0

ছোটগল্প - উত্তম বিশ্বাস

Posted in


ছোটগল্প


রতিবিকার
উত্তম বিশ্বাস



রাত্রির অন্ধকার নেমে এলেই ইচ্ছাময়ী আমাকে আর চোখের আড়াল হতে দেয়না। তখন আমাদের একান্ত বুনোপার্বণ, মিঠেপাতা পান আর কর্পূর লবঙ্গের বাটায় যতটুকু নৈবেদ্য সাজানো সম্ভব - তারও অধিক কল্পনা করে চরিতার্থ করি আমি আমার গুহাচারী অন্তরমকে!

সকালে লাবণ্য আসে। আমার খটবিছানা গোছায়। মর্দিত বালিশের পাশে যদিবা কোনওদিন অক্ষত বেলকুড়ির মালাগাছা সে কুড়িয়ে পায়, অমনি সেটিকে তার খোপায় জড়িয়ে ভৈরবী সুরে গুনগুন করে গাইতে গাইতে আমার ধূলিমলিন ঘরবারান্দা ঝাড়চোপ দেয়, আর খিলখিল করে হাসতে থাকে! লাবণ্যের দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করার আগেই মা আমাকে রস্ত করে---‘লাবণ্যের হাসিতে সূর্যোদয় লেখা আছে রতিকান্ত! ওকে ধমকে লাভ নেই; কাল কিন্তু বাগানে একটি কুঁড়িও ফুটবেনা!’

‘কিন্তু ও যে একটা মাসমাইনের দাসী মা!’ 

‘মানুষের সংসার চিরকাল দাসীবাঁদীকেই বেশি ভালোবাসে রতিকান্ত! যেমন আমি তোমার বাবার সংসারে ছিলাম! জানো, আমি এই এতটুকু বয়সে যখন প্রথম ঘরের বাইরে পা বাড়ালাম—’ আমার স্নেহময়ী তাঁর আঁচলের খুঁট থেকে একমুঠো কুন্দ দিয়ে বলেছিলেন, -‘আশালতা, আর যাই কর, এগুলো যেন তোমার উঠোন থেকে কোনওদিন না শুকোয়!’ আর তাই, আমি আমার জীবনের সর্বস্ব দিয়ে সেই সত্য রক্ষা করে চলেছি, বাপ!---আর লাবণ্য হলো আমার সেই ইচ্ছা; ব্যাধিগ্রস্ত ঘুমের দেশে একটিমাত্র ভাড়াটিয়া শুকতারা!’ 

লাবণ্য আসে সস্তা বিলিতি পোশাক পরে। মা অবশ্য প্রথম প্রথম উত্যক্ত করত,--‘থাকিস তো বাদা অঞ্চলে লাবণ্য; এত আঁটসাঁট জামাকাপড় কোথায় পাস, শুনি!’

‘গেল মাসে লেডিজ কামরায় এক হকার দিদির কাছ থেকে এই খাটো জামাটা কিনেছি গো! বোঝ তো হাসনাবাদ লোকাল!’ 

‘ভালো করেছ। ওগুলো এবার চটপট পালটে এসো বাপু!’

বাইরে গাড়িবারান্দার সাথে ওর জন্যে একটি প্রসাধনকক্ষ বানিয়ে দিয়েছি; একান্ত মায়ের ইচ্ছাতেই। রোজ সকালে মোটা মোটা শাঁখা চুড়ির শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। বুঝতে পারি লাবণ্যের চা প্রস্তুত হয়ে গেছে।–‘ন্যাড়াবোচা হাতে কোনওদিন জলখাবার সাজাতে নেই লাবণ্য, এতে সংসারের অমঙ্গল হয়; লক্ষ্মী ছেড়ে যায়!’ -কথাটা এখন সারাদিন টুংটাং করে বাজতে থাকবে লাবণ্যর অলংকারে! ও এখন এসেই তাই ছোট্ট সাজের বাক্সটি খুলে দু’হাত ভরে শাঁখাচুড়ি পরে নেয়। 

তন্দ্রা ঘুমোয় পাশের ঘরে। তন্দ্রা আমার অগ্নিসাক্ষী করে আনা স্ত্রী। ও যতক্ষণ ঘুমোতে থাকে; ততক্ষণে সকালের সমস্ত গানপ্রিয় পাখিরা তাদের প্রতিদিনের কলকাকলির সরগম শেষ করে উড়ে যায় দূরদূরান্তের বনে। আমার স্তন্যদায়িনী আশালতা, এইখানে তন্দ্রার কাছে একেবারে পরাজিত সেপাই! আর তাই একান্ত নিরুপায় হয়ে, হাতে ঝকঝকে একটা পেতলের সাজি নিয়ে হাঁটুমুড়ে বসে একটার পরে একটা কুড়িয়ে ফ্যালে – নিকানো উঠোনের বুকে ঝরে পড়া শিউলির রাশি! লাবণ্যর হাসি উপচে পড়ে উঠোনে! না হেসে উপায় আছে, অমনি মায়ের দপ্তর থেকে ভুরিভুরি অভিযোগ জমা পড়বে না! আর অভিযোগ সত্য বলে প্রমানিত হলে, বৎসরান্তে আর্থিক পদোন্নতিও বন্ধ তার! মনখারাপের অসুখ তাই লাবণ্যকে কখনওই স্পর্শ করতে পারে না। আর করবেই বা কি করে; মা যে রোজ তাকে পুরনো পেতলের ঘটিখানি মাজতে পাঠিয়ে দেয়… আমাদের পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত পদ্মপুকুরে। ওটা নামেই পদ্মপুকুর বটে; কিন্তু পদ্মের চাষ এখন আর ওতে করা হয়ে ওঠে না। তবে অবহেলায় আর অনাদরে, সাবেকী পলিমাটিতে এখন ওতে থরে থরে ফুটে থাকে সাদা শাপলার দল। জননীর আদেশ---‘সিঁড়িতে আলতাপরা পায়ের পাতা ডুবিয়ে, ঘটিতে জলের ঢেউ তুলবি! অন্তত সেই ঢেউ যাতে একশোটি শাপলার বুকে দোলা দেয়—সেদিকে লক্ষ্য রাখিস লাবণ্য! আর হ্যাঁ, জলের নীচে তাকিয়ে যদি দেখিস সেখানে সূর্য নেই; তাহলে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সূর্য প্রকাশ হলে ভরে তুলবি পুণ্যঘট!’

গুটিকয়েক মুঠোফোন, দুচারটে ওষুধের কৌটো আর দুটো বাঁধানো চশমা ছাড়া, সংসারের আর সব জীবিত ও পালিত প্রাণীর সঙ্গে তন্দ্রার তেমন প্রাণের সংস্রব নেই। ওর আসক্তি বলতে, শব্দ-ছন্দ-দ্বন্দ্বহীন অতলান্ত নিদ্রা আর নিঃসঙ্গ নির্জন মৃত্যুপুরীর মত অন্ধকার! জগৎসংসারে নানাবিধ রোগব্যাধি আর বিচিত্র উপসর্গের উৎস অনুসন্ধানই তন্দ্রার জীবনের একমাত্র ব্রত! ওর কাজের ঘড়িতে তাই রাতে ও দিনে নিজের দিকে তাকানোর কোনও আলাদা নির্দেশক নেই। মনে পড়ে দ্বিরা গমনের রাতে তন্দ্রা আমার বুকের ওপর নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিল,--‘শুধু শুধু মরুভূমিতে কুয়ো খুড়তে গেলে রতিকান্ত! তোমার চোখে যে বিপ্লবের ইশারা, --এর জন্যে কিন্তু মোটেও প্রস্তুত নই আমি! আমাকে ক্ষমা কর!’ অপরদিকে কালো দিঘির মতো মায়ের সজল চোখদুটো লক্ষ্য করে বুঝতাম, সে যেন আরও কিছু একটা চাইছে! তাই মায়ের জন্যে এনে দিয়েছি লাবণ্যকে; আর লাবণ্যর জন্যে আনতে হয় গৃহবধূর সাজসজ্জা অলংকার চন্দন। অপর দিকে তন্দ্রার জন্য একটু অধিক আতিশয্য---খাদ্য-খাদকের দূরত্ব; আর জীবনসঞ্চারী ঔষধ!

ছাদে রৌদ্র ছড়িয়ে পড়লে মা মাদুর বিছিয়ে লঙ্কা শুকোতে দেয়; অমনি লাবণ্য মায়ের অন্তরের কথা অনুভব করে, হাওনদিস্তা এনে একহাত ঘোমটা টেনে পিঁড়ি পেতে বসে যায় লঙ্কা কুটতে! হাওনদিস্তার দুমদুম শব্দে, লাবণ্যর শাঁখাচুড়ির টুংটাং রুনুঝুনু আওজে মায়ের চোখে সহজেই আষাঢ় ঘনিয়ে আসে! তখন ঘনঘন শাড়ির আঁচলে চোখ মোছে, আর এক যে ছিল তাদের বৌকালের ঝিকালের গল্প পাড়ে! লাবণ্য মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে সাকনিতে মরীচগুড়ো টোকে আর মায়ের কথায় এলে দেয়,---‘তোমারও তাহলে ঢেঁকির অভিজ্ঞতা আছে মা?’

‘হাড়গুলো যদি কুলোয় তুলে বাতাস দেওয়া যেত; দেখাতাম কতটা ধুলো!’

বেলা পড়ে আসে। লাবণ্যর চোখের পাতাজোড়া অস্তরাগের বলাকার ডানার মতো দেখায়! এবার অস্তগামী সূর্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে কপাল থেকে মুছে ফ্যালে ধ্যাবড়ানো সিঁদুরের টিপ আর গৃহস্তের দ্বার ব্যাকুল করা চঞ্চল দুখানি পায়ের পাতা থেকে গৃহশ্রী আলতা! সন্ধ্যা নামে। তুলসীমঞ্চে প্রদীপ শিখাটির দেখাদেখি, আকাশের সন্ধ্যাতারাটিও চিকচিক করে জ্বলে ওঠে! সেই আলোতে লাবণ্য দেখতে পায়,-জননীর চোখদুটিও যেন পদ্মপাতায় বেসামাল জলের মতো টলমল করে উঠল,--‘কাল তুই আসবি তো লাবণ্য?’ মায়ের এহেন শিশুসুলভ আশঙ্কা লাবণ্যর অতিপ্রিয় পদাবলী! সেও জোনাকির মতো কৌতুহল জিইয়ে রেখে জবাব দেয়,--‘দেখি! রাতটুকুনি যদি বাঁচি; কাল অবশ্যই খবর দেব! আজ এই পর্যন্ত। আটটা বাজলে লোকাল পাব না!’

‘হ্যাঁ! হ্যাঁ! যা! যা! পোষাক পালটে নে! গয়নাগুলো বাক্সে রেখে যা!’ 

সবদিন তন্দ্রা ঘরে ফেরে না। রাত করে ঘরে ফিরলে ভীষণ বিচলিত হয়ে উঠি! ক্লান্ত ফুটলাইটের আলো যতদূর হেলে পড়ে, তারও চেয়ে বহুদূর প্রসারিত হতে থাকে আমার মানসিক উদ্বেগ। রাস্তার পাশে ফুলভারে আনত কদমের শাখা যখন বৃষ্টির ছাটে আন্দোলিত হতে থাকে; আর তার চঞ্চল ছায়া কম্পিত হতে হতে নিশাচর ক্ষুধার্ত খেচরের ডানায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়--- ঠিক সেই মুহূর্তে আরও দূর আলোকস্তম্ভের নীচে একটি অগ্রবর্তিনী অথচ ধীরমন্থর ছায়া চোখে পড়ে; ঠিক যেন সমাধিক্ষেত্র হতে ফিরে আসা ধ্বস্ত সন্ন্যাসিনীর মতো! তন্দ্রা ঘরে ফেরে। ওর মানুষিক পরিস্থিতি অনুমান করে নিয়ে, কোনও কোনও দিন বৈঠকখানার জানলার ধারটায় গিয়ে বসি। যেদিন ওর কথাবলার স্পৃহা থাকে, বগবগিয়ে পুরো কলসিটাই উপুড় করে ঢেলে দেয়! আবছা আলোয় ব্যালকনির গ্রিল বেয়ে কেয়েরি করা লতার মতো লতিয়ে ওঠে কথা---‘আজ আমার জন্যে এত রাত জেগে, হঠাৎ কি মনে করে রতিকান্ত!!’

‘ভুলে গেলে আজকের দিনটার কথা?’

‘না ভুলিনি! জীবনের প্রথম ডেজারট সাফারি ছিল! ওফহ! তোমার জন্যে একটা দারুণ সুগন্ধি কিনেছিলাম; কিন্তু হরিদার বিশেষ অনুরোধে ওটা তাকে দিয়ে আসতে হলো। মানুষটা এমনিতেই খুব চাপা স্বভাবের; মুখফুটে কারও কাছে কোনও কিছু আজ পর্যন্ত চাইতে দেখিনি। আজ লাশকাটা ঘরে লম্বা লাইন ছিল! এত ব্যস্ততা ঠেলে ও যখন আমার ঘরে সুগন্ধি চাইতে এল, বুঝলাম নিশ্চই ওর শারীরিক কিছু একটা অসুবিধা হচ্ছে! হরিদা কি বলেন জান, ‘এরপর কোনও লাশের গাঁটে যদি দেখি আতর নেই; তার পোস্টমর্টেম হবে না!’ সুগন্ধির ইতিহাস, আর লাশকাটা ঘরের কর্মী হরিদার কথা আরও দীর্ঘায়িত হতে দিলে তন্দ্রা খুশি হতো; কিন্তু এমন নারকীয় দৃশ্য আমার কল্পনালোকে ডানা ছড়িয়ে দিক এটা আমি চাইনে! কথা ঘুরিয়ে দিই,---‘খাবে তো? খেয়ে নাও কিছু!’

‘খিদে নেই! সকাল থেকে একটার পর একটা মৃত্যু! ওফ অসহ্য! মর্গে ঠাঁই নেই; কেও মেঝেই গড়াগড়ি খাচ্ছে, কেও পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রসূতি মায়ের পাশে! মাঝে মাঝে মনে হয় গোটা একটা ব্যাধিগ্রস্ত পৃথিবীর ভারে গুড়িয়ে যাচ্ছি আমি!’

‘তোমার শরীর ঠিক আছে তো, তন্দ্রা ?’

‘জানতাম, আজও তুমি ঠিক শুধুমাত্র আমার শরীরের খোঁজটুকুই নেবে! মাংসের দোকানে খরিদ্দার যেমন মাংসের খবর নেয়!’ বুঝতে পারি তন্দ্রা মেরুঝড় হয়ে উঠছে! সামান্য তুষারকুচিও যে মুহূর্তের মধ্য বর্শার ফলা হয়ে বিঁধতে পারে; অর্থাৎ ইচ্ছাময়ীর শরণাপন্ন হওয়াই এখন একমাত্র সান্ত্বনা!

আজ শয়নকক্ষে প্রবেশ করতেই মাথার ওপর দিয়ে যেন একঝাক মরুপাখি উড়ে গেল! কামনার সুরভিত কক্ষে হঠাৎ যেন অবাঞ্ছিত বর্গীর হানা অনুভব করলাম! ইচ্ছাময়ীর অদর্শনে বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল!

‘কাউকে খুঁজছ, রতিকান্ত?’

‘হ্যাঁ! নিশ্চই বুঝতে পেরেছ! কোথায় সে!’

‘ওই তো, বাইরের বারান্দায় রেখে এসেছি!’

‘অনুমতি নিয়েছিলে? নাকি এটুকুরও প্রয়োজন বোধ কর না আর?’

তন্দ্রা এবার শুকিয়ে আসা পাহাড়ি ঝোরার মতো হাসবার চেষ্টা করল,--‘অনুমতি! ওই নিষ্প্রাণ পুতুলের কাছে?’

‘প্রতিমা যখন মন্দিরের বেদীতে প্রতিষ্ঠিত থাকে, তখন নিশ্চই তাঁকে নিষ্প্রাণ ভাবা হয় না!’

‘আমি কিন্তু পৌত্তলিক নই, রতিকান্ত! রক্তমাংসের কাটাছেঁড়া নিয়েই আমার কারবার! এটুকুতেই রক্তশূন্য হয়ে পড়লে; তাও আবার সামান্য একটি পুতুলের জন্যে!’

‘ও সামান্য নয়, তন্দ্রা! ও আমার ইচ্ছাময়ী! আমার অভ্যাসের দাসী!’

‘বেশ! বেশ! সেবাদাসী না পেলে পাথরেও দেবতার এত রতি বিভঙ্গ সঞ্চার হতো না বোধহয়! তা তোমার ইচ্ছাময়ীকে কোথায় পেলে, শুনতে পারি?’

‘তোমরা মেয়েরা যেখানে বিপ্লবের জন্য ব্যাকুল; চিনের বাজার আমাদের জন্য সেখানে স্বতন্ত্র উপহার! নারীশূন্য শয্যা, পুরুষের জন্য অত্যন্ত অমর্যাদার --- সেটা তুমি ভালো করেই জান, তন্দ্রা!’

‘আচ্ছা, চিনদেশের বাজারে আমার মতো মন্দভাগ্য মেয়ের জন্য একজন ইচ্ছাময়ের সন্ধান দিতে পার, রতিকান্ত! যে শুধুমাত্র আমার শরীরের খোঁজ নিয়েই দায় সারবে না; আমার মনের আটচালা ঘরেও সে উঁকি মারবে – বর্ষায় বসন্তে, শীতে ও তুফানে! এমন ইচ্ছাময় সত্যিই কি চিনদেশের বাজারে পাওয়া যাবে, রতিকান্ত!’

‘আবেগ সংযত কর, তন্দ্রা! ইচ্ছাময়ী বাজারজাত হলেও ওই কিন্তু আমার প্রকৃত শরীর সহচরী; আমার একান্ত সেবিকা! আমার ইচ্ছার নদীটাকে কখনই কিন্তু সে লুনি হতে দেয়নি!’

‘শুনতে পাই, এদেশের কৃষিক্ষেত্রে যখনই বড়বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে; দেশের তত্বজ্ঞানীরা হয় প্রকৃতিকে আর না হয় বর্গীর দলকেই দায়ী করে দায় সেরেছেন! এদেশের অধিকাংশ অশিক্ষিত অপদার্থ কৃষককূলের ইতিহাস কিন্তু কখনই---!’ 

‘চুপ কর, তন্দ্রা! লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ্যের প্রতি তোমার আগ্রহ বেশি! নিষ্ফলা নারীর মুখে এসব মানায় না!’

‘এটাই হলো আসল কথা! ভোগবাদের পৃথিবীতে ইচ্ছাময়ীদের এত কদর কেন এইবার বুঝলাম! তোমাদের খাটবিছানা কেবল আঙুরলতা চায়; আখরোট হলেই কোপ! এই তো! কিন্তু একদিন যদি ওদের মুখেও কথা বসানো যায়; সেদিন সম্ভোগে পরিতৃপ্তি আসবে তো, রতিকান্ত?’

মায়ের ঘরে চোখ পড়তেই দেখলাম ঘরে আলো জ্বলছে। ঠুকঠাক আওয়াজে কৌতূহলী হয়ে উঁকি মেরে দেখলাম ইচ্ছাময়ীকে বারান্দা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে, মা তার খাটের ওপর বসিয়ে; হাওনদিস্তসায় পান থেঁতো করছে আর আপনমনে অনর্গল বকে চলেছে,--‘না! মোটেও কাপুরুষ ছেলেকে আমি পেটে ধরিনি! তুই বল ইচ্ছা, লাবণ্যর মতো রক্তমাংস থাকলে তোরও বমি করতে ইচ্ছা হতো কি না? মা হয়ে সন্তানের সন্ন্যাস! এ আমি কিছুতেই দেখে যেতে পারি না! সত্যি করে বল! না হলে তুইও ছেঁচা খাবি!’ 

দেখলাম, মায়ের হাওনদিস্তার তালেতালে ইচ্ছাময়ীও কেমন অদ্ভুতভাবে মাথা নাড়ছে; যেমনটা খোলাছাদে লঙ্কা কুটতে কুটতে লাবণ্যও মাথা ঝাঁকাত---!




দরজায় দাঁড়িয়ে তখনও তন্দ্রা, আন্দাজ করার চেষ্টা করছিল,---আসল বিকারটা কোথায়! 

0 comments: