0
undefined undefined undefined

অণুগল্প - পলাশ কুমার পাল

Posted in


অণুগল্প


ফতনা
পলাশ কুমার পাল


ফতনার ওপর স্থির পলক। হাতটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। স্থির রাখতে চাইলেও পারছে না। ওদিকে ফতনা যেমন, তেমনই। জলের ওপর ভেসে আছে।

এইভাবেই একটা রবিবার কেটে যাচ্ছে। দু-চারটে মাছ পেলে দুপুরে আঁশের স্বাদ পাওয়া যেত। নাহলে ঐ আলুভাতে-বড়াভাজা-ভাত। উপার্জন তো তেমন করতে পারে না। এই পঁয়ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনাই করে গেল কেবল। অন্যদের মতো টিউশনও পড়ায়নি, যে কিছু সঞ্চয়ে থাকবে। বাবার ঘাড়ে বসে খেয়েছে। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর মা-বাবা-নিজের তিনমুখের অন্ন জোগাবার ভার তার একার ওপর। তাও গ্রামে যাদের পড়ায় তারাও সবাই তেমন বেতনও দেয় না। অনেকে তো ফ্রীয়েই পড়ে যায়।

ফতনা নড়ে ওঠে। ঢুবে যায়। টান দেয় ছিপে। না, কোনও মাছ নয়। টোপ লাগিয়ে আবারও ছিপ ফেলে। ফতনাটা ভেসে থাকে।

মা বলেছে- "টোপের নাম করে ঘি-ময়দা নষ্ট করিস না!" মাছ না ধরতে পারলে ঐটুকুও লোকসান। এভাবেই ভেবে চলতে হয় তাদের তিনপ্রাণীকে। এখনও চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে। সেভাবে উপার্জনেও মন নেই। তাই তাকে ভাবতে হয়। অথচ তার সমবয়সীরা এখন প্রচুর রোজকার করছে। কেউ হয়তো মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে। সে? গতকাল প্রাইমারি ইন্টারভিউয়ের ফল বেড়িয়েছে। পাশ করতে পারেনি।

ফতনাটা খাবি খেতে থাকে। সময় নিয়ে জোরে একটান দেয়। না। মাছে টোপটা খেয়ে পালিয়েছে। আবারও টোপ লাগিয়ে ছিপ ফেলে।

ফ্যালফ্যাল করে নিজের প্রতিবিম্বটা দেখে। বয়স হয়েছে অনেকটাই। ছিপ ফেলে সময় নষ্ট করছে না তো? ঘরের দেয়ালটা এই বর্ষাতে পড়ে যেতে পারে। ঘর না করলেও নয়। কিন্তু অত টাকা তো নেই। বাবার জন্য ওষুধও আনার সময় দোকানদারকে বলে কিছু ওষুধ ছেঁটে আনতে হচ্ছে।

ফতনাটা কয়েকবার ঢোবা-ওঠা করতে করতে থেমে যায়। টান দেওয়া আর হয় না। ছিপ তুলে দেখে টোপটা নেই। আবারও টোপ লাগায়।

মনালের মুখটা ভেসে আসে। দু'মাস আগে গ্রামেরই পথে দেখা হয়েছিল। সিঁদুরে রাঙা মুখ। ভালোবাসলেও পাওয়া হয়নি। এখন সে সুখে-শান্তিতে আছে। বরকেও খুব ভালোবাসে। তাই পুরানো দিনের ছ্যাঁকাটা ভুলতে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। বেকার জীবনে এটাই তো স্বাভাবিক ভেবে বুকের কষ্টটাকে জানতে দেয় না কাউকে।

ফতনাটা খাবি খায় আবার। আবার টান দেয়। এবারেও হলো না। মাছ ধরেই কী হবে! মাছ ধরলে তাকেই তো বেছে-ধুয়ে ভাজতে হবে। মা তো জবুথবু। টোপটা জলে ছুঁড়ে দিয়ে ছিপটা গুটিয়ে নেয়। ফতনাতে আটকে রাখে কাঁটাগুলোকে।

0 comments: