একটা কোলের ওপর তুলে নেয়, আর ঝাপসা বর্ণের ওপর টুপটুপ করে চোখের জল ফেলতে থাকে। এ বাড়িতে ছেলেদের শাস্তি-সবক কখনও কখনও রূপকথার দেশেও নিয়ে যায়, “আরে কেরুদাদু না! কেরুদাদুকে নিশ্চই হরি পিসি পাঠিয়েছে!” পুলুর চোখ চিকচিক করে উঠল। কেরুদাদু দাদুর সমবয়সী; এবাড়ির আকাল-সুকালের সাথী, আবার অভিভাবকও। 
“এটুকুতেই ধরা খেয়ে গেলে দাদুভাই? সামান্য একমুঠো ছোলা তাও ঠিকমত চুরি করতে শেখোনি? তোমাদের দিয়ে দেশের কোন কাজ্জিটা হবে শুনি? জানো এই আমি, নিজে ইংরেজ পুলিশের চোখে কতবার ধুলো দিয়েছি?”
পুলু নড়েচড়ে বসে। ঘনায়মান সন্ধ্যার অন্ধকারে সন্ধ্যারতির শাঁখ ও ঘণ্টাধ্বনির সাথে যেন সহসা বেজে ওঠে স্বাধীনতা আন্দোলনের হ্রেষাধ্বনি; দেশ-বিজয়ের ম’ ম’ গন্ধ! 
পুলুর ভিজে চোখ প্রসারিত হয়ে আসে, “সত্যি সত্যি একদিনও ধরা পড়োনি?”
“না! একদিনও না!” কেরুদাদুর কণ্ঠস্বর সেই চেনা আবেগে আবারও কেঁপে উঠল, “মিষ্টির হাড়িতে করে নিয়ে যেতাম গাদা গাদা বন্দুক! আমার আপাত নিরীহ মুখ দেখে ব্রিটিশ পুলিশের কখনো মনেই আসে নি, আমি অস্ত্র সরবরাহকারী। বিপ্লবীরা পথ চেয়ে থাকতেন; আমি হেঁকে ফিরতাম সরপুরিয়া নেবে গোওওওওওওওওও! বিশ্বাস না হয় দাদুকে জিজ্ঞেস করো, আমিও কতবার তাঁর সাথে জেল খেটেছি না! চলো চলো। মা জননী এখনও অবধি মুখে দানাটি তোলেননি! যে গুণধর ছেলেকে তিনি পেটে ধরেছেন!---‘চলো চলো সোনার গৌর/ যশোদা মূর্ছা যায়!’

“মা! রাংতাটা কেটে দেবে? আমাকে ওরা রাজা হতে বলছে!”
“কে, সুচিত্রা? ওহ! এইবার বুঝলাম হতচ্ছাড়ি মেয়েটি সেদিন আমার কাচা বিছানার চাদরটা নিয়ে কেন পালালো! তা কী থেটার হবে শুনি?”
“মুকুট। আমি রাজা; আর---!”
“রানী মা নিশ্চই হরিদাসী? তা বেশ মানাবে ভালো হি হি হি--!”
পুলু লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে! আশালতা পুলুকে কোলের ওপর শুইয়ে আলতো বাম হাতে ধীরমন্থর লয়ে তালপাখাটা নাড়তে থাকে। আর পুলু চেয়ে থাকে জননী আশালতার সজল কালো দিঘির মতো একজোড়া চোখের দিকে। যেখানে কোনও রাগ নেই, অভিমান নেই, শাসন নেই, পীড়ন নেই, আছে কেবল শান্ত শীতল অবগাহন! আশালতা এবার ঠোঁটের কোণায় বাঁকা চাঁদের আলো টেনে বললেন, “কী ঘুম আসছে না বুঝি রাজা মশাই? রাণীর জন্যে মন খারাপ করছে বুঝি? দাঁড়াও দাওয়াই তো একটা কিছু আছেই!” এরপর আশালতা বালিশের নীচ থেকে বার করেন অতিপ্রিয় একখানি পুঁথি। দুলে দুলে পাঠ করেন, “সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম।/ অতি ভোরে উঠি, তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়োবার ধুম।।” 
পুলু ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। চোখে মুখে কেমন যেন ব্যগ্র ভাব। সে জিজ্ঞাসা করে, “মা! বীণা আর আমাদের বাড়িতে আসে না কেন?”
“কোন বীণা? ওহ! সেই আম কুড়ুনি মেয়েটি?”
মায়ের কথাতে কেমন যেন একটু রাংতা মেশানো! পুলু মনে মনে দুঃখ পায়! বীণা যে তার ছোট বেলার সাথী। তার ফ্রকের কোঁচড়ে করে কতই না জৈষ্ঠ্যের ঝড়ে পড়া আম এনে নুন আর লেবুর পাতায় মেখে স্কুলের ফাঁকা বারান্দায় বসে দুজনে খেয়েছে তারা। পুলুর এখন বারো। আর বীণা বড়জোর মেরেকেটে পুলুর চেয়ে আর দু’বছরের বেশিই হবে। তাতে কী! তাই বলে ওর এখন পালকীতে ওঠার বয়েস? আর হলেও বা কত দূরের গাঁয়ে সে থাকে? এদিকে কতভাবে ঝড় ওঠে; কতবার বোশেখ আসে! ফলভারে অবনত আমের শাখাগুলো ঝড়ের ঝাপট খেয়ে মোচড় মেরে ওঠে! কিন্তু বীণা আর আসে না! পুলুর খুব ইচ্ছে, রাংতার মুকুটখানি পরে একবার সে বীণার সামনে দাঁড়াবে। বীণা তার কোচড়ের ডাঁসা পাকা আম দিয়ে বরণ করে নেবে কৃষ্ণনগরের বিজয়ী বীর সুদর্শন সৌমিত্রকে! মায়ের কাছে শতবার প্রশ্ন করেও পুলু এর কোনও সদুত্তোর খুঁজে পায় না। শুধু বুক ঠ্যালা দীর্ঘশ্বাস যেন ইস্টিম ইঞ্জিনের মতো বীণার নাম নিয়ে কু-ঝিকঝিক অজানা অভিসারের পথে ছুটে চলে!

কচি বাতাবিলেবুর পাতায় সকালের সোনারোদ ঝিকিয়ে পড়ার আগেই আশালতার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে ভোরাইএর বাঁশির মতো, “সমু--- পুলু---! ওঠো! যাও পড়তে বসো!”
ওরা মুখ মেজে এক একটা কাঁসার গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে গোয়ালের দ্বারে। হরিদাসী খুব সকালেই গাই দোয়াই। ফ্যানা ওঠা গরম গরম কাঁচা দুধ ঢকঢক করে খেয়ে তবেই স্কুলের পথে রওনা দেয় দু’ভাই। কিন্তু সেদিন ভীষণ বায়না ধরে বসল পুলু, “পিসি আয়ি ওদের এট্টু দুধ দাও না!”
--“ওমা! সে কী! ওদের পেটে দুধ সইবে কেন?”
--“দাও না পিসি আয়ি! ওরা কতদিন ভালো করে খেতে পাইনি বোধহয়!” 
--“তুমি ছেলে মানুষ! ওরা দুধ দিলেও খাবে না বাছা!”
--“তবে কী খাবে? ওই দ্যাখো না, ক্যামন ফ্যাল ফ্যাল করে আমার গ্লাসের দিকে চেয়ে আছে!?”
--“ওরা ফ্যান চাইছে। ফ্যান। দুকুর হোক; রান্নাঘরের পাশে কলতলায় গেলে দেখতে পাবে ওরা কী খেতে আসে! কাঁচা দুধ ওদের পেটে পড়লে এখুনি মারা পড়বে যে! তখন এই এত্তো এত্তো মুরদো কে সরাবে শুনি?”
“দুধ পেটে পড়লে উঠোনে লাশ পড়ে!” এই প্রথম শুনল পুলু। পুলুও আজকাল বাড়ির চারপাশে কেমন যেন মৃত মৃত, কঙ্কালসার, অর্ধনগ্ন, খ্যাপাটে রাক্ষুসে চেহারার মানুষের গায়ের গন্ধ পায়! “এদের নিয়ে বাড়ির আর কারও হেলদোল নেই! বাবার না। মায়েরও না। জেঠুরও না দাদুরও না--- কেবল হরি পিসি গামলা ভরে ফ্যান ঢেলে দেয় ওদের শুকনো সানকীতে! এরা কোথায় থাকে? কোন গাঁয়ের লোক? কেনই বা ওরা অন্যের রান্না ঘরের সামনে ভীড় জমায়? কেনই বা মা ওদের রান্নাঘরের মেঝেয় বসিয়ে পাতপেড়ে খায়ানোর অনুমতি পায় না?”--- এসব কিছুই মীমাংসা করে উঠতে পারে না পুলু। সে শুধু চেয়ে চেয়ে দ্যাখে, তাদের ছোট্ট শহরটা কেমন যেন অর্ধমৃত মানুষের মিছিল আর ভয়ার্ত কাতরানিতে মুখরিত হয়ে উঠছে!

সেদিন দোলপূর্ণিমা। রাত তখন কতই বা হবে, বড়জোর বারোটা। হরিদাসী হেঁসেলের সমস্ত বাসন-কোসন ধুয়ে মেজে সবেমাত্র মাজাটা একটু টান করেছে। অমনি ভাঁড়ারের পাশে ঝাঁকড়া বকুলতলায় হঠাৎ কানে এল, সেই পরিচিত কাতরানি---“কতোদিন খাইনে! এট্টু ফ্যান দে না মা!”
শুয়ে শুয়ে হরিদাসী একেবারে রিনরিনে গলায় বলে উঠল, “মর হতভাগা! তোদের আর সুমায় হয় না? এই রাতদুকুরে ফ্যান ফ্যান করে জ্বালাতে এয়েচো!”
“এট্টু ফ্যান দে না মা! কতকাল ভাতের গোঁন্দ পাইনি কো!”
হরিদাসী উঠে একটা চেলাকাঠ নিয়ে এড়ো মেরে ওর ঠ্যাং ভেঙে দিয়ে; ঝেঁটিয়ে দুরস্তার করে তবে আবার শোবে! কিন্তু কী একটা ভেবে অন্ধকার ছায়ামূর্তির দিকে এগিয়ে গেল। গায়ে ধাক্কা দিতেই একেবারে হাড় হিম হয়ে এল তার! এবার হরিদাসী হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, “ওমা! পুলু! তুই এই বেশে, একেনে? বালাই ষাট! বালাই ষাট! মুখে রঙ মেখে পিসি আয়িকে ভয় দেখানো হচ্ছিল বুঝি?” 
“ওদের দেখে তোমার ভয় করে না পিসি আয়ি?”
“ভয় করবে কেন বাছা? ওরাও তো মুনিষ! তবে কঙ্কালগুলো দেখলে সত্যি সত্যি ভয় হয় দেশে কী আকাল এল!”
“তবে ওদের এমন দূরছাই করো কেন? ভাত দাও না কেন?”
“আমি কী আর ভাতের মালিক সোনা! বাবুর বাড়িতে এঁটো মেজে বেঁচে আছি! তাছাড়া কাকে ছেড়ে কাকে দিই? হাড় চামড়া নিয়ে ওরা যখন হামলে পড়ে, বুকের ভেতটা মোচড় মেরে ওঠে! খুঁজে খুঁজে দেখি, ওই আমার গাঁয়ের বাপ-খুড়োরাও বাটি হাতে করে এল বুঝি!”
“ওদের এমন রাক্ষুসে খিদে কেন পিসি আয়ি?”
“জানি নে সোনা! তবে আমাদের মতো ওদেরও নাকি একটাই পেট শুনেচি!--- কারা যে জঠরে আগুন নাগালে কে জানে!”
“এই চ্যালাকাঠ দিয়ে ওদের মারো বুঝি?”
হরিদাসী চুপ করে থাকে। চোখের কোণটা ভিজে আসে! তারপর কী জানি কোন কষ্ট চাপা দিতে পুলুকে জড়িয়ে ধরে কপালে শিরে চুম্বন করতে করতে বলে ওঠে, “আমি তো সত্যি সত্যি ভাত হারিংকে ভেবেছিলাম সোনা! আমি তোমাকে চিনতেই পারিনি! খুব ভালো থেটার শিখেছো! তুমি মস্ত বড় অভিনেতা হবে!--- এই আমি বলে রাখলাম!”

মাঝে মাঝে আশালতার কী হয় কে জানে! সেই যে সেদিন সমু অসময়ে স্কুল থেকে ফিরে এল; আর তারপর থেকেই আশালতার সমস্ত পৃথিবীটা যেন বিষণ্ণতার কালো ছায়াল আবিল হয়ে আছে! অসুস্থ পুলু বিছানায় শুয়ে শুয়ে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিল, জননী আশালতা ব্যগ্রস্বরে দাদাকে জিজ্ঞাসা করছে, “কি রে সমু আজ এত তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে ফিরে এলি? ভিজে গেছিস বুঝি?”
“রবিঠাকুর মারা গেছেন!--- তাই হেড-মাস্টারমশাই আগেভাগে ছুটি দিয়ে দিলেন!” 
মুহূর্তের মধ্যে আশালতার সমস্ত পৃথিবীটা যেন দুলে উঠল! দেহের সকল শক্তি কে যেন হরণ করে নিয়ে গেল! সে দাওয়ার খুঁটি ধরে আস্তে আস্তে মাটিতে বসে পড়ল! ছোট্ট পুলু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না, রবিঠাকুরের সাথে তার মায়ের সম্পর্ক কী? ছোট থেকে পুলু পিসি আয়ির কাছে শিখেছে, খুব নিকট আত্মীয় মারা গেলে মানুষ খুব কষ্ট পায়! কিন্তু রবিঠাকুর কী বা এমন দিয়ে গেছে তার মা কে? একটা কবিতার বই ছাড়া তো এমন কিছু নয়? অথচ কেমন যেন এক খাপছাড়া শূন্যতায় ভরে গেল তাদের শ্রাবণ-ছোপানো ঘর-বার! এই শোক আস্তে আস্তে আশালতার হৃদয় ছাপিয়ে ছোট্ট পুলুকেও একসময় বিহ্বল করে তুলতে লাগল! সে বুঝতে চেষ্টা করতে লাগল, তার মায়ের পুরোনো কবিতার বইয়ে যে রূপকথার রাজকুমার, সে শুধু গানওয়ালা নয়; তাদের পরম আত্মীয়ও!

শরৎ মানেই জলংগীর তীরে বিসর্জনের দেবী বোঝাই সার সার নৌকো, আর খাঁচা বন্দী নীলকণ্ঠ পাখির শর্তসাপেক্ষ ছুটি! শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকো-বাহিনী দেবী আসেন। মেয়েরা এ ওর গালে সিঁদুর লাগায়; কুড়ুৎ কুড়ুৎ করে বেজে ওঠে ঢাক। দেবী-বাহকেরা মালকোচা মেরে একে একে জলে নামে আর মাঝি-মল্লারা জোর গলায় হাঁক পাড়ে, “আসছে বছর! আবার হবে! মা তুমি আবার এসো! বল দেবী মাঈ---!”
পুলু ড্যাবাড্যাবা চোখে চেয়ে থাকে খাঁচা-বন্দি নীলকণ্ঠ পাখিটির দিকে। কখন তাকে খাঁচার দরজা খুলে উড়িয়ে দেওয়া হবে, এই চিন্তায় তার ব্যকুলতা আর ধরে না! এই পাখি নাকি উড়ে যাবে কৈলাশে! ঊমা ফিরছে, -এই খবর নিয়ে যাবে সে! সেই নদী, সেই পারাপারের নৌকো, মাঠ, চাষা, জমি-মানুষজন জলংগীর ঢেউ। সবার কুশল নিয়ে উড়ে যাবে পাখি! সহসা বীণার জন্যে মন কেমন করে ওঠে তার! মায়ের জন্যে তারও অধিক দুলে দুলে ওঠে জলংগীর জল! সিঁদুরে রাঙ্গানো মায়ের মুখখানি দেখে পুলুর আনন্দ আর ধরে না! পুলু ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়তে থাকে বাড়ির দিকে!-সেও আজ নীলকণ্ঠ পাখি হতে চায়। মা তার সুস্থ হয়ে উঠেছে!-এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে শরৎ আকাশে! 


ঋণ স্বীকারঃ
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 
-শিলাদিত্য সেনের সাক্ষাৎকার
আনন্দবাজার পত্রিকা
রবিবাসরীয়, 11/06/2017

3 comments:

  1. Replies
    1. খুব খুশি হলাম দাদাভাই! ছোটদের নিয়ে লিখতে গিয়ে একটু দুঃসাহসই দেখিয়ে ফেলেছি আর কী!

      Delete