0
undefined undefined undefined

ছোটগল্প - অনুপম দত্ত

Posted in



ছোটগল্প


ঘুম
অনুপম দত্ত



১. কিম্পুশ্য নগরীতে তখন মধ্যরাত্রি। গভীর সুষুপ্তির চাদরে ঢাকা রাজপ্রাসাদ। শুধু মহারানী মঞ্জুলিকার চোখে ঘুম নেই। মহারাজের প্রেরিত কপোতের পায়ে বাঁধা পত্রপ্রকোষ্ঠে সাংকেতিক বার্তা পুরে উড়িয়ে দিয়েছেন আজ তিনমাস হল। ওদিকের কোনও খবর নেই। বিদ্যগ্ররাজের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে গিরম পর্বতের সানুদেশে, শিক্ষিত কপোতের কাছে পাঁচদিনের রাস্তা। তাহলে? এদিকে রাজপুরীতে ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া আস্তে আস্তে ঘন হচ্ছে। মহামন্ত্রী দন্তকের হাবভাব কেমন যেন সন্দেহজনক। পত্রে মহারাজকে সবই জানিয়েছেন মঞ্জুলিকা। কোনও উত্তর এখনও এল না তো! ঘর গুমোট হয়ে রয়েছে। মঞ্জুলিকা কক্ষসংলগ্ন ঝরোখায় এসে দাঁড়ালেন। দূরে একটি বাতায়ন আলোকিত। একটি ছায়ামূর্তি অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। দন্তক!


২. সেলিওসের নভোযান আজ তিনমাস এই গ্রহে আটকে রয়েছে।যান্ত্রিক ত্রুটির দরুন এখানে নামা। নইলে এই গ্যালাক্সিতে ঢোকার কোনও প্লান ছিলনা। একটা উঁচু যায়গায় নেমেছে সেলিওস। নীচে দুদল জীব মুখোমুখি অবস্থান করছে। একটা স্ক্রীনে কিছুক্ষণ আঙুল বুলিয়ে সেলিওস জেনে গেছিল যে এই গ্রহটার নাম পৃথিবী আর ওই দুদল জীব হলো মানুষ। আরও বুঝেছিল যে ওদের মধ্যে একজনের এখুনি নিজের রাজ্যে ফেরা দরকার। কিন্তু ওই অদ্ভুত জন্তুতে টানা যানে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। সেলিওসের নভোযান সারানো হয়ে গেলে ওই নিয়ে যেতে পারত লোকটাকে। কিন্তু থ্রাস্টারটা কিছুতেই ঠিক করা যাচ্ছেনা। তিনমাস হয়ে গেল।


৩. কিম্পুশ্যরাজ নিজের তাঁবুর ভেতর ঝিমোচ্ছিলেন। এমন সময় দ্বাররক্ষক এসে অভিবাদন করে বলল - মহারাজ, এক ব্যক্তি আপনার দর্শনপ্রার্থী। বলছে আপনার তাঁকে খুব দরকার। মহারাজ রম্যদেব প্রথমে ভাবলেন ওই দুর্বিনীত ব্যক্তিকে শূলে চড়াবেন। কিন্তু এখন যুদ্ধের সময়। সাতপাঁচ ভেবে লোকটিকে ভেতরে নিয়ে আসার হুকুম দিলেন।

লোকটি এসেই বলল - নমস্কার! আমি আপনার প্রতিবেশী। পাশের গ্যালাক্সিতে থাকি। আপনার এখুনি রাজধানী ফেরা দরকার। এই বলে লোকটা একটা চ্যাপটা ফলক তাঁর দিকে এগিয়ে দিল। মহারাজ দেখলেন - কিম্পুশ্য নগরী! কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে বললেন - তাহলে আমার রথ প্রস্তুত করতে বলি? আগন্তুক হেসে বলল - দেরি হয়ে যাবে, আমার যানে চলুন তাহলে আপনাদের হিসেবে একঘন্টায় পৌঁছে যাবেন।

একটু পরে সেলিওসের নভোযান কিম্পুশ্য নগরীর দিকে উড়ে চলল। বিদ্যগ্ররাজ কিছুই জানতে পারলেন না। কারণ সেলিওস সময়টা পিছিয়ে দিয়েছিল।


৪. ইখলাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক রমানাথবাবু আজ তিনমাস হলো গিরম পাহাড়ের একটা গুহায় বসে যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখছেন। স্কুল ছুটি হওয়ার পর একটু হাওয়া খেতে ভিক্টোরিয়া গেছিলেন। এক টাংগাওয়ালা বলল - জনাব একবার সয়ের করবেন মেহেরবানি করে। আমি অনেক কিসসা জানি, যা কিতাবে পাবেননা। দরাদরি করে উঠেই পড়লেন রমানাথবাবু। সন্ধেবেলার হাওয়া আর টাংগাওয়ালার খাস কিসসা ভালই লাগছিল। হঠাৎ কিসে ধাক্কা খেয়ে টাংগা উলটে গেল।রমানাথবাবুর যখন জ্ঞান ফিরল তখন তিনি গিরম পাহাড়ের গুহায়।তিনমাস হলো। যুদ্ধ হচ্ছেনা কেন? প্রবন্ধটা অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে।

রমানাথবাবু একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভাঙতে দেখলেন তাঁর সামনে রাজরথ দাঁড়িয়ে। তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে রথারোহণ করলেন। সেনাশিবির পেছনে পড়ে রইল। মাঠের পর মাঠ, গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে গেল। কোথাও সবুজের ছোঁয়া নেই। পথের পাশে লাশের পাহাড়। একটা ছোট গ্রামে রথ থামিয়ে রমানাথবাবু জলের সন্ধানে কিছুদূর গিয়ে একটা কুয়ো পেলেন। একটা বুড়ি বসে আছে কুয়োর পাড়ে। রমানাথবাবু শুধোলেন - যুদ্ধ তো এখনও শুরু হয়নি, তাহলে দেশের এই অবস্থা কেন? বুড়ির কথায় বোঝা গেল কিম্পুশ্যরাজের সেনাবাহিনী এই পথ ধরেই গিরম পাহাড়ের দিকে গেছে। যাওয়ার পথে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তা হোক, যুদ্ধ বলে কথা!

জল খেয়ে আবার রথে চড়লেন রমানাথবাবু। যেতে যেতে চোখ লেগে গিয়েছিল। ঘুম ভাঙতে দেখলেন রথ তাঁর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে। কাঁধের ঝোলা থেকে অসমাপ্ত প্রবন্ধের খাতাটা বের করে ডাস্টবিনে ফেলে রমানাথবাবু ঘরে ঢুকে গেলেন।

----

তিনমাস কোমায় আচ্ছন্ন থাকার পর সাহিত্যিক প্রাঞ্জলবাবু চোখ মেলে তাকালেন।



0 comments: