ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
Posted in ধারাবাহিক
ধারাবাহিক
এক কিশোরীর রোজনামচা - ১৯
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
Diary Entry -17
25 September, 1942, Friday
প্রিয় কিটী,
আজ তোমায় অন্য একটা খবর দিই। গতকাল সন্ধ্যে বেলায় ঘটনাটা ঘটেছিল। আমি একাই অ্যানেক্সের তিন তলায় উঠেছিলাম। তিন তলায় মিঃ ভ্যান ড্যান সপরিবারে থাকেন। আমি দোতলা থেকে লক্ষ্য করলাম, মিঃ ভ্যান ড্যান তাঁদের বড় ঘরটার খাবার টেবিলে বসে আছেন। সঙ্গে শ্রীমতী ভ্যান ড্যান। আমি গিয়েছিলাম গল্প-গুজব করার জন্যে। ওঁদের সাথে কথা বলতে আমার খারাপ লাগেনা। বরং বেশ ভালই লাগে। মাঝে মাঝে ত’ বিশেষ করে মিঃ ভ্যান ড্যানের সঙ্গে আমার কথা বলতে খুব ভালই লাগে। অবশ্য উনিও ওঁর স্ত্রীর মতোই আমায় “বাচাল” ভাবেন। তবে সামনা সামনি আমায় কোনওদিনই এই ধরণের কোনও কথা বলেননি, বা কেউ বললেও উনি সচরাচর তাকে সঙ্গে সঙ্গে সমর্থনও করেননা। অ্যানেক্সের উপর তলায় বেশ কিছু খালি বিস্কুটের টিন ছিল। খালি মানে, ওগুলোর ভিতরে তখনও বিস্কুটের টুকরোগুলো বা কিছু অবশিষ্টাংশ পড়ে ছিল। তবে গোটা বিস্কুট কিছু ছিল না। ভাঙ্গা বা বিস্কুটের টুকরোগুলো একটু একটু করে খেতে মন্দ লাগে না (অবশ্য বিস্কুট ভর্তি টিনগুলো খাবার আলমারির ভিতর সযত্নে রাখা ছিল। আলমারির ভিতর কিছু ন্যাপথ্যালিনের বলও ছিল, যাতে চট করে পোকা বা পিঁপড়ে না ঢুকতে পারে।)। আমরা প্রায় খালি টিনগুলোর ভিতর থেকে ভাঙ্গা টুকরো বিস্কুট খেতে খেতে গল্প করছিলাম। সেখানে কিছু লেম্যোনেডের বোতলও ছিল। ভাঙ্গা বিস্কুটের সঙ্গে লেম্যোনেড, পানীয় হিসাবে খেতে আদৌ মন্দ লাগে না। অন্ততঃ গল্প করার সময় খেতে বেশ ভালই লাগে।
এ’কথা সেকথা বলার মধ্যেই প্রসঙ্গ ক্রমে পিটারের কথা উঠল। আমি সুযোগ বুঝে, ওঁদের বেশ স্পষ্ট করে বললাম, তাঁরা কি জানেন, পিটার ইদানীং যখন তখন, বিনা কারণে আমার গালে টোকা মারে। যেন প্রমাণ করার চেষ্টা করে, সে আমার চেয়ে কত বড়। আর তাই আমার গালে ইচ্ছামত টোকা মারার বা হালকা করে চাঁটি মারার স্বাভাবিক অধিকার তার আছে। কিন্তু তার ভালভাবে জানা দরকার, আমি ব্যাপারটা একদমই পছন্দ করিনা। বরং বেশ বিরক্ত হই। আমি তাই ওঁদের অনুরোধ করলাম, ওঁরা যেন এই বিষয়টা পিটারকে বলে দেন। ওঁরা যেন পিটারকে এটা বুঝিয়ে দেন, যে, যখন তখন কোনও একটি মেয়ের গালে টোকা মারা বা হাল্কা ভাবে হলেও চাঁটি মারা একদমই ভদ্রতা সুলভ নয়। একটি ছেলে অবজ্ঞা ভরে বা কৌতুক করে, একটি মেয়ের গালে টোকা মারবে, এই বিষয়টা যথেষ্ট অপমানজনক। বিশেষ করে কোনও কোনও মেয়ে এটাকে অপমানজনক বলে মনে করতেই পারে। মেয়ে হিসাবে আমি সে'রকমই একজন। আমি বেশ দৃঢতার সঙ্গে বললাম, "আমার মনে হয়, মা বাবা হিসাবে, এই বিষয়টা পিটারকে আপনাদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিৎ। পিটার যদি আমার সঙ্গে এটা আর না করে তবে ভাল হয়।"
আমার কি মনে হয় জান? বাবা, মা প্রভৃতি অভিভাবক গোছের লোকেদের একটা সাধারণ ও বিস্ময়জনক দৃষ্টিভঙ্গী বা চিন্তার ধরণ আছে। তাঁরা সাধারণ চোখে কিছুতেই বুঝতে চান না, আমার মতো বয়সের একটা মেয়ে কেন, পিটারের মতো ছেলেদের কৌতুক বা কিছুটা খোলামেলা ব্যবহারকে পছন্দ করে না, বা সহ্য করতে পারে না! তারা এর জন্যে মেয়েটিকেই দোষী সাবাস্ত করেন। এমন কি এটাও ভাবেন, যে, মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ নয়। তাঁদের মতে ছেলেরা এ’রকম করে, কারণ হয়ত তার মেয়েটিকে ভাল লাগে! এ’মত অবস্থায় তাঁরা আশা করেন যে, মেয়েটিও ছেলেটার ব্যবহারে সাড়া দেবে। এবং প্রত্যুত্তরে মেয়েটি ছেলেটিকে "হাই, হ্যালো" এই সব বলবে। এ’সব না করে সে যদি বিরক্ত হয়, বা ছেলেটির ব্যবহারের প্রতিবাদ করে, তবে সেটা বিশেষ চিন্তার বিষয়। আমার মনে হয়, এই সব মা বাবারা সব মেয়েকে একই রকম ভাবে।
সত্যি বলছি, পিটার সম্পর্কে আমার ধারণা কি’রকম জান? ছেলেটা আদপে একটা জবুথবু মার্কা ছেলে। মাথার মধ্যেও কিছু নেই। আর তাই ঠিক করে বোঝেও না, ওর কোন ব্যবহারটা কোন ধরণের মেয়ের ভাল লাগবে, আর কোনটা লাগবে না। অবশ্য এটা ওর অতিরিক্ত লাজুক আর আড়ষ্ট স্বভাবের জন্যেও হতে পারে। ওর মতো অনেক ছেলেকেই তুমি দেখবে, যারা মেয়েদের মনটা বোঝার চেষ্টা করে না। এ’রকম ছেলেদের উচিৎ মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকা, এবং মেয়েদের মন আর পছন্দকে আরও ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করা।
এ’সব কথা বাদ দাও। তার চেয়ে তোমায় অন্য একটা প্রসঙ্গে কিছু কথা বা তথ্য বলি। শুনলে তোমার বেশ ইন্টারেস্টিং বলে মনে হবে। আমরা এখানে যারা নাৎসিদের ভয়ে আত্মগোপন করে আছি, আর বাইরের অফিসে যারা আমাদের আত্মগোপন করে থাকতে সাহায্য করছেন, এদের মধ্যে কিছু পুরুষ সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ “আত্মগোপনকারীর সুরক্ষা প্রদান কমিটি” গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান কাজ হলো, একদিকে আত্মগোপনকারীদের আত্মরক্ষা, সুরক্ষা বিষয়ে নজর রাখা, অন্যদিকে, বাইরের অফিসে এমন বাতাবরণ সৃষ্টি করা, যাতে বাইরের লোক কেউ বুঝতে না পারে যে, ভিতরে কিছু লোক আছে, যারা সরকারের চোখে অনভিপ্রেত। এর জন্যে তাঁরা সবসময় চেষ্টা করেন, বাইরের কর্মচারীদের আত্মরক্ষা ও ভিতরের লোকেদের গোপনীয়তা ও সুরক্ষার নিত্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করতে। তারা যে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে এ’কাজ করতেন, তার প্রমাণ আমাদের নিরাপত্তা আর তাঁদের ক্যামোফ্লেজিং এর সক্ষমতা। এই বিষয়েই এবার তোমায় একটা খবর দেব। খবরটা অবশ্যই গোপন। আর এর গোপনীয়তার উপর নির্ভর করছে আমাদের সুরক্ষা।
তুমি ত’ এটা জানই যে আমাদের ধরা পড়া বা না পড়া, এই সবটাই নির্ভর করছে, আমরা আমাদের অবস্থানের খবর কতটা গোপন রাখতে পারব তার ওপর। আর সেটা নির্ভর করছে, আফিসের কিছু লোক এই গোপনীয়তা বজায় রাখতে সবার অলক্ষ্যে আমাদের কতটা সাহায্য করছে বা করতে পারছে, তার ওপর। সরকারের তরফে নিরন্তর একটা প্রচেষ্টা ছিল, আমাদের সম্পর্কে, বা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে খরর সংগ্রহ করা। যাতে তারা আমাদের বন্দী করতে পারে। আমাদের অফিসে অনেকে সন্দেহ করত, যে ভ্যান ডিজক (Mr. Van Dijk) ছিলেন সরকারের গোপন সহকারী, যার অন্যতম একটা কাজ ছিল, আমাদের ব্যাপারে খবর সংগ্রহ করা। (নীচে ভ্যান ডিজকের ছবি দেওয়া হলো। এর ব্যাপারে আরও কিছু তথ্য এই লেখার শেষে “সংযোজন” আকারে দেওয়া হবে।)
ভ্যান ডিজক (Van Dijk)
তার মাধ্যমে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহের চেষ্টা যে হচ্ছে, সেটা ওপেক্টো হাউসের আমাদের ঘনিষ্ঠরা অনেকে পরিষ্কার ভাবে না’হলেও, নিজেদের মনে মনে বিশ্বাস করতেন। বিশেষ করে আমাদের জন্যে ভিতরে গঠিত “সুরক্ষা কমিটির” সদস্যরা ভ্যান ডিজককে যেমন সন্দেহ করত, তেমনি এটা বিশ্বাসও করত, যে, ভ্যান ডিজকের মন আর চাউনিটা স্বাভাবিক নয়। এর অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু কারণও ছিল। মাঝে মাঝে এটা দেখা যেত ভ্যান ডিজক গোপনে আমাদের ব্যবহৃত জিনিষগুলো হয় পর্যবেক্ষণ করছে, অথবা, তার উৎসটা খোঁজার চেষ্টা করছে। এমন কি’ মাঝে মাঝে, সে আমাদের গোপন পথের দিকেও সন্দেহজনকভাবে নজর রাখত। ওপেক্টো হাউসের অনেকের কাছে অকারণে আমাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টাও করত। এইসব দেখে, “সুরক্ষা কমিটি” আলোচনা করতে শুরু করল, কিভাবে এই সন্দেহটাকে কাটানো যায়। অন্ততঃ ততদিন পর্যন্ত (যতদিন না এই সন্দেহটা না কাটছে ) কিভাবে আমাদের সন্দেহ থেকে আড়াল করে রাখা যায়।
এবার তোমায় বলব, কি’ভাবে এটা করা হয়েছিল। কি’ভাবে এই চেষ্টাটাকে অন্তত; সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। প্রথমতঃ সুরক্ষা কমিটি আস্তে আস্তে এ’কথাটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, তাদের হাতে হয়তঃ প্রমাণ নেই, তবুও, ডিজকের মাধ্যমে সরকারী ক্তৃপক্ষ আমাদের সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহের চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়তঃ, সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা বুঝতে পেরেছিল, ডিজক, অকারণে অনেক বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এবার তোমায় বলব, ডিজকের এই প্রচেষ্টা কিভাবে প্রতিহত করা হয়েছিল, অথবা, কিভাবে এর মোকাবিলা করা হয়েছিল।
গোপনে অফিস থেকে একটা চিঠি দক্ষিণ জি-ল্যান্ডের এক পরিচিত রসায়নিক দ্রব্য বিক্রেতা তথা, রসায়নবিদের ঠিকানায় পাঠানো হয়। ওদের সাথে আমাদের বা ওপেক্টো হাউসের পরিচয়ের কারণ হলো, ঐখান থেকে ওপেক্টো হাউসের ট্র্যাভিস কম্পানীতে বিভিন্ন রসায়নিক জারক আসত। এক কথায় ওরা ছিল ট্রাভিস কম্পানীর নথিভুক্ত সরবরাহকারী। চিঠিটার মধ্যে একটা মুখবন্ধ ঠিকানা লেখা জবাবী খাম ভরে দেওয়া হয়েছিল। মুখবন্ধ জবাবী খামে ট্র্যাভিস কম্পানীর ঠিকানা লেখা ছিল। তারপর যথানিয়মে ডাক মারফৎ ঠিকানা লেখা খামটা যখন জী-ল্যান্ড থেকে ফেরত এল, তখন তার মধ্যে থেকে মূল চিঠীটা সাবধানে বের করে নিয়ে, তার জায়গায়, বাবার হাতের লেখা ও সাক্ষরিত একটা চিঠি ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। যাতে সবাই চিঠিটা দেখে নিঃসন্দেহ হয় যে, বাবা বা ওটো ফ্রাঙ্ক সপরিবারে জী-ল্যান্ডে আছেন। ফলে সরকারের নজরও আমাদের এই গোপন আশ্রয় স্থল থেকে অন্যদিকে ঘুরে যায়।
এই চিঠিটা দেখে ভ্যান ডিজকের মনেও কোন সন্দেহ ছিল না, যে, ওটো ফ্রাঙ্ক সপরিবারে আমস্টারডাম ছেড়ে জী-ল্যান্ডে চলে গেছেন। ভ্যান ডিজক এটাই ধরে নিয়েছিল, যে, আমস্টারডাম থেকে জী-ল্যান্ডে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, জী-ল্যান্ড থেকে বেলজিয়াম বেশ কাছে। যে কোনও সময় সেখানে চলে যাওয়া যায়। এছাড়াও জী-ল্যান্ড বা বেলজিয়াম থেকে অনেক সহজে এবং নিশ্চিন্ত গোপন পথে যে কোন চিঠি বা গোপন পরিচয় পত্র অন্য যে কোনও স্থানে পাঠানো সম্ভব। নিরাপত্তার দিক থেকে জী-ল্যান্ডের সুবিধা হলো, বিশেষ অনুমতি পত্র ছাড়া, কেউ জী-ল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারে না। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে ওটো ফ্রাঙ্ক সপরিবারে যখন জী-ল্যান্ডে প্রবেশ করতে পেরেছেন, তখন ওদের পক্ষে জী-ল্যান্ড থেকে বেলজিয়ামে পৌঁছানো আদৌ কষ্টকর হবে না। অন্যদিকে, আমাদের যেটা সুবিধা হলো তা’হলো আমরা যে এখানে আছি সেই ব্যাপারে যে সন্দেহটা দানা বেঁধেছিল সেটাকেও নষ্ট করা গেল।
ইতি,
তোমার অ্যানি।
অনুবাদকের সংযোজন ঃ-
Van Dijk ছিলেন অ্যানি ফ্রাঙ্কের বন্ধু লুসীয়া বা “লুসী” ভ্যান ডিজকের বাবা। জাতিগত ভাবে ছিলেন ইহুদি। তবে এঁরা ছিলেন নেদারল্যান্ডের আদি বাসীন্দা। এঁরা মনে করতেন, ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিরা নেদারল্যান্ডে যদি না আসত, তা’হলে হিটলার নেদারল্যান্ডের দিকে নজর দিত না। অথবা, নেদারল্যান্ড অধিকার করলেও, সেখানকার ইহুদিদের দিকে তাঁদের নজর পড়ত না। তাই নেদারল্যান্ডের স্থায়ী বসবাসকারী ইহুদিদের, উদ্বাস্তু ইহুদিদের প্রতি এক ধরণের বিদ্বেষ ছিল। তারা ভাবত, তারা যদি, হিটলারের সপক্ষে গিয়ে “জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ব্লক” বা National Socialist Block এর সাহায্যার্থে তাদের সাথে একত্রিত হয়ে, বহিরাগত উদ্বাস্তু ইহুদিদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং এন.এস.বি. তাদের দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে নেবে। ভ্যান ডিজকের কন্যা লুসী প্রথমে এ’সব ব্যাপারের বাইরে ছিল। অ্যানির দশম জন্মদিনে সে নিমন্ত্রিতও ছিল। অ্যানির সাথে সেই উপলক্ষে তোলা গ্রুপ ফটোতে লুসী উপস্থিতও ছিল। পরে সে তার মায়ের উৎসাহে এন.এস.বি.-তে যোগ দেয়।
অ্যানা ডিজক ছিলেন, ভ্যান ডিজকের স্ত্রী ও লুসীর মা। অ্যানা নেদারল্যান্ডের আদি বসবাসকারী ইহুদি হিসাবে, নিজেকে ও নিজের দেশের ইহুদিদের বাঁচাতে এন.এস.বি-র সাথে যোগ দেন। ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে এন.এস.বি-র গোঁড়া ভক্ত ও সমর্থক হিসাবে প্রমাণ করতে তিনি বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন। অ্যানার মা বা লুসীর দিদিমা, এই বিষয়টিকে একেবারেই পছন্দ করতেন না। তিনি বারবার লুসীকে বিশেষ করে, এন.এস.বি থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিতেন। কালক্রমে ভ্যান ডিজক, এন.এস.বি-র একমুখী কার্যকলাপ দেখে ক্রমেই বিরক্ত হন। শেষ পর্যন্ত ১৯৪২ সালে ভ্যান ডিজক মানসিক ভাবে এন.এস.বি থেকে তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। লুসীও তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে। লুসী বা ভ্যান ডিজক এন.এস.বি-র সমর্থক হওয়াতে, অ্যানির খারাপ লেগেছিল। সে তার বাবাকে এই কথাটা বলাতে, ওটো ফ্রাঙ্ক অ্যানিকে বলেন, যে কেউ তার পছন্দের রাজনৈতিক মতাদর্শ পোষণ করতে পারে। সেটা তার স্বাধীনতা। কিন্তু তার অর্থ কখনই এটা নয় যে, ব্যক্তিটা খারাপ। এই ধরণের মনোভাব কোনওভাবেই ঠিক নয়।
অন্যদিকে অ্যানা বা লুসীর মা এন.এস.বি-র কাছে সমর্থক হিসাবে নিজের গুরুত্ব বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু উদ্বাস্তু ইহুদি পরিবারকে জার্মান শাসকের কাছে ধরিয়ে দেন। বিশেষ করে স্ত্রীর কাছে মুখ রক্ষা করতে ভ্যান ডিজক ওপেক্টো হাউসে ট্রাভিস কম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশ্য ছিল স্বামীর মাধ্যমে ওপেক্টো হাউসের ভিতর ও বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করা।
0 comments: