0

অণুগল্প - রাখি পুরকায়স্থ

Posted in


অণুগল্প


কুয়াশার আয়না
রাখি পুরকায়স্থ



শীতের সকালে জুবিলি পার্কের নুড়ি বিছানো পথ ধরে হাঁটা আমার কাছে এক অমোঘ আকর্ষণ। আজ জীবন প্রান্তে পৌঁছে, কুয়াশাচ্ছন্ন স্মৃতিপটে দীর্ঘ জীবনছবি যেন ক্রমশঃ আবছা হয়ে আসছে। তবুও রোজ সেসময় কুয়াশা ভেদ করে সামনে এসে দাঁড়ায় ছেঁড়া জামা পরা সাত-আট বছরের এক শ্যামলা বালক! আমার চোখের সামনে তখন ভেসে ওঠে সাদা কালো একগোছা জীবনছবি। শিয়ালদহ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে খালি পায়ে ইতস্ততঃ হেঁটে বেড়ানো সেই ছেলে। জনৈক রেলযাত্রীর ফেলে দেওয়া এক টুকরো পাউরুটি কুঁড়িয়ে পেয়ে তার মলিন মুখে হঠাৎ আলোর ঝলক। আমি দেখি, খাবারের দোকানের সামনে এক পেট ক্ষুধা বয়ে বেড়ানো ছেলেটির হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকা, ক্ষুধার জ্বালায় ধূলার উপর তার কেঁদে ঘুমিয়ে পড়া, আর দেখি তার চোখের পাশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া শুকনো জলের দাগ। পুরানো গন্ধ মাখা ছবিগুলি আমার চোখের সামনে পর পর এসে ধরা দেয়। যেন বহুযুগ ধরে হৃদয়ের নিভৃত কোণে যত্নে রাখা একটি ছবির বইয়ের ধূলি ধুসর পাতাগুলি আমি রোজ উল্টেপাল্টে দেখি। ছেলেটি আমাকে স্মৃতির ওপার থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সে আর আমি পরস্পরকে দেখি। মাঝে বয়ে যায় সত্তোরটি বছর।

সঞ্জিবনী আবাসনের দ্বিতলে সারাজীবনের সঞ্চয়ে কেনা দু’কামরার ফ্ল্যাট থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে আমার বড় কষ্ট। তবুও রোজ প্রাতঃভ্রমণে আসি। যুগান্তপারের স্মৃতি ভেসে ওঠে মানসচিত্রপটে। সেই তীব্র টানে শীতের কুয়াশার চাদরে মুড়ে বিজনে ‘নিজের’ সঙ্গে দেখা করি।

0 comments: